বিষাদগাথা - অর্ঘ্যদীপ ঘোষ

চিত্রালংকরণ: কর্ণিকা বিশ্বাস
 
প্রতি সেমেস্টারে প্রেমিকা বদলে নেয় যে যুবক

স্বামীর সাথে মিলিত হবার পূর্বে
প্রাক্তন প্রেমিকের মুখ, কল্পনা করে যে নারী

আমি কি চাইলেও কোনওদিন
তাদের মতো হতে পারি?

পারি নি কিছুই শুধু অপলক
তাকিয়ে থাকা ছাড়া;
দেখেছি এক আশ্চর্য নীল আলোয়
ঈর্ষা টবে ফুটে ওঠে কান্নার ফুল

আজন্মকালের ভুল অপেক্ষার মাঝে
ছিল বিষাদ বলতে এই -

আমার মৃত্যুতে তোমার বৈধব্যযোগ নেই...

বড় হওয়ার আগে (প্রথম পর্ব) - কর্ণিকা বিশ্বাস

বড় হওয়াটা একদিনে না ঘটলেও, প্রায়শই উপলব্ধিটা হঠাতই একদিন ঘটে। হয়ত কোন দরকারী কাজ সারছেন, এমন সময় মাথার মধ্যে টিকটিক করে কাজের চাপ, দায়দায়িত্ব, নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনারা এক সাথে হেঁকে উঠে বড় হওয়াটা জানান দিয়ে দিল। আপনাদের কথা জানিনা, তবে আমার জীবনে এই ঘটনা হামেশাই ঘটে থাকে। সত্যি বলতে কি,আক্ষেপ করাটা একটা অভ্যাস। বিস্তারিত কার্য-কারণ বর্ণনা করে পাঠকের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেব না; আজ বরং একটু পূর্বকথা বলি। 

আমি জন্মাবধি প্রধানত কলকাতানিবাসী। আমার দাদু-ঠাকুর্দা ছিলেন পূর্ববঙ্গের লোক। বাংলা সাহিত্যে ভিটে মাটি ছেড়ে আসা মানুষের গল্প তো কম নেই। সুনিল বাবুর 'পূর্ব-পশ্চিম' পড়েনি এমন বাঙালি বিরল। এছাড়াও, দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হওয়া তপন রায়চৌধুরীর 'বাঙ্গালনামা'ও অনেকে পড়েছেন। আমার বাবা-কাকারা ছোটবেলায় যে অনটনের মধ্যে মানুষ হয়েছেন আমাদের বেলায় সেটা পুষিয়ে দেওয়ার একটা বিশেষ চেষ্টা ছিল। তবে, কখনই সেটা মাত্রাতিরিক্ত হয়নি। 

মৃত্যু এবং অন্যান্য রাসায়নিক - নীলাভ বিশ্বাস

চিত্রালংকরণ: কর্ণিকা বিশ্বাস

বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট একটা টুল, টুলের উপর দুটো ট্যাবলেট,পেন,স্টীলের ঘড়ি,জলের গ্লাস আর একটা দলাপাকানো কাগজ। অথচ শুধু কাগজ বললে ভুল হবে, ওটা একটা চিঠি। শহরের মেরুদন্ড দিয়ে ঘষটে চলা অফিস ফেরত মানুষ, রাস্তার পাশে রাখা ভাঙা মিনিবাস, শববাহী গাড়ির পেছনে উড়ন্ত খই, ডাস্টবিনের কাক – এসব পার্থিব ছায়াছবিদের কাছে চিঠির জবাব চাইতেই রাস্তায় অনন্ত। নীহারিকার লেখা শেষ চিঠি। নীহারিকা হঠাৎ বেখাপ্পা কিছু কথা লিখে পাঠালই বা কেন জানার প্রয়োজন শুধু অনন্তর একার। বছর ষাটের বৃদ্ধ অনন্ত শহরের হাইওয়েতে একা। বৃষ্টি আসল।


বৃষ্টি কোথায় ? - সুস্মিতা দাস

ছবির সৌজন্যে

বাহিরে বৃষ্টি নেই;
শুকনো পথঘাট,
শুকনো ফুটিফাটা বিকেল, অস্তগামী।

পুড়ছে আরও পুড়ছে...
নিভৃতে, সন্তর্পণে,
ছড়িয়ে যাচ্ছে ডালপালায়।

নিভু নিভু আগুনে;
বিস্তার প্রমাণ;
নিষ্কৃতি অন্য ঠিকানায়।

রুদ্ধ দেওয়ালগুলির, ভিন্ন
চাবিরা এখন মৃত;
মুক্তির জল শূন্যের দিকে।

অকালবৈশাখীর অতর্কিত পূর্বাভাষ;
নিম্নচাপ!
বিভক্ত দিনগুলির পাড় ভাঙে।

অভিশপ্ত বায়ুর খেয়ালখুশি-
আজ ধীরতা চায়;
কিন্তু, বাহিরে বৃষ্টি কোথায়?

তিনটে শব্দ - প্রমিত নন্দী

বিরক্তির সঙ্গে মাথাটা তুললাম। পরবর্তী সংখ্যা প্রকাশের আর বেশি দেরি নেই। ঝাড়াই বাছাই করে তাড়াতাড়ি লেখাগুলো ছাপাতে দিতে হবে। হাতে যত কম সময় থাকে, প্রেসের বাছাধনদের নখরাবাজি যেন ততই বেড়ে যায়। এই রকম ব্যস্ততার সময়ে দেখি একটা উটকো লোক বেমালুম আমার ‘সম্পাদকের দপ্তরে’ ঢুকে পড়েছে! সঙ্গে সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ডকে ডাকতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হাবে ভাবে বুঝতে পারলাম, লোকটা আর কেউ না, একজন লেখক।

পাণ্ডুলিপির সুবিশাল স্তুপটার দিকে তাকালাম। লোকটা হয়তো কোন লেখা সাধ করে আমাদের পত্রিকায় পাঠিয়েছিল। তারপর বহুদিন ধরে কোন খবর টবর পায়নি। বেজায় চটে গিয়ে শেষমেশ হাজির হয়েছে আমার কাছে।

কিন্তু না, লোকটার বগলে দেখি একতাড়া কাগজ এবং কোন রকম ভণিতা না করে সেগুলো সে আমার সামনের টেবিলে ঝপাৎ করে ফেলে দিল!

“ছাপুন!”, জোর গলায় বলল লোকটা।