সম্পাদকের কথা

বইমেলার পাট চুকল তাহলে। বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাও জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবারের জন্য বাঙালির অপেক্ষা আর পাঁচটা পার্বণের মতো একদমই নয়। এখন ফ্লিপকার্ট আমাজন এর দৌলতে সারা বছরই বই কেনা হয়। আর সব চাহিদা মেটাতে কলেজ স্ট্রিট তো আছেই। কিন্তু কল্পনার জগতে হারিয়ে যাওয়ার এই উৎসবে বাঙালিকে নামমাত্র ছাড়ে বই কিনতে রুধিবে এমন সাধ্যি স্বয়ং মা দুর্গারও নেই। সারা বছর যে সমস্ত কবি সাহিত্যিকের লেখা পড়া হল কিংবা যাদের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ তাদের চাক্ষুষ দেখার সুযোগ, তাদের সইসম্বলিত বই হাতে বাড়ি ফেরার এই লোভ সত্যিই অসংবরণীয়।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাকি পার্বণের চরিত্র বদলেছে, বইমেলাই বা বাদ পড়ে কী করে? মেলা বই কিন্তু ফুড কোর্টে ধুলোমাখা বিরিয়ানিভক্ষকের লাইনগুলো মাঝে মাঝেই বইয়ের দোকানের ভিড়ের তেজকে বড্ডো বেশি। ভিড়ের চোটে মাঠের দূষণ মাত্রা প্রায়শই বিপদ সীমা পার করলেও বছরের বাকি সময়ের বেশির ভাগটাই বাঙালির সময় কাটছে স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে। বাবা মায়েরা বুড়ো আংলাকে জোড়া বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হ্যারি পটার কিনে দিতে ভীষণরকম আগ্রহী নইলে কিনা পাড়ায় ঠিক মুখ দেখানো যাবে না। কিছু বইয়ের বিক্রি আকাশছোঁয়া আর অধিকাংশ বই উই তাড়াচ্ছে। তাই বছর কে বছর মেলায় ভিড় বাড়লেও বাঙালির বই প্রীতি আসলে কতটা সেটা নিয়ে অনেকের মনেই অনেকখানি আশংকা।

আমরা পরবাসিয়ার দল মনে করি এত ভিন্ন স্বাদের বিনোদনের প্রলুব্ধকর হাতছানির মধ্যেও বইয়ের আবেদন কোনোদিনই কম হবে না। আর এই আশায় বুক বেঁধেই নিয়ে এসেছি পরবাসিয়া পাঁচালীর নতুন সংখ্যা। আশা করি সবার ভালো লাগবে। জানি বইমেলার কেনা বইগুলো চুম্বকের মত টানছে। তার মধ্যেও যদি সময় করে লেখাগুলো একটু পড়ে ফেলেন আশা রাখি নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। ভালো লেখা পড়ুন, ভালো লেখা পড়ান। এবারের মত এইটুকুই।