ইঁদুরের স্বর্গীয় ভাণ্ডার

ইঁদুরের স্বর্গীয় ভাণ্ডার
বিভাবসু দে

কৈলাস পর্বত, তুষারাবৃত কলেবরে নিজের সমুন্নত শৃঙ্গ তুলে দাঁড়িয়ে আছে যুগযুগান্তরব্যাপী। আদিদেব মহাদেবের বাস এখানেই। এই কৈলাস থেকে সোজা উত্তরে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেই মান-সরোবর। সেখানে হিমশীতল জলে ফুটে আছে অজস্র পদ্মফুল। কোনটা লাল, কোনটা সাদা আবার দু’চারটে নীল পদ্মও রয়েছে। এখান থেকে আরো মাইল বিশেক উত্তরে এগোলে সুমেরু পর্বত, যার উপর রয়েছে রাজা ইন্দ্রের সভা।

এবার আসি আসল কথায়। গণেশ ঠাকুরের শখ হয়েছে স্বর্গে একখানা দোকান খুলবেন। একেবারে যাকে বলে স্বর্গীয় ভাণ্ডার! কিন্তু দোকান খোলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। জমি চাই, টাকা চাই, মালপত্তর চাই, আরো কত কী! কৈলাসে খোলা যেত, সেটা তো পুরোটাই শিবঠাকুরের জমি। কিন্তু সেখানে ওই ভূত-প্রেতের ভয়ে পারতে কেউ চরণটিও রাখতে চায় না। তাই কৈলাসে দোকান খুললে পুরোটাই লসে যাবে। একেবারে প্রপার স্বর্গেও করা যাবে না। ওটা ইন্দ্রদার খাস জমি, মানে সরকারি জমি বললেও চলে। ওখানে পারমিশন পেতে কালঘাম ছুটে যাবে। তাই অনেক ভেবে ঠিক হল যে মধ্যপন্থাই সর্বশ্রেষ্ঠ! মানে কৈলাস আর স্বর্গের মাঝখানে মান-সরোবরের তীরে দোকানটি খোলা হবে। কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল সেখানকার জমিটিও নাকি কুবের মশাই আগেই হাতিয়ে বসে আছেন! তবে শেষ অবধি রাস্তা বেরোল বটে একটা। গণেশের ব্যবসার পুরো প্ল্যানটা শুনে কুবের বাবু রাজি হলেন জমি দিতে; কিন্তু একটাই শর্ত, ৩০ শতাংশ পার্টনারশিপ চাই উনার। কী আর করা যায়, অগত্যা গণেশকেও রাজি হতে হল। জমি তো পাওয়া গেল কিন্তু দোকান খুলতে তো শুধু জমি হলেই চলবে না, মালকড়িও তো চাই। গণেশ নিজের ব্যাংক-ব্যাল্যান্স নেড়েচেড়ে দেখলেন; ঋদ্ধি আর সিদ্ধির শপিং এর ঠেলা সামলে যেটুকু আছে তাতে আস্ত একটা মালপত্তর সমেত দোকান খোলা যাবে না। কুবের জমি দিয়েছে, তাই তার থেকে আর টাকা পাবার আশা নেই; এমনিতেও হাড় কেপ্পন লোক! ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেছেন গণেশ; অনেকক্ষণ ধরে মাথায় হাত দিয়ে শুঁড় নাড়ছেন কিন্তু কোনো রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছেন না। ঠিক তখনই হঠাৎ মনে পড়ল লক্ষ্মীদিদির কথা।

“উফফ, এটা আগে যে কেন মাথায় এলো না!” ব্যস আর কী, ইঁদুরে চড়ে গণেশ সোজা ছুটলেন বৈকুণ্ঠের দিকে।

ক্ষীরসাগরের উপর বিশাল অনন্তনাগের পিঠে চোখ বুজে উনার ক্লাসিক আধশোয়া ভঙ্গিতে ঢুলছেন বিষ্ণুঠাকুর আর তাঁর পাশেই বসে আছেন মা লক্ষ্মী।

“দিদি আসবো?”

“ওমা, গণেশ যে! আয় আয়। কতদিন পর এলি!”

একগাল হাসি নিয়ে শুঁড় নাড়তে নাড়তে কানদুটো দুলিয়ে এগিয়ে গেলেন গণেশ। আড়চোখে একবার তাকালেন বিষ্ণু ঠাকুর।

“জামাইবাবু প্রণাম।” বলেই সোজা বিষ্ণুর শ্রীচরণে মাথা ঠেকালেন গণেশ। এবার চোখ খুললেন বিষ্ণু। “বেঁচে থাকো, বেঁচে থাকো। তা আজ হঠাৎ পথ ভুল করলে নাকি?”

“না না, এই দিদির কথা, আপনার কথা ভারী মনে পড়ছিল, তাই ভাবলাম একবার দেখা করে আসি।”

একটু বাঁকা হাসি হেসে বিষ্ণু বললেন, “ও, তাই বুঝি! তা বেশ বেশ।“

গণেশ গিয়ে বসলেন তাঁদের পাশে। লক্ষ্মী তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এবার বল কেমন আছিস? ডায়েটিং করছিস নাকি আবার? এতো শুকিয়ে গেলি কিভাবে?”

“কোথায় দিদি? ওসব ডায়েটিং ফায়েটিং আমার কম্ম নয়। তোমরা কেমন আছো বলো।”

“এইতো সুখে দুঃখে চলে যাচ্ছে আরকি।”

একটু সময় চুপ থেকে গণেশ বললেন, “জানো দিদি একটা দোকান খুলবো ভেবেছি। জমিটমি জোগাড় হয়ে গেছে, ওই মান-সরোবরের পাশেই।”

“বাহ্, এ তো দারুণ আইডিয়া। তা কিসের দোকান খুলবি রে?”

“সবকিছু। রসগোল্লা থেকে শুরু করে চালডাল,শাড়ি-ধুতি থেকে বইখাতা, সব থাকবে। একেবারে যাকে বলে কমপ্লিট স্বর্গীয় ভাণ্ডার।”

“অসাধারণ।” ঢুলতে ঢুলতে ওদিক থেকে বিষ্ণু বললেন।

এবার গণেশ একটু শুকনো মুখে লক্ষ্মীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “কিন্তু দিদি, একটা সমস্যা আছে গো।”

“কেন রে? কী সমস্যা?”

“মানে আমি হিসাব করে দেখলাম আমার কাছে যা আছে তাতে দোকানঘর তৈরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে কিন্তু মালপত্তর কেনাটা হবে না। তাই বলছিলাম তুমি যদি কিছু ধার দিতে। ব্যবসা একবার জমে গেলেই সব সুদে আসলে মিটিয়ে দেব, নো টেনশন।”

“হুম।” একটু সময় কিছু ভেবে মা লক্ষ্মী আবার বললেন, “আইডিয়াটা মন্দ নয় মোটেই, বেশ প্রফিটেবল! স্বর্গে এমন দোকান তো আর নেই, তাই চলবে যে এতে কোনো সন্দেহও নেই। আচ্ছা, আমি তোকে টাকা দেব। তোকে শোধ করতে হবে না, আর ভবিষ্যতেও মালপত্তর কেনার টাকা লাগলে আমি দেব। কিন্তু আমাকে ৩০ শতাংশ পার্টনারশিপ দিতে হবে।”

গণেশ মনে মনে একটু বিরক্ত হলেন, কিন্তু উপায় তো নেই তাই এখানেও রাজি হতে হল। মানে ৩০ নিল কুবের, ৩০ নিল লক্ষ্মীদিদি আর গণেশের ভাগে রইল ৪০। “ঠিক আছে মন্দ নয়, ফ্রিতে জমি মালপত্তরটাও তো পাওয়া যাচ্ছে।” নিজের মনেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে টাকার থলি হাতে বৈকুণ্ঠ থেকে বেরিয়ে পড়লেন গণেশ।

বেশ কিছুদিনের পরিশ্রম আর বিশ্বকর্মাদার কেরামতির জোরে গণেশের দোকান প্রায় তৈরী হয়ে গেল। সরোবরের ঠিক পাশেই বেশ সুন্দর সাজানো দোকান, ঝাঁচকচকে ফাইবার গ্লাস লাগানো, ভেতরে জিনিসপত্র ঝলমল করছে। দোকানের ওপরে বেশ বড় বড় করে লেখা:

স্বর্গীয় ভাণ্ডার
স্বর্গের একমাত্র বিশ্বস্ত দোকান
(আমাদের কোনো শাখা নেই )

দোকান তো রেডি, এবার একটা শুভদিন দেখে কাজ আরম্ভ করতে হবে। পাঁজি-পুঁথি ঘেঁটে দেখা গেল সামনেই পয়লা বৈশাখ, ভারী শুভদিন। সেদিন থেকেই নতুন হালখাতা বানিয়ে কোমর বেঁধে ব্যবসায় নামা যাবে। কিন্তু পয়লা বৈশাখের আর খুব বেশিদিন বাকি নেই, সবাইকে নেমন্তন্নটাও করতে হবে। স্বর্গের একমাত্র দোকান বলে কথা! সে ব্যবস্থাও হয়ে গেল। কার্ড ছাপানো হল। গণেশ নিজেই ঘুরে ঘুরে সবাইকে নিমন্ত্রণ করলেন। স্বর্গের কেউ আর বাকি রইল না; সস্ত্রীক ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ তো আছেনই, তাছাড়াও ইন্দ্র থেকে উর্বশী, গন্ধর্ব থেকে মহাদেবের ভূত, যক্ষ, যমদূত সব্বাই আমন্ত্রিত।

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! আজ পয়লা বৈশাখ। সকাল থেকে দম নেবার ফুরসৎ নেই গণেশের। বিশাল আয়োজন, সবই যে প্রায় একা সামলাতে হচ্ছে।
এখন বেলা প্রায় ন’টা। পুজোর সব জোগাড়যন্ত্র হয়ে গেছে, নতুন হালখাতাও রেডি। নিমন্ত্রিতরাও সবাই হাজির। বলতে গেলে পুরো স্বর্গলোক এসে জুটেছে আজ মান-সরোবরের তীরে। চারিদিকে আনন্দের ঢেউ বইছে।

হঠাৎ ইন্দ্র বললেন, “তা গণেশ ভায়া, বলছি সব তো রেডি কিন্তু পুজোর পুরুত কই?”

“সে কি? পুরুত কই মানে? বৃহস্পতি ঠাকুর তো আছেন।”

“না হে। তিনি তো জিউসের দেশে মানে গ্রীসে গেছেন বেড়াতে।”

শুনে তো গণেশের চোখ ছানাবড়া! “এই কথাটা এখন বলছেন? সর্বনাশ করেছে! এখন আমি স্বর্গে পুরুত কোথায় পাই বলুন তো!”

“আহা, চিন্তা করো না, সবাই মিলে ভাবলে কিছু একটা রাস্তা নিশ্চয়ই বের হবে।”

“কী হয়েছে রে গনশা?” ওদিক থেকে হাঁক পেড়ে এগিয়ে এলেন শিবঠাকুর।

“এই দেখো না বাবা, এদিকে পুজোর সময় হয়ে এলো কিন্তু বৃহস্পতি ঠাকুর যে স্বর্গে নেই। এখন কী যে করি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না!”

“ওহ, এই ব্যাপার! তা এতে এতো ভাববার কী আছে? মর্তে কী বামুনের অভাব পড়েছে? কাউকে নিয়ে এলেই তো হয়।”

“মর্ত থেকে স্বর্গে আনবে? বেআইনি হয়ে যাবে না কাজটা?”

“ধুর পাগল। ওসব আইন ফাইন তো আমরাই বানিয়েছি। নিজের আইন নিজে ভাঙলে দোষ নেই; শাস্ত্রে আছে!”

“তাহলে আর দেরি করে লাভ নেই বাবা, এখনই লোক পাঠাই মর্তে।”

“মর্ত থেকে মানুষ তোলা তো যমের কাজ। ওকেই ডাকি তাহলে।” পেছন ফিরে ডাকতেই দুটো যমদূত সহ যমরাজ এসে হাজির হলেন।

“আজ্ঞা করুন মহেশ্বর।”

জটা দুলিয়ে শিব বললেন, “তেমন কিছু না, ওই মর্তলোক থেকে একজন পূজারী বামুনকে তুলে আনতে হবে।”

বার দুয়েক মাথা চুলকে যম বললেন, “কিন্তু আমার লিস্টে তো তেমন ঘাটের মরা বামুন কেউ নেই।”

“আহা, মরা কে আনতে বলেছে? জ্যান্ত আনবে। পুজোর জন্যে চাই।”

“মানে কিডন্যাপ!”

“হ্যাঁ, ওই আরকি।”

“যথা আজ্ঞা প্রভু।”

যমের আদেশে তখনই যমদূত দুটো বেরিয়ে পড়ল বামুন খুঁজতে। এদিকে গণেশ বেচারার তখনও কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। ঘন ঘন কান নেড়ে বাতাস করেও লাভ হচ্ছে না কিছু। হাজার হোক এতো পরিশ্রম, ধার দেনা করে গড়া দোকান, মালিকের চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক। আর পয়লা বৈশাখের মতো শুভদিনও তো রোজ রোজ আসে না।

প্রায় মিনিট কুড়ি পরে দুই যমদূত খাটিয়া কাঁধে এসে নামল দোকানের সামনে। খাটিয়ার ওপর বেঘোরে ঘুমোচ্ছে এক বামুন। মাথায় টিকি, গলায় পৈতে; মোটামুটি সাত্ত্বিক ধার্মিক হিন্দু বামুনের যা যা লক্ষণ থাকা চাই সব আছে।

শিবঠাকুর একবার লোকটার দিকে তাকালেন তারপর যমদূতদের দিকে ফিরে বললেন, “লোকটাকে ঘুমের মধ্যেই তুলে নিয়ে এলি?”

“কী করব ঠাকুর, জাগালে শুধু শুধু চিৎকার জুড়ে দিত। হয়তো ভয়ে হার্টফেল করে বসতো, তখন আরেক ঝামেলা।”

“হুম, তা বেশ করেছিস। এবার একে তোলো কেউ। নইলে বেটা যেভাবে ঘুমোচ্ছে সহসা উঠবে বলে তো মনে হয় না।”

মা দুর্গা কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, এগিয়ে এসে ত্রিশূলের ডগা দিয়ে হালকা খোঁচা মারলেন। লোকটা ঘুমের ঘোরেই একটু হেসে বলল, “আঃ, ভুতোর মা, জ্বালিয়ো না তো। ঘুমোতে দাও।”

“ওরে হতভাগা, আমি ভুতোর মা নই, ত্রিলোকের মা।” নারীকণ্ঠে হঠাৎ ধমক খেয়ে হকচকিয়ে উঠে বসল লোকটা। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বেশ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “আমি কোথায়? তোমরা কারা? যাত্রা দল?”

গণেশ এসে বেশ নরম সুরে বললেন, “না গো ঠাকুর। এটা স্বর্গ। আমরা সবাই দেবতা। মন্দিরে, ক্যালেন্ডারে ছবি দেখেছো নিশ্চয়ই। একটা দোকান খোলা হয়েছে, তার পুজোটা তোমায় করে দিতে হবে। চিন্তা নেই, উপযুক্ত দক্ষিণা পাবে।”

“স্বর্গ! দেবতা! আমি কি মারা গেছি?”

“এই হল মানুষের এক দোষ! কথায় কথায় ভয় পেয়ে যায়।” বলতে বলতে এগিয়ে এলেন ইন্দ্র। “শোনো হে, তুমি জীবিত আছো। পুজো শেষ হলে দক্ষিণা সহ তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। ভয় পেয়ো না, তুমি পরম ভাগ্যবান যে সশরীরে স্বর্গে এসেছ।”

ইন্দ্রের কথায় একটু আশ্বস্ত হল লোকটা। বিষ্ণু কাছে এসে দাঁড়ালেন লোকটার। বেশ বিজ্ঞ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, “নাম কী হে তোমার?”

“আজ্ঞে শুভচরণ ভটচাজ। পিতা কালীচরণ ভটচাজ।”

“কী গোত্র?”

“ভরদ্বাজ।”

“বাহ্, উত্তম গোত্র। গায়ত্রী মন্ত্র জানো?”

শুভচরণ বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মাঝে বাধ সাধলেন শিব ঠাকুর। “উফফ, বিষ্ণু তুমি আবার ইন্টারভিউ নিতে শুরু করলে কেন? দেখছো তো খাসা পৈতেধারী বামুন। তবে আর কেন?”

“নাও নাও, আর সময় নষ্ট করো না। দোকান আর হালখাতার পুজো শুরু করে দাও।” গণেশ বললেন।

এতক্ষণে একটু মনে ভরসা পেয়ে ধীরে ধীরে পুজোর জিনিসপত্র ঠিকঠাক করতে লেগে গেল শুভচরণ। সত্যিই এমন ভাগ্য ক’জনের হয়; একেবারে স্বর্গের পুজোয় পৌরোহিত্য! সবকিছু রেডিই ছিল তাই বেশি সময় লাগল না। এবার পুজো শুরু হবে।

তা কার নামে পুজো হবে?”

গণেশ পাশে এসে বললেন, “আমার নামে হবে। মানে গণেশচন্দ্র।”

শুভচরণ অবাক হয়ে বলল, “তা কী করে হয়? আপনার নামে আপনাকেই পুজো দেব? মানে পূজ্য আর পূজক একই ব্যক্তি! এ যে অশাস্ত্রীয়।”

“এই রে! এটা তো সত্যিই ভেবে দেখিনি। এবার তাহলে কী করা যায় বামুন ঠাকুর?”

কিছুক্ষণ টিকিতে হাত বুলিয়ে শুভচরণ বলল, “শাস্ত্রীয় মতে তো কোনো উপায় নেই। তবে মর্তে এর একটা ব্যবস্থা আছে। নেতা মন্ত্রীরা প্রায়ই করে থাকেন। নিজের নামে ব্যবসা বা জমিজমা না করে নিজের বৌয়ের নামে করেন। আপনিও নাহয় দোকানের সংকল্পটা আপনার বৌয়ের নামে করুন।”

“কিন্তু বৌ যে দুজন। ঋদ্ধি-সিদ্ধি। এদের নামে দোকান করলে তো এরা নিজেরাই শপিং করে খালি করে দেবে। আর একজনের নামে করলে ঘরে মহাভারত শুরু হবার প্রবল সম্ভাবনা।”

“তাহলে সন্তানের নামে করুন।”

“উহু। এখনো ফ্যামিলি প্লানিং করা হয়নি।”

এবার দুজনেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। দোকান তো আর যার-তার নামে করে দেওয়া যায় না। গণেশ মাথা চুলকোচ্ছেন, শুভচরণ টিকির ডগা পাকাচ্ছে আঙ্গুল দিয়ে; কারোর মাথায় কিছুই আসছে না। এমন সময় হঠাৎ গণেশের নজর পড়ল দোকানের সামনে মিষ্টির লোভে ঘুরঘুর করতে থাকা ইঁদুরটার ওপর।

“বামুন ঠাকুর, আমি আমার ইঁদুরের নামে দোকান লিখে দিলাম। তার নামেই সংকল্প করুন।”

ইঁদুর বেচারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গণেশ তাকে ধরে এনে বসিয়ে দিলেন যজমানের আসনে। ইঁদুরের নামে সংকল্প করে পয়লা বৈশাখে স্বর্গীয় ভাণ্ডারের প্রথম হালখাতায় সিঁদুর ছুঁইয়ে শুরু হল গণেশ ঠাকুরের ব্যবসা। গদিতে বসলেন তিনি কিন্তু দোকানের আনাচে-কানাচে রইল ইঁদুর মশায়েরই রাজত্ব।

আর সেই থেকেই দোকানে দোকানে ইঁদুরের বাস!