চন্দ্রাহত - মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ

এক

এই মানব বসতির লোকদের উৎসবের সুযোগ হয় না বললেই চলে। কষ্টে-ক্লেশে সময় কাটানো মানুষদের আবার ফুর্তি কী? সকালে উঠেই তাদের শুরু হয়ে যায় চিন্তা—রাতটা বাঁচব তো? কোনওক্রমে রাতের তারা দেখার সৌভাগ্য হলে ঘুমাবার আগে একটা কথাই ভাবে: ঘুমটা ভাঙবে কি, নাকি রাতের আঁধারে তেজস্ক্রিয়তা গুটি-গুটি পায়ে এগিয়ে এসে গিলে খাবে?

সালটা আশি এ.ডি.। এ.ডি. আগে অন্য অর্থে ব্যবহার করা হতো। এখন এর অর্থ: আফটার ডেসট্রাকশন। সমাজ ও সভ্যতার ধ্বংস সূচিত হয়েছিল আশি বছর আগে। ক্ষমতালোভী মানুষদের বলির শিকার হতে হয়ে ছিল পৃথিবীকে। সেই পৃথিবী, যাকে এক কালে বলা হতো সুজলা-সুফলা।

আর এখন?

সবুজের চিহ্ন খুঁজে পেতে পাড়ি দিতে হয় শত শত মাইল।

বৈজ্ঞানিকদের ধন্যবাদ। তাদের আপ্রাণ চেষ্টায় কিছু কিছু এলাকার গুটিকয়েক মানুষকে আলাদা করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল। মাটির নিচে দীর্ঘ দিন কাটাবার পর, এই বছর বিশেক আগে তারা উঠে আসতে পেরেছে ধরার বুকে। অবশ্য এছাড়া আর উপায়ও ছিল না, পাতালে বায়ু পরিশোধনের যন্ত্রপাতি একে একে সব অকার্যকর হয়ে পড়তে শুরু করেছিল, টান পড়ছিল জমানো খাবারে। আর হয়তো টেনে-টুনে বছর পাঁচেক, তারপর না খেয়ে মরতে হত সবাইকে।

পাতাল থেকে বেরিয়ে, পৃথিবীর বুকে পা রাখার এই সুযোগ করে দেবার সবটুকু কৃতিত্ব পাবে ফিরোজ। এশিয়ার পাতাল শহরে, অনেকটা ধূমকেতুর মত আবির্ভাব ঘটে এই মহানায়কের। প্রলয়ের আগে ছোট, সুন্দর এক দেশ ছিল। নাম নাকি ছিল বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ। আসলে এত দিন পর, ঠিক নামটা বলতে পারে না কেউই।

বাংলাদেশই ধরে নেয়া যাক।

ওই দেশের মানুষের হাতে ছিল না পারমাণবিক অস্ত্র বা অগণিত সম্পদ। ছিল শুধু মেধা। আর সেই মেধাকে কাজে লাগিয়ে তারা সংগঠিত করেছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। যাদের হাতে অস্ত্র নেই, কিন্তু মেধা ও জনশক্তি আছে, কেবল মাত্র তেমন কয়েকটি দেশের জনগণই সেই ভয়াবহ প্রলয় থেকে বাঁচতে পেরেছিল।

ধারণা করা হয়, ফিরোজ কোনও এক বাংলাদেশির বংশধর।

অবশ্য অতীতকে আঁকড়ে ধরে রাখার ইচ্ছা বা মানসিকতা, কোনওটাই বর্তমানের মানুষের নেই। থাকবেই বা কেন? কতিপয় মানুষের লোভের শিকার তারা, তাদের পূর্বপুরুষরা। বাস করার জন্য এখন সারাবিশ্বে রয়েছে মাত্র অল্প কিছু স্থান। মানব বসতির সংখ্যা এখন সারা পৃথিবীতে মাত্র এক শ’!

প্রতিটা বসতিতে কতোজন করে বাস করতে পারবে, তার সংখ্যাও নির্ধারিত—মোটে দশ হাজার। দুনিয়াতে মানুষের সংখ্যা এখন মোটে এক কোটি!

ভাবা যায়!

আট বিলিয়ন মানুষের পদচারণায় যে পৃথিবীর একদিন মুখরিত হয়ে থাকত, সেখানে এখন বাস করে মাত্র এক কোটি লোক!

তবে মহাবিশ্বে মানুষের সংখ্যা এক কোটি নয়। চাঁদে কলোনি আছে যে!

সেই কলোনিতে কাজ করে আরও হাজার পাঁচেক মানুষ। চেষ্টা করছে, উপগ্রহটাকে বাসযোগ্য করে তোলার। তবে কতটা সফল হচ্ছে, বলা মুশকিল। অন্তত বর্তমান প্রজন্মের কেউ বলতে পারবে না যে, চাঁদের বসতি সংক্রান্ত কোনও সুখবর শুনতে পেয়েছে তারা।

সে যাই হোক না কেন, চাঁদের বসতিতে পা রাখার জন্য উদগ্রীব থাকে সবাই। আর থাকবে না-ই বা কেন? ওখানে তেজস্ক্রিয়তার ভয় নেই, নেই আধ-পেটা থাকার হুমকি। এমন কী নেই বুনো পশু বা বিষাক্ত সাপের শিকার হবার আশঙ্কা! সুন্দর আর মজবুত করে বানানো ডোমের ভেতরে থাকে সবাই। পরিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেয়।

ফিরোজ তো বলেছেন, ওরা নাকি রাতে দেরি করে ঘুমায়! আড্ডাবাজি, খেলাধুলা, দুষ্টুমি করে কাটিয়ে দেয় অনেকটা সময়!

ভাবে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে পৃথিবীর এক কোটি মানুষ। আধুনিক সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে ধর্ম বিশ্বাস, নইলে হয়তো স্বর্গ বলতে চাঁদকেই বুঝত!

তাদের জীবনে উৎসবের আবহ বয়ে আনে একটাই ব্যাপার, তা পদোন্নতি।

অবশ্য পদোন্নতি না বলে স্বর্গ গমন বললেও অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু ওই যে, স্বর্গ-নরক বোধটাই যে তাদের নেই!

প্রতি মাসে একবার করে পর্দায় দেখা দেন মহানায়ক ফিরোজ। তার অগণিত সফল কাজের মধ্যে একটি, প্রতিটা বসতিতে রয়েছে একটা করে পর্দা। অবশ্য কাজটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে, বুঝে পায় না অন্য কেউ। বুঝতেও চায় না। যে বিজ্ঞান ওদের কাছ থেকে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাটুকু কেড়ে নিয়েছে, তার প্রতি মানুষের এখন রয়েছে কেবলই ঘৃণা... গা শিউরানো, প্রবল-প্রতাপশালী ঘৃণা!

মহানায়ক ফিরোজ নিজে এই পর্দা বসানোর কথা না বললে, ওটা সেই কত দিন আগেই গুঁড়িয়ে ফেলত সবাই!

মাসিক বক্তব্যের সময় নতুন নতুন আশার আলো দেখান তিনি। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখান দুর্বল মানুষদের। তার এই একবার দর্শন দেয়া যেন এক সিলিণ্ডার অক্সিজেন। বাকি মাসটা চলার সামর্থ্য জোগায় সবাইকে।

প্রায় প্রতিবার-ই মহানায়ক ঘোষণা করেন কয়েকটা করে বসতির নাম, সেই সাথে একটা সংখ্যা। এই সংখ্যাটা কিন্তু নির্ধারিত নয়। কোনও মাসে বাড়ে, কোনও মাসে কমে। এই মাসে কোন বসতি থেকে ক’জন সৌভাগ্যবান চাঁদে যাচ্ছে, সেটার ঘোষণাই দেন তিনি।

এরপর শুরু হয় লটারি।

আশ্চর্যের বিষয়, প্রচণ্ড ক্ষমতালোভী এক প্রজাতির এই বর্তমান বংশধরেরা কিন্তু একদম লোভী নয়! নতুন শিশু এসেছে ধরণীতে, এই আনন্দেই আত্মহারা। আর হবে না-ই বা কেন! তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে মনুষ্য প্রজাতির প্রজনন ক্ষমতা। তাই প্রতিটা শিশু যেন আশীর্বাদ স্বরূপ। মানুষ এখন কোটি দেহ, এক প্রাণ। চিন্তা শুধু প্রজাতির ভাল নিয়েই।

সত্তর নম্বর বসতিটার উৎসবের কারণ ভিন্ন। মাত্র একজন নতুন অতিথি এসেছে এখানে। তাই চাঁদে যাবার সুযোগও মিলবে মাত্র একজনের। এই জনবসতির আনন্দের কারণ, মহানায়ক ফিরোজের পাঠানো দুই কর্মকর্তা আদি আর সৌরভ।

পক্ষপাতিত্ব শব্দটা ভুলতে বসেছে সবাই, নইলে হয়তো মহানায়ককে সেই অপরাধে অভিযুক্ত করত। অবশ্য ফিরোজের দলের প্রায় সবাই ওরই মত। ছোটখাট, শ্যামলা বর্ণ, কালো চোখ আর কালো চুল। শারীরিকভাবে কেউই খুব একটা প্রভাবশালী নয়। তবে মহামতি ফিরোজের নিজ হাতে গড়া দলটার প্রত্যেক সদস্যের ব্যক্তিত্ব আকাশছোঁয়া। সবাই হাসিখুশি, বন্ধু-বৎসল আর বুদ্ধিমান। কিন্তু তাদের অন্য রূপটা জরুরি অবস্থায় পরিষ্কার বোঝা যায়। যে একবার সেটা দেখেছে, মিত্র হিসেবে যে-কোনও বিপর্যয়ে তাদেরকেই সাথে চাইবে।

সৌরভ আর আদি ছাড়াও মহামতি ফিরোজের দলে আছে আরও পঞ্চাশজন লোক। এদের দায়িত্ব ভাগ করা। প্রতি চারটা বসতি থেকে লোক আনা নেয়ার কাজ করে দু’জনের দলে ভাগ হওয়া প্রতিটি ইউনিট।

সত্তর নং বসতিতে কাজ শেষ সৌরভ ও আদির। তাদের কর্মদক্ষতার সাক্ষ্য দিচ্ছে সময়সীমা। নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই এসে উপস্থিত হয়েছে দু’জন। ক্লান্তি প্রায় ভেঙে পড়তে চাইছে দেখে, বসতির মুরব্বীরা ওদেরকে একদিন বিশ্রাম নেবার অনুরোধ করেছিল। তাই গত রাত কেটেছে ভোজ আর আনন্দে।

আমাদের জন্য ওরা এতো কিছু করে, আর আমরা ওদেরকে কিছু দেব না—এই ভেবে ক’জন তরুণী গিয়েছিল দুই কর্মকর্তার মনোরঞ্জনের জন্য। কিন্তু না, কর্মকর্তারা তাদের দিকে ফিরেও চায়নি। খুশিই হয়েছে সবাই, ভরে উঠেছিল বুকটা মহামতি-মহানায়ক ফিরোজ আর তার দলের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে।

তবে হ্যাঁ, একেবারে ছেড়ে দেয়া হয়নি সৌরভ ও আদিকে। পৃথিবীর গল্প, ফিরোজের গল্প আর বিশেষ করে চাঁদের গল্প শোনাতে হয়েছে ওদের। সেই গল্পের মাঝে নতুন করে বাঁচার উপকরণ খুঁজে নিয়েছে সবাই।

পৃথিবী ধীরে ধীরে আবারও হতে শুরু করেছে বাসযোগ্য। মহামতি ফিরোজের নেতৃত্বে নতুন নতুন বাসযোগ্য এলাকা খুঁজে বের করছে ওরা। তবে বাসযোগ্য হলেই তো আর বসতি গড়া যায় না। বর্তমান দুনিয়াতে প্রতিটা বসতিই যেন একেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ নগর রাষ্ট্র! পানি, খাবার ইত্যাদির ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করে নিয়েছে। এই তো, সত্তর নম্বার বসতির লাগোয়া মাটিতেই চাষ হয় ফসলের। তৃষ্ণা মেটায় কয়েকটা কূপ। প্রতিটা বসতিতেই এই সংখ্যাটা এক।

তাই আরও অনেকগুলো এলাকা বাসযোগ্য হলেও, ঠিক আবাস যোগ্য হয়ে ওঠেনি। হয় পানির ব্যবস্থা নেই, নয়তো নেই ফসলি জমিন।

তবে চিন্তা কী, সামনে বসে তন্ময় হয়ে সবুজ পৃথিবীর গল্প শুনতে থাকা লোকগুলোকে আশ্বাস দিল সৌরভ। কিছু সময় বেশি লাগলেও, মহামতি ফিরোজ একটা না একটা উপায় ঠিকই বের করবেন।

মাথা নাড়ল বসতির মুরুব্বীরা।

ঠিকই তো, মহামতি ফিরোজ কোনওদিন আশাহত করেছেন?

করেননি!

দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে যেসব দ্রব্যের প্রয়োজন, তার বাইরেও সব কিছুই জোগাড় করে দিয়েছেন তিনি। গতবার যখন সবার ঠাণ্ডা-কাশি হলো, ওষুধ পাঠিয়ে দেননি গাড়ি ভরে?

দিয়েছেন।

তাই ওসব জমিতেও বসতি স্থাপন করবেন নিঃসন্দেহে।

এরপর সৌরভকে ছেড়ে, আদির দিকে মন দিয়েছিল সবাই। চাঁদের গল্প শুনতে চায়।

আসলে চাঁদের বসতিটা গড়া হয়েছিল অনেক আগে!

অনেক বলতে অ... নে... ক...

সেই প্রলয়ের আগেই।

কিন্তু পরে ওখানে যাওয়ার কোনও উপায় কারও জানা ছিল না। মাত্র বছর দশেক আগে, অনেক খুঁজে একটা কর্মক্ষম মহাকাশযান পেয়ে গিয়েছিলেন মনুষ্য সমাজের আরেক ত্রাতা, বিজ্ঞানী উমা। সেই মহাকাশযান কীভাবে চালাতে হবে, সেই জ্ঞানটাও বের করতে পেরেছিলেন। তবে ছোট আকারের যান হওয়ায়, একেক বারে পাঁচশ’র বেশি মানুষ আঁটে না ওতে।

নতুন এই আবিষ্কারের কথা শুনে, আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল সবাই। মানব সভ্যতার ইতিহাস এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে ছিল তখন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও, প্রতিটা বসতি থেকে পাতালে ফিরে যাবার রব উঠেছিল। চাঁদের বসতি আর ভবিষ্যতে আরও মহাকাশ যান নির্মাণের কথা শুনে, শান্ত হয়েছিল সবাই।

কিন্তু আফসোস, বিজ্ঞানী উমা কেন জানি আত্মহত্যা করে বসলেন!

আগে থেকে কেউ টের পায়নি, তা বলা যাবে না। মুখ ভার করে থাকতেন, কথা বলতেন কম। উচ্ছ্বাস হারিয়ে গিয়েছিল যেন জীবন থেকে। বিশ্বের প্রতিটা মানুষ অবশ্য দুঃখজনক ঘটনাটার জন্য নিজেকেই দায়ী বলে মনে করে। সবার ধারণা, এক কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হওয়ার চাপটা সামলাতে পারেননি মহিলা। মানসিক চাপের সামনে মাথা নত করেন। একদিন বসতি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন বাইরে। তেজস্ক্রিয়তার হাতে সঁপে দেন নিজেকে। লাশটাও পাওয়া যায়নি। তাই এক হিসেবে, বিশ্বের এক কোটি মানুষের প্রত্যেককেই দায়ী বিজ্ঞানীর মৃত্যুর জন্য।

ওসব দুঃখের স্মৃতি আজ মনে করতে চাইল না সত্তর নম্বর বসতির অধিবাসীরা। আজ আনন্দ করবে, নতুন স্বপ্নের হাতে নিজেদেরকে সঁপে দিতে।

চাঁদের স্বপ্ন!

সুখী এক জীবনের স্বপ্ন!

আদি বেচারা এতগুলো স্বপ্নালু চোখের অনুরোধ পায়ে ঠেলতে পারল না। বলব না, নিষেধ আছে করতেই করতেই বলা শুরু করে দিল:

‘মহানায়ক ফিরোজ নতুন একজন বিজ্ঞানীকে দলে নিয়েছেন, এ কথা অনেক আগের। আপনারা সবাই তা জানেন। কিন্তু যেটা জানেন না, তা হলো তিনি নতুন একজন বিজ্ঞানীকে চাঁদেও পাঠিয়েছেন! বিজ্ঞানী প্রীতম চাঁদে গিয়ে দারুণ কাজ দেখিয়েছেন! তিনি যাবার পর থেকে, উল্লেখযোগ্য গতিতে বেড়ে চলছে চন্দ্র-বসতির আকার। এখন মাসে পাঁচশ’জন করে অধিবাসী বাড়লেও সে চাপ সহ্য করতে পারবে ওরা! কিন্তু মহামতি চাইছেন, চন্দ্রবসতির উপর বেশি চাপ না দিতে।

‘আরেকটা সুখবর দিয়ে রাখি আপনাদের, নব উদ্যমে শুরু হয়েছে নতুন মহাকাশযান নির্মাণের কাজ। বিজ্ঞানী উমা আমাদেরকে ছেড়ে যাবার পর...’ বিষাদ নেমে এলো সবার মুখে। ‘...তাঁর সহকারীকে সামনে রেখে কাজ করছিলাম আমরা। কিন্তু তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি এত দিন। এই তো মাস ছয়েক আগে আমরা খুঁজে পেয়েছি বিজ্ঞানী উমার একটা ডায়রি। ওখানে রেখে গিয়েছেন তিনি নতুন নতুন অনেক তথ্য আর নির্দেশনা। সেসব অনুসরণ করেই নতুন মহাকাশযান বানানো হচ্ছে চাঁদে। খুব শীঘ্রই আমরা হয়তো মঙ্গলে পাড়ি জমাতে পারব। হয়তো আমাদের জীবদ্দশায় হবে না। কিন্তু এই বিচ্ছুগুলো...’ বলতে বলতে সামনে বসে থাকা এক বাচ্চাকে কোলে তুলে নিল আদি। ‘...একদিন হয়তো মঙ্গলে বাসা বাঁধবে। সংসার করবে। মঙ্গলকে বানাবে নতুন পৃথিবী!’

চাঁদের আফিমে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষরা সেদিন রাতটা মরে যাবার ভয়ে নয়, বরঞ্চ নাতি-পুতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে কাটাল!

দুই

পরের দিন শুরু হলো দারুণভাবে। অনেক দিন পর, তেজস্ক্রিয় মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন সুয্যি মামা! মৃদু মন্দ বাতাস আর নির্মল সকাল, সুখী হতে এর চাইতে খুব বেশি কিছু দরকার আছে? সবার কাছে না হলেও, অন্তত এই সত্তর নম্বর বসতির অধিবাসীদের কাছে নেই! তার উপর গত রাত্রির ভোজ আর চাঁদের নতুন গল্পের প্রভাব তো আছেই!

সপ্তাহে এক দিন গোসল করে সবাই, উৎসবের আবহে সেটাকে এই একবারের জন্য দু’দিনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

তা ছাড়া, দুপুরে শুরু হবে দারুণ লটারি। তার আগেই কাজ সেরে নিতে হবে সব। আনন্দঘন দিন হলেও, কাজে ফাঁকি দেবে না কেউ।

দশ বছর ধরে চলে আসছে লটারির এই প্রথা। বসতির দশ হাজার জনের সবার নামে তো আর লটারি করা সম্ভব না, তাই ভাগে-ভাগে করতে হচ্ছে। প্রতিটা বসতি আবার একশ’টা পাড়ায় বিভক্ত। প্রতিটা পাড়ায় থাকে সমান সংখ্যক মানুষ। পরিবারের সদস্য বেশি হলে অবশ্য একসঙ্গেই তাদেরকে থাকার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু মোটামুটিভাবে, প্রতিটা পাড়াতেই প্রায় সমান মানুষের বাস।

প্রথমে এই একশ’টা পাড়ার মধ্যে হয় নির্বাচন। এই নির্বাচন আবার সবার সামনে হয় না। পাড়ার প্রধানদেরকে সামনে নিয়ে, মহামতি ফিরোজের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন কে কী করবে। এরপরের ধাপে আমলে নেয়া হয় সেই নির্বাচিত পাড়ার প্রতিটা পরিবারকে। পরিবার প্রধানের নাম লিখে, সেটা ফেলে দেয়া হয় একটা বাক্সে। মহানায়ক ফিরোজের প্রতিনিধি তারপর টেনে নেয় একটা কাগজ।

এরপরের নির্বাচনে আর হাত থাকে না তার। কেউ কেউ প্রথম-প্রথম বলতো, কে চাঁদে যাবার যোগ্য, তা নির্ধারণ করার জন্য ফিরোজ কে? আর তাঁর নিযুক্ত প্রতিনিধি যে দুই নম্বুরি করবে না, তা-ই বা বলবে কে? হয়তো প্রতিনিধি যুবক, আর নির্বাচিত পরিবারে এক অনিন্দ্য সুন্দরী আছে! সেক্ষেত্রে কি মেয়েটা বাড়তি সুবিধা পাবে না?

কিন্তু মহামতি ফিরোজ এই বিশেষ নির্বাচন পদ্ধতি খুলে বলার পর, বিরুদ্ধচারী হবার কোনও সুযোগ রইল না! কেননা শেষ নির্বাচনটা করবে পরিবারের সদস্যরা। নিজেকে বাদে, অন্য কারও নাম লিখে বাক্সে ফেলবে তারা। যদি এতেও বিজয়ী নির্ধারিত না হয়, তাহলে শেষ ভোটটা দেবে পাড়ার প্রধান! যে প্রধানকে বসতির জনগণরাই নির্বাচিত করে।

যাই হোক, তাই আজ সকাল-সকাল কাজ সেরে ফিরতে চাই সবাই দুপুরের আগে।

প্রথম ধাপের নির্বাচন শেষ হতে বেশিক্ষণ লাগবে না।

সবাই চায়, দিনে-দিনে লটারির কাজটা শেষ করে ফেলতে। মহামতি ফিরোজের প্রতিনিধি আসার আগেই, পাড়ার সব পরিবারের নাম লেখা ভোট যেন বাক্সে থাকে।

দিনটা বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য বেশি আনন্দের। খেলাধুলার সুযোগ তারা পায় না বললেই চলে। যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ, প্রবাদটা সম্পর্কে না জানলেও, নিজেদেরকে সেভাবেই প্রস্তুত করে নিচ্ছে মানুষ। তাই আরও বিষণ্ণ কোনও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে যেতে চায় সন্তানদের।

ফলাফল একটু অমানবিক। রাত-দিন কেবল পড়া আর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিয়েই ব্যস্ত থাকে বাচ্চারা। গড় আয়ু চল্লিশে নেমে এসেছে বলে, পনেরো বছর বয়সেই প্রত্যেককে সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বনে যেতে হয়! ছুটি বলতে তাই মাত্র মাসে একদিন।

আজকের দিনটায় তাই ছুটোছুটিতে ব্যস্ত বাচ্চারা। এই পাড়া থেকে ওই পাড়ায় যাচ্ছে অবাধে। নতুন পোশাকে দেবশিশু বলে মনে হচ্ছে তাদেরকে। অবশ্য দেবশিশুদের মাঝে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই। দুষ্টামি করছে, কিন্তু মাত্রায় থেকে। হাসছে, খেলছে, কিন্তু সীমা ছাড়াচ্ছে না।

হঠাৎ খবর শোনা গেল, মহামতি ফিরোজের প্রতিনিধি, সৌভাগ্যবান পাড়া হিসেবে বেছে নিয়েছে সাঁইত্রিশ নম্বর পাড়াকে !

অন্য পাড়ার অধিবাসীদের মন খারাপ হয়নি, তা না। সবাই আগ্রহ নিয়ে সাঁইত্রিশ নম্বর পাড়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

এরপরের ধাপটা শেষ হয়ে গেল দ্রুত। পাড়াটা যেহেতু আদি বেছে নিয়েছে, তাই পরিবার বেছে নেয়ার ভার পড়ল সৌরভের কাঁধে। সালেহা বেগমের পরিবার বেছে নিল ও। অবশ্যই লটারিতে!

সালেহা বেগম বয়স্কা মানুষ, কিন্তু প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজের মত নয় এই সমাজ। তাই সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যই পরিবারের প্রধান।

আধঘণ্টা সময় দেয়া হলো তাদেরকে, কে চাঁদে যাবে সে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।

 

সালেহা বেগমের পরিবারের সদস্য পাঁচ জন। তিনি নিজে, তাঁর দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী। সন্তান হয়নি কোনও ছেলের ঘরে। স্বামী অনেক আগেই গত হয়েছেন। সালেহা বেগমের বয়স মাত্র পঁয়তাল্লিশ হলেও, পেকে সাদা হয়ে গিয়েছে চুল। শক্ত-সমর্থ মহিলা যৌবনে বসতির মানুষের পোশাক তৈরি করতেন। এখনও তাই করেন।

‘আমার মনে হয়, ছোট বউয়ের চাঁদে যাওয়া উচিত।’ পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসেছেন তিনি। আধঘণ্টার মাঝে ঐক্যমত্যে পৌছাতে না পারলে, নির্বাচন করে দেবে ফিরোজের লোক।

ছোট বউয়ের নাম প্রস্তাব করার কারণ আছে, মেয়েটা প্রায়শই অসুস্থ থাকে। সকাল-সন্ধ্যা জ্বর আর খুশখুশে কাশি তার নিত্য সঙ্গী। বছর চারেক আগে বিয়ে হয়েছে মেয়েটার। কিন্তু এখনও সন্তান হয়নি। এক হিসেবে না হওয়াটাই ভালো হয়েছে। হলে হয়তো সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে মারাই যেত বেচারি!

সালেহা বেগমের ছোট বউকে চাঁদে পাঠাতে চাওয়ার আরও একটা কারণ আছে, ছেলেকে আবার বিয়ে দিতে চান। যদি নাতির মুখ দেখা যায়!

‘আমি বলি কী,’ বড় বউ বলে উঠল। ‘আম্মাই চাঁদে যান না কেন? এমনিতেও তাঁর বয়স হয়েছে। আজীবন কষ্ট করেছেন। এতটুকু তো তাঁর প্রাপ্য!’

হাসলেন সালেহা। ‘আরে বউ মা যে কী বলো না! আমি চলে গেলে, বসতির পোশাক নির্মাণের ব্যাপারটা দেখবে কে? গাছের পাতা পরে দিন কাটাতে চাও নাকি!’

‘অসুবিধা হবে না মা!’ এবার ছোট ছেলে বলল। ‘ভাবী তো অনেকদিন ধরেই তোমার সাথে আছেন। তিনিই চালিয়ে নিতে পারবেন।’

মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল বড় ছেলে এবং ছোট বউ।

সালেহা বেগম বুঝতে পারলেন, এরা আগে থেকেই আলোচনা করেছে।

‘এই তাহলে ব্যাপার না? বুড়ো হয়েছি বলে তাড়িয়ে দিতে চাও?’ কপট রাগে বললেন তিনি। মনটা ভরে গেছে প্রশান্তিতে। তাকে নিয়ে তাহলে ছেলে-ছেলের বউরা ভাবে! সংস্কারের প্রশংসা করতে হয়!

তাঁর অবশ্য যেতে খুব একটা আপত্তি নেই। বড় বউ যথেষ্ট দক্ষ। মেয়েটা স্বভাবেও ভালো, কোনওদিন অনুযোগ করার সুযোগ দেয়নি। তাঁর অবর্তমানেও খুব একটা সমস্যা হবে না।

ছোট বউ বলল, ‘মা, এভাবে বলবেন না! আমরা তো আজীবন আপনার ছায়ায় থাকতে চাই। কিন্তু, মা, নিজের দিকটাও একটু ভেবে দেখুন। আমাদের মাঝে যে-কেউ গেলেই ভেঙ্গে যাবে জোড়া। এদিক দিয়ে চিন্তা করলেও কিন্তু বসতির ভালর জন্য আপনার যাওয়া উচিত!’

‘ঠিক আছে, তোমরা যদি তাই চাও...’

তিন

সকাল থেকেই বিষাদে ভরে আছে সালেহা বেগমের বাড়ির পরিবেশ। মুখ ভার করে আছে দুই ছেলে ও ছেলের বউ। মুখ ভার সালেহার নিজেরও। শেষ মুহূর্তে মনে পড়ছে নানা স্মৃতি। বড় ছেলেটার জন্ম, ছোট ছেলেটার গুটি-গুটি পায়ে হাঁটা... এমন কী ছোট বউ-মা’র অসুস্থতাকে ছেড়ে যেতেও মন চাইছে না। মানবজন্মের এই এক সমস্যা, মায়ার বাঁধন আটকে ফেলে মনকে। মানবেতর জীবন-যাপনের সময়, এই বৈশিষ্ট্যটা যন্ত্রণা দেয় বেশি।

ভোর হয়েছে কেবল, সৌরভ আর আদি গাড়ি নিয়ে পাড়ার ঠিক বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। এই গাড়িতে করেই কমাণ্ড সেন্ট্রালে যেতে হবে। গত রাতেই সৌরভ এসে সব বুঝিয়ে দিয়েছে সালেহাকে।

এখান থেকে বেরিয়েই পড়বে তেজস্ক্রিয় এলাকা। সেই এলাকায় যেন কোনও ক্ষতি না হয়, সেজন্য পরতে হবে বিশেষভাবে বানানো সুট। নতুন কারও পক্ষে ওটা পরা একটু কঠিনই। তাই আগে থেকেই প্র্যাকটিস করিয়ে রেখেছে। আসলে, গাড়িতে চড়ার আগেই সুটটা পরে নিতে হবে সালেহা বেগমকে।

সে কাজটাই করছিলেন এতক্ষণ তিনি। সুট পরা শেষে, বাইরে বেরিয়ে এলেন। ছোট বাচ্চার মতো তাকে থপথপ করে হাটতে দেখে, হেসে ফেলল সবাই। তবে কিছু মনে করলেন না রাশভারী মহিলা। এরকম মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। যা ভারী সুট!

বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন তিনি। যতক্ষণ দেখা গেল, চেয়ে রইলেন ছেলে ও ছেলেবউদের দিকে। আর কোনওদিন দেখা হয় কি না, কে জানে!

ভদ্রমহিলার মনের অবস্থা টের পেল মহামতি ফিরোজের দুই কর্মকর্তা। এরকম দৃশ্য প্রতি মাসেই দেখতে হয় তাদেরকে। সালেহা বেগমের মন ভোলানোর জন্য তাই চাঁদের নানা গপ্প জুড়ে দিল তারা।

শুনতে-শুনতে মন ভালো হয়ে গেল সালেহা বেগমের।

বিরান পৃথিবীর বুকে যার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে, চাঁদের সবুজ খেতের কথা শুনে তার মন ভরবে না কেন?

চাঁদের সমৃদ্ধ জীবনের কথা, দুনিয়ার দুঃখকে ভুলিয়ে দেবে না, তো কী দেবে?

আচমকা একটা লাল নিশানা দেখা গেল রাস্তায়। সৌরভ বলল, ‘হেলমেট পরে নিতে হবে। এখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা অনেক বেশি।’ হাতের পাশের হেলমেটের দিকে সালেহা বেগম হাত বাড়াতেই, হা-হা করে উঠল সে। ‘ওটা না, ওটা আদি ভাইয়ের। আপনারটা আলাদা। ওজন আর বয়সের ভিত্তিতে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করা আছে হেলমেটে। একজনেরটা আরেকজনের পরা ঠিক হবে না। ওই যে আপনারটা।’

সৌরভের দেখানো হেলমেটটা পরে নিলেন মহিলা। তাঁরও কেমন যেন লাগছিল, মনে হচ্ছিল অক্সিজেনের পরিমাণ কমে এসেছে বাতাসে।

হেলমেট পরে বুকভরা শ্বাস টানলেন তিনি। আরামে বুজে আসছে চোখ। তাতে ক্ষতি কী? কাজ তো নেই কোনও। এখনই দৌড়ে ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে না, অথবা দরকার নেই বার-বার ছোট বউয়ের ওষুধ খাবার সময় হলো কি না, তা দেখতে যাবার!

শরীরকে সবসময় কঠিন শাসনে রেখেছেন। আজ শরীরের দাবি মেনে নিলেন। মনকে চাঁদের স্বপ্ন দেখার আদেশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন সালেহা বেগম।

চার

‘শেষ?’ সামনের সিট থেকে জানতে চাইল আদি।

‘হু।’

‘সেণ্ট্রাল কমাণ্ডে জানিয়ে দে।’

‘দিই।’ বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সৌরভ। প্রতি মাসেই এই কাজটা করতে হয় ওদেরকে। বসতি থেকে একজন বা দুইজনকে নিয়ে আসা। রাস্তার মাঝখানে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তাদের মরদেহ! চাঁদ-ফাঁদের গল্প সব ধাপ্পাবাজি। মহামতি ফিরোজের আদেশ অমান্য করে যখন সবাই পাতালে ফিরে যেতে চাইছিল, তখন প্রয়োজনের খাতিরেই বিজ্ঞানী উমাকে ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেয়া হয় চাঁদের গল্প।

বিজ্ঞানী উমা সবার সাথে করা এ ধোঁকাবাজির চাপ বেশি দিন নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেন।

তবে মহামতি ফিরোজ এ কারণেই মহামতি, প্রয়োজনের সময় কড়া সিদ্ধান্ত নিতে জানেন তিনি। তাই বন্ধ করেননি প্রচারণা। পরে যখন দেখা গেল, বসতিতে নতুন প্রাণ বাড়তি চাপের সৃষ্টি করছে, সেই চাপ কমাবার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।

ফলশ্রুতিতে এই লটারির নাটক।

অন্তত মরতে কষ্ট পেতে হয়নি সালেহা বেগমকে। কার্বন-মনো-অক্সাইড তার কাজ নিঃশব্দেই সেরে ফেলেছে।

সেণ্ট্রাল কমাণ্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে।

একটু পরেই দেখা যাবে মহান ফিরোজের চেহারা।

সৌরভ ও আদি জানে, অচিরেই আরেকটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ওদেকে।

একটা বাচ্চা জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে, দু’জন করে প্রাপ্তবয়স্ককে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে চাঁদে, কেননা পৃথিবী যে প্রাণ রক্ষায় একেবারেই অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে!