প্রিয় পাঠকবন্ধুরা,
সাধারণত নতুন সংখ্যার সম্পাদকের কথা শুরু করি পাঠকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে। কিন্তু মনে অঢেল শুভ ইচ্ছা থাকলেও চতুর্দিকের অশুভ ঘটনা তাকে ম্লান করে দিচ্ছে। দিনে হাজার হাজার মানুষ মারা পড়ছে করোনার প্রাদুর্ভাবে। এই লেখার সময় দেখছি এখনই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০০০ ছুঁই ছুঁই। কারণ লকডাউন উঠতেই মানুষ বাধ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন পথে, জীবিকার প্রয়োজনে। আবার অনেকেই আগের মতো জীবনযাপন করতে লেগেছেন। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সামিল। অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। হার্ড ইমিউনিটি ছাড়া আপাতত রাস্তা নেই। তাই দীর্ঘ তিন মাসের দেশব্যাপী লকডাউনের পরেও অনেক রাজ্য বাধ্য হচ্ছে আবার কড়া লকডাউন চালু করতে। অনেকে এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংক্রমণের চূড়ান্ত হানা আসতে নাকি এখনো দেরি!
শুধু সরাসরি আক্রমণ নয়, করোনা মানুষকে বিপর্যস্ত করে ছেড়েছে আরো অনেকভাবেই। লকডাউনের জন্য ও যাতায়াতে বাধা থাকায় অজস্র ছোট বড় কোম্পানি বিশাল লোকসানের সম্মুখীন হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অবস্থা সামাল দিতে শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণে ছাঁটাই। লকডাউন ওঠার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই আবার শোনা যাচ্ছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধের দামামা!
তবে আলোর দেখাও পাওয়া যাচ্ছে ধীরে ধীরে। একাধিক কার্যকরী ওষুধের সন্ধান মিলেছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে মৃত্যুহার কমিয়েছে। একাধিক ভ্যাকসিন সফলতার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে গেলে আমাদের সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে। ডাক্তার, গবেষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, পুলিশ, সাফাইকর্মী এবং আরও আপৎকালীন পরিষেবা কর্মীরা অবিরত লড়াই করে চলেছেন আমাদের জন্য, যাতে আমরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারি। তাঁদের লড়াইকে সম্মান জানিয়ে আমাদেরকেও সচেতনভাবে দূরত্ব মেনে চলাফেরা করতে হবে এবং মুখে অতি অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারি গাইডলাইন মেনে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই এই যুদ্ধে আমাদের একমাত্র হাতিয়ার।
এবার আসি আমাদের বর্তমান সংখ্যার বিষয়ে। আগের সংখ্যায় আমরা ২০৭৫-এর পৃথিবীর সম্পর্কে একটা আভাস পাঠককে দিতে চেয়েছিলাম। এও বলেছিলাম আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সুদূর ২০৭৫-এর কথা হয়তো অনেকেই ভাবেন না। বিশ্ববিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক ও সাইবারপাঙ্ক জনরার স্রষ্টা উইলিয়াম গিবসনের কথা অনুসরণ করে জানিয়েছিলাম, ভবিষ্যত আর আগের মতো না থাকলেো ভবিষ্যত নিয়ে সামান্য হলেও আশাবাদী হওয়ার প্রয়োজন আছে, “কারণ প্রতিটি ভবিষ্যত অন্য কারো অতীত, প্রতিটি বর্তমান অন্য কারো ভবিষ্যত।” সে কারণেই এই বিষয়ের অবতারণা। কিন্তু আমাদের আশংকাকে মিথ্যে প্রমাণ করে আগের সংখ্যায় পাঠক ও লেখকের আশাতীত সাড়া পেয়েছি। তাঁদেরকে সম্মান জানিয়েই নিয়ে এলাম ২০৭৫-এর পৃথিবীর দ্বিতীয় পর্ব।
এবারে লেখায় এসেছে পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্সো, ডিস্টোপিয়া কিংবা ইউটোপিয়ার মতো বিষয়। আছে রুমেলা দাস ও সায়নদীপা পলমলের দুটি রোমহর্ষক উপন্যাস। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু মৌলিক কল্পবিজ্ঞান গল্প অন্য সব সংখ্যার মতোই। দুটি অনুবাদ থাকছে—একটির ভিত্তি ঊনবিংশ শতাব্দীর জেরোম কে জেরোমের ব্যঙ্গাত্মক গল্প আর একটির অবলম্বন একবিংশ শতাব্দীর গ্যাব্রিয়েল কান্তারিরার সোলার পাঙ্ক। পাঠকদের মতামত এক্ষেত্রে যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলাই বাহুল্য। কাজেই ভালো লেগেছে, খারাপ লেগেছে বা মনে দাগ কাটেনি, যে কোনো ধরণের মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আসুন তবে, ডুব দেওয়া যাক ভবিষ্যতের অনন্ত সাগরে। আপনার যাত্রা শুভ হোক। অলমিতি।
ধন্যবাদান্তে,