বর্ষা ২০২০

মূল ছবি— ভ্লাদিমির মান্যুখিন, গ্র্যান্ডে ডিউক

সম্পাদকের কথা

প্রিয় পাঠকবন্ধুরা,

সাধারণত নতুন সংখ্যার সম্পাদকের কথা শুরু করি পাঠকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে। কিন্তু মনে অঢেল শুভ ইচ্ছা থাকলেও চতুর্দিকের অশুভ ঘটনা তাকে ম্লান করে দিচ্ছে। দিনে হাজার হাজার মানুষ মারা পড়ছে করোনার প্রাদুর্ভাবে। এই লেখার সময় দেখছি এখনই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০০০ ছুঁই ছুঁই। কারণ লকডাউন উঠতেই মানুষ বাধ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন পথে, জীবিকার প্রয়োজনে। আবার অনেকেই আগের মতো জীবনযাপন করতে লেগেছেন। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সামিল।

শ্রেষ্ঠ = সমাপ্তি - রুমেলা দাস

উপন্যাস
এপ্রিল, ২০২০

‘তাহলে কি আর কোনও উপায়ই নেই স্যার? আমাদের... আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা কি এভাবেই...? মানুষগুলো একের পর এক মুড়ি মুড়কির মত পটাপট করে মরে যাচ্ছে। কেউ বাঁচাতে পারছে না। বিদেশের হাল দেখেছেন নিউজ চ্যানেলে? রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। নিজের আত্মীয়রাও ছুঁয়ে দেখছে না। আর সেখানে আমাদের দেশের তো মেডিকেল স্ট্রাকচার-ই জিরো। একবার কমিউনিটি স্প্রেড শুরু হলে থামানো খুব একটা সহজ কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না।

খেলা শেষ? - সায়নদীপা পলমল

উপন্যাস

পড়ন্ত বিকেলের লাল শামিয়ানাটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিয়া। মাঝে মাঝে এক দুটো পাখি শামিয়ানা ভেদ করে ছুটে চলেছে বাড়ি ফেরার তাগিদে, দিয়া চিনতে পারে না ওদের, দূর থেকে সবাইকে কালো দেখায়। না চিনতে পারলেও দিয়া জানে ওরা ঠিক বাড়ি ফিরে যাবে আর কিছু পরেই, কিন্তু দিয়া!

বাড়ি বলতে ঠিক কী, দিয়া আজ অবধি সেই মানে বুঝতেই ব্যস্ত। বাবার ট্রান্সফারের চাকরি, ছোটবেলার থেকেই তাই ভবঘুরে জীবন দিয়ার। মাঝে মাঝে খুব লোভ হয় ওর, একটা বাড়ি থাকবে যার প্রতিটা কোণায় জড়িয়ে থাকবে ওর পাঁচ বছরের স্মৃতি, দশ বছরের স্মৃতি, বিশ বছরের…

মাটি আকাশের মাঝখানে - পার্থ দে

গল্প

ওয়্যারহাউসের জানলা দিয়ে ছেলেটা আকাশটার দিকে তাকাল। অনুজ্জ্বল, কালচে আকাশ। আবার ম্লান আলো আর নৈঃশব্দে ভরা একটা কর্মব্যস্ত দিন শুরু হতে চলেছে। ইদানীং তার মনে হয় চতুর্দিকে একটা বিষণ্ণতার আস্তরণ তাকে জড়িয়ে রেখেছে। ওয়্যারহাউসের এই হ্যাঙ্গার, প্যান্ট্রি, শৌচালয়, বসার চেয়ার, টেবিল, সামনে রাখা কন্ট্রোল প্যানেল কিচ্ছু তার ভাল লাগে না। কতদিন ছেলেটা একটা নদী দেখেনি। মৃদুমন্দ বাতাস এসে তার চুল এলোমেলো করে দেয়নি। অথচ এই মহার্ঘ চাকরিটার জন্য সে আজীবন স্বপ্ন দেখেছিল।

আয়ুমু - সৌরভ ঘোষ

গল্প

“যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো।”

—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (‘প্রশ্ন’, পৌষ, ১৩৩৮)

সাল ২০৭৫ (মেনিস-১ বস্তি, পূর্ব-এশিয়ার একফালি ভূখন্ড)

এক অদ্ভুত নেশায় বুঁদ হয়ে আছে মানবসভ্যতা। এই নেশা মদ নয়, গাঁজা কিংবা কোনও সাইকাডেলিক ড্রাগ নয়। আফিমের থেকেও বিপজ্জনক এই নেশার উপাদান “অলীক বাস্তব”।

রেনেসাঁ - দেবলীনা চট্টোপাধ্যায়

গল্প

—“আর কি সত্যিই কোনো উপায় নেই?”

—“সরি প্রোফেসর। এটাই একমাত্র রাস্তা। আমি ৭৪৩২১৫৭৯০৩ সংখ্যক ডেটা অ্যানালিসিস করে দেখেছি।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডঃ উৎসব নিয়োগী। সামনের খোলা জানালা দিয়ে দূরের মাঠটার দিকে চলে গেল তাঁর নজর। এটা ওয়র্কস্টেশনের মাটির ওপর তলার অংশ। বাইরে থেকে দেখলে একটা ভাঙ্গা ওয়ার বাঙ্কার ছাড়া কিছুই না। গতরাতেই একটা ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়ে গেছে।

নতুন স্বর্গ - সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

গল্প

রেডিওতে শুনেছিলাম রাতের বেলা নাকি ঝড় আসতে পারে, সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। কিন্তু কমরেডদের এসব তুচ্ছ জিনিস কবেই বা দমাতে পেরেছে। মেসবাড়িতে একা থাকি। লুকিয়ে নকশাল করতাম। ধরা পড়ার ভয়ে মুখে কংগ্রেসী বুলি আওড়ালেও মনে মনে আমি কিন্তু সাচ্চা কমিউনিস্ট থুড়ি সোস্যালিস্ট।

সেদিন বিকেল থেকেই শুরু হয়েছিল পার্টি অধিবেশন। আজকাল আর গোপনে ঝটিকা মিটিং করতে হয় না। পার্টি ক্ষমতায়—কমরেডরা সবাই একটু রিল্যাক্সড মুডে।

প্রজেক্ট সুপ্রিমো - শোভন কাপুড়িয়া

গল্প

সূচনা

আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স চালিত এফভিডিস বা ফাস্ট ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন স্ক্রিনের মাধ্যমে কোনো এক ব্যক্তির একটা ভিডিও কল আসে তার কাছে... মুখে তার একটা তীর্যক হাসি ফুটে ওঠে। এই গোপন কনফারেন্সের জন্যই সে অপেক্ষা করছিলো।

—বলিয়ে হরকিষণ সাহাব, শুনা হ্যায় বহত দিনো সে আপ মুঝসে বাত করনা চাহতে থে!

—হান জি। আপকো মেরা মেসেজ তো মিল হি গ্যায়া হোগা। তো বোলিয়ে কব সে শুরু করনা হ্যায়।

অনাহূত - পৃথ্বীশ গজী

গল্প

“গুড মর্নিং পাপা, তুমি যে বলেছিলে এই দেশের ইতিহাস বলবে আমাকে।”

পামটপে সারা পৃথিবীর খবর ঘাঁটছিলাম। ঈশিতার কণ্ঠস্বর কানে আসতেই তাকালাম ওর দিকে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ও। ওদের স্কুলে ফোর্থ স্ট্যাণ্ডার্ড থেকে পড়ানো শুরু হয় এই দেশের ইতিহাস। ঈশিতাও কিছুদিন আগে ফোর্থ স্টাণ্ডার্ডে উঠেছে।

ইরাটোম্যানিয়া কিংবা স্মৃতি-খোঁড়ার গান - জুবায়ের রুমেল

গল্প

“...তারপর বলেন কী সমস্যা আপনার?” মৃদু হাসির সঙ্গে এক পেশাদারী কাঠিন্য ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছে প্রৌঢ় ভদ্রলোকের ঠোঁটে। ঢাউশ সাইজের এক্সিকিউটিভ টেবিলটার পাশে বেমানান চেয়ারটায় বসা যুবকটা এবার ভাল করে তাকাল প্রশ্নকর্তার দিকে। এতক্ষণ তার চোখ ঘুরছিল ঘরময়। হাসিতে অবজ্ঞা না অভয় মিশে আছে বুঝতে পারল না। সে যে পেশায় আছে সেখানে হুট করে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।

এমব্রায়ো - জাকিউল অন্তু

গল্প

আবার! সেই একই ঘটনা। তন্ময় যেন অনন্ত যাত্রায় আছে। আশেপাশে মানুষ যে একেবারে নেই তা নয়, কিন্তু বেশ তফাতে। সবাই হাঁটছে। প্রথমে মনে হলো একটা প্রশস্ত রাস্তা। পরে টের পেলো রাস্তাটা মূলত একটা ব্রীজ। একটু সাবধানে দু’পাশে উঁকি না দিলে দু’দিকের জলাধার চোখে পড়ে না। সাবধানে বলছি কারণ সে হেঁটে চলেছে একটা অদৃশ্য নির্দিষ্ট পথ ধরে। ওর ইচ্ছাশক্তির কোনও মূল্য নেই এখানে।

লটারি - পরাগ ভূঞ্যা

গল্প

নক্ষত্রখচিত আকাশ চেয়ে আছে আমার দিকে। রোজই চেয়ে থাকে। ওর কাছে আমিই ঈশ্বর। আমার ইশারায় আবার ভোরের ক্যানভাস হয়ে যায়। শিশু রৌদ্রের মৃদু আভা নেমে আসে। স্পিকারে বেজে ওঠে পাখিদের কলতান। এখন যদিও দুপুর তবুও রাতের আকাশ ভালো লাগে। আমার আর শ্রীপর্ণার ভালো লাগে। মাঝে মাঝেই ওর ভেন্টিলেশন্ মাস্ক খুলে ওকে চুমু খেতে ইচ্ছে করে।

নব রবিকিরণে - রাকেশকুমার দাস

গল্প
এক

জলতরঙ্গের মতো ঝিলমিল সঙ্গীতের মূর্ছনায় আর মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল নূর সুমনের। চোখ না খুলেই হাত নাড়িয়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করল, মোরগও থেমে গেল। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই ঘরের উলটো দিকের দেওয়ালে মোরগটাকে দেখতে পেল নূর। খড় দিয়ে ছাওয়া একটা মাটির বাড়ির সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পাশে একটা গরু বিচুলি চিবিয়ে চলেছে।