সম্পাদকের কথা
প্রিয় পাঠকবন্ধুরা,
প্রথমেই আপনাদের সবাইকে জানাই নতুন বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আপনাদের সঙ্গে পরবাসিয়া পাঁচালীও পেরিয়ে এল আরো একটা বছর। গত বছর এই সময়েই প্রকাশিত হয় আমাদের বিশেষ কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসি সংখ্যা। নতুন বছরের শুরুতে কী বিষয়ে আমাদের পত্রিকা সাজানো যায় নিয়ে বেশ দোলাচলে ছিলাম। তখন একদিন দুই পাঠকের যে কথোপকথন শুনি তা খানিকটা এইরকম...
ভুতুমের ঝিঁঝিভূত - সাম্য দত্ত
একে তো রোগাপাতলা শরীরটা দিয়ে উইকেটের অর্ধেকও আড়াল হয় না, তায় ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার! গ্লাভস নেই, হেলমেট নেই, এমনকি অন্ধের যষ্টি একখানা ব্যাটও নেই---- ব্যাটিং ক্রিজে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছিল ভুতুম। একটা বল, যা হোক করে এই একটা বল পার করতে পারলেই আজকের মতো নিশ্চিন্দি!
শিবুর সন্ন্যাস - দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
শিবুদের বাড়িটা একটা বিচিত্র জায়গা ছিল। সবসময় গিজগিজ করছে লোকজন। বাবারা আটভাই, মা কাকিমা আটজন, জ্যাঠতুতো খুড়তুতো মিলে একতিরিশজন ভাইবোন, তাদের বয়স একুশ থেকে সাড়ে আট মাস, দুই পিসি, দাদু-ঠাকুমা, তাছাড়া, দিনে গড়পড়তা দশজন অতিথ কুটুম, আর এই সমস্ত লোকজনের দেখভাল করবার জন্য বাঙালী, বিহারী, উড়ে মিলে বেশ ক’জন কাজের লোক।
গোবিন্দগড়ের রাজামশাই - সুস্মিতা কুণ্ডু
রাজামশাইয়ের মন খারাপ। খারাপ মানে খুউউউব খারাপ, বেজায়রকমের খারাপ। যেরকম খারাপ হলে নলেন গুড়ের রসগোল্লাও মোটে ন‘টা খেয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেলে থেমে যেতে হয় কিংবা ধরো রানিমা পাতে পাঁঠার কালিয়ার বদলে মুর্গির ট্যালট্যালে ইস্টু না কী যেন দিলেও রাজমাতার কাছে গিয়ে নালিশ করতে ইচ্ছে করে না, ঠিক সেই রকম মন খারাপ রাজামশাইয়ের। আর হবে নাই বা কেন?
বাস্তবসম্মত - ধূপছায়া মজুমদার
সরসতা নাকি ছড়িয়ে রয়েছে দশ দিকে, কেবল কুড়োতে জানলেই হলো। তা, সে জিনিস কুড়োনোর কি স্পেশাল কোনও যন্তর পাওয়া যায় বাজারে? নইলে সংসারের গোড়ায় সারবস্তু জুগিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখতে রোজ ভোররাত থেকে মাঝরাত পর্যন্ত যে উস্তুমকুস্তুম লড়াইটা লড়ে যেতে হয় সত্যসাধন দত্তকে, তার মাঝে সরসতা দেখাই বা দেবে কখন, আর ধরাই বা দেবে কখন?
বাঁশ - দেবলীনা চট্টোপাধ্যায়
-মশাই, ও মশাই, শুনছেন?
-উঁ?
-আরে মোলো যা! আরে ওওও দাদা, বলছি আপনি কি ডেডবডি নাকি?
কনস্ট্যান্টস - অনিন্দ্য রাউৎ
বাজি ধরে কিছু করাটা ঠিক ভালো লাগে না আমার, কিন্তু আমার ভালো লাগে না বলেই বা শুনছেটা কে? আসলে আমি বা অনন্য যাই চাই তা কোনোদিন হয় না। সেই ছোট থেকেই এমনটা হয়ে আসছে দেখি, যখন খুব ভালো পরীক্ষা দিয়ে আসতাম, মন খুশি থাকতো, সেদিন মাঠে গিয়ে শূন্য রানে রান-আউট হতামই!
সাজেকের লোমশ আতঙ্ক ও এইট মেটাল ম্যান - শিমুল মন্ডল
সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা চায়ের দোকানটার কাঠের ঝুল বারান্দায় বসে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভবাদা বলল, “ধ্যাত, এমন হবে জানলে তোদের সাথে আসতামই না।” ভবাদার কথাটার জবাবে যে কিছু বলব সে উপায় নেই, আসলে বেড়াতে এসে এভাবে ঘরে বসে থাকতে কারই বা ভালো লাগে, এমন হবে জানলে হয়ত এদিকে না এসে অন্য কোথাও যাওয়া যেত।
আজব প্রাপ্তি - সুমন মিশ্র
ঠুকঠুক,খচখচ, ঠকঠক, ফসফস।
বেশ কিছুক্ষণ ধরেই নানারকম শব্দ আসছিল বাইরের বাগান থেকে। নিতুবাবুর স্ত্রী শশীকলার ঘুমটা বেশ পাতলা, একটু শব্দেই ভেঙ্গে যায়। আর এই শব্দটা তো বেশ অনেকক্ষণ ধরেই চলছে। তবে একটানা নয়, থেকে থেকে, মাঝে মাঝে। প্রথমে ঘুম ভাঙলেও ঠিক ঠাওর করতে পারছিলেন না ব্যাপারটা। হয়ত কোন ধেড়ে ইঁদুর ঘরে ঢুকে পড়েছে। অথবা মুখুজ্জেদের বদ হুলোটাও হতে পারে।
আবুলের দোকান - মোঃ শোআইব খান
শেখ আবুল কাসেমকে আশেপাশের নানা লোক নানা নামে চেনে। প্রতিবেশীর কাছে তিনি আবুল ভাই আবার ক্ষমতাবলে বড়লোক বন্ধুর কাছে তিনি শুধুই আবুল। বাড়ির বাইরে রাস্তার হাঁটার সময় মাঝে মাঝে ছেলেপিলেদের কাসেম স্যার, কাসেম স্যার বলে সালাম দেওয়াটাও একেবারে পুরনো হয়ে গেছে আবুল সাহেবের কাছে। লোকজন এই ডাক শুনে মনে মনে যা অনুমান করে তা একদম মিথ্যা না।
দলিলের খোঁজে - বিভাবসু দে
উফ! আরেকটু হলেই ট্রামের তলায় হুমড়ি খেয়ে আমার ‘জীবনানন্দ’ চিরজীবনের মতো ঘুঁচে যাচ্ছিল! জোর বাঁচান বেঁচে গেছি। আসলে ব্যাপারটাই এমন যে চোখে পড়লে যে-কোনও সুস্থ মানুষেরই স্থান-কাল জ্ঞান লোপ পাবে; তখন ট্রাম কেন ডাইনোসর তেড়ে এলেও হুঁশ থাকবার কথা নয়। মানে জীবনে ব্যবসা অনেক দেখেছি, তাই বলে এমন অভিনব উদ্যোগ! তাও আবার দিনেদুপুরে, মাঝরাস্তায়, একেবারে দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়ে!
দ্য ওয়ে আপ টু হেভেন - রোয়াল্ড ডাল - লুৎফুল কায়সার
কোন জায়গাতে যাওয়ার সময় কিংবা ট্রেন, প্লেন, বাস ইত্যাদি ধরার সময়ে মিসেস. ফস্টারের সমস্যাটা শুরু হয়।
সারাটা জীবন উনার মধ্যে এক অদ্ভুত আতংক কাজ করে এসেছে, যে তিনি হয়ত জায়গাটাতে দেরী করে পৌছবেন কিংবা ট্রেন পা প্লেন ধরতে পারবেন না!
হার-না-মানা মেইসেল - জয়িতা সাহা
ষাটের দশকের নিউইয়র্কে সন্ধেবেলার দিকে যদি গ্যাসলাইট পাবে যান, মিজের সাথে মোলাকাত হতে পারে। মিরিয়াম মিজ মেইসেল। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অঙ্কের অধ্যাপক এব্রাহাম আর ওকলোহমা প্রভিন্সের উত্তরাধিকারী, প্যারিসে শিল্পচর্চা শেখা রোজের একমাত্র কন্যা। মিজ তার জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাস প্ল্যান করে নিতে শিখেছে। সম্ভ্রান্ত জিউইশ পরিবারের আদবকায়দা পালনে তার জুড়ি মেলা ভার।
সাহিত্যে হাস্যরস - তপন তরফদার
পৃথিবীতে মানুষ নামক প্রাণীরাই হাসতে পারে। অন্যরা কেন হাসতে পারে না, তা খুঁজতে গেলে দেখা যায় মানুষকে হাসার জন্য সব থেকে বেশি স্নায়ু-পেশীর সাহায্য নিতে হয় --- এমনকি বিরহ, শোক-সন্তাপের ক্রন্দনের থেকেও বেশি স্নায়ুর ব্যবহার করতে হয় হাসির জন্য। হাসি সংক্রান্ত শরীরবিদ্যাকে বলে “গেলাটোলজি” (Gelatology)। হাস্য গবেষক রবার্ট প্লোভিনের অভিজ্ঞতায় বলে, মস্তিস্কের বিভিন্ন স্নায়ু, পেশী বিভিন্ন শারীরিক মানসিক ঘটনা ঘটায়।