একটি আঠালো কাহিনী


মূল - এটগার কেরেট/ক্রেজি গ্লু

“অ্যাই, খবরদার ওটায় হাত দিও না!” আমার বউ তৃষা চেঁচিয়ে উঠল।

আমি জিগ্যেস করলাম, “আরে জিনিসটা কী বলবে তো।”

“আঠা,” তৃষা বলল, “তাও আবার যে সে আঠা নয়। সুপার গ্লু।”

“আচ্ছা! তা ও জিনিস তোমার কী কাজে লাগবে শুনি?” আমি জানতে চাইলাম।

“লাগবে। লাগবে। অনেক কাজেই লাগবে,” তৃষা বলল, “কত কী জুড়তে লাগে জানো তুমি!”

“কই আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না,” আমি রেগেমেগে বললাম, “কেন যে তুমি এই ভুলভাল জিনিসগুলো কিনে টাকা নষ্ট করো আমার মাথায় ঢোকে না।”

“তোমায় যেজন্য বিয়ে করেছি সেজন্যই তো,” তৃষাও ফোঁস করে উঠল, “সময় নষ্ট করব বলে।”

আমার ঝগড়া করতে ভালো লাগছিল না, তাই চুপ করে গেলাম। তৃষাও আর কথা বাড়াল না।

“আঠাটা কেমন? কাজে আসবে?” আমি জিগ্যেস করলাম। তৃষা আমাকে বাক্সের গায়ের ছবিটা দেখাল। একটা লোক ঘরের সিলিং থেকে ঝুলছে, কেউ তার জুতোর তলায় সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে।

“ধুস, কোনো আঠা দিয়ে একটা লোককে ওই ভাবে ঝুলিয়ে রাখা যায় নাকি,” আমি বললাম, “ওরা ছবিটা উল্টো করে তুলেছে। লোকটা মেঝেতেই দাঁড়িয়ে আছে। ওরা শুধু একটা আলো মেঝেতে আটকে দিয়েছে, তাই সিলিং বলে মনে হচ্ছে। জানলার দিকে তাকালেই ব্যাপারটা পরিষ্কার বুঝতে পারবে। জানলার হুকগুলো সব নীচে লাগানো। এই দেখ-” আমি ছবিতে জানলাগুলো দেখালাম। তৃষা তাকাল না।

“আচ্ছা, আটটা বেজে গিয়েছে দেখছি,” আমি বললাম, “আমায় এখুনি বেরোতে হবে।” তাড়াতাড়ি ব্রিফকেসটা তুলে নিয়ে তৃষার গালে একটা আলতো চুমু খেয়ে বললাম, “ফিরতে আমার একটু দেরি হবে। তবে-”

“জানি। জানি,” তৃষা রাগত স্বরে বলল, “তুমি তো এখন ভীষণ ব্যস্ত।”

 

আমি মীনাক্ষীকে অফিসে পৌঁছে ফোন করলাম। “আজকে মনে হচ্ছে আর যেতে পারব না।” আমি বললাম, “আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।”

“সে কী? কিছু হয়েছে নাকি?”

“না মানে। হয়ত কিছুই নয়। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও কিছু সন্দেহ করছে।” মীনাক্ষী অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। ফোনের অন্যপ্রান্তে তার নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

“আমি বুঝতে পারি না তুমি ওর সঙ্গে এখনও কেন আছো,” মীনাক্ষী শেষমেশ ফিসফিসিয়ে বলল, “তোমরা একসঙ্গে কোনোকিছুই করো না। এখন তো তোমাদের ঝগড়া করতেও ইচ্ছে করে না। আমার মাথায় ঢোকে না এরকম ভাবে তুমি এখনও কেন দিন কাটাচ্ছো। তোমাদের দুজনকে ঠিক কী যে একসঙ্গে ধরে রেখেছে সেটাই বুঝতে পারছি না।” সে আবার বলল, “একেবারেই বুঝতে পারছি না...” বলে সে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।

“কেঁদো না, মীনাক্ষী,” আমি ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। “শোনো,” আমি আর কি বলব ভেবে না পেয়ে মিথ্যে বললাম, “আমায় একটা মিটিংয়ে ডাকছে। আমাকে এখন যেতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি আমি কালকে দেখা করব। তখন এ নিয়ে আলোচনা হবে না হয়, কেমন?”

 

আমি বেশ আগেভাগেই বাড়ি ফিরে এলাম। দরজা দিয়ে ঢোকার সময় একটা হাঁক পাড়লাম কিন্তু কেউ উত্তর দিল না। রান্নাঘরের টেবিলের ওপর দেখতে পেলাম সুপার গ্লুর টিউবটা, পুরোপুরি খালি। আমি একটা চেয়ার বের করে বসতে গেলাম। কিন্তু চেয়ারটা এক চুলও নড়ল না। আমি আর একবার চেষ্টা করলাম। কিছুই হলো না। তৃষা ওটাকে মেঝের সঙ্গে আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছে। ফ্রিজটা খুলতে গেলাম। দরজাটা তৃষা আঠা দিয়ে জুড়ে দিয়েছে। অনেক ভেবেও বুঝতে পারলাম না ও কেন এরকম একটা কাজ করল। আমার কোনো সময়ই ওর মাথার দোষ আছে বলে মনে হয়নি। এই রকম উদ্ভট কাজকর্মের সঙ্গে আমি ওকে একেবারেই মেলাতে পারলাম না। আমি শোয়ার ঘরে ফোন করব বলে ঢুকলাম। ভাবলাম হয়ত শ্বশুরবাড়ি গেছে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। ফোনের রিসিভারটা তুলতেও পারলাম না। ও এটাতেও আঠা লাগিয়ে দিয়েছে। আর মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলাম না। টেলিফোন রাখার টেবিলের প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি কষালাম। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটা ভাঙতে ভাঙতে বেঁচে গেল। টেবিলটা ওদিকে এক চুলও নড়েনি।

আর তখনই আমি ওর হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজটা আমার মাথার ওপর থেকে আসছিল। ওপর দিকে তাকাতেই ওকে দেখতে পেলাম। ওপর থেকে উলটো ভাবে ঝুলছে, ওর খালি পা শোয়ার ঘরের উঁচু শিলিং এ আটকে রয়েছে। আমি হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। “পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলে নাকি? এগুলো কী করেছটা কী!” ও উত্তর দিল না, শুধু মুচকি হাসল। ওর হাসিটা ভীষণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। ও যেভাবে ঝুলছিল মনে হচ্ছিল যেন ওর হাসিটাই শুধু মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা প্রভাবিত। “চিন্তা করো না,” আমি বললাম, “আমি তোমায় নামিয়ে আনছি।” আমি আলমারি থেকে কিছু বই টেনে নামালাম। বেশ কিছু মোটাসোটা এনস্লাইকোপিডিয়া একটার ওপর আর একটা চাপিয়ে আমি ওপরে উঠলাম। “ভালোই জোরে লাগবে কিন্তু,” আমি আমার ব্যালান্স রাখার চেষ্টা করতে করতে বললাম। কিন্তু ও হেসেই যাচ্ছিল। আমি যতটা জোরে সম্ভব টানলাম কিন্তু কিছুই হলো না। সাবধানে আমি নিচে নামলাম। “চিন্তা করো না,” আমি বললাম, “আমি দমকল ডাকছি। পাড়াপ্রতিবেশীদেরও ডেকে আনছি।”

“বেশ তো,” বলেই ও আবার হাসতে লাগল, “আমি তো আর কোথাও যাচ্ছি না।” আর ততক্ষণে আমিও হাসতে শুরু করেছি। ওকে বড্ড সুন্দর লাগছিল, একই সঙ্গে শিলিং থেকে উল্টো করে ঝোলার জন্য বড্ড বেমানান লাগছিল। ওর চুলগুলো সব নীচের দিকে ঝুলছিল। সাদা টি শার্টের নীচে ওর স্তনগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন দুটি নিটোল অশ্রুবিন্দু। বড্ড সুন্দর। আমি বইয়ের স্তুপের ওপর আবার চড়লাম। তারপর আমি ওকে চুমু খেলাম। ওর জিভ আমার জিভকে খুঁজে নিল। আমার পায়ের তলা থেকে বইগুলো সরে গেল আর আমি শূন্যে ভেসে রইলাম, শুধু ওর ঠোঁটদুটো ছুঁয়ে।