মাতাল


সুপ্রীতি বর্মন


তোমরা যখন সুখের চাদরে একপেট খেয়ে বিছানা আঁকড়ে ধরে,
নাক ডেকে ঘুম নির্লিপ্ত প্রত্যাশার হাঁকডাক।
আমার উলঙ্গ চিত্ত তখন ছটফট করে তোমাকে কাছে পেতে,
নিরুদ্দেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে,
স্বপ্নের হাড়গোড় চিতায় জ্বালিয়ে,
সেই চিতাভস্ম কপালে লেপে হয়েছি আজ নাগা সন্ন্যাসী।
ঘরদোর ছাড়া ছন্নছাড়া উচ্চন্ড মাতাল।
মায়ের ঘরে বার বার ফিরি লাজলজ্জার মাথা খেয়ে,
অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটতে থাকে।
আমার চাই আমাকে দাও আমার নায্য অধিকার।
তোমাদের মতন সুশীল সুবোধ বালকেরা,
মা বাবার কথা খুব মন দিয়ে শোনে।
গর্ভমেন্টের ঘরের মাইনে এনে,
মুখে কিছু না চেয়ে মায়ের আঁচলে বাঁধে।
কিংবা ভারী শাড়ি কিনে বৌ এর মুখে হাসি ফোটায়,
তখন আমার স্ত্রী ভগ্ন শরীরে পরের দোরে ঝি খাটে,
অভুক্ত ক্লান্ত শরীরে দুরারোগ্য ব্যাধি বাসা বাঁধে।
ভালোমন্দ খাওয়াতেও আমার পকেটে টান।
অগত্যা তার শরীর কামড়ে সুগার বান।
এখন ইচ্ছা নেই তবুও কি করি উপায়,
তাই বউকে ছেড়ে মায়ের বাসায়।
ছেলেগুলো ভালোমন্দ খাবারের লোভে,
উঁকি মারে ঠাকুমার ঝোলায়।
আমার সাথে তারাও পেতেছে পাত।
আমার ভাঙাচোরা টোটো ঐটুকু যখের ধন,
তবুও যান্ত্রিক বৈকল্য প্রতিদিন।
মায়ের মুখ ঝামটা অভিযোগের বাঁশ,
চোখে মুখে স্পষ্ট আমি হলাম এক অপদার্থ।
তবুও আজ বুকফাটা শ্বাসরোধ অব্যক্ত শোকে,
গলায় ঢালতে লেগেছি মদের বোতল।
জ্বলিয়ে দিতে চাই উদরের সাথে মন।
বিষে বিষে বিষক্ষয়।
তবুও কখনো সখনো চেঁচাগলায় মাজা সুর,
পাড়াপ্রতিবেশী ধমকে,
কাঁচা কাঁচা খিস্তীতে প্রমাণ রাখি আমার সাহসের,
মাঝে মাঝে তার সাথে স্বাদবদল নতুন চমক,
ইংরাজীতে ফড়ফড় করি,
বুঝিয়ে দিই প্রত্যেককে।
নইরে আমি একচুল অশিক্ষিত,
কি করবো চাকরী ছাড়া আমি এক শিক্ষিত বেকার,
সংসারের আত্মদগ্ধ জ্বালার চিতার কাঠ,
আমার স্বপ্নকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে।
সেই অভিশাপের গ্রহণ খালি চোখে জ্বালা ধরায়,
তাইতো বাধ্য হয়ে গলায় ঢালতে লেগেছি রঙীন জল।
এখন তোমরা সুশীলরা কূপমন্ডুকই রইলো,
কি করে বুঝবে আমাদের।
কথায় কথায় গলা উঁচু করে বলো এই ছোটলোক মাতাল।
তাই থাকো তোমরা তোমাদের মতন,
রঙীন আঁচলে ঢাকা অসম্পূর্ণ জাতিস্বত্তা।
আমি আমারি মতন বিনদাস।
নেই কোন জাগতিক দেখনদারি।
ভদ্রলোকের নামচাবলি।
আমি সহজ সরল নিষ্পাপ,
মনেতে নেই কোন ছলচাতুরী।
আমি এক মাতাল।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সত্য মননের পরিচয়।
তবুও দিনের শেষে আমার প্রিয়তমা সতীর,
অঙ্গব্যবচ্ছেদে আমার কাম ক্ষুধার জিহ্বায়,
স্বপ্নেই তোমাকে পেতে চাই ছুঁতে।