নিশি-যাপন - সম্বুদ্ধ সান্যাল

অলংকরণ - মিশন মন্ডল

সন্ধ্যেবেলায় হেঁটে ফেরার পথে পাড়ার মুখে হরেনদার চায়ের দোকানের সামনেটা বড়ই থমথমে লাগলো অম্বিকার। একেবারে ফাঁকা নয়, তবে অন্যদিন জমজমাট হৈচৈ অনেক বেশি থাকে। দোকানের ভিতরে একটা টিভি সেটকে নিয়ে বেশিরভাগ জটলা। কখনও ক্রিকেট ম্যাচ, কখনও নির্বাচনী খবর, বেশিরভাগ দিনই সান্ধ্যখবর, নয়ত বাংলা সিনেমা। কিন্তু আজ বড় নিঝুম। দোকানের বাইরের দিকের এক পাশে একটি চা তৈরির উপযোগী টেবিলের পেছনে হরেনদা চুপচাপ গ্লাসগুলো ধুয়ে রাখছে। ভেতরের টিভিও বন্ধ।

 

বাইরে ঠাণ্ডা আজ বেশ পড়েছে। অম্বিকা দোকানের ভেতরে যেতে যেতে সেই প্রশ্নই রাখলো হরেনদার কাছে। বেঞ্চে বসতে বসতে এক কাপ চায়ের নির্দেশ দিলো। হরেনদা বললো, “এই সবে বন্ধ করবো গো দাদা। বাইরের কুয়াশাটা আজ ভালো ঠেকছে না।”

 

অম্বিকা বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সামনের ফাঁকা অন্ধকার খেলার মাঠে একটা সাদা ধোঁয়াটে আস্তরণ। সে হাতের তালুগুলো ঘষতে ঘষতে বললো, “দুদিন কুয়াশা বড় বেশি পড়ছে, সন্ধ্যের পর আর প্রায় কিছুই দেখা যায় না।”

 

হরেনদার দোকানের বাইরে মাত্র একটা বাল্ব জ্বলে। রাস্তার ওপারে অবশ্য সরকারি ল্যাম্পপোস্ট আছে, পথযাত্রীরা বাকি আলোর যোগান তার থেকে পেয়ে যায়। অম্বিকা এই মানিকপাড়ায় এসেছে মাত্র সাত দিন আগে। ভদ্রলোক কলকাতায় থাকে, সাক্ষাৎ নাস্তিক, এবং খানিক লেখালেখি করে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই জায়গাটিতে সে এসেছে সেখানকার সাহিত্যিক বন্ধু অলোক মাইতির আহ্বানে। মানিকপাড়ায় দুদিন আগে শেষ হয়েছে সেখানকার বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আতিথেয়তার আহ্বানপত্র পেয়েছিলেন অলোকবাবুর সৌজন্যে। তারই তত্ত্বাবধানে আরও কটা দিন কাটিয়ে কলকাতায় ফেরার ইচ্ছা। গাড়ি চালাতে জানে জেনে অলোকবাবু তার জেন গাড়িটি অম্বিকাকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তবে আজ তা আর নিয়ে বেরোনোর প্রয়োজন হয়নি।

 

হরেনদা চুপচাপ অম্বিকার চা বানিয়ে চলেছে। ঘরের মধ্যে বাকি দুজনও বেশ চুপচাপ, কোনওরকমে যেন চায়ের কাপ শেষ করছে। সম্ভবত ঠাণ্ডার জন্য বাড়ি ফেরার তাড়া। কিন্তু কটাই বা বাজে? বড়জোর সাড়ে ছটা। মানিকপাড়ার লোকেরা অন্যদিন এত তাড়াতাড়ি শুনশান হয়ে যায় না দেখে অম্বিকার খানিক খটকা লাগল। অন্য লোকগুলোও তাদের চা শেষ করে হরেনদার কাছে গ্লাসগুলো জমা দিয়ে পয়সা মিটিয়ে চলে গেল। সমস্ত ফাঁকা হতে অম্বিকা হরেনদাকে জিজ্ঞেস করলো, “কী ব্যাপার বলো তো হরেনদা, আজ এলাকা এত ফাঁকা কেন?”

চা তৈরি করা হয়ে গিয়েছিল, গ্লাস হাতে নিয়ে ভেতরে আসতে আসতে হরেনদা বললো, “কেন, তুমি কিছু জানো না? গত কালকের ঘটনা শোনোনি?”

অম্বিকা ঘটনাটা শুনেছিল বটে সকালবেলায়। গতকাল রাত এগারোটার সময় মেন রাস্তার পাশে মানিকপাড়ার মস্ত বড় ব্যবসায়ী অজিত হালদারের ছেলে বান্টিকে আধমরা হিসেবে পাওয়া গেছে। কে যেন থেঁতলে দিয়েছে তার শরীর। রাস্তার ধারে পড়েছিল বান্টি। সন্ধ্যার অঙ্কের টিউশনের পর তার আর খোঁজ নেই। অনেক রাত অবধি খোঁজাখুঁজি চলে তার। বন্ধুরা জানায় পড়ার শেষে তারা তাকে বাড়ির উদ্দেশেই যেতে দেখেছে। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর তাকে মেন রাস্তার পাশে শোওয়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। পুলিশও ছিল সারাদিন। অজিত হালদারের অনেক ক্ষমতা। তবে কার কীর্তি এটা তার কোনও প্রমাণ এখনও তারা পায়নি।

 

অম্বিকা চায়ের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে বললো, “ছেলেটার কী অবস্থা এখন? কোন হাসপাতালে আছে?”

“হাসপাতাল থেকে জবাব দিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু প্রাণটুকুই যাওয়া বাকি। সবাই বলেছিল কলকাতা নিয়ে যেতে। কিন্তু তা বোধ হয় সম্ভব হবে না ভেবে বাড়িতেই নিয়ে এসেছে।”

“সেকী, বাড়িতে কেন? সময় থাকতে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেই তো পারে।”

“কে জানে কী করছে? বাড়ি নয়ত যেন দূর্গ, বাইরের থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। কত লোকের মুখে শুনলাম কত কথা। কোনটা বিশ্বাস করবো?”

“কে কী বলছে আমি তোমার থেকে শুনি একটু।” অম্বিকা আগ্রহী হয়ে বসে।

“সবাই তো মুখে বলছে কলকাতা যেতে যেতেই যদি প্রাণটা বেরিয়ে যায়, তবে পণ্ডশ্রম, তাই মরে তো বাড়িতেই মরুক। শান্তিতে স্বর্গে যাক বেচারা।” কথাগুলি সাধারণভাবে বলে অম্বিকার কাছে এগিয়ে গেল হরেনদা। মাথার কাছে মাথা এগিয়ে ফিসফিস করে বললো, “কিছু লোকে অন্যরকম বলছে দাদা। কেউ মুখে পরিস্কার কিছু বলছে না।”

হরেনদার আচরণ দেখে অম্বিকা অবাক হলো বেশ। বললো, “অন্যরকম মানে? পুলিশ কি কিছু ধরতে পেরেছে?”

“পুলিশে কিচ্ছু পায়নি, পাবেও না। নিখুঁত কাজ দাদা, পাকা মাথার। অন্য জায়গায় মেরেছে, ফেলে গেছে মেন রোডে। গাড়িতে থেকে রানিংয়ে ফেলেছে যাতে কেউ কিছু বুঝতেই না পারে। তবে আমি বলছি অন্য কথা।” আবার ফিসফিস করে বলতে থাকে, “শোনেননি কিছু? আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যান। রাত্রে নিশি বেরোতে পারে। লোকে তাই বলাবলি করছে।”

অম্বিকা হা হা করে হেসে ওঠে, বলে, “নিশি! ওই যারা রাতের বেলায় এসে ডাকে? তিনবার ডাকলে তার মধ্যে উত্তর দিলে তার প্রাণ নিয়ে ডাবের খোলের মধ্যে বন্দী? সেই জল খাইয়ে অজিত বাবুর ছেলে হয়ে উঠবে সুস্থ? কী যে বলো তোমরা? এখনকার যুগে কেউ এসব মানে? তার জন্যেই সব এই সন্ধ্যেবেলায় বাড়ির ভেতর সেঁধিয়ে গেছে?”

হরেনদা অম্বিকার দিকে চেয়ে থাকে চুপ করে। কথা থামলে ফিসফিস করে শুরু করে আবার, “হেসো না গো দাদা। তোমরা শহরে থাকো, গ্রামে আছে ওসব এখনও। বিকেলে গ্রামের লোক হারুর মুখ থেকে জানলো অজিতবাবু আজ রমরমার খাসজঙ্গলে গিয়েছিলো।”

“খাসজঙ্গল! সেটা আবার কী? তা সেখানে গেলে কী হয়?” অম্বিকা জিজ্ঞেস করে।

“খাসজঙ্গলের কথা জানো না? ওখানে রাধাতান্ত্রিক থাকে। দিনমানেই ওখানে কেউ যেতে ভয় পায়। হারু তার পাশের গ্রামে গিয়েছিল। সে নাকি দেখেছে অজিতবাবুকে ওই জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে।”

“তা রাধাতান্ত্রিক অজিতবাবুকে কিছু বলবে না?”

“রাধাতান্ত্রিক বড় তেজী পুরুষ। জঙ্গল ছাড়া বেরোয় না। কেউ খুব বিপদে পড়লে তার কাছে গেলে সে ফেরায় না। জলপড়া, নিশি ডাকা, তন্ত্র-মন্ত্র, মদ, মাংস কিছুই বাদ নেই ওনার। তবে শুনেছি কাজ হয়েছে অনেকের। এই লম্বা চেহারা, লাল বসন গায়ে, বড় বড় দাড়ি ঢাকা তার মুখ, লম্বা লম্বা চুল, লাল লাল চোখ। দেখলেই ভয় করে। লোকালয়ে সে আসে না, ভক্তরাই তার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেয়। জঙ্গলের কোথায় থাকে তা তার সাগরেদরা বাদে কেউ জানে না। সেখানে কেউ গিয়ে প্রার্থনা করলে শোনেন। পছন্দ না হলে ধাক্কা দিয়ে জঙ্গলের বাইরে বের করে দেয় সাগরেদরা।”

অম্বিকা হাসতে থাকে হরেনবাবুর বিশ্বাস দেখে। সত্যি এই বিজ্ঞানের যুগে গ্রামবাসীরা কতটা সেকেলে রয়ে গেছে এখনও। এ কালেও এরা বিশ্বাস করে ভূত-প্রেত-তন্ত্র-মন্ত্রে। গ্রামে মোবাইল পর্যন্ত চলে এসেছে, কিন্তু মানসিকতায় বিন্দুমাত্র বাড়েনি এরা। হাসি খানিক থামিয়ে হরেনদাকে সে বলে, “হাসালে হরেনদা, এখন কি আর কেউ ওসব মানে? তোমার ওই রাধাতান্ত্রিক হলো যত বুজরুকি। এরা কতবড় লোভী হয় জানো? দেখবে অজিতবাবুর কত পয়সা টান দিয়ে নেয় এবার। এর থেকে সেই পয়সা খরচ করে কলকাতা নেওয়ার ব্যবস্থা হলে তাও বাঁচানোর একটা চেষ্টা করা যেত। এসব করে কাজ হয়?”

“তুমি জান না গো দাদা। নিশি ডাকায় কাজ হয় যদি তেমন লোকে করে। রাধাতান্ত্রিক বড় মানুষ। সবাই মানে। মরা মানুষকে বাঁচাতে পারে। এখন অজিতবাবুর ছেলের প্রাণটা বেঁধে রেখেছে নিশ্চয়ই। দেখছ না মরছে না এখনও। এরপর রাতে নিশি বের করবে। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাকবে নিশি। তিনবার ডাকবে। তার মধ্যে যে উত্তর দেবে, তার জানটাই নেবে।” ঘরের আবছা আলোর ভেতরে হিস হিস করে এমনভাবে হরেনদা কথাগুলো বলে উঠল যে অম্বিকা তার হাসি থামিয়ে চুপ করে গেল। হরেনদা বলতে থাকল, “তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও দাদা। আমিও বন্ধ করে চলে যাব। আজকের রাত কার শেষ রাত কে জানে। জয়গুরু।”

অম্বিকা আর কথা বাড়ায় না। হরেনদা গ্রামের মানুষ। অলৌকিকের উপর তাদের বিশ্বাস প্রবল। তবুও থমথমে এই সন্ধ্যায় পাড়াগাঁয়ের শুনশান দোকানে শহরবাসীটির রোমগুলো কেমন খাড়া হয়ে উঠল। একটা গ্রাম্য বিশ্বাসের শক্তিতে সে আর কোনও কথা বলল না হরেনদার বিপক্ষে। চায়ের গ্লাস খালি হয়ে গেছিল। চুপচাপ হরেনদাকে ফিরিয়ে দিয়ে পকেট থেকে পয়সা বের করে মিটিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল সে। পেছন থেকে সেই হিসিহিসিয়ে হরেনদা বলতে থাকল, “সাবধানে থেকো দাদা, রাতে তিনবারের বেশি কেউ ডাকলে তবেই উত্তর দিও। আর কোনও আওয়াজে বাইরে বেরোবে না। তোমরা শহরের লোক, এসব মানো না। আজ সে বেরোবেই। খুব সাবধানে থেকো।”

যা ঠাণ্ডা তাতে লেপ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলে রাতে কে ডাকলো না ডাকলো তাতে কিছু যায় আসে না। অন্তত চোদ্দবার না ডাকলে সে উঠছে না, তাই কোনও চিন্তাও নেই। অলোকবাবুর বাড়িতে দুই বেলা খাওয়াদাওয়া মন্দ হচ্ছে না, ঘুমও অতি উৎকৃষ্ট, এমনিতে তার ঘুমের ওষুধের বাতিক আছে, তার উপর এমন মরশুম। হরেনদার কথা কানে না নিয়ে অম্বিকা বেরিয়ে এল দোকান থেকে। বাইরে কুয়াশা এখন খুব ঘন হয়ে এলাকা গ্রাস করে ফেলেছে। অলোকদার বাড়ির থেকে চায়ের দোকান মিনিট দশেকের হাঁটা রাস্তা। উল্টোদিকের ল্যাম্পপোস্টের আলো কুয়াশার কারণে অতি অল্প বোঝা যাচ্ছে। যেটুকু দেখা যাচ্ছে পোস্টের আলোয় তাতে হলুদ ধোঁয়া ভেসে চলেছে এলাকা জুড়ে। অন্ধকার রাস্তায় নেমে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল সে।

 

রাধাতান্ত্রিকের কথা আগে সে শোনেনি। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগল নানা বুজরুকির কথা। নিশির ডাকের কথা সে জানে। বহু সাহিত্যিক তাদের ভূতের সংকলনে বারে বারেই নিশির কথা উল্লেখ করে গেছে। রাধাতান্ত্রিক কি আসলেই সিদ্ধ মানুষ? অজিতবাবুর অনেক পয়সা। রাধাতান্ত্রিক যদি পয়সার জন্যেই এই কাজ হাতে নেয়, তবে সে কি পারবে বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে তুলতে? আজ রাতে কি সে আসবে? কার ঘর থেকে সে পাবে তাজা প্রাণ? হঠাৎ সে ভাবল সে যে নাস্তিক, এত কথা ভাবার প্রয়োজন কী তার? বাড়ি ফিরে সময় কাটিয়ে দিব্যি খাওয়াদাওয়া করে একটা চমৎকার ঘুম। সারা রাতে যা হওয়ার হোক, সকালের আগে সে উঠছে না।

 

বাড়ির উদ্দেশে প্রায় অর্ধেক পথ চলে এসছে। এখানে আলো প্রায় নেই। অন্ধকারে আন্দাজে পথ চলতে হচ্ছে তার। মোবাইলের আলো ক্ষীণ, তার সমস্ত আলো শুষে নিচ্ছে ঘন কুয়াশা। মাঝে মাঝে শিরশিরানি হাওয়া শরীরে তার হিমেল স্পর্শ বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডায় মাথা ভারি হয়ে যাচ্ছে অম্বিকার। নিশির চিন্তা সে মাথার থেকে ঝেরে ফেলতে চাইছে, কিন্তু বার বার সেই চিন্তাই ঘুরেফিরে আসছে। মাঠের মাঝখানে এসে হঠাৎ তার মনে হলো কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। একটু থেমে সে মন দিয়ে আবার ডাকটা শোনার চেষ্টা করল। ভুল শুনল নাকি সে? ভাবল খানিক। না, আর কোনও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। খানিক দূর গিয়ে আবারও যেন মনে হলো কেউ নিশ্চয়ই ডাকলো তাকে। কিন্তু পরবর্তী কোনও আওয়াজ এবারও সে শুনতে পেল না। পরপর ঘটনা ঘটে চলায় তার মাথায় আবারও নিশির চিন্তা ঘুরতে লাগল। কিন্তু নিশি তো এত তাড়াতাড়ি বেরোয় না! তবে কি মনের ভুল? ভাবতে ভাবতে জোরে পা চালাতে লাগল সে।

 

বাড়িতে ফিরে দেখল অলোক এসে বসে আছে। তাকে ফিরতে দেখে আপ্যায়ন করলো, “কী খবর, কোত্থেকে ফিরলে? সারাদিন ভালো কাটল তো? শুনলাম দুপুরে ঘুমিয়েও নিয়েছো এক চোট?”

“অলোকদা, নিশি কি সত্যিই আছে?” অম্বিকা হঠাৎ প্রশ্ন করলো।

অলোকবাবু যথেষ্ট অবাক তার মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে, জবাব দিলো, “নিশি! সে আবার আছে নাকি? তুমি তো এসব মানো না বলেই জানি। তা সেই তুমিই এসব বলছ? ওরা গ্রামের লোক ভাই, এখনও অনেক কিছু মানে। ওদের কথা কানে নিও না। এসো, বসো। কই গো, অম্বিকাকে চা দিও।”

“নাঃ অলোকদা, চা আর খাবো না। মাথাটা বড় ধরেছে। ঘরে গিয়ে একটু শোবো।” অম্বিকা চুপচাপ চলে আসতে চায়।

“মাথা ধরেছে, ঠাণ্ডা লাগেনি তো? বাইরে যা কুয়াশা। কানেও কিছু দেওনি দেখছি। চা খাবে না তাহলে? আচ্ছা, গিয়ে শুয়ে থাক। খাবার সময় ডাকছি।”

 

ঘরে চলে আসে অম্বিকা। এখনও কানে বার বার বাজছে তার নাম ধরে যেন কেউ ডাকছে। ঘরের দরজা আটকে সে বিছানায় এসে বসল। রাস্তার থেকে অনেকটা দূরত্বে তার বরাদ্দ ঘর, বাইরের দুই দিকেই বাগান, ফুলগাছ। তার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে দূর থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। কান দুটো হাত দিয়ে চেপে ধরল সে। তবুও থেকে থেকেই বাজছে সেই স্বর। হরেনদা এমন ভাবে বলল কথাগুলো, মাথার মধ্যে একেবারে চেপে বসেছে তা। এমনিতে কল্পনার জগতে থাকা মানুষ অম্বিকা। হরেনদার কথা তার মনে বসে গিয়ে মাথার মধ্যে একটানা নিশির মতো ডেকে চলেছে তাকে সেই কণ্ঠস্বর, “অম্বিকা, অম্বিকাবাবু, অম্বিকাবাবু আছেন?”

 

কানে বালিশ চাপা দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তবুও নিস্তার নেই। এবার মনে হলো বাড়ির বাইরের থেকে আসলেই যেন কেউ ডাকছে। সে বালিশ সরিয়ে মন দিয়ে আবার শুনতে চাইল ডাকটা। ওই তো শোনা যাচ্ছে আবার, নিশি এলো নাকি। মনে খানিক শঙ্কা নিয়ে উঠে বসল সে। কান পেতে ভালো করে শুনল, “অলোকদা... ও অলোকদা...”

নিশি অন্যকে ডাকলেও কি শোনা যায় তা, নাকি যাকে ডাকে সেই শুধু শুনতে পায়? ভাবতে থাকল সে। আরও চার-পাঁচবার সেই কণ্ঠস্বর শোনার পর বাইরের দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল। সে শুনেছে ওরা তিনবারের বেশি ডাকে না। তাহলে নিশ্চয়ই অলোকের কোনও পরিচিত কেউ এসেছে। অলোক তার সাথে কথা বলছে। কী বলছে তা সে বুঝতে পারল না। ইতিমধ্যে তার কানে সেই কণ্ঠস্বর ফিরে এসেছে আবার। তার মধ্যেই সে বাইরের দরজা আটকানোর মৃদু আওয়াজ পেল। সতর্কে সে লক্ষ করতে লাগল প্রতিটা আওয়াজের প্রতি। একটা পায়ের আওয়াজ তার দরজার কাছে এসে থেমে গেল। তক্ষুণি দরজায় ঠক ঠক করে আওয়াজ। অম্বিকা কোনও উত্তর দিল না। আরও তিনবার জোরে জোরে শব্দ হওয়ার পর সে আওয়াজ বের করল কোনও রকমে, “কে?”

“আমি অলোকদা, কী ব্যাপার, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?” দরজার ওপারে অলোকদার কণ্ঠস্বর। অম্বিকা নিশ্চিত হয়ে দরজার দিকে এগোলো। দরজা খুলতে অলোকবাবু ঘরের মধ্যে এসে বিছানায় বসে বলতে লাগলেন, “পাড়ার বিট্টু এসেছিল। পুলিশে নাকি বলে গেছে তারা কী প্রমাণ পেয়েছে যে মানিকপাড়ারই কারও কাজ। অধীরবাবুর বাচ্চা ছেলেটা, রোজই দেখি পড়তে যায়। কে জানে কার কী রাগ আছে। অধীরবাবুর ব্যবসাও তো কম নয়। কোথায় কোন শত্রু আছে কে জানে। তা তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?”

অম্বিকা চুপ করে থাকে। তার মাথাটা সারা খুব কম দিচ্ছে সব কথায়। তবুও বলল, “পুলিশ কি এসেছিল? কী পেয়েছে জানো কিছু?”

“ওরা নিশ্চিত যে অ্যাটাকটা মানিকপাড়ার মধ্যেই কোথাও হয়েছে, তারপর তাকে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলেছে। সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজছে পুলিশ। নিশ্চয়ই কিছু পাওয়া যাবে। তা তোমার চোখ এমন লাল কেন? ঠাণ্ডা বাঁধিয়েছ নিশ্চয়। রাতে শোওয়ার আগে একটা প্যারাসিটামল দেবো, খেয়ে শুয়ে পোড়ো।” কথাগুলো শেষ করতে করতে অলোকবাবু উঠে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। অম্বিকা দরজায় ছিটকিনি আটকে খাটে এসে বসল।

 

পুলিশে নাকি সারা গ্রাম তন্নতন্ন করে খুঁজছে। কি পেতে পারে তারা? অম্বিকা ভাবতে লাগল নিস্তব্ধ ঘরে। থেকে থেকে এখনও মাথার মধ্যে তার নাম ধরে ডেকে চলেছে। সেটাকে তাড়াতে অন্য কিছু চিন্তা করা যাক। পুলিশের কথাই চিন্তা করবে ঠিক করল সে প্রথমে। তারা সারা গ্রাম চষেও কিছু পাবে না। এই ঠাণ্ডায় সারারাতের খাটনি। যে অপরাধী সে মহা ধুরন্ধর, কোনও প্রমাণই রাখেনি। ঠিক ফাঁক বুঝে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। ফালতু এই ঠাণ্ডায় পুলিশকে খাটানো।

 

সেই আওয়াজটা গেছে খানিক। সে ভাবতে থাকল, গতকাল সান্ধ্যভ্রমণের ঘটনা। মানিকপাড়া গ্রামটা প্রায় ফরেস্টের কাছে। গাড়ি নিয়ে বিকালে যে কোনও জঙ্গলে ঘুরে আসা যায়। গতকালই সে গিয়েছিল নির্জন এক জঙ্গলে। নাম জানা হয়নি। মনোরম জায়গা পেয়ে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়েছিল। বুঝতে পারেনি অন্ধকার এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে। বিশ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে আসতে আসতে ততক্ষণে কুয়াশা গ্রাস করে ফেলেছে গোটা রাস্তা। ফগ লাইট না থাকায় খালি হেডলাইটে রাস্তা দেখতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। গ্রামের কাছাকাছি এসে এক অচেনা রাস্তা দিয়ে শর্টকাটে আন্দাজে ফিরছিল সে। একবার শুধু অন্ধ গলিতে ঢুকতে গিয়ে কাদার মধ্যে ফেঁসে যায় গাড়ি। ব্যাক গিয়ারে জোরে পিক আপ দেওয়া সত্ত্বেও চাকা স্লিপ করছিল। বার বার পিক আপ দিয়েও গাড়ি কাদার থেকে আর বেরোচ্ছিল না। এক সময় জোরে পিক আপ দিয়ে খানিকক্ষণ ধরে রাখতেই পেছনের দিকে ছিটকে বেরিয়ে আসে গাড়িটা। নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে গলির থেকে ফুল স্পীডে বেরিয়ে উল্টোদিকের দেওয়ালে ধাক্কা মেরে দাঁড়িয়ে যায়।

 

সে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে কতটা ক্ষতি হলো দেখার জন্যে। দেখে গাড়ির পেছনের বীমটা উল্টোদিকে ধাক্কা মারায় পাঁচিলের গায়ের থেকে ঝুরো সিমেন্টের পলেস্তারা খানিক খসে পড়েছে। গাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি সম্ভবত। আরও ভালো করে দেখার জন্য সে গাড়িতে উঠে পাঁচিলের থেকে খানিক এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলে নেমে সবার প্রথমেই যে দৃশ্যটি দেখে তা আঁতকে ওঠার মতো। পাঁচিলের থেকে খানিক দূরে একটি বাচ্চা ছেলের দেহ গাড়ির টেল লাইটের লাল আবছা আলোয় বোঝা যাচ্ছে। সে ছুটে যায়, মোবাইলের আলোয় দেখে কোনও রক্তপাত হয়নি। কিন্তু ছেলেটি অচৈতন্য। সম্ভবত মাথায় লেগেছে। গাড়িটি পেছনোর সময়ই মনে হয় সেই রাস্তা দিয়ে ফিরছিল সে। এখন উপায়? কেউ দেখলে সমূহ বিপদ। নানা কৈফিয়ত দাবি করবে সবাই মিলে। এ কী দুর্ঘটনা সে ঘটালো বিভূঁইয়ে এসে।

 

ছেলেটি মারা যায়নি তো? নাকে বুকে কোনওরকম সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। সে চিন্তা করল তাকে এই রাস্তায় আসতে কেউ দেখেছে কিনা। রাস্তায় আসতে কাউকে সে পাশ কাটিয়েছিল খানিকটা আগেই। সে দেখেনি তো ভালো করে? ছেলেটাকে এখানে পেলে যদি এই গাড়ির বিবরণ দিয়ে দেয়! সে বুঝতে পারছিল না সেই মুহূর্তে তার কী করা উচিত। খানিকক্ষণ ভেবে সে গাড়ির মধ্যেই তুলে নিল ছেলেটিকে। যে রাস্তা দিয়ে এসেছিল, সেই রাস্তা দিয়ে ফেরৎ গেল বড় রাস্তায়। গাড়ি চালাতে চালাতেই উল্টোদিকের দরজা খুলে ছেলেটাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিল রাস্তায়। এরপর বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত কিছু ভেবে দেখেছে সে কোথাও কোনও প্রমাণ আছে কিনা। জ্ঞানত সে তেমন সন্দেহজনক কিছু ভেবে পেলো না। পাঁচিলের কাছে গাড়ি চেনার কোনও উপায় নেই, কিছু ভাঙেওনি। সম্ভবত এই ছেলেটা পাঁচিল আর গাড়ির মাঝে পড়ে গিয়েছিল, যার জন্য সমস্ত আঘাতটাই এর উপর দিয়ে গেছে, গাড়ির ক্ষতি হয়নি। বরঞ্চ মেন রোডের পাশে দেখলে অ্যাকসিডেন্ট ভেবে কেউ অত খোঁজ নেবে না।

 

কিন্তু পুলিশে নাকি সারারাত খুঁজবে। কিছু যদি পেয়ে যায় ওরা। মনের মধ্যে আবার সেই কণ্ঠস্বর বেজে চলেছে। এবার অম্বিকার মনে হতে লাগল এই আওয়াজ তাকে পাগল করে দেবে। ধীরে ধীরে ডাকার পরিমাণ বাড়ছে। ইতিমধ্যে অলোকবাবু তাকে খাবার জন্যে ডাকতেও এলো একবার, অম্বিকা জানিয়ে দিলো তার খিদে নেই। বিছানায় শুয়ে থাকলো সে। তার মাথার মধ্যে ক্রমাগত বেজে চলেছে সেই ডাক, “অম্বিকা... ও অম্বিকাবাবু... অম্বিকাবাবু...”

 

সকাল থেকে সে মানিকপাড়ার সমস্ত রাস্তায় হেঁটেই ঘুরে বেরিয়েছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে। নানা জায়গা থেকে নানা তথ্য নিয়ে তাকে কখনই সন্দেহ করা যেতে পারে তেমন মনে হয়নি। বেশিরভাগ মানুষ ধরে নিয়েছে বড় রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু যদি পুলিশে জানতে পারে সে কোন রাস্তা দিয়ে ফিরছিল। যদি সেই অন্ধকারে না দেখা কোনও প্রমাণ রয়ে যায় পাঁচিলের পাশে। পুলিশে যদি এই রাতে আসে তাকে ধরতে? সে আর কিছু ভাবতে পারছে না। ঘরটা অন্ধকার করে দিলো। কণ্ঠস্বরের বলার গতি এখন অনেক স্পষ্ট। কিছুতেই সেটি মাথার থেকে বেরোচ্ছে না। অন্য চিন্তা করতে গেলে গতকালের দুর্ঘটনার চিন্তা আসছে খালি। এক এক সময় অম্বিকার মনে হতে লাগল সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। সারা বিছানায় ছটফট করে সে মেঝেতে নেমে এল। ঘরের এদিকে ওদিকে ছুটে বেড়াতে লাগলো কণ্ঠস্বরের থেকে মুক্তি পেতে। মাঝে মাঝেই মনে হতে লাগল পুলিশে তাকে ধরতে আসবে এইবার। জানলাগুলো অল্প ফাঁক করে দেখতে থাকলো বাইরের গতিবিধি। সেই কণ্ঠস্বর তাকে অস্থির করে তুলেছে। এর থেকে নিশির হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে মুক্তি পেলে ভালো হয় মনে হতে লাগল।

 

সারা ঘরে সে ছুটে বেড়াচ্ছে, কখনও হাত দিয়ে কান ঢাকছে, কখনও বিছানায় শুয়ে বালিশে কান লুকাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেই মানসিক কণ্ঠস্বরের তীব্রতায়। অম্বিকা রাতের ছোটবড় নানারকম শব্দ মন দিয়ে শুনতে থাকল এই কণ্ঠস্বরের থেকে বাঁচতে। মনে হল বাইরে পায়ের আওয়াজ। কান খাড়া করে রাখল এক না একাধিক জানার জন্য। মনের মধ্যে ক্রমাগত তার নাম ধরে ডেকে চলেছে, বাইরে কারোর পায়ের আওয়াজ। পুলিশ এল কি? সে তো নিশিতে বিশ্বাস করে না, তারা আসতেই পারে না। বাইরের পায়ের আওয়াজের অধিকারীকে তার দেখার বাসনা তীব্র হতে থাকল। পুলিশ কি কিছু সত্যিই পেয়ে গিয়ে তাকে ধরতে এসেছে? ঘরের বাইরে কে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠছে প্রাণ।

 

প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলল জানলার দিকে। অর্ধেক খোলা জানলা, তার বাইরে কাউকে সে দেখতে পাচ্ছে না। জানলার ধারে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে ওরা কারা। এক না একাধিক। মানসিক চাপ বেড়ে চলেছে মাথায়। মনের মধ্যে ক্রমাগত সেই কণ্ঠস্বর তার নাম ধরে ডেকে চলেছে। এই অশান্তির থেকে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যাক মনে প্রাণে চাইতে লাগল এবার। পায়ের আওয়াজ তার জানলার পাশে এসে থামল। আওয়াজ পেয়ে অম্বিকা উন্মুখ হয়ে পড়ল উত্তর দেওয়ার জন্য, তাকে তারা ধরে নিয়ে যাক, সে পাপী, দোষী। বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়ত সে বেঁচে যেত। কিন্তু সংশয় হয়েছিল লোকে যদি না বোঝে এটি তার অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। নির্বিঘ্নে নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিল সে। এখন কণ্ঠস্বরটি তার কান ফেটে বেরিয়ে আসছে যেন। সে পরিষ্কার বুঝতে পারছে মনের থেকে বেরিয়ে কণ্ঠস্বরের মালিক জানলার ওপাশে এসেছে। তার কানে এক্ষুণি আসবে... অম্বিকা... অম্বিকাবাবু? অম্বিকা... অম্বিকাবাবু... আবার... আবার... সে এবার উত্তর দেবেই সর্বশক্তি দিয়ে, “হ্যাঁ, আমি আসছি, একটু দাঁড়ান, এই তো আমি, আমি অম্বিকা। এবার বলুন আপনি কে, একবার জানান কে আপনি?”

 

পরেরদিন সকালে পুলিশ জানালো নার্ভাস ব্রেকডাউনের জন্যই সম্ভবত মৃত্যু, ডাক্তারে তাই সন্দেহ করছে। ঘুমের ওষুধের শিশিও ছিল ঘরে, আর মাত্র কয়েকটা ট্যাবলেট পড়ে আছে ওতে, প্রাথমিক সাসপেক্ট হিসেবে সেটাকে নিয়ে যাবে তারা। অলোকবাবু ক্রমাগত সবাইকে বলে চলেছে রাতে কারোর কোনও আওয়াজ সে পায়নি, সকালে তার বৌ চা দিতে এসে দেখে জানলার পাশে মেঝেতে সে পড়ে আছে, চোখগুলি বিস্ফারিত। সবাই বলাবলি করছে প্রচণ্ড হার্ট অ্যাটাকের জন্যে মৃত্যু, ঘুমের বড়িও খেয়েছিল নিশ্চয়ই অনেক।

 

হরেনদা এসেছিল দেখতে, ছিল অনেকক্ষণ। তার কাছে শোনা গেল পাশের পাড়ার হরি পাগলকে কাল রাতে নাকি ক্ষেতের দিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, বোধ হয় ওকে নিশিতে টেনে ওখানে নিয়ে গিয়ে মেরেছে। অম্বিকার দিকে তাকিয়ে “খুব ভালমানুষ... আহারে...” বলে যাচ্ছিলেন। সবাই প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে এত কম বয়সে অম্বিকার চলে যাওয়ায়। পুলিশে বডি নিয়ে যাওয়ার পর সবাই যখন আলোচনায় মত্ত তখন বিট্টু এসে তাদের জানিয়ে গেল সে একটু আগে অধীরবাবুর বাড়িতে গিয়ে শুনেছে গতকাল রাত থেকে তাদের ছেলের সার এসেছে, এখন ডাক্তারে জানিয়ে গেল ভয় অনেকটা কেটেছে।