আসছি আমি - অর্পণ কুমার মাজি

বিচ্ছেদ বরাবরই সৃষ্টিশীল
বিচ্ছেদেই প্রথম কবিতা প্রসব
মিলনে সৃষ্টি ভ্রূণও পূর্ণতা পায়
সেই বিচ্ছেদে।

ভো কাট্টা। বিচ্ছেদ।

লাটাই সুতোটান দাঁতে কেটে
বাতাসে বীজ বপন করেছি
দাঁড়িয়ে থেকো তোমার ছাদে

একলা ঘুড়ি আসছি 
আমি...


চিত্রালংকরণ - কর্ণিকা বিশ্বাস

ট্রেনের সন্তান - সুবোধ মাহাতো

“বাবু! এক রুপাইয়া দো না!” — দুপুরের এক পশলা বৃষ্টির পর, ট্রেনের সীটে বসে যেই একটু আঁখি-পল্লব যুগলকে আলিঙ্গনের সুযোগ করে দিলাম, ঠিক তখনই চিরাচরিত এই আবেদন শুনে একটু বিরক্তই হয়ে গেছিলাম। “এখন খুচরো নেই” বলে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বৃথা সেই চেষ্টা। চোখ একটু ভালো করে খুলতেই দেখলাম যে একজন নয়, দুজন দাড়িয়ে আছে। ট্রেন ছাড়তে এখনও মিনিট পঁয়তিরিশ বাকি। পাশের সীটগুলো তখনও যাত্রী-অপেক্ষারত। ভাবলাম, ভর্তি ট্রেনে কোনোদিন তো সুযোগ হয়নি, এই একটা বেশ সুযোগ ওদের মুখে ‘চিরাচরিত’ ওই আবেদনটা ছাড়াও অন্য কিছু শোনার।

আজকের শপথ - সুদীপ ভট্টাচার্য্য

আজকে আবার নতুন করে সূর্য উদয়
এই পাড়াটাও নতুন নতুন লাগছে মনে।
পুরোনো সব গ্লানিগুলো আজকে উধাও
দাঁড়কাকটাও রঙিন হওয়ার প্রহর গোনে।।
আজকে হবে সব পেয়েছির প্রভাতফেরী
বাতিল হওয়া রঙগুলো ফের মাখবো গায়ে।
আজকে ভাঙুক অসাম্যের ঐ শিকল বেড়ী
বিশ্ববুকে ফেলব যে ছাপ আলগা পায়ে।।
আজকে থেকে সমাজ দূষণ বন্ধ হবে
খুন, ধর্ষন, চোর, ডাকাতি যেই পাবে লোপ।
প্রেম শুধু প্রেম থাকবে লোকের হৃদয় জুড়ে
সমাজ জুড়ে ভালোবাসার বাড়বে প্রকোপ।।
আর ঘুসি নয় এবার করো হাত দুটো জোড়
ক্রোধের ভাষাও নম্র ভাবে বলতে শেখো।
ধৈর্য্য রাখো সমাজখানা ঠিক নেবে মোড়
যদি তুমি খোদার নামে পদ্য লেখো।।
বোম-বন্দুক, জেহাদ-টেহাদ নাইবা হলো
কার্তুজ নয়, লালচে রঙের গোলাপ নিও।
গ্রেনেডটাতে সঞ্চয়িতার শব্দ ঠেসে
সমাজটাকে নাহয় প্রেমের আঘাত দিও।।
কোরান, পুরাণ ছুঁয়ে যে যার দিব্যি করো
আজকে থেকে রক্ত নিয়ে খেলবে না দোল।
গোলাগুলির শব্দগুলো ভুলেই যাবে
শব্দ বলতে বুঝবে শুধু ধামসা-মাদোল।।
গ্রাম হোক বা শহরতলির রাজপথেতে
চলবে না আর ধর্মধারীর সন্ত্রাসী রথ।
জামাত ভাইরা মায়ের মাথা ছুঁয়ে বলো
আজকে থেকে দেশপ্রেমের নিচ্ছ শপথ।।


চিত্রালংকরণ - কর্ণিকা বিশ্বাস

কুটুম কাটাম - শিল্পী দেবাঙ্গী বক্সি

“হে নীলিমা নিষ্পলক, লক্ষ বিধিবিধানের এই কারাতল 
তোমার ও মায়াদণ্ডে ভেঙেছ মায়াবী।”
(নীলিমা, জীবনানন্দ দাশ)


“মাৎসর্য-বিষদশন, কামড়ে রে অনুক্ষণ! 
এই কি লভিলি লাভ,অনাহারে,অনিদ্রায়?”
(আত্মবিলাপ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত)


“প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে 
শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ 
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন?”
(প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার, মলয় রায়চৌধুরী)


কোন সে সত্তা! - সঞ্চয়িতা দাস

রূপোলী জ্যোৎস্না!
শীতল হাওয়ার শিহরণ সারা শরীরে!
মনটা হারায় ভরা গোধূলির দিনগুলোতে—
সুচিভেদ্দ্য নিকষ কালো অন্ধকারের আকাশে;
মায়াবী চাঁদের মত দীপ্ত তোমার মুখ!
ঠিক যেভাবে চাঁদ তার রূপোলী রাঙতায়—
আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়ে রেখেছে গোটা প্রকৃতিটাকে,
সেইভাবেই তোমার মধ্যে মিশে যেতে ইচ্ছে হয়,
অন্তরের পরতে পরতে অনুভব করি তীব্র ভালোবাসা!
সারা গায়ে মেখে নিই থই থই জ্যোৎস্না।
আর চারপাশের এই ধূসরতা প্রশ্ন করে ওঠে—
কোন সত্তাকে ঘিরে এই উষ্ণতা?



চিত্রালংকরণ - কর্ণিকা বিশ্বাস

হঠাৎ দেখা - সই

প্রতিদিন নীরা,অন্তত আধ ঘণ্টার জন্য হলেও এখানে এসে দাঁড়ায়। এটা তার বড় প্রিয় জায়গা। এই উপর থেকে ওই গহীন খাদের দিকে চেয়ে থাকতে তার বেশ লাগে… কত রহস্য, কত অন্ধকার লুকিয়ে আছে এর মধ্যে — ঠিক তার মনের খাদের মতন।

প্রায় ৪৫ মিনিট আগে এসেছে। এখানে তেমন লোকজন বা টুরিষ্ট আসে না। হাতঘড়িটা দেখে নিয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তায় পা বাড়াতে গিয়েই দেখতে পেল… আকাশকে। 

হঠাৎই যেন চলন্ত জীবনটা কেউ রিমোটের পজ বাটানে ক্লিক করে রিওয়াইন্ড মোডে নিয়ে যাচ্ছে… আর একটার পর একটা স্মৃতি ফ্ল্যাশব্যাকে দেখতে পাচ্ছে। নতুন গড়ার স্বাদ, বেড়ে ওঠা, ভাঙনের শুরু, শব্দবিহীন শেষ হয়ে যাওয়া একটি অধ্যায় যেখানে রাগ, জেদ আর ভুল বোঝাবুঝি হারিয়ে দিয়েছিল ৬টা বসন্ত পেরিয়ে আসা ভালবাসাকে।