আজব প্রাপ্তি - সুমন মিশ্র

হাসির গল্প

এক

ঠুকঠুক,খচখচ, ঠকঠক, ফসফস।

বেশ কিছুক্ষণ ধরেই নানারকম শব্দ আসছিল বাইরের বাগান থেকে। নিতুবাবুর স্ত্রী শশীকলার ঘুমটা বেশ পাতলা, একটু শব্দেই ভেঙ্গে যায়। আর এই শব্দটা তো বেশ অনেকক্ষণ ধরেই চলছে। তবে একটানা নয়, থেকে থেকে, মাঝে মাঝে। প্রথমে ঘুম ভাঙলেও ঠিক ঠাওর করতে পারছিলেন না ব্যাপারটা। হয়ত কোন ধেড়ে ইঁদুর ঘরে ঢুকে পড়েছে। অথবা মুখুজ্জেদের বদ হুলোটাও হতে পারে। এমনিতে খেয়ে খেয়ে সেটা এমন মোটা হয়েছে যে তাড়াতাড়ি হাঁটতেও পারে না, এদিকে চুরির ব্যাপারে ওস্তাদ। আজ রান্নাঘর থেকে মাছ নিয়ে যাচ্ছে তো কাল নিতুবাবুর ভাগের দুধটুকু সাবড়ে দিচ্ছে। আজ বোধহয় আবার ঘরে ঢুকেছে। রাতবিরেতে এ কী উপদ্রব!

কিন্তু ঘুমের রেশ একটু কাটতেই তিনি ধড়ফড়িয়ে উঠলেন। নাঃ শব্দটা ঘরে নয় বাইরের বাগানে হচ্ছে, তাহলে কি...।

একা একা ভয় পাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভয় পেলে মাথা ভোঁ ভোঁ করবে। সাথে বুক ধুকপুক, কান কটকট। সারারাত ঘুম হবে না, সারাদিনের কাজে মন বসবে না, অম্বল হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়, এককথায় অনেক হ্যাপা। আস্তে করে একটা ধাক্কা মারলেন নিতুবাবুকে, “ওগো শুনছ...”

ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে উঠলেন নিতুবাবু, “দাদা... লাইনে আমি আগে আছি...। ধাক্কা মারবেন না।”

বলে কী, বউকে বলছে দাদা! “ওগো, কী হল, শুনছ?” আবার ধাক্কা দিলেন নিতু বাবুকে।

নিতুবাবু বিড়বিড় করে বলেই চলেছেন, “উঁহু, লাইনে আমি আগে আছি। জায়গা ছাড়ব না।”

 

উফফ কী জ্বালা! আবার স্বপ্ন দেখছে। ঘুমের ঘোরে কথা বলা নিতুবাবুর চিরকালের স্বভাব। এখন আবার ঘুমের মধ্যে কোথায় গিয়ে লাইন দিয়েছে কে জানে। রেশনের লাইন হতে পারে, কেরসিনের লাইন হওয়ারও সম্ভবনা আছে। তা না হলে হয়ত স্বপ্নের মধ্যে সিনেমার টিকিট কাটছে। সত্যি সত্যি তো কোনদিন নিয়ে গেল না, ঘুমের ঘোরে যত ন্যাকামো। আওয়াজটা এখনও মাঝে মধ্যেই হয়ে চলেছে। তিনি এবার নিতুবাবুকে একটা রামধাক্কা দিলেন, “ধ্যুৎতেরি। কী ঘুমতে পারে রে বাবা! আরে ওঠো, চোরে যে সব লুটে নিয়ে গেল।”

 

ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গেছে নিতুবাবুর। প্রথমে ভাবলেন ভূমিকম্প, অথবা তাদের পুরনো বিপজ্জনক বাড়িটাই হয়ত ধসে পড়ল। ধসে পরলেও দোষ দেওয়া যায় না, কম করে দেড়শ বছর বয়েস হবে এ-বাড়ির। তবে পরিচর্যার অভাবে দেখে আরও প্রাচীন মনে হয়। এক কালের বনেদি পরিবার। এখন সে রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই । দুর্গা দালান আছে কিন্তু তাতে ফি-বছর আর পুজো হয় না, রোজ সকাল বিকেল পায়রাদের বকবক চলে। অতিথিশালা আছে কিন্তু তা শুধুই ভগ্নাবশেষ। তাতে অবশ্য খুব একটা অসুবিধা হয় না, কারণ অতিথিরা খুব একটা এমুখো হয় না। আর আছে এই হাড় জিরজিরে বাড়িটা। কে সারাবে? বাড়িতে হাত দিলেই লাখ লাখ টাকার খরচা। টাকা কোথায় অত?

বাড়ি ধসে পড়লেও হয়ত এতটা কম্পিত হতেন না তিনি, যতটা চোর ঢুকেছে শুনে হলেন।

“চো... চো... চোর!”গলা দিয়ে আওয়াজটা খুব কষ্ট করেই বেরল। বেশ ঘাবড়ে গেছেন।

“উফফ মরণ। পুলিশে চাকরি করে কেউ চোরের ভয় পায়!”

কথাটা গিন্নি ভুল বলেনি। নিতুবাবু, মানে নিতাই সমাদ্দার এই হরগোবিন্দপুর থানার ওসি, তবুও রাতবিরেতে চোরের কথা শুনলেই তাঁর বুকটা কেমন ধড়ফড় করে ওঠে। তারপর ঘুমের ঘোরে অত মনে থাকে নাকি কে পুলিশ, কে ডাক্তার!

তাছাড়া পুলিশ হলেও তিনি বরাবরই নরম প্রকৃতির মানুষ। এককালে কবিতা-টবিতা লিখতেন। যুবক বয়েসে যাত্রাদলেও নাম লিখিয়েছিলেন, তবে তখন তিনি একেবারেই রোগা পাতলা, গলাটাও বড্ড চিনচিনে। ডিরেক্টর তাই সটান দিয়ে দিলেন “কংস বধ” পালায় রাধিকার রোল।

বনেদি বাড়ির ছেলে করবে রাধিকার অভিনয়! তাই বলে তিনি দমে গেলেন না। এমন দরদ দিয়ে অভিনয় শুরু করেছিলেন যে দর্শক রাধিকার শোকে কেঁদে আকুল। শোয়ের পর শো হাউসফুল, পালা সুপারহিট। নিতুবাবুও একধাক্কায় হয়ে গেলেন স্টার।

কিন্তু কপাল মন্দ,পালার পঞ্চাশতম রজনিতে সবে মঞ্চে উঠে কৃষ্ণের জন্য বিলাপ শুরু করেছেন কি করেননি, হঠাৎ দেখেন সামনের সারিতে বিশেষ অতিথির আসনে বসে আছেন তাঁর বাবা সিধু সমাদ্দার।

ভদ্রলোক প্রথমে হাসি মুখে বসেছিলেন, তারপর রাধিকাকে দেখে তাঁর ভুরু কোঁচকাল। চেনা চেনা, কিন্তু ঠাওর করতে পারছেন না। ওদিকে নিতুবাবুও ভয়ে তোতলাতে শুরু করেছেন ততক্ষণে। তারপর যেই না সিধুবাবু তাঁর ছেলেকে চিনতে পেরেছেন অমনি মঞ্চে গিয়ে কান ধরে হিরহির করে টেনে নামালেন। কোথায় কৃষ্ণ, কোথায় গোকুল। সব মায়া পড়ে থাকল পিছনে। সিধুবাবু তাঁর ছেলের কান ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলেন বাড়িতে। তারপর হরিণের শিঙের হাতলওয়ালা হাতের ছড়িটা ভাঙলেন নিতুবাবুর পিঠে--- যাত্রা করা মাথায় উঠল। যেখানে মাথায় কিছুই ঢুকত না, সেখানে বাবার ভয়ে গড়গড়িয়ে পড়াশোনা চলল এবং কালক্রমে এই পুলিশের চাকরিটাও জুটে গেল।

যদিও তিনি পুলিশ ঠিকই, তবে চোর পিটিয়ে সাধু করা তাঁর কম্ম নয়। হরগোবিন্দপুরে শেষ কবে কোন চোরকে তিনি লকআপে পুরেছেন মনে পড়ে না। চোর ধরা পড়লে তাকে বকাঝকা দিয়ে ছেড়ে দেন। ধরে বেঁধে কি কাউকে সৎ বানানো যায়?

 

 

“বলছি থাক না, এখনও তো বাড়ির ভিতরে ঢোকেনি। বাগানে আর কী নেবে? শুধুই তো আগাছায় ভর্তি।” নিতুবাবু আমতা আমতা করে শশীকলাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন।

“হ্যাঁ গো, তুমি পুলিশের চাকরিটা কী করে পেয়েছিলে? সত্যি বলতো, ঘুষ-টুস দিয়ে চাকরিটা জোগাড় করনি তো? এমন মিনমিনে পুলিশ যে হয় তোমায় না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এই জন্যই কিছু করতে পারলে না জীবনে, বিয়ের এত বছরে একজোড়া সোনার দুলও গড়িয়ে দিতে পারলে না।” শশীকলার গলার ঝাঁঝ ক্রমশ বাড়ছে।

 

তিনি সৎ নিঃসন্দেহে, নরম মনেরও হতে পারেন, তাই বলে মিনমিনে! অপমানটা বেশ গায়ে লেগেছে নিতুবাবুর। তার উপর আবার এত বড় কথা! তিনি নাকি ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন! এ অপমানের একটা যোগ্য প্রত্যুত্তর না দিলেই নয়। অগত্যা মশারির বাইরে বেরিয়ে মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে হাঁটা লাগালেন বাগানের দিকে।

দুই

পঞ্চা একমনে মাটি কোপাচ্ছিল। বাগানের কোণায় ভাঙ্গা জরাজীর্ণ শিবমন্দিরটার পিছনের দিকে। খবর আছে এই বাড়িতে গুপ্তধন রয়েছে । খবরটা যদিও আজকের নয়, অনেক পুরনো । যখন প্রথম এই খবরটা জানাজানি হয় তারপর নয় নয় করে পাঁচ দশক তো কেটেই গেছে । আগে যখন এই সমাদ্দার বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল, তখন সেখানে দুঃস্থ অনেক আত্মীয়ই ঠাঁই পেত। হাওয়া বদলের সাথে সাথেই এক এক করে সব বিদায় হয়েছে। এমনই এক আশ্রিত ছিল রতন। তার মুখ থেকে রটে যায় যে সমাদ্দারদের নাকি লুকনো সম্পত্তি আছে। সে ছিল বিধু সমাদ্দার মানে নিতুবাবুর ঠাকুরদার ছোট মামার, ছোট শালার, ছোট ছেলে। সে নাকি বিধু সমাদ্দারকে নিজে মাটিতে একটা বাক্স লুকিয়ে রাখতে দেখেছে। মানে ঠিক নিজের চোখে লুকিয়ে রাখতে দেখেনি, অনেকদূর অনুসরণ করেছিল, তারপর যেই বিধুবাবু মন্দিরের কাছাকাছি গিয়ে – এই কে রে, বলে হাঁক দেন, অমনি সেও পড়িমরি পালিয়ে করে যায় সেখান থেকে। তাই বাক্সটা বাড়ির ঠিক কোথায় আছে,আর তার আনুমানিক মূল্যের ব্যাপারে কিছুই তেমন জানা যায়নি। ফলস্বরূপ বাড়িতে চোর ঢুকেছেও বেশ কয়েকবার। বিশেষত বাড়ির পিছনে বাগানের নামে যে জঙ্গলটা আছে সেটাই তাদের নিশানা ছিল। তবে কোনবারই মশা আর পোকার কামড়ের অতিরিক্ত কিছুই তাদের কপালে জোটেনি ।

 

শেষবার যখন চোর ঢুকল বাড়িতে, তখন নিতুবাবু সদ্য যুবা। চোর ঢুকেছিল কখন সেটা কেউ টের পায়নি, কখন চলে গেছিল কেউ জানে না।কিন্তু কিছুই যে সে পায়নি সেটা একদম পরিষ্কার। সারা রাত মাটি কুপিয়ে শেষে যখন ফাঁকা হাতেই ফিরতে হচ্ছে, তখন হতাশায় চোরটা বাড়ির গায়ে বড় বড় অক্ষরে লিখে রেখে যায় একটা ছড়া।

“ও সমাদ্দারের পো।

ধরেছিল গিন্নি আমার সোনার হারের গোঁ।

ঘোমটা সরিয়ে দিয়েছিল ভীষণ মুখ ঝামটা।

তাই ভাবলুম দেখিয়ে দিই আমার কত খ্যামতা।

ঘাট হয়েছে, ভুল করেছি, মুলছি দুটো কান।

খালি হাতে ফিরে এবার গেল আমার মান।

এ বাড়িতে মশা আছে, পোকা আছে,

যত খুশি চাও।

গুপ্তধন পাওয়ার আশা

এবার ভুলে যাও।”

 

কী লজ্জা! কী লজ্জা! একটা চোর কিনা এসব লিখে গেল। চোরটা নিঃসন্দেহে রসিক ছিল কিন্তু বন্ধু মহলে যে নিতুবাবু হাসির পাত্র হয়েছিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এর ফলে একটা উপকার হল, সবাই ভাবল সত্যি সত্যিই গুপ্তধনের ব্যাপারটা গুজব মাত্র। বাড়িতে চোর ঢোকাও তারপর বন্ধ হয়ে গেল।

মাস ছয়েক আগে “হরগোবিন্দপুর চৌর্যবৃত্তি উন্নয়ন সমিতি” –র নতুন সভাপতি হয়েছে কেষ্ট পাত্র। এক সময়ের ধুরন্ধর চোর, এখন অবসর নিয়েছে। এসেই সে “সমাদ্দার বাড়ির” গুপ্তধনের ফাইলটা আবার নাড়াঘাঁটা শুরু করেছে কিন্তু পুলিশের বাড়িতে কেউ কি শখ করে ঢুকতে চায়? যতই হোক ম্যাড়মেড়ে পুলিশ অফিসার, তবু পুলিশ তো! ধরা পড়লে কী করবে কে বলতে পারে। শুধু গাট্টা মেরে ছেড়ে দিতে পারে, ঘাড় ধরে হিড়হিড় করে নিয়ে লকআপে পুরে দিতে পারে, আবার বলা যায় না নিজে ভয় পেয়ে গুলিও চালিয়ে দিতে পারে। জাঁদরেল লোক হলে একরকম, তার আচার বিচার বোঝা যায়। কিন্তু নিরীহ লোকেদের বোঝা খুব কঠিন। সাধারণত এমন লোকেরা সাতে পাঁচে থাকে না কিন্তু একবার জেগে উঠলে কী না কী করে বসে তার কোন ঠিক নেই। তার ওপর নিতু সমাদ্দার চোরেদের পিছনে ফেউয়ের মত লেগে থাকে না, কালে অকালে কেউ ধরা পড়লে বকাঝকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। একটা মিছে গুপ্তধনের গুজবে এমন বন্ধু মানুষকে খোঁচা দিয়ে কে আর কালিদাসের মত কাজ করবে? চোর সমাজের বড় বড় মাথারা যখন একাজে নিমরাজি,তখন কমিটির মাতব্বররা পঞ্চাকেই জোর করে কাজটার ভার দিয়ে পাঠাল। নাঃ, সে কোন কেউকেটা নয়। লাইনেও নতুন। গত তিন মাসে চার বার ধরা পড়েছে। বলা চলে তাকে কাজটা দেওয়া হয়েছে কারণ সে জেলে গেলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না ।

তিন

“এই কে? কে ওখানে?” পিছন থেকে নিতুবাবুর গলা শুনে পঞ্চা বেজায় চমকেছে। নিতুবাবুকেও এইটুকু বলতে অনেক কসরত করতে হয়েছে। দু-তিনবারের চেষ্টায় ফিসফিসিয়ে ওটুকুই বেরিয়েছে। চোর হতে পারে, আবার বলাতো যায় না যদি তেঁনারা হন! রাম রাম।

কৃষ্ণপক্ষের রাত দুজনেই দুজনকে ভাল করে দেখতে পারছে না। পঞ্চা ভাবল পুলিশ মানুষ রেগে গিয়ে গুলি চালালেই সব্বোনাশ, পৈতৃক প্রাণটুকু বাঁচানোর জন্য কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “দোহাই কত্তা, ভুল হয়ে গেছে। গরিব মানুষ আমি,গুলি চালাবেন না!”

এ হেঃ, সত্যি বড় ভুল হয়ে গেছে নিতুবাবুরও। তাঁর যে একটা রিভলবার আছে মনেই ছিল না। একবার ভাবলেন গিন্নিকে ডেকে বলবেন কিনা জিনিসটা দিয়ে যাওয়ার জন্য। আসলে থানায় যাওয়ার সময়তো রুমাল টু রিভলবার গিন্নিই এগিয়ে দেয়, তিনি নিজে খুব একটা গোছান স্বভাবের নন। থাক যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, এমনিই এত অন্ধকারে কেউ কাউকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না।

“খবরদার নড়লেই গুলি চালিয়ে দেব। সাহস তো কম নয়।” ভারিক্কি গলায় বললেন নিতুবাবু।

“দোহাই কত্তা পেটের দায় এসব করি। গুলি করবেন না।” পঞ্চা কাকুতির স্বরে বলল।

“মন্দিরের পিছনে কী খুঁজছিস রে?” নিতুবাবু ভরাট গলায় জিজ্ঞাসা করলেন।

পঞ্চা একদম চুপ, যেন কিছুই শোনেনি।

“কী হল, কথা কানে গেল না? বল কী খুঁজছিস?”

“আমাদের লাইনে এসব বলা বারণ।”

এমন উত্তরের প্রত্যাশা ছিল না, নিতুবাবু বেশ হোঁচট খেলেন। রাগ হল বেশ। কান দুটো গরম হয়ে গেল।

এক রয়েছে শশীকলা, ভুল করেও নিতুবাবুর জন্য এক আধটা প্রশংসা বাক্য মুখ দিয়ে বের হয় না, সব সময় ঝাঁঝিয়ে থাকবে, আর এখন কিনা সামান্য চোর ছ্যাঁচোরও মুখে মুখে তর্ক করছে। নাঃ ইহকাল পরকাল দেখছি সব ঝরঝরে হয়ে গেল।

“ন্যাকা! বলা বারণ! কী এমন দেশ উদ্ধার করছ যে বলা বারণ? দেব নাকি খুলি উড়িয়ে?” নিতুবাবুর ভিতরের পুলিশ সত্ত্বা যেন এতক্ষণে আড়মোড়া ভাঙছে।

“কত্তা এমন কথায় কথায় প্রাণের ভয় দেখাবেন না। চোর বলে কি মানুষ নই? তাছাড়া দেশ উদ্ধার না করি, তাই বলে সব লাইনেই তো একটা নীতি থাকে নাকি।”

“করিস তো চুরি, তার এবার নীতি নিয়ম!” নিতুবাবুর গলায় শ্লেষ।

“কেন কত্তা চুরি করা কি খুব সোজা? কত খাটনি হয় আপনি জানেন? এই যে, এটা বাগান? শুধু ঝোপ জঙ্গল, মশা, পোকা। মশার কামড়ে অ্যানিমিয়া হয়ে গেল। পারবেন এত কষ্ট করে চুরি করতে?” পঞ্চা অভিমানী গলায় বলল।

“করবও না। তোর সাহস তো কম নয় । ওসি-কে বলছিস চুরি করতে। নাঃ, থানায় নিয়ে গিয়ে পিঠে ডাণ্ডার দু-ঘা না দিলেই নয়।”

“বলুন পারবেনও না। এই লাইনে কি কম অধ্যাবসায় লাগে। কত সাধনা করতে হয়, কত ধৈর্য লাগে। আর...।”

“থাম বাপু।” পঞ্চাকে কথার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে বিরক্ত গলায় নিতুবাবু বললেন, “ আর মেলা বকে রাত কাবার করিসনি। আসল কথাটা বলতো, কী চাই এখানে?”

পঞ্চা বুঝল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেছে যখন তখন আর চালাকি করে পার পাবে না।

“আজ্ঞে, কথাটা পাঁচকান করবেন না তো।”

“কী জ্বালা, একেই এত মশা এখানে। তাড়াতাড়ি বল না বাবা।”

“আজ্ঞে,গুপ্তধন!” পঞ্চা ফিসফিস করে বলল।

নিতুবাবু ভিরমিই খেতেন, কোনমতে সামলে বললেন, “বলিস কীরে,পাকা খবর? আমি তো জানতাম ব্যাপারটা একেবারেই গুজব!”

“আজ্ঞে, মান না দেন, হ্যাটা করবেন না কত্তা। আমাদের নেট-ওয়াক আপনাদের চেয়ে ভাল।” পঞ্চার গলায় ক্ষোভ।

এমনি সময় হলে হয়ত রাগে ফেটেই পড়তেন কিন্তু গুপ্তধনের নেশায় খোঁচাটা গায়ে মাখলেন না নিতুবাবু। শুধু ব্যাজার মুখে বললেন,“ তবে আর কী, হাত চালা, দেখ যদি কিছু মেলে।”

“পেলেই বা কী কত্তা! আমি পরিশ্রম করব, আর আপনি সব নিয়ে নেবেন। সাধে কি কেউ পুলিশের বাড়িতে চুরি করতে চায় না। পণ্ডশ্রম।”

“আহাঃ অভিমান করছিস কেন? দেব দেব তোকেও ভাগ দেব।” নিতুবাবু তরল গলায় বললেন।

“সত্যি?”

“আরে সত্যি সত্যি, তিন সত্যি। এবার লেগে পড় তো কাজে।”

“কত্তার মন কত উদার।”

“তবে একটা শর্ত।” নিতুবাবু মিটিমিটি হাসছেন।

“আবার কী! আপনি এত কথার জাল বোনেন কেন?”

“ভাগ পাবি, যদি কথা দিস এই লাইন ছেড়ে দিবি।”

পঞ্চা একটু ইতস্তত করে বলল,“তাই সই।”

চার

ঘণ্টা দুয়েক কুপিয়েই চলেছে পঞ্চা। মন্দিরের পিছনে অনেকটা জায়গা কোপানো হয়ে গেছে। কিন্তু গুপ্তধনের নামগন্ধও নেই।

নিতুবাবুর স্ত্রী ভয় কাটিয়ে গুটিগুটি নেমে এসেছিলেন, সব শুনে আদুরে গলায় সীতাহার, নাকছাবি ইত্যাদির আব্দার জুড়লেন, “ওগো, তোমার মনে আছে সেই যে বিয়ের পরপর নিমাই স্যাকরার দোকানে একটা সীতাহার দেখে বলেছিলে এমন জিনিস তোমার গলাতেই মানায়, দেবে গো, একটা অমন সোনার হার গড়িয়ে?”

“বলেছিলাম বুঝি? তা বলে থাকতে পারি। বয়স কম ছিল, অভিজ্ঞতাও ছিল কম। তখন তো জানতাম না ওই গলা দিয়েই ওমন ঝাঁঝ বেরোয়।”

নিতুবাবুর এইধরনের কথা শুনলেই সারা শরীর চিড়বিড়য়ে জ্বলে ওঠে শশীকলার। এত কিছু পেতে চলেছে, লাখ টাকা, নাকি কোটি টাকা, নাকি আরও বেশি, কে জানে আর সেখানে একটা সামান্য হারের কথায় যদি কেউ বাইরের লোকের সামনে খোঁচা দিয়ে কথা বলে, তাহলে কার না গাত্রদাহ হয়।

শশীকলা প্রত্যুত্তর দিতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় পঞ্চা বলল, “ গিন্নিমা একটু জল খাওয়াতে পারেন? ”

“ভালই আছিস, যার বাড়িতে চুরি করতে এসেছিস তার বাড়িতেই জল চাইছিস! বললে চা-টায়ের ব্যবস্থাও করি।” নিতুবাবু ব্যঙ্গ করে বললেন।

“তা হলে মন্দ হয় না। আমার চা চিনি ছাড়া।” পঞ্চা বলল।

“তোর দেখছি লজ্জাও নেই।”

“তা চা-জল চাইব না কেন বলুন কত্তা। মাটি কোপাচ্ছি তো কুপিয়েই চলেছি। অর্ধেক বাগান খুঁড়ে ফেললাম, এখনও কিছুই হাতে এলো না। সামনে শীতকাল আসছে, হরেক সব্জি চাষ করতে পারবেন এখানে। এভাবে কেউ গুপ্তধন রাখে! এতো বাড়ির লোকই কোনদিন খুঁজে পাবে না।” মাটি কোপাতে কোপাতেই পঞ্চা রাগী স্বরে বলে চলল, “আর আবার আমায় চোর বললেন! ভুলে গেলেন, এখন আমরা একই টিমে!”

“আহাঃ চটছিস কেন! তুই কাজ চালিয়ে যা। আরে ও গিন্নি একটু জল এনে দাও না।”

শশীকলা গজগজ করতে করতে সবে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগিয়েছেন এমন সময় শব্দ হল, “ঠং!”

শশীকলা দাঁড়িয়ে পড়েছেন, নিতুবাবু উত্তেজনায় কাঁপছেন, পঞ্চা মাটি কোপানো বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে কি শেষ অবধি…।

“ওরে তোল তোল, সাবধানে তোল।” গদগদ গলায় বললেন নিতুবাবু।

পঞ্চা আর একটু মাটি খুঁড়ে তুলে আনল একটা মাঝারি আকারের বাক্স। উপরের মাটি ঝেড়ে বাক্সটা নিতুবাবুর পায়ের কাছে রাখল। চোখ চকচক করছে কর্তা গিন্নির।

শশীকলা বললেন, “শুধু সোনার হারে কিন্তু হবে না। এক জোড়া দুল আর একটা নাকছাবিও দিও লক্ষ্মীটি।”

স্ত্রীর এমন মসৃণ কণ্ঠস্বর শেষ কবে শুনেছেন তা নিতুবাবু মনে করতে পারলেন না।

“হবে হবে, অত চিন্তা কী। তার আগে বাড়িটা একটু মেরামত হোক। এক্কেবারে ঝুরঝুরে হয়ে গেছে যে।” নিতুবাবুর ঠোঁটে বরাভয়ের হাসি।

“আর দুর্গা দালান, অথিতিশালাও মেরামত করে নিও। মায়ের আশীর্বাদে এত পেলাম। দেখ না যদি আগের মত দুর্গা পুজো শুরু করা যায়।” বলেই কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন শশীকলা ।

“সে তো বটেই। সে তো বটেই। সবই মায়ের আশীর্বাদ। আর...। ”

কথা শেষ করতে পারলেন না নিতুবাবু। পঞ্চা এতক্ষণ কর্তা গিন্নির মিষ্টালাপ শুনছিল, আর না পেরে বলল, “আজ্ঞে কর্তা ভোর হতে তো আর বেশি দেরি নেই। এবার আমার পাওনাটা যদি…”

“ও, হ্যাঁ, হ্যাঁ। নে বাবা, তালাটা ভেঙ্গে ফেল, তোর পাওনা বুঝিয়ে দিই।” নিতুবাবু বরাভয়ের হাসি হেসে বললেন।

সাথে সাথেই পঞ্চা তাঁর পকেট থেকে কী একটা বের করে তালায় দু তিনবার চাপ দিতেই মরচে ধরা তালা গেল খুলে।

লোহার বাক্সের তালা খুলতেই নিতুবাবুর এতক্ষণ উৎসাহে চকচক করা মুখ গেল শুকিয়ে।

কোথায় সোনা, কোথায় রুপো? এসব কী ছাইপাঁশ রয়েছে বাক্সে! প্রথমে বেরল একটা মেয়েদের পরচুলা, সাথে একটা টিপের পাতা। তারপর আরও দুটো স্ক্রিপ্ট লেখা খাতা, একটায় লেখা “সীতার বনবাস” আর একটায় “কৃষ্ণ লীলা"। আর সাথে কিছু সাজার সরঞ্জাম।

শশীকলা এক এক করে জিনিসগুলো বের করছিল, আর যত বাক্সটা খালি হয়ে আসছিল ততই তাঁর মুখটা ব্যাজার হয়ে আসছে।

“ওগো এখানে যে কিছুই নেই...!" কাঁদো কাঁদো গলায় বলল শশীকলা।

নিতুবাবুও পাশে ধপ করে বসে পড়েছেন। আহা সব স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। এসব আজেবাজে জিনিস কেউ লুকিয়ে রাখে? অবশ্য ঠাকুরদাকেই বা দোষ দেন কি করে? লুকিয়ে রাখার কি কোনো নিয়ম হয়। যার যা খুশি লুকোতে পারে, গুপ্তধনও লুকোতে পারে,কলমও লুকোতে পারে, আবার মন চাইলে নিজের চটিও লুকিয়ে রাখতে পারে। কথায় আছে ‘বড়লোকের খেয়াল’। আজ হয়ত তাঁদের টাকা নেই, কিন্তু তখন ছিল। তাই যা খেয়াল হয়েছে তাই করেছেন। বেশ করেছেন। কে মাথার দিব্ব্যি দিয়েছিল এটা খুঁজে মরতে।

গভীর শোকে কখনও কখনও মানুষ দার্শনিক হয়ে যায়, নিতুবাবুর ক্ষেত্রেও কতক সেইরকমই ঘটেছে।

“আজ্ঞে আমার পাওনাটা যদি একটু...” পরিস্থিতি সুবিধের নয়, তবুও পঞ্চা বুকে বল এনে বলল।

নিতুবাবু কেমন ভাবুক দৃষ্টিতে তাকালেন,“কী পাওনা নিবি। এই তো তোদের গুপ্তধনের পাকা খবর। নিয়ে যা এই পরচুলাটা নিয়ে যা, খাতা দুটোও নিতে পারিস, যা সব নিয়ে যা।”

“গিন্নিমা, কত্তার হাবভাব ভালো ঠেকছে না আমার, খুব শক পেয়েছেন।”

“ও গো তুমি অমন করছ কেন, একটু জল এনে দেব?” শশীকলা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন।

নিতুবাবুর বাক্স থেকে একটা খাতা বের করে শশীকলার মুখের সামনে তুলে ধরলেন, তারপর ভাব গম্ভীর গলায় বললেন, “গিন্নি তোমায় তো আর সীতাহার দিতে পারলাম না, তুমি বরং এই ‘সীতার বনবাস’-এর স্ক্রিপ্টটাই রাখো।”

শশীকলা এবার কেঁদেই ফেললেন, “ও গো, তোমার মাথাটা কি একেবারেই গেল?”

এমন সময় হঠাৎ সেই খাতার ভিতর থেকে ভাঁজ করা একটা চিঠি মাটিতে পড়ল।

শশীকলা ফোঁপাতে ফোঁপাতেই চিঠিটা হাতে তুলে নিলেন।

“বাঃ, কী কী জিনিস আছে তার ফর্দও আছে। ঠাকুরদা বেশ হিসাবি মানুষ ছিলেন দেখছি। গিন্নি মিলিয়ে দেখ কিছু বাদ যায়নি তো।” নিতুবাবু নিজের হাঁটুর উপর টরেটক্কা বাজাতে বাজাতে বললেন।

শশীকলা কাগজটা একটু নাড়াচাড়া করে দেখলেন। ফর্দ নয়, এমনি সাবধানবানী গোছের কিছু লেখা আছে। কাগজটা তিনি পড়তে শুরু করলেন।

 

- যে এই লেখাটা পড়ছে, সে অবশ্যই এই বাক্সটা খুঁজে পেয়েছে। রতনই হবে, অনেকক্ষণ ধরে পিছু পিছু আসছিল। খবরদার বলছি, যেখানে যেমন ছিল পুঁতে রেখে দাও, সিধু যেন টের না পায় তাঁর জিনিসপত্র এখানে লুকোনো আছে। আর যদি সিধু তুই খুঁজে পাস তাহলে আশা করি আজকের মারটা তোর মনে আছে।

সাহস কত বড় সমাদ্দার বাড়ির ছেলে, রায়বাহাদুর নিধুচরণের নাতি কিনা শেষ অবধি যাত্রা দলে ঢুকল। আর করবি তো কর, যদি নায়কের অভিনয় হত তাহলেও বুঝতাম, শেষে কিনা সখী সাজছে! ইনিয়ে বিনিয়ে সংলাপ বলছে। বংশের মান সম্মান কিছু রাখল না। আবার আমাদেরই গ্রামে সেই যাত্রা আসতে চলেছে। আজ দেখি চিলেকোঠায় পরচুলা পরে সংলাপ বলছে। হাতির দাঁতের হাতলওয়ালা লাঠিটা ভেঙ্গেছি পিঠে। দু-তিন দিন ওই চিলেকোঠাতেই বন্ধ থাকুক আর এই আপদগুলো থাকুক মাটির নীচে। কিছুদিন কড়া শাসনে থাকলে সব ভূত মাথা থেকে পালাবে। যে বাক্সটা পেয়েছে সে যদি খবরটা পাঁচকান করে তাহলে জানিয়ে রাখি আমার কাছে লাঠির কমতি নেই।

সমাদ্দার বংশের একটা মান সম্মান আছে। এ বাড়ির ছেলেরা যাত্রায় অভিনয় করবে না।

 

শেষ কথাটা শুনে নিতুবাবু ভাবুক চোখে তাকালেন। তাঁর বাবাও তাকে এই কথাটাই বলেছিলেন। তার মানে এই কথাটা বংশানুক্রমিক চলে আসছে।

তিনি দূরমনস্ক গলায় বললেন, “বাবা যাত্রায় সখী সাজতেন! শশী শুনছ বাবা যাত্রায় সখী সাজতেন।” নিতুবাবু ক্রমশ মিইয়ে পড়ছেন।

“শ্বশুর মশাই অমন জাঁদরেল মানুষ ছিলেন, ইয়া মোটা গোঁফ ছিল, তিনি সখী সাজতেন?” শশীকলাও অবাক।

“হ্যাঁ বাবা সখী সাজতেন। তখনও তো গোঁফ ছিল না, তাই বাবা সখী সাজতেন।” নিতুবাবু আপন মনে বিড়বিড় করছেন।

পঞ্চা দেখল অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সে আগেই জানত পুলিশের বাড়িতে ঢোকা মানেই পণ্ডশ্রম! “কত্তা, সকাল হল বলে, এবার অন্তত কিছু টাকা দ্যান।”

“টাকা আর কী দেব, কিছুই তো পেলাম না।”

“অন্তত মাটি কোপানোর মজুরি, আর সখী সংবাদ গোপন রাখার জন্য যদি কিছু দ্যান।”

“ওসি-কে ব্ল্যাকমেল করছিস হতভাগা!” নিতুবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “মাসের শেষ তো, মাস পড়লে আয় বরং।”

পঞ্চা একটু কিন্তু কিন্তু করে বলল,“যে আজ্ঞে। আজ তাহলে চলি।”

চারপাশটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে। পঞ্চা তাই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে পিছনের জঙ্গলে মিলিয়ে গেল। তখনও নিতুবাবু বিড়বিড় করছেন – বাবা সখী সাজতেন!

শেষের কথা

নিতুবাবুর এই বিড়বিড়ানি আরও দিন তিনেক চলল। তবে সে রাতে প্রাপ্তির ভাড়ার একেবারে শূন্য নয়। নিতুবাবুর ক্রমশ ধারণা হল অভিনয়টা তাঁর রক্তে আছে। এটা তাঁর বাবার থেকেই পাওয়া। বাবাই তাকে অভিনয় ছাড়িয়েছিলেন, এবার বাবাই তাকে আবার অভিনয়ে ফিরতে বলছেন। না হলে এত বছর পর বাবার সাজসরঞ্জাম আবার খুঁজে পাবেন কেন।

ইদানিং তিনি একটা স্থানীয় নাটকের দলে নাম লিখিয়েছেন। যদিও এখন তাঁর গলার আওয়াজ আর সেই চিনচিনে নেই, চেহারাটাও ভারিক্কি হয়েছে। ডিরেক্টর তাই তাকে রাধিকা বা সখীর পার্ট দেন না। আর অমন মোটা গোঁফ নিয়ে কি রাধিকার অভিনয় হয়? থানার ওসিকে গোঁফ কাটতে বলে এমন বুকের পাটাই বা কোন ডিরেক্টরের আছে! নিতুবাবু এখন কখনও কংস, কখনও রাবনের অভিনয় করেন।

পঞ্চা সেদিন বুঝেছিল চুরি করার থেকে মাটি কোপানোর কাজ অনেক সহজ। দিনের দিন কাজ হয়ে যায়, নাইট শিফটের বালাই নেই। জেল, আদালতের চক্কর নেই উপরন্তু রোজগারও মন্দ নয়। সে এখন ঘুরে ঘুরে বাগান পরিষ্কার করা, মালির কাজ এইসব করে। নিতুবাবুদের বাড়িতে তার এখন প্রতি মাসেই ডাক পড়ে।

 

শশীকলারই শুধু মনে একটু দুঃখ থেকে গেছে। সীতাহারটা তাঁর আর হল না। ইস, বাক্সে যদি একজোড়া দুলও পাওয়া যেত!