মেজদাদা আর কম্বক সিরাপ

মেজদাদা আর কম্বক সিরাপ
সহেলী চট্টোপাধ্যায়
অলংকরণ - রুমেলা দাস



রবিবারের এক অলস দুপুর। ফেব্রুয়ারির শেষ হয়ে সবে মার্চ মাস শুরু হয়েছে। ক’দিন আগেই গেছে সরস্বতীপুজো। কোকিলগুলো তারস্বরে গলা সাধতে শুরু করে দিয়েছে। শুধু কোকিল কেন অন্য পাখিরাও গলা সাধতে পিছিয়ে নেই। ওদের ডাকাডাকিতে জীবন ওষ্ঠাগত। তবে এক এক সময় বেশ ভালও লাগে। এমন এক দুপুরে বড়দা আর মেজদা গল্প করছে বারান্দায় বসে।

মেজদা বলল, “উফ! আর পারছি না, আমি আবার বিদেশে চলে যাব”।

“কেন? গরম লাগছে বুঝি? তোর তো এসি আছে। সবে তো মার্চ মাস শুরু হল এখনই তোর গরম লাগছে?” বড়দা জিজ্ঞাসা করল।

“আরে গরমের জন্য নয়। আমি সাহারায় যখন ছিলাম এর চেয়েও বেশি গরম সহ্য করেছি”। মেজদা অনেক দেশ বিদেশ ঘুরে এসেছে। সাহারায় কবে গেছিল জানি না। আমাকে তো কিছু বলে টলে না। খুব বড় বিজ্ঞানী কি না তাই বাল্যখিল্যদের সে পাত্তা দেয় না। কেউই দেয় না অবশ্য। তবে মেজদার গুণ ও লোকের মুখের ওপর সত্যিটা বলে দেয়।

“তাহলে? মিষ্টুদের উৎপাত সহ্য হচ্ছে না নিশ্চয়। আমি জানতাম”। এই রে আমাদের কথা বলছে বড়দা। কী এমন জ্বালাই তোমাদের? বাচ্চা ভাই-বোন থাকলে একটু আধটু দুষ্টুমি করেই থাকে। কথাটা আর বললাম না।

“ওরা আমার হাড়ে দুব্বোঘাস গজিয়ে দিয়েছে দাদা! একটু অসাবধান হলেই আমার ল্যাবে ঢুকে পড়বে আর এটা ওটা নিয়ে টানাটানি করবে। আমি চিৎকার করলেও গ্রাহ্য করে না। আমাকে একদম ভয়ই পায় না। আগে যদিও বা একটু ভয় করে চলত, যবে থেকে সবার জন্য বাদাম ভাঙ্গা পুতুল এনে দিয়েছি তারপর থেকে সাপের পাঁচ পা দেখেছে। কি কুক্ষণে যে ওদের জন্য পুতুল কিনতে গেছি”!

আমাদের বৈজ্ঞানিক মেজদা দীর্ঘ দিন বিদেশে কাটিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকতে এসেছে। এবার আমাদের সবার জন্য নাট ক্র্যাকার পুতুল এনেছে। সারাদিন গভীর গবেষণায় ডুবে থাকে। আমরা মানে আমি মিষ্টু, ইন্দুদি, বিন্দুদি, তাতাইদা, পাপাইদা, বিট্টু মাঝে মাঝে মেজদার ল্যাবে ঢুকে পড়ি। আমরা সবাই কাজিন। ভীষণ ভাল বন্ধু। বড়দা, মেজদা আর ছোড়দা আমাদের চেয়ে অনেকটা বড়। বড়দার ট্রাভেল এজেন্সি আর দোকান আছে। ছোড়দা সাংবাদিক আর মেজদা বৈজ্ঞানিক।

আমাদের সঙ্গী ছিল একটা টিয়া পাখি। মেজদার সঙ্গে এর একদমই বনত না। ওর নাম ছিল কিট্টু। এখন ও চলে গেছে আমাদের ছেড়ে ওর বন্ধুদের কাছে।

তা যাই হোক মেজদার ল্যাবে হাজারটা শিশি বোতল। নেড়ে চেড়ে দেখতে ভালই লাগে। এক একটায় এক এক রকম গন্ধ। কোনটা মিষ্টি, কোনটা ঝাঁঝালো। মেজদা দেখতে পেলেই আমাদের হাত থেকে কেড়ে নেয় আর চিৎকার করে। দরজায় তালা দিয়ে রাখে সব সময়। কিন্ত আমাদের আটকানো শুধু মুশকিল-ই নয় অসম্ভবও বটে। মেজদা এই বার বিদেশ থেকে ফেরার সময় আমাদের জন্য নাট ক্র্যাকার কিনে এনেছে।

বড়দা বলল, “হ্যাঁ ওই কারণে আমি কাও-কে কিছু দিই না। তুই তো ভুল করেছিস। ওরা তোকে বন্ধু ভেবে নিয়েছে। তা ওদের ভয়ে শেষে বিদেশে চলে যাবি?”

“আগে আমাকে ওরা ভয় পেত, এখন আমিই ওদের ভয় পাই। কিন্তু ওদের জন্য দেশ ছাড়ব না”।

“তবে কি সেজ জেঠুর ভয়ে? মানুষটা একটু বকে, কিন্তু আমাদের ভালবাসে খুব”।

আমাদের সেজজেঠুকে দেখলে একটু ভয় খাই বটে। এক কালে খেলোয়াড় ছিল। আলসেমি দুচক্ষে দেখতে পারে না। প্রচণ্ড গরম পাখা বন্ধ করে বসে থাকে। শরীর কে নাকি খুব কষ্ট দিতে হয়। আমার আবার আলসেমি করতে খুব ভাল লাগে কি না তাই সেজজেঠু কে দেখলেই ভয় লাগে। আমাদের দেখলেই বলে, “কই দেখি তুমি কী কী শিখেছ?” দিবারাত্রি আমার মাথার পোস্টমোর্টেম করেই চলেছে।

“আর বোলো না দাদা। আমাকে দেখলেই বলে সারাদিন দরজা বন্ধ করে কী সব ছাই পাঁশ আবিষ্কার করছিস! ওসব আবিষ্কার তো কারুর কোন কম্মে লাগে না। পণ্ডশ্রম না করে রোজ ভোর বেলা উঠে পড়বি তারপর যোগ ব্যায়াম করবি। কুম্ভক রেচক অনুলোম বিলোম করবি। তারপর হাঁটতে বেরুবি। ফেরার পথে বাজারটা করে আনবি। তারপর বাচ্চাদের পড়াতে বসে যাবি। সেজজেঠুর কথার মালগাড়ি শুরু হলে তার কি আর শেষ আছে!”

“হুম! তবে সেজ জেঠু সবাইকেই এই রকম করে তাই বলে ভয়ে তুই বিদেশে চলে যাবি? এটা বাড়াবাড়ি। আমাকেও বলে তুই কেমন দোকান করেছিস? তোর দোকানে তো লোক-ই আসে না। ট্রাভেল এজেন্সিও মাছি তাড়াচ্ছে”।

“সেজোজেঠু একটা জ্বলন্ত সমস্যা বটে তবে এটা আরও গভীর সমস্যা”। জ্বলন্ত চোখ করে মেজদা বলল।

“বুঝে গেছি। আর বলতে হবে না, ন’জেঠু ছাড়া আর বড় সমস্যা কিছু হতেই পারে না”।

আমাদের বড়জেঠু, ন’জেঠু, রাঙ্গা জেঠু, মেজোজেঠু প্রত্যেকেই খুব বিখ্যাত। সকালে বিকেলে সবাই এক সঙ্গে চা খেতে বসে আর একই গল্প প্রতিদিন করবে।
আমার সব মুখস্থ হয়ে গেছে। সব চেয়ে এগিয়ে আছে কে কতবার ভূত দেখেছে সেই গল্প। তারপর ভগবানের গল্প। তারপর ছেলেবেলার গল্প।

“ন’জেঠু আমাকে দেখলেই বলবে গোটা দিনটা কী ভাবে নষ্ট করছিস! আমি নাকি অমূল্য সময় নষ্ট করছি! বিজ্ঞানের জন্য আমার যে এই সাধনা কেউ বুঝল না”, মেজদার গলায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে।

“এটা তোর সমস্যা? বড় বড় কাজ করতে গেলে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। এর জন্য ভেঙ্গে পড়লে হবে না”।

“আসল সমস্যা এটা নয়। আসল সমস্যা হল পাখি”।

“আমাদের পাখি তো অনেকদিন উড়ে গেছে। তাহলে পাখি আবার কী সমস্যা করল?”

“আপদ বিদেয় হয়েছে। পাখি খুব সমস্যা করছে। দিবারাত্র কোকিলের এই কু কু শুনতে আর ভাল লাগে না। তারপর কাকের এই কা কা ডাক! আরও কত রকম পাখির ডাক শুনি। কুবো পাখির কর্কশ ডাক, টুনটুনি, দোয়েল, চড়াই কেউ কারর চেয়ে কম যায় না। ছাতারে গুলো খুব বিচ্ছিরি ভাবে ঝগড়া করে। পায়রার বক বকম শুনতে হয়। তারপর ওই ঘুঘু! মহা ঘুঘু! সারা দুপুর চিল্লে বাড়ি মাথায় করে রাখে”।

“তুই খুব লাকি যে এদের গান শুনতে পারছিস সর্বদা। ওরা কীভাবে সমস্যা করবে”?

“ওই গান ই আমার প্রাণ কেড়ে নিতে বসেছে। সারাক্ষণ এত শব্দ শুনলে কার না মাথা গরম হয়ে যায়! মাথার মধ্যে ভীষণ কষ্ট হয়। মাঝ রাত থেকে ডাকতে শুরু করে। ভোর বেলা হলেই আমার ঘরের কাচের জানলায় এসে ঠোঁট দিয়ে ঠক ঠক শব্দ করবে। কাচ ভেঙ্গে যাবে কোনদিন! ছাদে নোংরা জানলায় নোংরা! আমি কি সব পরিস্কার করব?”, মেজদা পাখিদের গাল মন্দ করতে শুরু করল।

বড়দা মন্তব্য করে, “আমাদের বিনি তো পাখি তাড়াতে পারে না। খালি খায় আর ঘুমোয়”।

বিনি বাড়ির বিড়াল। ওকে কেউ ভালবাসে না। বড়দার কথাতেই বোঝা যায়।

“পাখি সমস্যার সমাধান আমি করবই”।

“কীভাবে?” বড়দার চোখ গোল গোল হয়ে যায় বিস্ময়ে।

“কম্বক সলিউশান বানাতে হবে”।

“সে আবার কী”?

“বুদ্ধিমান লোকেরা আগে থেকে সব ফাঁস করে না”।

“হা হা তুই বুদ্ধিমান বুঝি”। বড়দা হেসে ফেলে।

মেজদা খুব চটে যায়।

রবিবারের দুপুর, আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি কে কী করছে। মা বলে খুব বাজে স্বভাব এটা। আমি বড় হয়ে সত্যান্বেষী হব তাই এখন থেকে তৈরি হতে হবে।
আম্মার ঘরে উঁকি দিলাম। আম্মা খুব ঘুমোচ্ছে। মেঝেতে বিনি হাত পা ল্যাজ ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। বাবার ঘরে জোর পড়াশোনা চলছে। ইন্দুদি, বিন্দুদি কে ফুঁটো চৌবাচ্চার অঙ্ক কষাচ্ছে। ফুঁটো চৌবাচ্চার অঙ্ক পুরো ভুল। একটু সিমেন্ট মেরে দিলেই তো হয়ে যায়। এর জন্য পুরো একটা প্রশ্নমালার কী দরকার! আমাকে দেখতে পেলেই অঙ্ক করতে বসিয়ে দেবে। এখান থেকে কেটে পড়াই ভাল।

তাতাইদা, পাপাইদা, ছোড়দা, বাপ্পাদা সবাই মিলে দার্জিলিং বেড়াতে গেছে।

বড়জেঠু গল্প লিখছে। বড়মা টিভি চালিয়ে ঘুমোচ্ছে। টিভি না চালিয়ে বড়মা ঘুমোতে পারে না। ছোটোপিসি নেল পালিশ নাড়া চাড়া করছে। আমায় দুটো দেবে নাকি? আমার কানে একটা টান পড়ল। ঘুরে দেখি মা। “নিজের কাজ কর্ম কিছুই কি নেই? সবার ঘরে উঁকি দিয়েই বেড়াচ্ছিস? ছি ছি তোর এ-কী স্বভাব”! মা আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিল। “এখান থেকে উঠেছিস তো দেখ কী করি”! বাইরে বাঘা ডাকছে খুব। ওর মনে হয় খুব খিদে পেয়েছে। মা আমাকে উঠতে দেবে না এখন। বাঘা তুই খাবার সময় কেন এলি না?

দুদিন কেটে গেল। মেজদা ল্যাব থেকে বেরুচ্ছেই না। ওখানেই খাওয়া দাওয়া করছে। স্নান তো করেই না কখনও। বাইরে একটা বোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে। আমি ব্যস্ত কেউ বিরক্ত করবে না। জানলা দিয়ে হাত গলিয়ে চা দেয় আরতি মাসি। ভাতও ওইভাবেই খায়। মেজদাকে কেমন দেখতে মাঝে মাঝে ভুলে যাচ্ছি। আমরা দরজা ধাক্কা দিলেও খোলে না। ল্যাব থেকে মাঝে মাঝে উৎকট গন্ধ আসে। সেজজেঠু একদিন বলল, “এই সব আবিষ্কার এর নেশায় হয়তো বাড়ির সবাইকে একদিন মেরেই ফেলবে। বিষাক্ত কিছু বানাচ্ছে মনে হয়”। অনেক ডাকাডাকি করলে জানলা একটু ফাঁক করে বলে, “আমি এখন কাজ করছি বিরক্ত কর না। বাইরে বোর্ড দেখোনি?”

একটা লাল রঙের টুনি জ্বলছে বাইরে। সাতদিন পর লাল টুনি সবুজ হল। দরজা খুলে মেজদা বেরুলো নাচতে নাচতে। “আমি পেরেছি! ইউরেকাআআআআআআ!”

“কী পেরেছ মেজদা”? আমি জানতে চাই।

“গোটা দুনিয়া কে চুপ করাবার ওষুধ আমার হাতের মুঠোয়”!

“তাহলে তুই নিজেই খেয়ে নে। চিল্লে মাথা খারাপ করে দিল”। সেজজেঠু বলল।

“বলো বলো যা ইচ্ছে বলো। যেদিন আমি নোবেল পাব সেদিন তোমরা হাততালি দিও। আমি সবাই কে চুপ করিয়ে রাখতে পারি”।

মেজদা হাজার নোবেল পুরস্কার পেলেও সেজজেঠু কখনও বলবে না যে একটা কাজের কাজ করেছে। নাক কুঁচকে বলবে নোবেল পাওয়াটা আর এমন কী ব্যাপার? এ নিয়ে এত নাচানাচির কি আছে?

আম্মা, “হায় এ-কী সর্বনাশ হল। ছেলেটা এসব কী বলছে”।

ন’জেঠু বলল, “বোধহয় রাজনীতি করবে মা”।

“বিজ্ঞান চর্চা ছেড়ে দিয়ে শেষে রাজনীতি করবে? এতো ভালো কথা নয়!”, আম্মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।

“রাজনীতি নয় ডাকাতিও করতে পারে। সবাই কে চুপ করিয়ে দেবে বলছে। তাহলে কী ও মার্ডার করবে লোকজন? বেশ সাবধানে থাকতে হবে”, ন'জেঠু আপন মনেই বলে চলে।

আম্মা আরও জোরে ডুকরে ওঠে।

আমি বললাম, “তোমরা চিন্তা কোরো না। মেজদা কম্বক সিরাপ আবিষ্কার করে ফেলেছে”।

ওরা আমার কথা কিছু বুঝল বলে মনে হল না।

মেজদা সকালে ছাদে উঠে পাখিদের খেতে দেয় রোজ। কম্বক সিরাপ মিশিয়ে দেয় খাবারের সঙ্গে। পাখিগুলো সকাল হলেই ছাদে বসে বসে গল্প করে। কেউ আবার খেলে এক্কা দোক্কা। কেউ গাছের ডালে বসে দোল খায়। আর মনের সুখে গান গায়। মেজদাকে দেখলেই বলে, এই রে মাটি করেছে! মেজদাদা এসে গেছে। বলেই হুটোপাটি করে উড়ে যায়। (ওরা কথা বলে এটা অবশ্য আমার অনুমান) মেজদার হাত থেকে ওরা কিছুই খেতে চায় না।

তিনদিন হয়ে গেল মেজদার খাবার দেওয়া ব্যর্থ হয়েছে। চতুর্থদিনে মেজদা ম্যাগি বানাল পাখিদের জন্য। ম্যাগি খেতে ওরা খুব ভালবাসে। এইবার ঠিক খাবে আর খেলেই ওরা কথা বলতে ভুলে যাবে। মানে ডাকতে ভুলে যাবে। এই বার ওই বিচ্ছিরি ওষুধটা মেশাতে শুরু করেছে। বড় একটা বাটি করে ম্যাগি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছে। আহা রে পাখিগুলোর কপালে আজ দুঃখ আছে।

এমন সময় বড়দা এসে পড়ল। “কী বানিয়েছিস, ম্যাগি? কতকাল খাইনি”! শুধু বললই না হাত থেকে কেড়ে নিল বাটি। এক সঙ্গে চার চামচ মুখে পুরে দিয়েছে।
“এটা তুমি কী করলে দাদা? এতে যে কম্বক সিরাপ মিশিয়েছিলাম”!

বড়দা কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছিল। কিন্তু বলতে পারল না। হাজার চেষ্টা করেও গলা দিয়ে আওয়াজ বার করতে পারল না। বাটি সমেত ম্যাগি ছুঁড়ে দিল মেজদা কে লক্ষ্য করে। মেজদা বসে পড়ল। সেজো জেঠু বাজার করে ফিরছিল বাটিটা উড়ে গিয়ে বসল সেজোজেঠুর মাথায়। একদম টুপির মত বসে গেছে। ম্যাগির সুতো ঝুলছে মাথা থেকে। মনে হচ্ছে নতুন রকমের হেয়ার স্টাইল করেছে সেজোজেঠু। আমি মোবাইল বার করে পটাপট দুটো ছবি তুলে ফেললাম। বন্ধুদের দেখাব। ভাল হয়েছে শক্ত শক্ত প্রশ্ন করে আমাদের খালি অপদস্থ করা, ঠিক হয়েছে এবার ম্যাগির চুল নিয়ে বসে থাকো।

সেজোজেঠু কিন্তু এই নতুন ফ্যাশনে মোটেই খুশি হল না। বড়দা কে বলল, “ব্যাটা নচ্ছার, পাজি, ছুঁচো, হারগিলে, চামচিকে, মামদো, উল্লুক । আমি তোর বন্ধু নাকি! এই সব ইয়ার্কি আমার সাথে! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন”!

মেজদা ভ্যানিশ হয়ে গেছে। বড়দা কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। আমি বললাম, “দাঁড়াও সেজো জেঠু কথা আছে”।

বিচারসভা বসে গেল। বাদী বড়দা। মেজদার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ নিরীহ পাখিদের ওপর অত্যাচারের চেষ্টা, নিজের দাদা কে বিষ ওষুধ খাওয়ানো, সেজো জেঠুর ওপর অনিচ্ছাকৃত হামলা ইত্যাদি। জজ আম্মা বাদীর পক্ষেও আছে প্রতিবাদীর পক্ষেও আছে। কিন্তু মেজদা কে তো খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না সেই ঘটনার পর থেকে। মেজদার সেই বিদেশ যাবার বিশাল সুটকেস টাও পাওয়া যাচ্ছে না।

সাত দিন কেটে গেছে। বড়দা এখন কথা বলতে পারছে। মেজদা এখন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে চলে গেছে। মনের সুখে ওখানে গবেষণা করবে। মেল করে জানিয়েছে এবার শব্দজব্দ আবিষ্কার করবে। সেটা এমন একটা মেশিন হবে কানে লাগালে আর বাইরের কিছু শোনা যাবে না। ভারি মজার ব্যাপার হবে। মা বকলে আমি কানে লাগিয়ে বসে থাকব। কম্বক সিরাপ ভালই বানিয়েছিল মেজদা কিন্তু কপালের লিখন খণ্ডাবে কে?

সেজোজেঠু সব শিশি বোতল ভেঙ্গে না দিলে ওই ওষুধ এখনও থাকত। আর যারা খুব কথা বলে তাদের একটু খাইয়ে দেওয়া যেত।