সম্পাদকের কথা
প্রিয় পাঠকবন্ধুরা,
প্রথমেই আপনাদের সবাইকে জানাই নতুন বাংলা বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। বেশ কিছুদিন পরে আপনাদের কাছে নিয়ে এলাম পরবাসিয়া পাঁচালীর এই নতুন সংখ্যা। পত্রিকা প্রকাশে বেশ খানিকটা বিলম্ব হলেও আশা করি আপনারা চারপাশের চরম নিরানন্দময় পরিস্থিতিতে আমাদের অপারগতার কথা কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছেন।
শ্রোডিঙ্গারের ঐশ্বরিক বিড়াল - মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম
“আরে ভাই কেন শুধু শুধু বিরক্ত করছেন? আর কতবার বলবো আমার কাছে সেই রিসার্চের আর কোনও ভার্সন নেই। যে কপিটি ইউনিভার্সিটির তদন্ত কমিটিকে দেওয়া হয়েছিলো সেটিই ফাইনাল ভার্সন। কয়েকদিন পরপর ফোন দিয়ে সেই একই ঘ্যানঘ্যান করেন! বিরক্তিকর!”
ফোনের অপর পাশ থেকে অচেনা কণ্ঠটি বলে, “আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে খবর পেয়েছি আপনার কাছে আরেকটি ভার্সন আছে। দেখুন, আপনি যতো টাকা চান আমরা দিতে প্রস্তুত। আমাদের স্যার টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করেন না। আপনি…”
AU REVOIR - সায়ন্তনী পলমল ঘোষ
স্বচ্ছ দেওয়ালের ওপারে তাকিয়ে ছিলেন দীর্ঘকায় পুরুষটি। হাজার হাজার জোনাকির মত আলোকরাজিতে সেজে উঠেছে রাতের শহর। আকাশে হাজার হাজার নক্ষত্ররাজি নিশ্চিন্তে বিশ্রামরত। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটো বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথার মধ্যে অনেক হিসেব নিকেশের কাটাকুটি আর কান দুটো সজাগ হয়ে শুনছে ঘরের মধ্যে উপস্থিত দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা। কথা না বলে পরিকল্পনা বলাই ভালো। কথা শেষ করে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হয়ত তাঁর মনের খবর বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। কয়েক মুহূর্ত পর প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে ফিরে তাকালেন। মুখে ব্যঙ্গাত্মক হাসির আভাস।
শিশুশিক্ষা - সুমিত বর্ধন
মহামহিম মান্যবর শ্রীযুক্ত অ্যান্ডি জি. এইচ. চিয়ুং
বৃহৎপ্রাচ্য যুক্তরাজ্য মানব শিক্ষা বিভাগ নিযুক্ত
ভারতবর্ষীয় শিক্ষাসমাজধিপতি মহাশয়েষু।
সমুচিত সম্মানপূর্ব্বক সবিনয়নিবেদনমিদম।
মহাশয় অবগত আছেন মেধাযন্ত্রোপরি অধিক নির্ভরশীলতা ও প্রথম পাঠোপযোগি পুস্তকের অসদ্ভাব হেতু অস্মদ্দেশীয় শিশুগণের যথা নিয়মে স্বদেশ ভাষা শিক্ষা সম্পন্ন হইতেছে না
চড়াই পাখি, ফিরে এসো - রনিন
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারপাশে গজিয়ে ওঠা পিঁপড়ের ঢিবিটাকে দেখছিলো ‘কিরা’। ওটা আসলে শহর। সন্ধ্যা নেমে আসার আগে যতক্ষণ রাস্তার উজ্জ্বল আলোগুলো চোখ বুজে থাকে, ওই চেনা জনপদটাকেই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য কেমন অন্ধকার আর নোংরা বলে মনে হয়। আলো জ্বললেই সব মালিন্য উধাও ভোজবাজির মত।
পালনকর্তা - লুৎফুল কায়সার
অদ্ভুত বইটা খুলে এক নাগাড়ে পড়ে যাচ্ছেন ড. রায়হান খান। সত্তরের মতো বয়স হবে তাঁর, এই বয়সেও যথেষ্ট শক্ত-সমর্থ তিনি। বইটার প্রায় শেষের দিকে এসে গেছেন, পৃথিবীকে এই মহামারি থেকে বাঁচানোর এই একটাই উপায়।
নশ্বর - সোহম গুহ
আমার মেয়ের জন্ম হয়েছে আজকে; তার প্রথম কান্না ডুবে গিয়েছে কলকাতার দাঙ্গায় সদ্যমৃত মানুষের আর্তনাদে। না, ১৯৪৬-এর মত হিন্দু মুসলিমের মধ্যে হয়নি এই লড়াই; হয়েছে ভীত, আতঙ্কিত একদল মানুষের মধ্যে। তাদের আমি দোষ দিই না। বেলভিউ হাসপাতালের কাচের জানলা ভেদ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কলকাতার রাস্তায় জ্বলা গাড়ির আগুনের আলো কতটুকুই বা চোখে পড়েছে আমাদের?
মহা সিমুলাই - তানজিরুল ইসলাম
নথি নম্বর: টধ-২০৮৭৫৪৮১৮৩৫৬৫৮৫৩৯
মহাবিশ্ব ১০১৮৭১ থেকে সফল উৎক্ষেপণের পর মানবজাতির ‘ভয়েজার মিশন’ এর পরবর্তী ঘটনা ও পরিণতিসমূহ নথিভুক্ত করা হয়েছে এই নথিতে।
অদম্য - সহস্রাংশু গুহ
‘ভয়’, ছোট্ট নিগূঢ় এই শব্দটি কত গভীরভাবে জড়িয়ে যায় একেক সময় মানুষের জীবনে। তাপমান যন্ত্রের পারদ যখন শূন্যের নীচে গিয়ে স্থবির হয়ে যায়, হিমেল শীতল বাতাস যখন হু হু শব্দ করে বৃদ্ধ মানুষটির অনাবৃত মুখের ফ্যাকাসে কুঞ্চিত চামড়ায় শলাকার মতো বিঁধতে থাকে, শরীরের শেষ উষ্ণতাটুকুও যখন আড়াল খুঁজতে উদ্যত হয় সেই সময়ও ভয়ের অনুভূতি বেরিয়ে আসে কানের পাশ দিয়ে গরম লবণাক্ত জলের রূপ ধরে।
শুদ্ধিকরণ - মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
প্রত্যেকটা বছর একটু একটু করে কমতে থাকে আমার প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা, একজন-দুইজন করে মুছে যেতে থাকে স্মৃতি থেকে। আজ আমরা ডেস্কগুলোকে বৃত্তাকারে সাজিয়েছি; আমাদের শিক্ষিকা, মিস সাদিয়া, বলছেন যে সিন্থিয়া এই দুনিয়ার চাইতে অনেক উত্তরে একটা জায়গায় গিয়েছে।
অন্তিম উপহার - শিমুল মন্ডল
২৫শে মার্চ, সোমবার, ২০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ। নিজের বসার ঘরের প্রিয় কাউচটায় আধশোয়া হয়ে ভ্রু কুঁচকে সামনের হলোগ্রাফিক পর্দায় চেয়ে আছেন প্রফেসর লি ওয়েনল্যাং । পর্দা জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর একটা মানচিত্র। মানচিত্রটা দেখে নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় প্রফেসর লি’র। পৃথিবীটা আর আগের মত নেই, ভেবে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি। তার ছোটবেলায় পৃথিবীর মানচিত্রে সাতটা মহাদেশ ছিল, আর এখন আছে মাত্র পাঁচটা।