মোহর বৃত্তান্ত


অলংকরণ - সুমিত রায়

দুপিসবাবুর মামা নব্বই বছর বয়সে মারা গিয়ে দুপিসবাবুকে তিনটে জিনিস দিয়ে গেলেন। তার মধ্যে অবশ্য দুটোকে দেখতে পাওয়া যায় আর তৃতীয়টা শুধু বোঝা যায়, অথবা আক্ষরিক অর্থেই সেটা বোঝা! প্রথমটা একটা বাড়ি – সেটা পেয়ে দুপিসবাবু বড়ই প্রীত, কারণ উনি সারাজীবন কেরানিগিরি করে কলকাতা শহরে বাড়ি করে উঠতে পারেননি- করতে চানওনি। কিন্তু কেউ দিয়ে গেলে তো আর নিতে আপত্তি নেই। দ্বিতীয় জিনিসটা- নাহ জিনিসটা বললে ভুল হবে, জিনিসগুলো হল – দুটো মোহর। দুপিসবাবু কোনো দিন মোহর চোখে দেখেননি – আর দেখবেনই বা কী করে? যে লোক সপ্তাহে দুপিসের বেশি মাছ কেনে না তার আবার মোহর! বাজারে গেলেই মাছওয়ালা ওনাকে দেখে চিৎকার করে ওঠে, “আসেন দুপিসবাবু, আজকে আপনার জন্যে দুটো বড়ো বড়ো পিস রেখেছি।”

দুপিসবাবু ওর কথা শুনে শান্তভাবে বলেন, “না ভাই, অত বড়ো পিস আমি নেব না, বয়স হয়েছে তো- বদহজম হয়ে যাবে।”

বাজারে গিয়ে প্রতি সপ্তা ওই দুপিস মাছ নেন বলেই ওনার নাম দুপিসবাবু হয়ে গেছে। আসল নামটা অফিসে ব্যবহার হত, এখন রিটায়ার করার পর আর হয় না। মামার দেওয়া বাড়িতে উঠে এসে দু’হপ্তা বাজার করার পরেই এই নতুন তল্লাটে উনি দুপিসবাবু নামে পরিচিত হয়ে গেলেন। তবে লোকে ওনাকে কিপটে বললে ওনার রাগ হয় না। উনি বলেন, “সে যে যা বলে বলুক। আমার পয়সা আমি খরচ করি বা না করি তাতে অন্যের কী? কেউ তো আর আমাকে পয়সা দিতে আসবে না!” আরও বলেন, “আরে বাবা কিপটেকে কিপটে বলবে না তো কী বলবে? আমার বাপু পয়সা খরচা করতে একদম ভাল লাগে না।”

দুপিসবাবুর গিন্নি রমা সাদাসিধে মাটির মানুষ। রমা প্রচুর খাটতে পারেন বলে ভদ্রলোক এ যাত্রা বেঁচে গেলেন। রান্নাবান্না আর বাড়ির সব কাজই তিনি একা হাতেই করেন।

যাই হোক, তা মামার দেওয়া ওই দুটি মোহরের সাথে সাথে এল যে তৃতীয় বোঝাটি সেটা আর কিছুই নয় একটা রোগ। সেই রোগটাকে ইংরেজিতে বলে ‘ক্লেপ্টোফোবিয়া’, সোজা বাংলায় যেটা হল চোরের ভয়! সত্যি কথা বলতে কী মোহর দুটো পাওয়ার আগে দুপিসবাবুর বাড়িতে চুরি করার মতন কিছুই ছিল না। তাই মোহর পেয়ে একটা অজানা ভয় পেয়ে বসল ওনাকে – অত দামী জিনিসগুলোকে কোথায় রাখা যায়? অন্য দামী জিনিস তো বাড়িতে কিছু নেই। একমাত্র মেয়ে শোভা বিয়ে হবার আগে কয়েকদিন খুব টিভি টিভি করে নেচেছিল – তা দুপিসবাবু একদম পাত্তা দেননি। আজকে টিভি চাইছে, কালকে সিনেমা হল চেয়ে বসবে, তখন কী সেটাও কিনে দিতে হবে? গিন্নি ফ্রিজের কথা বললে বলেন, “কেন? টাটকা খাবার খেতে ভাল লাগে না? খাবার পুরনো করে খাওয়ার কী মজা বুঝি না বাপু!” তাই ফ্রিজও নাকচ। ভাগ্যিস গিন্নি গরিব-ঘরের মেয়ে তাই ওই সব বদ-অভ্যাস ছাড়াও কাজ চলে যায় তার। গরিব-ঘর থেকে বলেই তার গয়নাগাটিও তেমন কিছু নেই – যা ছিল তারও একগাছা চুড়ি আর সবসময় পরার একটা পাতলা হার ছাড়া সবই মেয়ে শোভাকে বিয়েতে দিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য এখানে বলে রাখা ভাল যে মেয়ে নিজেই প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে পাড়ার একটা ছেলেকে বিয়ে করল, নাহলে যে আরও কত কী দিত হত! মেয়ের ওই কীর্তিতে প্রথমে খুব চটেছিলেন দুপিসবাবু, কিন্তু তারপর মনে হল মেয়ের বিয়ে তো দিতেই হত, - আর দেখাশোনা করে দিলে দেনাপাওনা আর অনুষ্ঠানের যা খরচা হত সেটা ভাবতেই যখন শরীর খারাপ লাগছে তখন সত্যি খরচা করতে হলে বোধহয় প্রাণটাই বেরিয়ে যেত। মেয়ে মনে হয় সেটা বুঝেছিল যে বাবার ভরসায় থাকলে খরচার ভয়ে কোনদিনও বিয়ে হবে না তাই নিজেই ব্যবস্থা করে নিল। আর ভালই ব্যবস্থা, কারণ যাকে বিয়ে করেছে সে পেশায় ডাক্তার। মা বাবা কেউ নেই। নিজের ফ্ল্যাট আছে। আগের পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকার সময় গিন্নি রোজ মেয়ের সঙ্গে দেখে করতে যেতেন বা মেয়ে চলে আসত – কাছাকাছি বাড়ি বলে, কিন্তু নতুন পাড়াতে আসার পর যাতায়াত একটু কমে গেছে – বাসভাড়া লাগে বলে। মেয়ের অবশ্য বাচ্চা হবে বলে শরীরটা ভাল নেই তাই সেও তেমন আসতে পারে না। জামাই আবার আয়া রেখেছে তার দেখাশোনার জন্যে – সে তার পয়সা আছে যা খুশি করুক।

এবার আসল কথায় আসা যাক। মোহরগুলো পাওয়ার পর দুপিসবাবু সেগুলোকে কোথায় রাখবেন ভেবে অস্থির হয়ে উঠলেন। গিন্নি বললেন, “কেন? ব্যাঙ্কে কীসব লকার বাক্স পাওয়া যায় দামী জিনিস রাখার জন্যে। শোভা তো একটা নিয়েছে, তা তুমিও নিতে পারো।”

দুপিসবাবু ভেবে দেখলেন লকারের বুদ্ধিটা মন্দ না কারণ ওই মোহরগুলো পাওয়ার পর থেকে রাতে ওনার আর ঘুম হয় না। তা যেমন ভাবা তেমনি কাজ। দুপিসবাবু পরদিন সকালেই পাড়ার ব্যাঙ্কে গিয়ে হাজির হলেন। লকার খুলতে চান শুনেই ওনাকে জিগ্যেস করা হল, “আপনার কী এই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে?”

“না, তা তো নেই।”

“তাহলে আগে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না হলে লকার দেওয়া যাবে না।”

“অ্যাকাউন্ট তো আমি খুলতে চাই না, আমার অন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে।”

“তাহলে সেখানেই যান লকার খুলতে,” লোকটা মুখের ওপর বলে দিল। দুপিসবাবু রাগে গজগজ করতে করতে দুটো বাস বদল করে নিজের পুরনো পাড়ার ব্যাঙ্কে গিয়ে হাজির হলেন।

সেখানে তারাপদবাবুর সঙ্গে ওনার অল্পস্বল্প আলাপ আছে, মুখ চেনা আর কী। তারাপদবাবু লকারের রেজিস্টারটা দেখেন। দুপিসবাবুকে দেখে তারাপদবাবু একগাল হাসি হেসে বললেন, “আসুন আসুন মশাই! সেই যে বাড়ি পেয়ে এই তল্লাট থেকে চলে গেলেন তারপর তো দেখছি আমাদের ভুলেই গেছেন!”

দুপিসবাবু চমকে উঠলেন। বাড়ির কথাটা যখন সবাই জেনে ফেলেছে তার মানে মোহরের কথাটাও সবাই জানে নাকি? হেঁ হেঁ করে বললেন, “না,না, আপনাদের কাছেই তো আমার পেনসনের টাকা জমা পড়ে – আপনাদের ভুললে চলবে নাকি? এই দেখুন না এসে হাজির হয়েছি!”

“তা কী করতে পারি বলুন আপনার জন্যে?”

“আমি একটা লকার খুলতে চাই। আমার নতুন পাড়ার ব্যাঙ্ক বলল আমার যেখানে অ্যাকাউন্ট আছে সেখানে খুললেই নাকি সুবিধে, তা আপনি যদি আমার জন্যে একটা লকার খুলে দেন তো খুব ভাল হয়।”

“ও বাড়ি র সাথে গুপ্তধনও পেয়েছেন নাকি একঘড়া?” বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হো হো করে হেসে ফেললেন তারাপদবাবু।

দুপিসবাবুর মুখ সাদা হয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললেন, “না মানে, গিন্নি মানে...”

“আরে মশাই আমি জানি, গিন্নিদের সোনা কেনার বাতিক থাকে। কিন্তু লকার তো এখন খালি নেই।”

“লকার খালি নেই?”

“না, এখন লকারের খুব ডিমান্ড তো তাই পাওয়া খুব শক্ত। খালি তো নেইই, উল্টে লম্বা ওয়েটিং লিস্ট রয়েছে। তবে আপনি আমাদের চেনা লোক – আপনাকে ওয়েটিং লিস্টে রাখব না। পাঁচশো টাকা ডিপোসিট দিয়ে দিন। খালি হলেই লকার পেয়ে যাবেন।”

“পাঁচশো টাকা!” দুপিসবাবুর মাথায় বাজ।

তারাপদবাবু বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন দুপিসবাবুর কিপটেমির কথা, মনে পড়তেই বুঝতে পারলেন পাঁচশো টাকা বেশি বলা হয়ে গেছে – কিন্তু ধনুক থেকে তির আর বলে ফেলা কথা তো আর ফেরত নেওয়া যায় না – তাছাড়া নিজের ক্ষতি করেও লাভ নেই কারণ অন্য অনেকেই পাঁচশো টাকা দিতে রাজি।

তাই দুপিসবাবুর লকার ভাড়া নেওয়া আর হল না। মোহর দুটো ওনার কাছে ওনার বাড়িতেই পরে রইল আর বেড়ে চলল ওনার ক্লেপ্টোফোবিয়ার আকার। ওই কথাটা অবশ্য জামাইয়ের কাছ থেকে জানা। সেই মেয়েকে বলেছিল যে ওই অসুখের জন্যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। গিন্নির মারফত ওই কথা জানতে পেরে দুপিসবাবু ফুঁসে উঠলেন, “কী করবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ? মোহর রাখার জন্যে লকার দেবে? তা তো দেবে না শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি ঘুমের ওষুধ দেবে আর প্রতি ভিসিটে গাদা গাদা টাকা নেবে!”

গিন্নির রান্নাঘরে একটা মশলার কৌটায় ভরে রেখে দিলেন মোহর দুটো। মনে মনে ভাবলেন চোর যদি জানতেও পারে যে মোহর রান্নাঘরে আছে তা হলেও সব কৌটো খুঁজে দেখতে দেখতে রাত কাবার হয়ে যাবে। কিন্তু তাও ভাবনাচিন্তায় ওনার রাতের ঘুমটার বারোটা বেজে গেল। গিন্নি সারাদিন খেটেখুটে ক্লান্ত থাকেন তাই মুহূর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন কিন্তু দুপিসবাবু এপাশ ওপাশ করেন। আর রাতের বেলাতেই যত্তসব শব্দ – খুটখাট, ঠুংঠাং, খটখট লেগেই আছে। ভয়ে দুপিসবাবু রাতে বিছানার পাশে লাঠি নিয়ে শোওয়া শুরু করলেন। লাঠি নিয়ে শোয়ার প্রথম রাতেই ঘটনাটা ঘটে গেল। দুপিসবাবুর একটু তন্দ্রা মতন এসেছিল এমন সময় দুম করে একটা শব্দে ওনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আঁতকে উঠলেন উনি। পাশে গিন্নি অঘোরে ঘুমোচ্ছেন – ওকে ডেকে আর লাভ নেই ভেবে লাঠি হাতে উঠে পড়লেন দুপিসবাবু। শব্দটা মনে হয় রান্নাঘর থেকেই আসছে – একটু আশ্চর্যই হলেন। চোর কী করে জেনে গেল যে ও দুটো রান্নাঘরেই আছে? সারা বাড়িতে যে কোনও জায়গাতেই তো থাকতে পারে। পা টিপে টিপে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। অন্ধকারে কিছুই ঠিক করে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ দেখতে পেলেন ছায়ার মতন কী একটা নড়ছে – ব্যস আর যাবে কোথায়। অমনি লাঠি তুলে দিলেন এক ঘা, “ব্যাটা চুরি করবি!” পরক্ষণেই বিকট ক্যাঁও ম্যাঁওতে সব পাড়াপরশি ছুটে এল। পাশের বাড়ির সিকদার পরিবারের আদরের মেনিকে লাঠি পেটা করেছেন দুপিসবাবু! সিকদারবাবু আর তার গিন্নি দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তেড়ে এলেন, “সোনাইকে ভাল করে বললেই ও চলে যেত – ওসব লাঠি টাঠি দিয়ে মারার কী আছে? পশুদের প্রতি ভাল ব্যবহার করা উচিত জানেন না? অবলা প্রাণী বলে যা খুশি তাই করবেন?”

বেড়ালের নাম সোনাই আর তাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা দেখে দুপিসবাবুর গা পিত্তি জ্বলে গেল। উনি বললেন, “আমি ভেবেছিলাম চোর ঢুকেছে, আর ও তো এসেছিল চুরির উদ্দেশ্যেই!”

“আপনার বাড়িতে চুরি করার মতন কী আছে শুনি? সপ্তাহে তো আপনি দুপিসের বেশি মাছ কেনেন না। আমাদের সোনাই রোজ একাই দু পিস মাছ খায় জানেন?” সিকদার গিন্নি চিৎকার করে বলেলন।

দুপিসবাবুও কম জান না, উনিও চিৎকার করে বললেন, “সারা পৃথিবীতে কত লোক খেতে পায় না আর আপনি কিনা বেড়ালকে রোজ দুপিস মাছে খাওয়াচ্ছেন!”

সিকদার গিন্নি রাগে দুপিসবাবুকে এই মারেন তো সেই মারেন – অন্যরা সবাই কোনরকমে টেনে টুনে ওনাকে আর ওনার বেড়ালকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল। সেই থেকে সিকদার পরিবারের সঙ্গে দুপিসবাবুদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হল।

পাড়ার ক্লাবে খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে সিধুকে দেখে দুপিসবাবুর হঠাৎ একটা কথা মনে হল – একটা বন্দুক কিনলে কেমন হয়? সেদিন যদি একটা বন্দুক থাকত ওনার হাতে তাহলে নিশ্চয়ই সিকদার গিন্নি অত কথা বলার সুযোগ পেতেন না। সিধু পাড়ার মস্তান, ওর কাছে নাকি অনেক রকম অস্ত্র আছে। সবাই তাকে সমঝে চলে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সিধু ক্লাবঘর থেকে বেরতেই দুপিসবাবু পিছু নিলেন – সিধুকে ডাকলেন, “এই যে সিধুবাবু, শুনছ?” সিধু চট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, “কী চাই? আপনাকে তো চিনি বলে মনে হয় না।”

“আমরা নতুন এসেছি এই পাড়ায় – ওই যে ওই হলুদ গেট দেওয়া বাড়িটা আমার।”

“ও আপনিই তাহলে শচীদিদার বেড়ালটাকে আচ্ছা করে ঠেঙ্গিয়ে ছিলেন। শচীদিদা বলছিল বটে আপনাকে টাইট দিতে কিন্তু কী জানেন ওই বেড়াল জাতটাকে আমারও একদম পছন্দ নয় তাই আমি আপনার ওই ঠ্যাঙানিকে পুরোপুরি সাপোর্ট করি। তবে শচীদিদাকে বলবেন না যেন,” বলে খ্যা খ্যা করে হাসল সিধু।

“তা বলুন কী চান শচীদিদাকে টাইট দিতেও বলবেন না কিন্তু, দিদা মাস গেলে প্রচুর রান্নাবান্না করে খাওয়ায়।”

“না, না, আমি ওসব কিছু চাই না” বলে ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “আমাকে একটা বন্দুক জোগাড় করে দিতে পারবে?”

ওই কথা শুনে সিধুর চোখ গোল গোল হয়ে গেল, “বন্দুক নিয়ে কী করবেন দাদু? মেনি পুসিকে অক্কা পাওয়াবেন নাকি?”

“আরে না না, আমি ভাবছিলাম দিনকাল ভাল নয়...নিজের আত্মরক্ষার জন্যে...”

খুক খুক করে হাসল সিধু মস্তান। তারপর বলল, “জানেন তো দাদু বন্দুকে অনেক ঝামেলা। লাইসেন্স করো রে, হ্যান রে ত্যান রে। ভাল মাল পাওয়া যায় না আর পেলেও অনেক দাম লেগে যায়। লাইসেন্স না করলে আমাদের চলবে কিন্তু আপনাকে তো দাদু পুলিশ ধরবে – তার চেয়ে এই রকম একটা পকেটে রাখলে আপনার কোন ভয় ডর থাকবে না-“ বলে খ্যাচাং পকেট থেকে ইয়া বড় একটা ছুড়ি বার করে ফেলল। দুপিসবাবু ‘কোঁক’ করে ছিটকে তিন হাত পিছিয়ে গেলেন। থাক বাবা এই সব ডেঞ্জারাস লোকেদের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই ভেবে কোনোরকমে সিধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। আর অনেক দাম দিয়ে বন্দুক কেনার তো প্রশ্নই ওঠে না। তারপর থেকে সিধুর সঙ্গে দেখে হলেই সে বলে, “কী দাদু, কিনবেন নাকি একটা আট ইঞ্চি?”

দুপিসবাবু কোনোক্রমে হেঁ হেঁ করে পালিয়ে বাঁচেন। দিনে দিনে রোগটার মাত্রা বেড়েই চলেছে। দুপিসবাবু এখন বালিশের তলায় একটা দা নিয়ে ঘুমোতে যান, হাতের কাছে লাঠি, বিছানার তলায় দড়ি, কাঁচি ইত্যাদি। গিন্নি তো মেয়েকে আবার বলেই ফেললেন, “তোর বাবার মাথাটা সত্যি মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে- কী করব জানি না বাপু। ডাক্তার তো কিছুতেই দেখাবে না। সারাদিন শুধু কীভাবে চোরকে ধরবে, জব্দ করবে তাই নিয়ে চিন্তা করে চলেছে!”

সেটা অবশ্য ষোলো আনার ওপর আঠেরো আনা সত্যি। দুপিসবাবু বিকল্প অস্ত্রের কথা ভেবে চলেছেন। শীতকালে এক বালতি ঠাণ্ডা জল গায়ে ঢেলে দিলে চোর নিশ্চয়ই জব্দ হবে। গরমকালে গরম জল- না গরমজলে সমস্যা আছে। প্রতি রাতে তো আর জল ফুটিয়ে বসে থাকা যায় না, খরচেও পোষাবে না। এদিক ওদিক পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান নতুন নতুন অস্তর সন্ধানে। সব জোগাড় করে বাড়ির ছাদে সাজিয়ে রাখেন। রাতে ঘুম নেই, বাড়ির ভিতর এদিক সদিক করে বেড়ান – আর সেই করতে গিয়েই দ্বিতীয় ঘটানাটি ঘটে গেল।

অমাবস্যার দিনগুলোতে দুপিসবাবু একটু বেশিই সাবধান থাকেন কারণ ঘুটঘুটে অন্ধকারে চোরদের একটু বাড়তি সুবিধা হতে পারে। ওই রকম এক অমাবস্যার রাতে ওনার ঘুম আসছিল না। কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চমকে উঠলেন, বাড়ির পিছনের চাতালে কারা যেন বসে আছে – মনে হচ্ছে ফিসফিস করে কথা বলছে। সিঁদ কাটছে নাকি? আজকালকার চোররা তো মডার্ন জিনিস নিয়ে কাজ করে শুনেছেন- ঝামেলা যাতে কম হয়। এই সব ভাবতে ভাবতে দুপিসবাবু ছাদে উঠে গেলেন। পাঁচিলের উপর দিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখলেন। হ্যাঁ, দুই ছায়ামূর্তি তখনও বসে রয়েছে। দুপিসবাবু তার নবীনতম অস্ত্রটি পাঁচিলের ওপর তুলে ছায়ামূর্তি দুটির দিকে তাগ করে ছেড়ে দিলেন। পরক্ষণেই বিকট চিৎকার চেঁচামেচি। দুপিসবাবু তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলেন। পাড়ার লোক জড়ো হতে শুরু করেছে ততক্ষণে।

“ওরে বাবারে মেরে ফেলল রে” করে চিৎকার। বাড়ির পিছনের চাতালে প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে তাদের সারা গা মাথাময় লেগে রয়েছে শেয়ালকাঁটার বীজ। অস্ত্র যে এত অব্যর্থ লক্ষভেদ করেছে দেখে বড়ই খুশি হলেন দুপিসবাবু। ছাদের ওপর থেকে এক বালতি শেয়ালকাঁটার বীজ ফেলেছিলেন ওদের ওপর। অনেক পরিশ্রম করে বনবাদাড় ঘুরে সংগ্রহ করা শেয়ালকাঁটা।

ছেলেটার নাম নাকি ফেকলু! নামটা শুনেই বিরক্ত হলেন দুপিসবাবু। মা-বাবা কী করে ওই রকম নাম দেয়? ওই নামের জন্যেই মনে হয় চৌর্যিবৃত্তিতে নেমেছে! আর মেয়েটার নাম রিয়া। ওরা নাকি পাড়ারই ছেলে মেয়ে। ফেকলু প্রায় কেঁদে কেঁদে যা বলল তার সারমর্ম হল – ও আর রিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই প্রেম করছে। বাড়ির লোক জানে না বলে ওরা মাঝে মাঝে রাতের বেলা লুকিয়েই দেখা করে। রিয়া হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “মনিদাদু বুড়ো মানুষ, কানে ভাল শুনতেন না, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তেন তাই আমরা এই বাড়ির পিছনটা বেছে নিয়েছিলাম। বাড়িতে অন্য লোক এসেছে জানি কিন্তু ওনারাও তো বয়স্ক তাই আমরা ভেবেছিলাম খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়বেন। আলোও তো সব নিভানো ছিল। তা দুপিসদাদু যে এই রকম কাজ করবেন তা কী করে বুঝব?”

ওর কথা শুনে দুপিসবাবু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। মনে মনে ভাবলেন আহা ঢং দেখে আর বাঁচি না। প্রেম করার ইচ্ছে হয়েছে তো করো বাপু, কিন্তু আমার বাড়িতে কেন? মুখে বললেন, “আমি ভাবলাম চোর এসেছে তাই...”

একটা ছোকরা টিটকিরি কাটল, “কী দাদু বাড়িতে ব্ল্যাক-মানি রেখেছেন নাকি যে সবসময় চোরের ভয়?” আরেকজন বলল, “বেড়াল থেকে সোজা মানুষ মারায় নেমে পড়লেন দাদু? মাঝারি সাইজের কিছু একটা ট্রাই করলে ভাল করতেন না?”

উপস্থিত লোকজন মোটামুটি দুদলে ভাগ হয়ে গেল – এক দল বলে, “বেশ করেছে প্রেম করেছে! এই তো প্রেম করার বয়স, এখন করবে না তো কখন করবে, দুপিসবাবুর মতন বয়স হলে?” আরেক দল বলে, “বাড়িতে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে অন্যের বাড়িতে গিয়ে প্রেম হচ্ছে – যত্ত সব লুজ ক্যারেকটার! ভাল হয়েছে শাস্তি হয়েছে – পুলিশে দিলেও কম শাস্তি ছিল!”

দ্বিতীয় দলের যুক্তি শুনে দুপিসবাবু বেজায় খুশি হলেন, বললেন, “ওদের ভাগ্য ভাল যে বাগানের বোলতার বাসায় ঢিল মেরে দিইনি। তাহলে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হত।“

প্রথম দল সেই শুনে হাঁ-হাঁ করে উঠল, “তা হলে আপনাকে খুনের দায়ে জেলে দেওয়া হত!”

রিটায়ার্ড জজ মিস্টার সেন রায় দিলেন, “না, ট্রেসপাসিং মানে অনধিকার প্রবেশ দণ্ডনীয় অপরাধ – এখানে ফেকলু-রিয়াই দোষী।”

ততক্ষণে কিছু সহানুভূতিশীল লোকজন ফেকলু আর রিয়ার গা মাথা থেকে শেয়ালকাঁটা ছাড়িয়ে দিয়েছে। রিয়ার মা-বাবা খবর পেয়ে পড়ি-কি-মরি ছুটে এসে মেয়েকে টেনে নিয়ে চলে গেল। যাবার সময় দুপিসবাবুকে যে চাহুনিটা দিয়ে গেল তাতে মহাভারতের যুগ হলে তাঁর অনায়াসেই মৃত্যু হতে পারত। দুপিসবাবু মনে মনে ভাবলেন কী দিনকাল পড়েছে! আমার বাড়িতেই লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবে তোমাদের মেয়ে আর চোখরাঙ্গানি কিনা আমাকেই খেতে হবে! সব ওই সব সিনেমা আর টিভি দেখার ফল!

রিয়া চলে যেতে ফেকলুও ধীরে ধীরে সরে পড়ল। যারা মজা দেখতে জড়ো হয়েছিল তাদেরও মনে হয় খেয়াল হল যে অনেক রাত হয়ে গেছে - দুপিসবাবু আর প্রেমিক যুগলের পিন্ডি পরের দিন চটকালেও চলবে, তাই তারাও তখন একে একে বাড়িমুখো হল। দুপিসবাবু দরজা টরজা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে শুলেন। গিন্নি গজগজ করতে লাগলেন, “রাতবিরেতে কী সব ঝুটঝামেলা ডেকে আনলে। কালকে আমাকে সকাল সকাল ডেকে দিও। শোভার ডাক্তার ওর সিজারের ডেট দিয়েছে। তোমার তো চোখে ঘুম নেই আমাকে বাপু সকাল সকাল ডেকে দিও। কতবার বলেছি একটা অ্যালার্ম ঘড়ি কিনে দিতে ...” বলতে বলতে রমা ঘুমিয়ে পড়লেন।

পরদিন ভোরবেলা গিন্নিকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে দুপিসবাবু মর্নিংওয়াকে বেরোলেন। ঘন্টাখানেক বাদে ফিরে এসে দেখলেন ছোকরা মতন একজন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চমকে উঠলেন দুপিসবাবু। এ আবার কে? মোহরের কথা জেনে ফেলেছে নাকি? দুপিসবাবুকে দেখতে পেয়ে সে এগিয়ে এসে বলল, “নমস্কার আপনিই কি গতরাতে প্রেমিক যুগলের ওপর শেয়ালকাঁটার বৃষ্টি করেছিলেন?”

“আপনার পরিচয়?”

“আমি ফেকলুর মামাতো দাদা। দৈনিক মশলা কাগজের প্রতিনিধি। আপনাকে কাল রাতের ঘটনাটার সম্পর্কে দুয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।”

দুপিসবাবু মাথায় বাজ। খবরের কাগজের লোকজনও এসে হাজির হয়েছে। আর বাঁচানো গেল না মোহরদুটোকে। মুখে শুধু বললেন, “তোমার ভাইয়ের ভাগ্য ভাল যে শুধু শেয়ালকাঁটা ফেলেছি, তুমি ওই ঘটনা নিয়ে কাগজে একটা কথাও লিখলে তোমার গায়ে বিছুটি দিয়ে দেব! যত্তসব!”

“তাহলে কি স্যার আপনি বিকল্প অস্ত্রের অস্ত্রাগার করেছেন? বিছুটি অস্ত্র – অসাধারণ হবে স্যার – ভেবে দেখুন স্যার প্লেনে করে শত্রুদের শিবিরের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হল – ব্যস ওদের আর বন্দুক তোলার ক্ষমতা থাকবে না...” রিপোর্টার ছোকরা হয়তো আরও বকবক করত কিন্তু দুপিসবাবু হাতের লাঠিটা উঁচু করতেই পালিয়ে বাঁচল।

ঘরে ঢুকে গিন্নিকে দেখতে পেলেন না। মেয়ের কাছে চলে গেছেন তিনি। খুব খিদে পেয়েছিল দুপিসবাবুর। মুড়ির টিন থেকে কিছুটা মুড়ি বার করে খেলেন আর এক গেলাস জল। তারপর খবরের কাগজ পড়ার জন্যে ক্লাবের দিকে রওনা হলেন। বাড়ি খালি রেখে যেতে মনটা একটু খুঁতখুঁত করছিল কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল দিনেরবেলা এক গাদা কৌতূহলী প্রতিবেশীদের নজর এড়িয়ে চোরের ঢোকা মুশকিল।

খবরের কাগজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে পাড়ার পার্কে একটা বেঞ্চে বসলেন দুপিসবাবু। রমা তো মনে হয় সন্ধ্যের আগে ফিরবে না। একবার মনে হল কে জানে কেমন আছে মেয়েটা – কিন্তু ফোন নেই বাড়িতে তাই কোনও নম্বরও জানা নেই তাঁর। যাই হোক পার্কে বসে বাচ্চাদের খেলা দেখতে বেশ ভাল লাগছিল। পাশে বসা দুই বৃদ্ধ বকেই চলেছেন, দুপিসবাবুর কানে যাচ্ছিল কথাগুলো। তাদের মধ্যে একজন বলল, “ছেলেটাকে নিয়ে কী করব ভেবে পাচ্ছি না। জুয়ার নেশা ধরেছে, এমন নেশায় পেয়েছে যে বউমার গয়না বিক্রি করেও খেলছে”। দুপিসবাবু চমকে উঠলেন। আরে এই সহজ কথাটা আগে মনে আসেনি কেন? মোহরদুটকে বিক্রি করে টাকাটা ব্যাঙ্কে রাখলেই তো হয়। ঘরে ওই আপদদুটো থাকলে কোনোদিনও ঘুমোতে পারবেন না। সোনার দাম বাড়ে ঠিকই কিন্তু ব্যাঙ্কেও তো সুদ পাওয়া যায়। দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে দুপিসবাবুর মাথা ঝনঝন করছিল – নাঃ ওই দুটোকে বেচে দেওয়াই ভাল। দুপিসবাবু ঠিক করলেন গিন্নি ফিরে আসার আগেই বউবাজারে গিয়ে মোহর দুটোকে বিক্রি করে দিয়ে আসবেন। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। হুড়মুড় করে বাড়িতে ঢুকে রান্নাঘরে গিয়ে কৌটো কটা সব নামিয়ে মোহরের কৌটটা খুললেন দুপিসবাবু। আর খুলেই ৪৪০ ভোল্টের শক খায়ার মতন শক খেলেন। কারণ কৌটোতে মোহর নেই! রান্নাঘরের সব ডিবে খুলে দেখলেন কিন্তু মোহর পেলেন না। অথচ ওনার স্পষ্ট মনে আছে মোহর কোন কৌটোয় রেখেছিলেন। তাহলে কী গত রাতের গোলমালে কেউ...না, যতদূর মনে পড়ছে ওনার, সবাই বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল, ভিতরে তো কেউ ঢোকেনি। তাহলে? কোথায় যেতে পারে? সারা বাড়িময় মোহর দুটোকে খুঁজতে লাগলেন দুপিসবাবু।

***

রাত আটটা নাগাদ যখন গিন্নি ফিরলেন তখন বাড়ির অবস্থা শোচনীয়। সমস্ত জিনিস এদিক ওদিক ছড়ানো। ঘরে ঢুকেই আঁতকে উঠলেন গিন্নি, “ওমা বাড়ির একি দশা! কী হয়েছে? চোর এসেছিল বুঝি?”

দুপিসবাবু মুখ কালো করে একটা চেয়ারে বসে ছিলেন, বললেন, “তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। যাই থানাতে রিপোর্টটা করে আসি। মোহর দুটো চুরি গেছে। মনে হয় কাল রাতের ঝামেলাতেই কেউ ওগুলো সরিয়েছে। কাল রাতে যারা যারা এসেছিল তাদের নামের একটা লিস্ট করেছি মনে করে করে।”

“অ, মোহর খুঁজতে এত কিছু! তা মোহর হারিয়েছে বলে আর পুলিশের কাছে যেতে হবে না বাপু। ওই দুটো কোথায় আছে আমি জানি। আমিই তো আজ সকালে ওগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম। যমজ হয়েছে গো তোমার মেয়ের। ডাক্তাররা আগেই বলেছিল কিন্তু বলা তো যায় না। একটা ছেলে, একটা মেয়ে – ঠিক যেন রাজপুত্র-রাজকন্যা। ওই দুটো মোহর দিয়েই তো ওদের মুখ দেখলাম। কী সুন্দর ফুটফুটে শিশু। মেয়েকে তো ওই দু-গাছি হার ছাড়া বিয়ের পর আর কিছুই দিতে পারিনি। তোমার পয়সা পয়সা বাতিকের জ্বালায় সে বেচারা পালিয়ে বিয়ে করল। তাহলে কী হবে জামাই আমাদের হিরের টুকরো ছেলে। আমাকে ট্যাক্সি করে পৌঁছে দিয়ে গেল এই মাত্র। ওই দুটো তো রান্নাঘরের কৌটতে পচছিল। তুমি রাতে ঘুমোতে পারছিলে না – সারাদিন ছাদে ছাইপাঁশ জমা করছিলে বলে আমি বিদেয় করে দিয়েছি। ওদের লকার আছে ওরা সামলাক বাপু!”

দুপিসবাবুর মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোল না। মাছের মতন শুধু মুখ খুলছিল আর বন্ধ হচ্ছিল কিছুক্ষণ খপ খপ করে। তারপর প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়লেন। অনেক কথাই বললেন কিন্তু গিন্নির অভ্যেস আছে এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেওয়ার তাই কোনও ফল হল না। রান্না করে খেয়ে দেয়ে গিন্নি ঘুম দিলেন। দুপিসবাবু সারা রাত জেগে থাকার জন্যে প্রস্তুত হতে যাচ্ছিলেন হঠাৎ মনে পড়ল তার তো দরকার নেই। গুম হয়ে বসে রইলেন কিছুক্ষণ, তারপর বালিশের তলা থেকে দা-টা সরিয়ে অনেক দিন পর নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোলেন তিনি।

পরদিন সকালে উঠে দেখলেন গিন্নি হাসপাতালে যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছেন। দুপিসবাবু তাকে বলেলন, “আজ তোমার সঙ্গে আমিও যাব!”

তাঁর ঘুম কেড়ে নেওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের একবার চোখে দেখা দরকার বৈকি!