সম্পাদকের কথা

প্রিয় পাঠকবন্ধুরা,

প্রথমেই আপনাদের সবাইকে জানাই নতুন বাংলা বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শারদ সংখ্যার পর আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম সাহিত্যের আলাদা আলাদা গোত্র নিয়ে এক একটি সংখ্যা করার, যাতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার বিস্তর সুযোগ থাকে। সেই মত গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসি সংখ্যা। সেটি কিঞ্চিৎ হলেও পাঠকানুকুল্য পাওয়ায় এবারে নতুন বাংলা বছরের শুরুতে আমাদের নিবেদন - বিশেষ অপরাধ ও রহস্য সংখ্যা।

তবে ‘অপরাধ ও রহস্য’কে আদৌ সাহিত্যের গোত্র বলা যায় কিনা তা নিয়ে পাঠক ও লেখকমহলে অনেকের মধ্যেই দ্বিধা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শরদিন্দু ব্যোমকেশকে নিয়ে তাঁর প্রথম গল্প-সংগ্রহ ‘ব্যোমকেশের ডায়েরী’র ভূমিকায় (১৯৩৩) লিখেছিলেন, “ডিটেকটিভ গল্প সম্বন্ধে অনেকের মনে একটা অবজ্ঞার ভাব আছে- যেন উহা অন্ত্যজশ্রেণীর সাহিত্য- আমি তাহা মনে করি না। Edgar Allan Poe, Conan Doyle, G. K. Chesterton যাহা লিখিতে পারেন, তাহা লিখিতে অন্ততঃ আমার লজ্জা নাই।” আমাদেরও মতে, সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, যাঁরা সাহিত্যের অন্যান্য গোত্রে প্রথিতযশা, তাঁরা যখন ‘অপরাধ ও রহস্য’ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন, আমাদের আর এটা সাহিত্যের গোত্র কিনা তা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে!

‘অপরাধ ও রহস্য’ নিয়ে কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে উঠে আসবে পাল্প ম্যাগাজিন বা মণ্ড-পত্রিকাদের কথা। বর্তমান সময়ে জনরা ফিকশন আবার ফিরে এসেছে পাঠকের মনে। ভাবলে অবাক লাগে, একটা সময় বিভিন্ন জনরায় নানা স্বাদের লেখা নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত হত মাসিক রহস্য পত্রিকা, মাসিক রোমাঞ্চ আর মাসিক গোয়েন্দা! শুধু এই তিনটি নয়, বিভিন্ন সময়ে ১৫-১৬টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে এই বাংলার বুকেই। কী হলো তাদের? অনীশ দেব তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘রহস্য রোমাঞ্চ গোয়েন্দা পত্রিকার সেরা ১০০ গল্প’-এর ভূমিকা ‘রহস্যময় দিন, রোমাঞ্চকর রাত’-এ সে দুঃখের কাহিনী জানিয়েছেন, “সত্তর দশকের যে-উত্থান আশা জাগিয়েছিল, পরের দশকে সেটা খুব দ্রুত স্তিমিত হয়ে গেছে। তবে এর কারণ হিসেবে শুধুমাত্র অডিয়ো-ভিশুয়াল মিডিয়ামকে দোষ দেওয়া যাবে না। কিংবা আধুনিক মুদ্রণ পদ্ধতির জাঁকজমককে দায়ী করা যাবে না। এই দুইয়ের কাছে পত্রিকাগুলো হেরে তো গিয়েছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল একঘেয়ে দুর্বল রচনার চাপ। এই তিনের কাছে নতিস্বীকার করে ‘ওরা’ নিভে গিয়েছিল।”

এখন ‘অপরাধ ও রহস্য’ বললেই পাঠকের মনে ভেসে ওঠে দেশ বিদেশের নানা গোয়েন্দাদের কথা। কিন্তু ‘অপরাধ ও রহস্য’ মানে কি শুধুই গোয়েন্দা? আমরা চেয়েছিলাম চিরাচরিত গোয়েন্দাদের পাশাপাশি থাকুক অন্যরকম লেখা যার মধ্যে দেখা মিলবে অপরাধীদের মনস্তত্বের কিংবা তদন্তের সত্য ঘটনার। সে কাজে কতটা সফল হয়েছি তা পাঠকরাই বলবেন। পাঠকদের মতামত এক্ষেত্রে যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলাই বাহুল্য। কাজেই ভালো লেগেছে, খারাপ লেগেছে বা মনে দাগ কাটেনি, যে কোনো ধরণের মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আমরা ধন্যবাদ জানাই সমস্ত লেখক ও শিল্পীকে, যাঁদের একের পর এক অসাধারণ কাজে এই সংখ্যা সেজে উঠেছে।

তাহলে আর দেরি কীসের, রহস্যময় সাগরে ডুব দিন। যাত্রা শুভ হোক!

ধন্যবাদান্তে,