লাভক্র্যাফটের দুনিয়া - প্রতিম দাস

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ৪০ বছরের পাঠক জীবনে টুকটাক এই মানুষটার লেখা পড়লেও, গত ২ বছর ধরে যেভাবে মানুষটাকে নিয়ে চর্চা করছি তা এর আগে কোনোদিন করিনি। ছোট বড় মিলিয়ে ৩১ টা গল্প অনুবাদ করেছি। তার সাথে সাথেই এ বছরের শুরুতে আরম্ভ করেছি থুলু মিথোজ এর নানান বিষয়আদির একটা বাংলা বিশ্বকোষ বানানোর কাজ। যারা এইচ পি লাভক্র্যাফটের সম্বন্ধে জানে তাদের কাছে CTHULU বা থুলু অতি চেনা শব্দ । যারা জানেন না তাদের জন্য জানাই, ইনি লেখক সৃষ্ট এক অন্ধকার নক্ষত্রলোকের দেবতা। শব্দটি আমাদের জিভে উচ্চারণের অযোগ্য । আপাতত যিনি সমুদ্রের তলে এক পাথুরে নগরীতে ঘুমিয়ে আছেন, কোনও একদিন উঠে আসবেন এবং এই পৃথিবীর দখল নেবেন ।

লেখক সৃষ্ট এরকম অনেক কাহিনীকে একসাথে থুলু মিথোজ বলা হয় । পরবর্তীকালে অনেক লেখক তার ভাবনা ও চরিত্রদের নিয়ে অনেক গল্প উপন্যাস লিখেছেন । সেসবকেও বর্তমান সময়ে এক সাথে থুলু মিথোজ বলা হয়ে থাকে। আমি সেটা নিয়েই কাজ করছি । ইতিমধ্যে ৩০টা বিষয় ফেসবুক এবং আমার ব্লগে পোস্ট করেছি । আগ্রহ থাকলে ব্লগ পোস্টের লিঙ্ক লেখার শেষে দিলাম ।

এখানে কিঞ্চিৎ বড় মাপের আরো দশটি বিষয় আপনাদের জন্য পেশ করলাম । অনেক অনেক গল্প ও কাহিনীতে এসবের উল্লেখ আছে । তাই সেসব আর উল্লেখ করে কলেবর বৃদ্ধি করলাম না। বরং এগুলো পড়ে সামগ্রিকভাবে থুলু মিথোজ পড়ার প্রতি আপনাদের আগ্রহ বাড়বে এই আশাই করছি ।

 

আকলো

ভ্যালুশিয়ার সরীসৃপ মানবদের ভাষা। এই ভাষা পরিমার্জিত করে আজও ব্যবহার করেন গ্রেট ওল্ড ওয়ান বা মহান প্রাচীন দেবতাদের উপাসকেরা । তাদেরকে এই ভাষা শিখিয়েছিলেন তাদের প্রভুরাই । ওয়েলস কিংবদন্তীর ক্ষুদ্র মানুষেরাও এই ভাষায় কথা বলে।

আকলো শব্দটি পর পর কিছু জাদুবিদ্যাসম্মত আচারপ্রথা পালনকে বোঝাতেও ব্যবহার করা হয় । আবার কখনো কখনো এক বিশেষ সময়কে বোঝাতেও ব্যবহৃত হয় । বিশেষ রীতি পালনের এমন এক সময় যখন মন্ত্রপাঠ করা দরকার।

ই এ হিচককের লেখা ‘রিমার্কস আপন আলকেমি’ পুস্তকে এ বিষয়ে একটি সূত্র মেলে । যেখানে আকলো নামক ট্যাবলেটের দুর্বোধ্য অজ্ঞাত গোপন রহস্যর উল্লেখ করা হয়েছে। যা নাকি আসলে একগুচ্ছ লেখনী যাদের সন্ধান মেলেনি আজও ।

আলোঞ্জো টাইপার নামক এক অকাল্টবিদের ডায়েরীর লেখা পড়লে মনে হয় উনি এই আকলো লেখনী পাঠ করেছিলেন । তার ডায়েরীতে কিছু আচার প্রথা পালনকে উনি আকলো ফর্মুলা নামে উল্লেখ করেছেন। যার ভেতর তৃতীয় ফর্মুলাটি অদেখা সত্তা বা বস্তুকে দেখতে সাহায্য করে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু ফর্মুলাগুলো ঠিক কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

জন ডী প্রাক-মানব যুগের এনোকিয়ান নামের একটি ভাষা দেবদূতদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। এক অকাল্টবিদের মতে ওই ভাষার সাথে আকলোর মিল আছে। বর্তমানে অনেক অকাল্টিস্ট গ্রুপও এনোকিয়ান ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। যদিও আকলো ভাষায় লেখা অনুচ্ছেদগুলোর সাথে এনোকিয়ানের মিল গবেষকরা খুব একটা পাননি । পাওয়া গেলে সেটা বেশ কৌতূহলজনক কিছু হতে পারতো ।

 

আব্দুল আলহাজ্রেদ

ঈয়েমেনের সানা প্রদেশ নিবাসী এক উন্মাদ কবি আব্দুল আলহাজ্রেদ । বলা হয়ে থাকে ৭০০ খ্রিস্টাব্দে যখন ওমিয়াদে খলিফার রাজত্বকালে উনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন ।

একাই নাকি ঘুরে দেখেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া, ব্যাবিলনের ধ্বংসাবশেষ এবং মেমফিসের ভূগর্ভস্থ গোপন এলাকাগুলো । দশ বছর একাকী ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন আরবের বিশাল দক্ষিণাঞ্চলীয় মরুভূমিতে । ‘রোবা এল খলিয়াহ’ বা আদিম অধিবাসীদের "শূন্য স্থান" এবং "দহনা" বা আধুনিক আরবদের দ্বারা কথিত "রক্তলাল" মরুভূমির নাম এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

তার পাগলামোরও অনেক কিস্যা প্রচলিত আছে। আলহাজ্রেদ দাবি করতেন, তিনি নাকি ‘ইরাম’ বা সিটি অফ পিলারস নিজের চোখে দেখেছেন। এছাড়াও বিশেষ এক স্থানে নামহীন মরুভূমি নগরের ধ্বংসাবশেষের খোঁজও নাকি তিনি পেয়েছিলেন । যার নীচে পাওয়া গেছে এমন এক জাতির নানান চমকপ্রদ বৃত্তান্ত এবং গোপন তথ্য যাদের বয়স মানবজাতির বয়সের চেয়ে অনেক অনেক বেশী।

আলহাজ্রেদ এক ভিন্ন পথে হাঁটা উদাসীন মোসলেম ছিলেন, যিনি অজানা অজ্ঞাত সব অস্তিত্ববান সত্তাদের উপাসনা করতেন। পাগল কবির বক্তব্য অনুসারে যাদের নাম ইয়োগ-সোথোথ এবং থুলু।

জীবনের শেষ কয়েকটা বছর আলহাজ্রেদ দামাস্কাসে বসবাস করেছিলেন। সেখানেই নেক্রোনোমিকন (আল আজিফ) লেখেন তিনি। তার চূড়ান্ত মৃত্যু বা অন্তর্ধান (৭৩৮ খ্রিস্টাব্দ) বিষয়ে অনেক ভয়ানক এবং দ্বন্দ্বপূর্ণ কথাবার্তা প্রচলিত আছে। ইবনে খল্লিকান (১২তম শতাব্দীর একজন জীবনী লেখক) তার বিবরণীতে লিখে গেছেন – আলহাজ্রেদকে ঝকঝকে দিনের আলোতে এক অদৃশ্য দানব আক্রমণ করে গিলে খেয়েছিল। আর সেই হাড়হিম-করা দৃশ্য নাকি পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেসময়ের প্রচুর মানুষ দেখেছিলো ।

আদ নামে এক পৌরাণিক উপজাতির তিনি বংশধর ছিলেন বলেও জানা যায়।

মানুষটির বিষয়ে নানা বিতর্কিত অসমর্থিত তথ্য পাওয়া যায় –

জাদুকর ইয়াক থুবের কাছে আব্দুল নেক্রোম্যান্সির পাঠ নিয়েছিলেন। গুরু মারা গেলে তার অনুগামীদের নিয়ে উনি এক সফরে বের হন। যার সূত্রে বেশীরভাগ অনুগামীই মারা যায় – কার্টার ।

লেভেন্ডা লিখে গেছেন, এক আলহাজ্রেদের কথা যিনি ছিলেন এক তরুণ পশুচারণকারী । ঘটনাচক্রে আলহাজ্রেদ এক প্রাচীন সত্তার উপাসনা দেখে ফেলেন এবং কোনোক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান। এরপর আর পশুচারণার কাজ করেননি।

সেন্ট আল্বান্সের লেখনী অনুসারে, আলহাজ্রেদ ছিলেন এক রৌপ্য ব্যবসায়ী এবং জনৈকা পতিতার সন্তান। অতিমাত্রায় শিক্ষিত মানুষটার বিবাহ হয় তাবেজের গভর্নরের মেয়ের সাথে। দুটো সন্তান হয়। এরপরেই আল হাজ্রেদ শয়তানের কবলে পড়েন । শুরু করেন ধর্মবিরোধী নানান কাজকর্ম। খলিফার কাছে বিচারের উদ্দেশ্যে ধরে আনার আগে তাকে ঘিন মরুভূমি অঞ্চলে বিচরণ করতে দেখা গিয়েছিল।

সুন্দর কণ্ঠস্বরের কারণে সানার সুলতান হাসানের দরবারে, এক তরুণ পশুচারকের সন্তানকে নিয়ে আসা হয়েছিল । যার নাম ছিল আব্দুল আলহাজ্রেদ। দীর্ঘদিন সে সুলতানের প্রাসাদেই বসবাস করে এবং প্রেমে পড়ে যায় সুলতান কন্যার। যা জানতে পারার পর সুলতানের আদেশে তাকে অকথ্য প্রহার করা হয় এবং মরুভূমির মাঝে ফেলে দিয়ে আসা হয়। - টাইসন

আলহাজ্রেদের জন্ম হয়েছিল এক গরীব পরিবারে । তরুণ বয়সে সে একজন সেরা যোদ্ধায় পরিণত হয়। কিন্তু এ কাজ তার পছন্দ হয়নি ফলে সে সিল্কের ব্যবসা শুরু করে। এই সূত্রেই তার সাথে প্রেম হয় এক তরুণীর । কিন্তু যখন সে জানতে পেরে মেয়েটিকে স্থানীয় রাজপুত্রও ভালোবাসে তখন নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্যবসাপত্র গু্টিয়ে পালায় । - লারকিন

মানুষটার প্রথমদিকের জীবন বিষয়ে মতান্তর থাকলেও শেষ জীবন নিয়ে প্রায় সকলেই একমত। যার কথা শুরুতেই বলা হয়েছে।

ইবনে খল্লিকান তার ‘বায়োগ্রাফিকাল ডিক্সনারী’তে আলহাজ্রেদের মৃত্যুর যে বর্ণনা লিখে গেছেন তা নাকি জাদুকর ইয়াক থুবের মৃত্যু দৃশ্যের অনুরূপ ছিল। অনেকে অবশ্য বলেন ওটা ছিল কালো জাদু মায়া। তাকে শয়তানের অনুচরেরা উঠিয়ে নিয়ে যায় নামহীন নগরীতে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

তার অনুগামীর দল বিশ্বাস করেন একদিন উনি আবার ফিরে আসবেন । এই মুহূর্তে মরুভূমির পতঙ্গরূপে জাদুকরদের গোপন ভাষায় উনি নানান তথ্য সরবারাহ করেন।

কিছু গবেষকের মতে, প্রথম যে মানুষ তার লেখা নেক্রোনমিকনের অনুবাদ করেছিল বা কপি করেছিল, সে লেখকের নামটা ভুল লিখেছিল। আরবী ভাষায় আব্দুল আলহাজ্রেদ নামের কোনও মানেই হয় না। একধিক গবেষক তার নামের নানান অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

আব্দ আল-আজ্রাদ – মহান আগ্রাসী সত্তার উপাসক । আব্দ = উপাসক বা পরিচারক, আল = এর, আজ্রাদ = ফাঁসুড়ে বা আগ্রাসী বা যে গিলে খায় । [হাম্বলিন]

আব্দ-আল-’উজ্জা – আল-উজ্জার, প্রাক মুস্লিক দেবী, উপাসক । [স্ট্যানলি]

আব্দাল্লাহ জহর-আদ-দিন – ঈশ্বরের উপাসক বা বিশ্বাসের ফুল । এটি উন্মাদ লেখকের ধর্মকে নির্দেশ করে । [ডে ক্যাম্প]

আল-হাজ্রেদ – ইয়েমেনবাসীরা এই নামের একটাই অর্থ বিশ্বাস করেন । এমন কেউ যে সেইসব জিনিস দেখে যা কখনোই দেখা উচিত নয় । [ফারমার]

নেক্রোন মিকন বা আল-আজিফ ছাড়া আল-হাজ্রেদের সামান্য কিছু লেখনীর খোঁজ মেলে। কিছু কবিতা যা সেসময় অভিজাতদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল এবং ‘আল জেল্ডাহ’ নামের একটি ছোটগল্প ।

এইচ পি লাভক্র্যাফটের তখন অল্প বয়স। তিনি অথবা হুইপ্পল পরিবারের আইনজীবী আলবার্ট বেকার ‘আব্দুল আলহাজ্রেদ’ নামে একটি নাটক লেখেন বলেও জানা যায়।

 

আর্কহাম/আরখাম

ম্যাসাচুসেটসের এসেক্স কাঊন্টির মিস্কাটোনিক নদীর ধারে অবস্থিত শহর এই আর্ক হাম।

১৭ শতকে কিছু মুক্তমনের মানুষ এই শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন । যারা দেখেছিলেন ওই অঞ্চলের ধর্মীয় রীতিনীতির দিকটা অত্যন্ত কঠোরতার বাঁধনে আবদ্ধ । সম্ভবত এই শহরের নামকরণ হয় আর্কহাম পরিবারের সূত্রে। যারা ছিলেন এই শহরে বসবাস শুরু করা পরিবারের অন্যতম। প্রথম দিকে এ শহরের অগ্রগতি হয় খুব ধীরে। তখন চাষাবাদ ছিল একমাত্র আয়ের উৎস। ১৬৯২ সালে সালেমে ডাইনিবিদ্যার একটা স্রোত বয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে আর্কহামেও। আর্ক হাম শহর থেকে কেজিয়াহ ম্যাসন নামের একজনকে সালেমে বিচারের জন্য পাঠানো হয় । ১৭০৪ সালে গুডি ফাউলার নামের এক মহিলা এই শহরে ফিরে এলে উত্তেজিত জনতা তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় ।

১৮ শতকে আর্কহাম পরিণত হয় জনপ্রিয় বন্দরে । জেরেমীয়া অর্নে নামের এক জনপ্রিয় ক্যাপ্টেন নিজে উদ্যোগে অর্থ প্রদান করে মিস্কাটোনিক লিবেরাল কলেজ স্থাপন করেন। অনেক পুস্তকও কিনে দেন কলেজ লাইব্রেরীর জন্য।

১৯ শতকের শুরুর দিকে জাহাজী ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই সময় মিস্কাটোনিক নদীর তীরে গড়ে ওঠে একাধিক কারখানা ।

১৮৬১ সালে মিস্কাটোনিক লিবেরাল কলেজ পরিণত হয় মিস্কাটোনিক ইউনিভারসিটিতে । ইতিমধ্যেই কলেজটি পরিণত হয়েছে শহরের অন্যতম পরিচয়ের কেন্দ্র্ববিন্দুরূপে।

১৮৮৮ সালের বন্যা এবং ১৯০৩ সালের প্লেগের আক্রমণ শহরটিকে কিছু মাত্রায় দমিয়ে দেয় । তবে কলেজ সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্য একে পুনরায় নিজের গরিমা ফিরে পেতে সাহায্য করে। কিন্তু ১৯৮০ সালে এক বিধ্বংসী ঝড় আর বন্যা শহরটিকে তছনছ করে দেয় ।

বর্তমানে আর্কহাম শহর বিষয়ে নানা রকম তথ্য পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন শহরটি একেবারে শেষ হয়ে গেছে । কাছেই অবস্থিত বিভারলীর শহরতলীরূপেই একে মানুষ এখন চেনে। আবার অনেকেই উলটো কথাও বলেন। মিসকাটোনিক কলেজের কারণে এই শহর নাকি এখনো মানুষের অন্যতম গন্তব্যস্থল । তবে এ শহর যে শিক্ষানুরাগী, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং গবেষকদের জন্য স্বর্গসম সেটা প্রায় সকলেই মেনে নেন। যদিও মানুষ খুব একটা এ শহরে যেতে পছন্দ করে না বলেই জানা যায়।

 

আটলাখ নাচা

অতিকায় মাকড়শার রূপধারী মহান প্রাচীন সত্তা । যার মাথাটা মানুষের মতো। দরকারে রূপ বদল করে একাধিক হাতের অধিকারিণী এক সুন্দরী মহিলার রূপ নিতেও সক্ষম এই ভিনগ্রহী আগন্তুক । মনে করা হয় আটলাখ নাচা শনিগ্রহ থেকে এসেছিলেন । তার সাথে এসেছিল টসাথোগগুয়া ।

অন্য একটি সূত্র অনুসারে শনি ও পৃথিবীকে তার জাল দিয়ে সংযুক্ত করেন এই মাকড়শা দেবতা এবং টসাথোগগুয়া সেই জাল বেয়েই আমাদের গ্রহে আসে।

হাইপারবোরিয়াতে অবস্থিত মাউন্ট ভুরমিথাড্রেথ এর এক বিশাল ফাটল বা খাঁজে আটলাখ নাচা বাস করেন। তবে সাইব্রেরিয়া এবং পেন্র থেকেও এর আগমনের খবর পাওয়া গেছে। স্বপ্ন জগত এবং বাস্তবের জগতের মাঝে এক যোগসূত্র বানানোর কাজ করে চলেন এই মাকড়শা দেবতা তার জাল দিয়ে। যতদিন না জগত ধ্বংস হচ্ছে ততদিন উনি এই কাজই করে যাবেন এটাই মনে করা হয় ।

মাঝে মাঝে তার ডাক পড়ে নিজের একটি মূর্তির কাছে যাওয়ার কিন্তু যা তার পছন্দ নয় । উনি নিজের জাল বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকতেই ভালোবাসেন। নানা সময়ে এই প্রাচীন সত্তার উপাসকদের কথা শোনা গেছে। ফিনিশিয়ানরা একদা এর অর্চনা করতেন। ভারত এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেও এই দেবতার উপাসকদের খোঁজ মেলে।

এসোটেরিক অর্ডার অফ দ্য ডেগন অনুসারে, আটলাখ নাচা ‘মৃত্যুবৃক্ষ’-তে বসবাস করেন । ডিপ ওয়ানদের সাথে যারা মিলনে সম্মত হয় না তাদের শাস্তি দেন ।

যে সমস্ত নারী জাদুকররা মাকড়শা বুদ্ধি ও অন্য মাত্রা দর্শনের জ্ঞান লাভ করতে আগ্রহী তাদের ডাকে সাড়া দেন এই প্রাচীন সত্তা । সেই জাদুকরীরা পরে আটলাখ নাচার গুপ্তচরে পরিণত হয়।

এই মহান প্রাচীন সত্তা সমস্ত মাকড়শাদের নিয়ন্ত্রণ করেন বলেই বিশ্বাস । মেসোজয়িক যুগের আগের কিছু দৈত্যাকার মাকড়শার ফসিল পাওয়া গেছে বিশ্বের নানান স্থানে । তারা আসলে ছিল ওই আটলাখ নাচার সন্তানের দল। বিশেষ কিছু আটলাখ নাচা উপাসক জানেন কীভাবে ওদেরকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া যায়। কিছু মানুষ বলেন, লেংএতে যে বেগুনী মাকড়শাদের দেখা মেলে তারা নাকি ওই সব ফসিলের অনুরূপ।

১৯৮৫ সালে একটি ব্যাপক মাত্রার উদ্যোগ নেওয় হয়েছিল আটলাখ নাচার বাসস্থান খুঁজে বের করার। যার পরিচিতি বারটন-ডোহার্টি অভিযান নামে। ফাইবার গ্লাসের বিশেষ বর্ম গায়ে চাপিয়ে [যাতে আটলাখ নাচা ওদের গিলে খেতে না পারে] অভিযাত্রীরা আন্দিজ পর্বতমালায় যান। তারপর থেকে দলটির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

 

আটলান্টিস

আটলান্টিক মহাসাগরের হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ ।

আটলান্টিসের ইতিহাস রহস্যে ঢাকা । এই সভ্যতার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন রাজকুমার ভালথথ, যাকে মানুষ দেবতা থথ নামে চেনে। লেমুরিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তিনি সেখানকার উদ্বাস্তুদের এখানে নিয়ে আসেন। সে রাজধানী বেশীদিন টিকে থাকেনি । সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে আসা দানবদের হাতে নষ্ট হয়ে যায়। যদিও এই বিষয়টা নিয়েও মতভেদ আছে । কারণ এই সময়েই আটলান্টিকের এক যোদ্ধা যার নাম কাল, সে ভ্যালুসীয়া নামক এলাকা দখল করে।

আটলান্টিসে দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের সূত্রপাত হয় ক্লেইটো এবং পাজাডন বা পসেইডনের সূত্রে। এদের দশজন সন্তান ছিল । যারা প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে রাজ্য গঠন করে আটলান্টিসে। এদের মধ্যে বয়সে বড় ছিলেন অ্যাটলাস । তিনি ছিলেন সিটি অফ দ্য গোল্ডেন গেটস এর রাজা । অত্যন্ত সুন্দর গোলাকৃতি একটি স্থান । যার ভেতরে ছিল জলপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা । প্রতিরক্ষার জন্য নগরীটি ঘেরা ছিল সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে।

আটলান্টিসের অধিবাসীরা বিজ্ঞান ও জাদুবিদ্যায় দক্ষ ছিলেন । যদিও লেমুরিয়ার পতনের পর তাদের অনেক জ্ঞানই নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন দেবতাদের উপাসনা করতো এরা। যার ভেতর উল্লেখযোগ্য ডাওলথ, গ্লুন, বাস্ত এবং ঘাটানাথোয়ার নাম । সময়ের সাথে সাথে বিশৃঙ্খল অপশক্তির আধিক্য ঘটে। যাকে রুখতে অনেক আটলান্টিসবাসী কালোজাদুর চর্চা শুরু করেন। এদের ভেতর ডেগন কাল্টের জনপ্রিয়তা ছিল সবচেয়ে বেশী। এই সময়েই ডিপ ওয়ানদের সাথে আটলান্টিসদের রক্ত সূত্রের সম্পর্ক তৈরি হয় ।

কুড়ি হাজার বছর আগে হাইবোরিয়ান সময়কালের সূচনা লগ্নে আটলান্টিসের এক বিশাল এলাকা সমুদ্রে ডুবে যায় । কারণ কী ছিল তা জানা যায়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে, আবার অত্যধিক কালোজাদুর চর্চা করার কারণে দেবতারা রুষ্ট হয়ে এই শাস্তি দেন বলেও মনে করেন অনেকে।

আবার অনেকে বলেন ভুলভাল জাদুবিদ্যা প্রযুক্তির প্রয়োগই নাকি এর আসল কারণ। কালোজাদুর চর্চা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে ডেমন কিং, থেলাথা, সিটি অফ দ্য গোল্ডেন গেটস দখল করে নেনে । এই থেলাথা ছিলেন বিশৃঙ্খলার প্রতিনিধি স্বরূপ। কালো জাদুর সাহায্যে থেলেথাকে অপসারণ করতে গিয়েই নাকি যত গণ্ডগোল ঘটে যায়।

আর একটি মত অনুসারে ডিপ ওয়ানদের সাথে মিলনে যে নতুন হাইব্রিড প্রজাতির জন্ম হয় তারা আটলান্টিস দখলের চেষ্টা করে। যাদের আটকানোর জন্য ক্রিস্ট্যাল-পাওডার অস্ত্রের প্রয়োগ করতেই বিপর্যয় ঘটে যায়।

ওই বিশেষ অস্ত্রের প্রয়োগে বাকি আটলান্টিসের সব কিছুকেই নষ্ট করে দেয় । বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় সম্পূর্ণ এলাকা । এর কারণে অতীত ঐতিহ্যে যা জ্ঞান তাও মুছে যায় আটলান্টিসবাসীদের মন থেকে । ওরা আবার বর্বরতার পথে হাঁটতে শুরু করে। এরপর অন্যান্য মহাদেশে গিয়ে কিছু কিছু স্থান দখল করে তারা । কিন্তু তৎদিনে তাদের বিশেষ জ্ঞান সবই প্রায় মুছে যায় ওদের সংস্কৃতি থেকে।

পসেইডনিস এবং বাল-সাগোথ নামের দুটো দ্বীপ বেঁচে গিয়েছিল এই ভয়াবহতা থেকে । কিন্তু কালের গ্রাসে তাদের বেশীর ভাগ অংশ ডুবে যায় সমুদ্রে। ওখানকার অধিবাসীরা চলে যায় সাহারা, অ্যাভেরোইন এবং ক্যারিবিয়ান এলাকায় । আটলান্টিসের উপকথা সঞ্চিত থাকে মহাপুরোহিত ক্লারকাস-টন এবং লুভেহ-কেরাফট এর কাছে। আর কিছু থেকে যায় ইজিপ্ট সাইসের যাজকদের কাছে। আটলান্টিসের ধ্বংসাবশেষ হয়তো আজো সমুদ্রের তলায় পড়ে আছে। তবে সেসব যারা দেখছিল তাদের কেউ আর বেঁচে নেই।

আটালান্টিসের কথা প্রথম জানা যায় প্লেটোর লেখা কথোপকথন টাইমাঊস এবং অসমাপ্ত লেখনী ক্রিটিয়াস থেকে। সহস্রাব্দী ধরে বিতর্ক চলছে প্লেটো যা লিখেছিলেন তা সত্যি নাকি রূপক এই বিষয়ে। কেউ কেউ বলেন এটা সত্যিই ছিল। তার সপক্ষে বলতে গিয়ে তারা নিজেদের উদ্ভট রকমের রাজনৈতিক, সামাজিক বা জাতিগত নানা মতামত আটলান্টিসবাসীদের ভেতর প্রচলিত ছিল বলে চালানোর চেষ্টা করেন। আবার কারো কারো মতে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে আইল অফ থেরা নামের যে নগর আগ্নেয়গিরির কারণে ডুবে যায় সেটাই ছিল প্লেটোর আটলান্টিসের মডেল।

আধুনিক সময়ে ১৮৮২ সালে ইগ্নেশিয়াস ডন্নেলির লেখা ‘আটলান্টিস – দ্য অ্যান্টিডিইলুভিয়ান ওয়ার্ল্ড পুস্তক নতুন করে এ বিষয়ে মানুষের ভেতর আগ্রহের সঞ্চার করে। যা আজও বর্তমান ।

লাভক্র্যাফট এবং থুলু মিথোজের নানান লেখকেরা থিওজফি সূত্রে যে সমস্ত আটলান্টিস উপকথা চালু আছে সেগুলো ব্যবহার করেছেন। থিওজফি জগতে এই বিষয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত পুস্তক, ১৯২৫ সালে ডাব্লিউ স্কট এলিয়টের লেখা ‘দ্য স্টোরি অফ আটলান্টি অ্যান্ড দ্য লস্ট লেমুরিয়া’।

 

অ্যাভেরয়েন

দক্ষিণ মধ্য ফ্রান্সের এক রাজ্য । যাকে ডাকা হয়ে থাকে অঊভার্ন নামে। মনে করা হয় এটাই সবচেয়ে বেশী ডাইনী অধ্যূষিত এলাকা।

ফ্ল্যাভিয়াস অ্যালেসিয়াসের ‘অ্যানালেস’ সূত্র থেকে জানা যায় গলদের সময়ে এই রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল অ্যাভেরয়েনরা । যারা ছিল দক্ষিণ প্রান্তের সেই মানুষের গোষ্ঠী যাদের নিজস্ব ভুমি সমুদ্রের অতলে ডুবে যায়।

রোমান সাম্রাজ্যের সময়কালে সিমায়সিস এবং অ্যাভিওনিয়াম নামের দুটি শহরের কথা জানা যায় । যাদের পরবর্তী সময়ে পরিচিতি হয় জাইমেস এবং ভিওনেস নামে। ওই শহর দুটির অধিবাসীরা দারুণভাবে আতঙ্কিত থাকতেন সাডোকুয়া নামে এক দেবতার উপাসনার কারণে। চার্চের তরফে এই উপাসনা বন্ধের অনেক চেষ্টাও করা হয় । কিন্তু দেখা যায় চার্চের সাথে যুক্ত অনেক উচ্চস্তরীয় মানুষেরা এই দেবতার উপাসনা করেন। ফলে সেভাবে কিছুই করা যায়নি।

অ্যাভেরয়েনদের ভেতরে সবচেয়ে বিখ্যাত মানুষটির নাম গাস্পার্ড ডু নর্ড নামের এক জাদুকর। নিবাস ভিওনেস । ১৩ বা ১৪ শতকের সময় উনি ‘বুক অফ ইবন’ নরম্যান ফ্রেঞ্চ ভাষায় অনুবাদ করেন। এর ফলে জাদুবিদ্যাচর্চা অনেক সুবিধাজনক হয়ে যায়। ব্যাপকভাবে জাদুর চর্চার সূত্রপাত হয় এই সূত্রেই, যা আজও চলছে।

অঊভার্ন, সত্যিই একটা ফরাসী প্রদেশ। যদিও এটা ফ্রান্সের ভেতর অবস্থিত নয়। অনুমান করা যেতেই পারে এর কাছের দুটো শহর লিওন্স এবং লিমোজেস লেখক স্মিথের কল্পনার ভিওনেস ও জাইমেসে পরিণত হয়েছে । লিওন্সে একসময় সত্যি সত্যিই ডাইনীদের বিচার কেন্দ্র ছিল। অউভার্নেও একটা ওয়ারউলফের কাহিনী এখনো শোনা যায়।

 

অ্যাজাথথ/অ্যাজাজথ/অ্যাজাগ-থথ

প্রাইমাল কেওস এবং ডেমন সুলতান নামেও এই অন্য জাগতীয় দেবতাকে চেনেন অন্ধকারের উপাসকেরা। সাধারণ অবস্থায় অ্যাজাথথ বিশাল আকার অবয়বহীন একদলা বিশৃঙ্খলা । তবে তাকে আহ্বান করা হলে উনি নানা অবয়বে আবির্ভূত হয়ে থাকেন।

চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলা্র মাঝখানে বা কারো মতে এই বিশ্ব জগতের কেন্দ্রস্থলে আবার কারো মতে এই পৃথিবীরই ভূগর্ভস্থ এক গুহায় থাকেন অ্যাজাথথ। ক্রমাগত অর্থহীন [ নাকি ধর্ম বিরোধী?] কথা বকবক করেন এবং অন্যান্য দেবতাদের নাচ দেখেন। বিশ্বজগতের সাথে তার এলাকার মাঝখানে একটা রঙ্গীন পর্দা ঝুলানো আছে । তার এলাকায় সময় এবং স্থানের কোনো নিয়ম খাটে না। একমাত্র তখনই নিজের সিংহাসন থেকে উনি অদৃশ্য হয়ে যান যখন কেউ তাকে আহ্বান করে। উনি সাজ্ঞাই এর পোকামাকড়ের মন্দিরে অবস্থিত বিশেষ এক পোর্টাল এর সাহায্যে যাতায়াত করেন।

কিংবদন্তী অনুসারে এই অ্যাজাথথ বিশ্ব জগতের জন্ম দিয়েছেন এবং একসময় উনিই সবকিছু ধ্বংস করে দেবেন। আধুনিক কিছু চিন্তাবিদ তাকে বিগ ব্যাং এর মূর্তরূপ বলে মনে করেন। নর্স এবং গ্রীক পৌরাণিক কথার প্রাইমাল কেওসের সাথেও তার সম্পর্ক আছে বলে অনেকের ধারণা। কেউ কেউ উনাকে রেডিও অ্যাক্টীভিটির স্বরূপ বলেও ভেবে থাকেন। ডে ভারমিস মিস্ট্রিজ এ অ্যাজাথথকে আহবানের যে ফর্মুলা পাওয়া যায়, তাতে পরমাণুর সাথে সম্পর্কযুক্ত বস্তুর কথা বলা হয়েছে। ১৯০৮ সালে টুঙ্গুস্কা বিস্ফোরণের কারণরূপে অ্যাজাথথই দায়ী বলে মনে করা হয় ।

কিছু গবেষক অ্যাজাথথ এবং জিনস্টিক অ্যাকামথকে একই বিষয় বলে মনে করেন । ডেমিয়ারজদের মা বলে পরিচিত জিনস্টিক অ্যাকামথ এই বিশ্বজগত নির্মাণ করেছিলেন বলে মতবাদ আছে। অ্যাটেন দ্য সান ডিস্ক নামক ইজিপ্সিশিয়ান আচার প্রথার সাথেও অ্যাজাথথকে এক করে দেখা হয় অনেক জায়গায়।

অ্যাজাথথ তার নিজের রূপে উপাসিত হন এর প্রমাণ দুর্লভ। গনোপকেহদের উপাসনা পৃথিবীতে তাকে স্মরণ করেই করা হয় । যদিও ওই উন্মাদদের উপাসনার বয়স খুব বেশী নয়।

শানরা তাদের মন্দিরে এই অ্যাজাথথের এক অবতার স্কাডা-হ-গলার উপাসনা করে । সে উপাসনার রীতিনীতি অতি জঘন্য।

ক্রমাগত অ্যাজাথথের নাম উচ্চারণ করলে এক বিশেষ শক্তির সঞ্চার হয় বহিঃজগত থেকে। তার একটি গোপন নামও আছে । যা কেবলমাত্র বিশেষ উপাসকেরাই জানেন। যার বারংবার উচ্চারণে আরো বেশী শক্তি আহরণ অথবা পাঠকারীর লয় পর্যন্ত হতে পারে। উন্মাদ আরবিয়ান লেখক আল হাজ্রেদ তার কুখ্যাত পুস্তক নেক্রোনোমিকনে এই গোপন নাম লিখে যাননি ।

কিছু সূত্র অনুসারে ডেমন সুলতান চিরকাল এরকম অবয়বহীন সত্তা ছিলেন না মোটেই। এক অতিমাত্রার ইন্টার কসমিক যুদ্ধের ফলে তার বুদ্ধি এবং শরীর বিনষ্ট হয়। যার ফলে তাকে এই ডাইমেনশনের বাইরে চলে যেতে হয় । এই সূত্রেই অনেকে অ্যাজাথথকে আরো বড় কোনো ভয়ানক শক্তির হাতের পুতুল বলে মনে করেন।

 

দ্যা ব্ল্যাক

অন্ধকার কুয়াশার মতো এক বস্তু । যা আসলে গ্রেট ওল্ড ওয়ান ইব-টিসলের রক্ত। ডাইনী বিদ্যার চর্চা করা জাদুকরেরা কখনো সখনো এই জিনিষটাকে আহ্বান করেন নিজেদের শত্রুকে খতম করার জন্য। এর জন্য আহ্বায়ককে জল দিয়ে ময়দার পাতলা চাদরের ওপর ষষ্ঠ সাথলাট্টা লিখতে হয়। তাও আবার আসল পিথেতোলাইট অক্ষরে। যা দেখানো আছে থাট অ্যাকুয়াডিঞ্জেনে। তারপর ঐ চাদর যেনতেনভাবে দিতে হয় উদ্দিষ্ট মানুষটিকে। কেউ কেউ বলেন উদ্দিষ্ট মানুষটিকে ওই চাদরটি স্পর্শ করলেই কাজ হয়ে যায়। তাহলেই নাকি মন্ত্র তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। যদিও এরকম একটি আক্রমণের সূত্রে পাওয়া প্রমাণ অন্য কথাই বলে।

এরপর উদ্দিষ্ট মানুষটার কানে পৌছাতে হবে আক্রমণকারী জাদুকরের কণ্ঠস্বর । যে কণ্ঠে তখন উচ্চারিত হবে নেক্রোনোমিকনে লেখা হয়-ধিন মন্ত্র ।

জাদুকরের মন্ত্র পাঠের সাথে সাথেই ব্ল্যাকের আগমন ঘটে। জমির ওপর নেমে এসেই সে এগিয়ে যায় উদ্দিষ্ট মানুষের দিকে। মুহূর্তের মধ্যে কালো কুয়াশায় ঢেকে যায় তার শরীর। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, দম আটকে আসে। নিজের কাজ সেরে মানুষটার আত্মা সহ ব্ল্যাক ফিরে যায় ইব-টিসলের কাছে । কোনও চিহ্ন পড়ে থাকে না তার।

যে মানুষকে ব্ল্যাক আক্রমণ করে সে যদি কোনওক্রমে বয়ে চলা জলধারায় নেমে পড়তে পারে তাহলে মন্ত্রের প্রভাব ফিরে যায় আততায়ী জাদুকরের কাছে। ছক বদলে গিয়ে ব্ল্যাক তখন সেই জাদুকরের প্রাণনাশ করে।

 

ব্ল্যাক লোটাস

কালছে খয়েরী আভাযুক্ত এক ধরণের ফুল যা পাওয়া যেত হাইবোরিয়ান যুগে পূর্বদিকে অবস্থিত নগরী খিটাইতে । রহস্যময় দেবতা উন এর পুরোহিতেরা, যারা জঙ্গলে বসবাস করতো, তারা এই পদ্মফুলের জন্ম দিতে জানতো। অতি হিংস্র প্রাণী এই ফুলের গন্ধে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তো । স্টিগিয়ার পুরোহিতেরা এই ফুলের নির্যাস ব্যবহার করতেন অন্যদের মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

একমাত্র ব্ল্যাক রিং এর নেক্রোম্যান্সাররা এই কালো পদ্মফুলের গুঁড়ো জেনে শুনে ব্যবহার করেছিল । পরবর্তী সময়ে এই বস্তুর ব্যবহার অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।

হাইবোরিয়ান যুগের সমাপ্তির পর এই ফুল নিয়ে যাওয়া হয় লেং এবং সাং এর মালভূমিতে । যেখানে ভুলে যাওয়া ধর্মাচরণকারী পুরোহিতদের আদেশ দেওয়া হয় এর চাষ করার।

কিংবদন্তী অনুসারে এই কালো পদ্মর বিষ নাকি ব্যবহার করা হয়েছিল বুদ্ধকে হত্যা করার জন্য।

এই ফুল এবং তার বিষের প্রভাব এতোটাই ছিল যে পূর্বদিকের খানরা একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

টিছো-টিছো গোষ্ঠীর মানুষেরা আজো এই ফুলের চাষ করে। কারণ তাদের বিশ্বাস ঝার আর ল ইগর এর উপাসনা করতে এটি অত্যন্ত আবশ্যিক একটি উপাদান।

আধুনিক ধর্ম উপাসনা ক্ষেত্রে এই পদ্মের ব্যবহার হয় মাদক নির্মাণে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় লিয়াও এর নাম । যা সেবন করলে অন্য মাত্রা বা ডাইমেনশনের স্বপ্ন দেখার উপযোগী মন তৈরি হয়। কতটা খেতে হবে, কীভাবে খেতে হবে এবং কীসের কেমন প্রভাব হবে সেটা এক কথায় বলা অসম্ভব। ভুল মাত্রায় সেবন করলে সেবনকারী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে। আচরণে উন্মত্ততা আসতে পারে। আবার ভয়ানক ধরণের নিয়ন্ত্রণহীন দুঃস্বপ্ন দেখাও শুরু হতে পারে। সেই স্বপ্নে কালো পদ্মের আবির্ভাব হতে পারে। অনেকে বলেন স্বপ্ন সূত্রেই সেই ফুল অভিশপ্ত করে দিতে পারে স্বপ্নদর্শনকারীকে।

 

ব্ল্যাক স্টোন

১। হাঙ্গেরীর, স্ট্রেগোইকাভার শহরের কাছে অবস্থিত এক পাথরের স্তম্ভ। ওবেলিস্ক আকৃতির এই মনোলিথ বানানো হয়েছে অদ্ভুতরকমের অনচ্ছ পাথর দিয়ে। এর গায়ে অপাঠযোগ্য অনেক কিছু লেখা খোদাই করা আছে । অবশ্য মানুষের বা প্রকৃতির অত্যাচারে তার অনেকটাই আজ আর বোঝা যায় না।

কেউ জানে না কোন সভ্যতার মানুষেরা এই পাথর এখানে স্থাপন করেছিল। কেউ বলে হানেরা এটা ফেলে গিয়েছিল। কিন্তু অন্যদের মতে, যার ভেতর কুখ্যাত ব্ল্যাক বুকের লেখক ভন ইয়ুঞ্জটও আছেন, এ এক অতি প্রাচীন সময়ের বিশেষ চিহ্ন বা চাবিকাঠি।

অনেক অনেক বছর ধরে পাহাড়ী এলাকার মানুষেরা এই ব্ল্যাক স্টোনের এলাকাকে তাদের উপাসানস্থলরূপে ব্যবহার করতো । ১৫২৬ সালে একটি মুস্লিম সৈন্য বাহিনী এই পথ দিয়ে যায়। তাদের অধিনায়ক ঐতিহাসিক সেলিম বাহাদুর এর খোঁজ পান । জানতে পারেন এর সাথে যুক্ত আতঙ্কের বিষয়ে। নিজের সেনাদের সাহায্যে এর উপাসকদের উনি খতম করেন । সাথেই লিখে রাখেন এক বিস্ময়কর ঘটনার কথা ।

এরপর পাঁচ শতক পার হয়ে যেতে চলল প্রায় । আজও কেউ যদি ওই পাথরের দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকে তাহলে উন্মাদনায় আক্রান্ত হয়। আর কেউ যদি ভুলক্রমেও ওই পাথরের কাছে ঘুমিয়ে পড়ে আমৃত্যু তাকে দুঃস্বপ্নেরা তাড়া করে বেড়ায়।

একটা সময়ে কিছু মানুষ এটাকে ধ্বংস করার চেষ্টাও করেছিল । যারা ওই উদ্যোগে অংশ নেয় সকলেই অভিশপ্ত হয়ে যায় । ফলে আর কেউ এ নিয়ে কিছু করার সাহস দেখায়নি।

এই পাথর দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কবি জাস্টিন জিওফ্রে লিখেছিলেন ‘পিপল অফ দ্য মনোলিথ’ কবিতা। জাস্টিন নিজেও ওই ব্ল্যাক স্টোন দেখেছিলেন ।

শোনা যায় আর একজন পর্যটক ওই পাথর দেখে তার অনুরূপ নির্মাণ করে স্থাপন করেন সেস্কুয়া ভ্যালীতে ।

২। ওয়ার্ম অফ দ্য আর্থরা পৃথিবীর তলা থেকে খুঁড়ে বার করেছিল একটা ছোট্ট বস্তু । যার পরিচিতি ব্ল্যাক স্টোন রূপে। পাথরটাকে তারা রেখে দেয় স্টোনহেঞ্জ এর কাছে । যা পিক্টদের আক্রমণকাল অবধি ওখানেই থেকে যায় । তারপর পিক্টরা ওটাকে নিয়ে গিয়ে মাটির তলার গোপন গুহায় রেখে দেয়। একজন মানুষ যিনি ওই ব্ল্যাক স্টোন চুরি করতে সমর্থ হন। পাথরটার আসল রক্ষকেরা ওই মানুষটার কাছ থেকে ব্ল্যাক স্টোনটা ফেরত চায়, বদলে তারা কিছু কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। চোর এই সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগায়। ইক্সাযাক্সা্রের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তার সাথে এর অদ্ভুত মিল দেখে অনেকেই মনে করেন, হয়তো এ দুটো আসলে একই জিনিস।

 

সমাপ্ত... না এ আসলে শেষ নয়। আরো আরো জানার সূচনা মাত্র। লিঙ্ক