ব্ল্যাক আইল্যান্ড - অনুষ্টুপ শেঠ

কল্পবিজ্ঞানের গল্প

অলংকরণ - প্রতিম দাস

“হেই! দেখবে এসো!”

সাদা ল্যাব কোট, মুখে নীল মাস্ক লাগানো তিয়া নিজের মাইক্রোস্কোপ থেকে উঠে এল। আসাহি একটা আদ্দিকালের কাঠের দেয়ারে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে, ওর সামনের ডিভাইসটার যতগুলো এদিক ওদিক বেরোনো হাত পা, ততগুলোই প্রায় স্ক্রিন। ল্যাবের সেরা অ্যানালাইজার মেশিন ওটা। ঠিক যেমন আসাহি ল্যাবের সেরা অ্যানালিস্ট। এতটুকুও জৈব পদার্থ পেলে সেটা থেকে খুব অল্প সময়েই নিখুঁতভাবে ওরা বার করে ফেলতে পারে জিনিসটা কোন প্রাণীর কোন শ্রীঅঙ্গ থেকে এসেছে, এমনকী প্রাণীটার তখনকার শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধেও অনেক কিছু বলে দিতে পারে ম্যাজিকের মত।

ম্যাজিক অবশ্য নয়, এসবই আসাহির নিজের লেখা প্রোগ্রামের কেরামতি। প্রোগ্রামগুলো প্রোবাবিলিস্টিক মডেল কাজে লাগিয়ে একের পর এক বৈশিষ্ট্য বার করে এনে জেনেটিক ম্যাপিং করে ফেলে লহমায়। ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণই সেন্সিটিভ আসাহি, কাউকে নিজের মেশিনে হাত তো লাগাতে দেয়ই না; তা নিয়ে কিছু আলোচনাও করে না কারো সঙ্গে। ফলে দেমাকী আর স্বার্থপর বলে কিছুটা বদনামই আছে ওর। একমাত্র মুম্বই থেকে আসা তিয়াশার সঙ্গেই ওর একটু বন্ধুত্ব রয়েছে বলা যায়। তিয়া খুব ভালো স্টুডেন্ট বলে, বা ওকে অনেক সাহায্য করে বলে, অথবা ওর প্রোগ্রাম নিয়ে কিছু খোঁচায় না কখনো বলে।

এখন স্ক্রীনে একটা সাদা কালো জ্যামিতিক প্যাটার্ন ঘুরছে ধীরে ধীরে। তিয়া জানে ওটা কী। গত কয়েকদিন ধরে ও-ই বেসিক অ্যানালিসিসগুলো করে দিয়েছে আসাহির আনা স্যাম্পলটার। অদ্ভুত রবারের মত একটা কীসের টুকরো। সত্যি বলতে কী, আসাহি ওকে দিতে চায়নি প্রথমে। বায়োস্ট্যাটিস্টিশিয়ান হলেও, এতদিনের অভিজ্ঞতায় এগুলো আসাহি নিজেই করে নিতে পারে বইকি।

শেষ অবধি আসাহি নিজেই এসেছিল ওর কাছে।

“তিয়া, ভুল করছি মনে হয়, ঠিক শিওর নই। একটু হেল্প করবে প্লিজ?”

হ্যাঁ, এটাও একটা কারণ সম্ভবত আসাহির তিয়াশাকে পছন্দ করার। আসাহির বয়েস চল্লিশের ওপারেই হবে। জাপানীদের অবশ্য বয়েস বোঝা যায় না, তবে চতুর্দিকে যেমন ছিপছিপে ফিট চেহারা দেখছে এখানে এসে অবধি, সে তুলনায় আসাহি বেঢপ। মাথার চুল কালো হলেও পাতলা হয়ে এসেছে, নধর একটা ভুঁড়ি আছে, মোটা মোটা নিকোটিনের দাগ লাগা আঙুলগুলো খুব ক্ষিপ্র বা সূক্ষ্ম কাজের উপযুক্ত নয়। সেদিক দিয়ে তিয়ার সরু লম্বা সার্জনের আঙুল আর কমবয়েসের ধৈর্য আর স্টেডি নার্ভ অনেক বেশি উপযুক্ত এসব জটিল কাজ করতে। তাছাড়া, তিয়া মলিকিউলার বায়োলজির লোক, এই কাজগুলো ও-ই বেশি ভালো পারে।

তিয়া মূল কাজ করে দেওয়ার পর থেকে ঐটে নিয়েই পড়ে আছে আসাহি।

এখন সেই স্ক্রীনে একটা সাদা কালো জ্যামিতিক প্যাটার্ন ঘুরছে ধীরে ধীরে। সমানে তার মধ্যে একটা করে লাল বিন্দু চমকে উঠছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বীপ বীপ আওয়াজ হচ্ছে একটানা।

ওটা অ্যানোমলির নির্দেশনা। কিছু একটা, যা যেমন হওয়া উচিত তেমন নয়। কিছু একটা, যা যন্ত্রের হিসাবে মিলছে না।

“দেখছো? কী মনে হচ্ছে?”

মূল কাজ করে দিলেও, জিনিসটা যে কী তা কিছুই জানে না তিয়া। অগত্যা নাক মুখ কুঁচকে, চোখ সরু করে ঘুরন্ত প্যাটার্নটা লক্ষ করতে থাকে। যন্ত্রটা নিয়মিত ভাবে বীপ বীপ করেই যায়।

“এত অ্যানোমলি, স্বাভাবিক কিছু নয়। তাই না?”

খুশি হয় আসাহি, মাথা নাড়ে।

“এইজন্য তোমায় দেখালাম ডেকে। অদ্ভুত না? সন্দেহজনক ব্যাপার বুঝলে, ভালো করে দেখতে হবে।”

তিয়ার ফেরার সময় হয়ে গেছে, নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে থাকে সে।

“যাবে না?”

“উঁ? হুম্‌! আরেকটু। তুমি ওয়েট কোরো না।”

তিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ও জানে আসাহির স্বভাব, আজ সারারাত হয়তো ঐ নিয়ে পড়ে থাকবে ল্যাবে।

বায়োসায়েন্স ও বায়োটেকনোলজি সেন্টার থেকে ষ্টেশন অবধি হেঁটেই যায় তিয়া। মিজো লাইনের ট্রেনে উঠে গা এলিয়ে দিল ও। মাত্র বছরখানেক হল সে এসেছে এ দেশে। মন বসে গেছে এর মধ্যেই। কাজের চাপ প্রচণ্ড যদিও। লোকজনও তেমনই কাজপাগল। জাপানের এই ইন্সটিটিউটটি ওর পোস্ট ডক কাজের জন্য ওর নিজের প্রথম পছন্দ ছিল, তাই স্কলারশিপ পাওয়ার পর আর একবারও ভাবেইনি এত দূর পাড়ি দিতে।

***

যা ভেবেছিল তাই, আসাহি সারারাত কাজ করেছে ওই নিয়ে। পরদিন তিয়া আর লুইজি এসে দেখে চেয়ারেই হাত পা ছড়িয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে নাক ডাকাচ্ছে সে। পিটার এসে ধমকে ধামকে তাকে ডে রুমে শুতে পাঠাল, তবে ওরা একটু শান্তিতে নিজের কাজে মন দিতে পারল।

বিকেল নাগাদ আসাহি আবার ফিরে এল। ঘুমিয়ে ফ্রেশ, সেই সঙ্গে চরম উত্তেজিত।

“আরে তোমরা সব ফেলে এদিকে দেখবে এসো।”

সব শোনার পর ওদেরও মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল বইকি। আজকের দিনে, এই সময়ে, একটা একদম নতুন প্রাণী! একটা নতুন স্পিসিস! ভাবা যায়!

নেহাত ছোট সাইজের কীট পতঙ্গও নয়, মার্কোসের যন্ত্রের আন্দাজ বলছে তিন থেকে চার ফুট দৈর্ঘ্য।

এবং সম্পূর্ণ আলাদা ডি এন এ গঠন।

নতুন প্রাণী। আবিষ্কারের যে কী মূল্য এখন, ওরা জানে।

“কোথায়? কোথা থেকে পাওয়া?”

আসাহি কেমন ঘোরের মধ্যে বসেছিল। পিটারের প্রশ্নে ঘুরে তাকাল,

“অরিজিনালটা কোথা থেকে পাওয়া? সে তো বলা যাবে না।”

এই শুরু হল ওর স্বভাবসিদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া। পিটার শ্রাগ করে নিজের সীটে ফিরে গেল। লুইজি যেতে গিয়েও ফিরে জিজ্ঞাসা করল,

“কী করবে এবার?”

আসাহি জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল, “জানাতে হবে।”

লুইজি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ। এক্সপিডিশন টীম যাবে, খুঁজে বার করবে।”

আসাহি আবারও ঠোঁট ভেজাল জিভ দিয়ে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা অস্বস্তিতে আছে।

“বলছি...”

পিটারও নিজের সীট ঘুরিয়ে চেয়ে আছে। তিয়াশা ঠিক বুঝছে না কী ব্যাপারটা হচ্ছে।

“বলছি...আবিষ্কারের ক্রেডিটটা নিজেরাই নিলে হ’ত না?”

“মানে?”

তিনজনে প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠেছিল। আসাহি হাতের ইশারায় গলা নামাতে বলে বলল, “এটা...আমি... অথরিটিকে জানাতে চাইছি না। মানে, পারব না। মানে, ব্যাপার আছে, সে বাদ দাও। কিন্তু আমরা চারজনে গিয়ে যদি জন্তুটাকে ধরে আনতে পারি, বুঝতে পারছ? কতখানি নামডাক হবে আমাদের?”

তিয়াশা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিল। পিটারই সবার আগে মাথা ঠাণ্ডা করে ব্যাপারটা বুঝে নিতে চাইল, “হবে, সেটা হবে। কিন্তু ধরে আনব কোথা থেকে? কোথা থেকে পেয়েছ তাই তো বলছ না তুমি!”

“কীভাবে পেয়েছি পুরোটা বলবও না। কিন্তু এই চামড়ার টুকরোটা কোথা থেকে এসেছে সেটা বলতে পারি। সেখানেই খুঁজতে যেতে পারি আমরা।”

“কোথায়?”

ওদের সবার চোখে চোখ বুলিয়ে, গলা আরো খাদে নামিয়ে বলল আসাহি, “আমার দেশের বাড়ির কাছের একটা জায়গা থেকে। আমরা ওটাকে বলি ‘ব্ল্যাক আইল্যান্ড’। উইকেন্ডে গেছিলাম তো, তখনই নিয়ে এসেছি।”

***

স্পীডবোট নিলে তাড়াতাড়ি হত, কিন্তু আওয়াজও হত। ওরা কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়নি। এরকম একটা দুঃসাহসিক অভিযানে চট করে বেরিয়ে যাওয়া যায় না, কিন্তু আসাহির উত্তেজনা ক্রমশ ওদেরকেও গ্রাস করেছিল। সে তো পারলে সেই রাত্রেই বেরিয়ে যেত তার দেশের বাড়ির উদ্দেশে, পিটার ধমক ধামক দিয়ে দুটো দিন নিয়েছিল মালপত্র কেনাকাটা, প্ল্যানিং এসবের জন্য।

পিটারের গাড়িতে ওরা চারজন, ব্যাকপ্যাক একটা করে, পিটারের শখের বন্দুক। শেষেরটা নিয়ে লুইজি দোনামনা করছিল, পিটার বেশ কড়া গলায় ওটা ছাড়া ও অচেনা জায়গায় যাবে না এবং ওর লাইসেন্স-ও আছে, জানিয়ে দেওয়ায় আর কথা বাড়ায়নি।

কথা না বাড়ানোর কারণটা তিয়াশা জানে। লুইজি ওকে আড়ালে যে ছোট্ট কোমরে গোঁজা জিনিসটা দেখিয়েছিল, সেটার নির্ঘাৎ লাইসেন্স নেই। হংকং থেকে আসা লুইজির অনেক কিছুই যে চোরামার্কেটে কেনা, সেটা ও নিজেই বলে থাকে।

একমাত্র তিয়াই সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। কিন্তু দলে থাকবে, সেটাই ভরসা।

গাড়িতে চিতা শহরের মূল মোড়টায় পৌঁছতে তেত্রিশ মিনিট মত লাগল। সেখান থেকে আসাহির বাড়ি আর মিনিট পাঁচেক। কেউ ছিল না, তালা খুলে ঢুকল ওরা। নৌকোর ব্যবস্থা হয়ে গেলে, আজ রাত্রেই ওদের অভিযান। নৌকো ভাড়া করার জন্য আসাহি পিটারকে যেতে বলল। ওকে লোকে চেনে, তাই নাকি অসুবিধে হবে। দাঁড় বাওয়া নৌকো, পাঁচ-ছ'জনের মত জায়গা হয় যেন।

“বলবে না কিন্তু ব্ল্যাক আইল্যান্ডে যাব। তাহলে আর ভাড়া দেবে না ব্যাটারা!” আসাহি সাবধান করে দিয়েছিল।

পিটার ওয়াং টোকিওর বাসিন্দা। ও দিব্যি টুরিস্ট ভাব করতে পারবে, আবার জাপানী বলতে বুঝতেও পারবে।

“কেন? কী আছে ওখানে?”

“আরে ধুর! যত কুসংস্কার এদের। গেলে নাকি পাপ হয়, ওটা নাকি শয়তানের হাওয়া খাওয়ার জায়গা। যত্ত গেঁয়ো ভূত আর কী!”

“দেখো গিয়ে, তুমি হয়তো ঐ ভূতের ডি এন এ ই কুড়িয়ে এনেছ!” ঠাট্টার গলাতেই বলেছিল লুইজি। আসাহির অত চটে যাওয়ার মত মোটেই কিছু ছিল না তাতে।

যাইহোক, আজ খানিক আগে, ছোট শহরটা ঘুমিয়ে পড়ার পর ওরা নিঃশব্দে, নির্বিঘ্নে যাত্রা করেছে। পিটার আর লুইজি দাঁড় বাইছে, আসাহি হাল ধরে বসে আছে। তিয়ার কাজ উলটোমুখে বসে পারের দিকে নজর রাখা। ঘাড় ঘুরিয়ে বার বার তার চোখ চলে যাচ্ছে অবশ্য দূরে আকাশের গায়ে কালো পাথুরে ছোট্ট দ্বীপটার দিকে। গাছপালাও নেই মনে হচ্ছে, ন্যাড়া কিছু এবড়ো খেবড়ো পাথর কেউ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে যেন অবহেলায়।

এই নিয়েও ভয় পায় এরা। সত্যি! গেঁয়োই বটে।

নৌকাটা পাথুরে আঘাটায় কীভাবে যে ঠিকঠাক ভিড়িয়ে দিল সেটা পিটারই জানে। লাফ মেরে বেরিয়ে পড়ল ওরা সবাই। পাথর টপকে টপকে উঠে এল দ্বীপের মূল ভূখণ্ডে। প্রায় পুরোটাই ন্যাড়া জায়গা, তবে দূরে কিছু গাছের সারি শুরু হয়েছে। অন্ধকারে ঝুপসি আউটলাইন দেখা যাচ্ছে খালি।

লুইজি ওর ব্যাকপ্যাক থেকে বাইনোকুলার বার করে দেখছিল। ওর শখের জিনিস ওটা, রাত্রেও দেখা যায় স্পষ্ট। ঘুরে ঘুরে দেখছিল, পাশ থেকে আসাহি ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল,

“কী বুঝছ?”

“কী বুঝব? কিছুই তো নেই!”

এবং এইটা শুনে তিয়া বুঝতে পারল, ওর এত অস্বস্তি হচ্ছিল কেন দ্বীপে নেমে অবধি।

জনমানবহীন জঙ্গলেরও কিছু নিজস্ব শব্দ থাকে। সে যত রাতই হোক না কেন, থাকে। পোকামাকড়ের ডাক, গাছে ঘুমোনো পাখিদের মাঝে মাঝে নড়েচড়ে ডানা মেলা, হাওয়ায় গাছের পাতা নড়া, নিশাচর পশুদের চলাফেরার আওয়াজ, দূর থেকে প্যাঁচার ডাক, মাথার উপর বাদুড় উড়ে যাওয়া – কিছু না কিছু থাকেই।

এখানে কিচ্ছু নেই।

একেবারে নিপাট, নিরেট স্তব্ধতা।

হাওয়াটুকুও চলছে না যেন। দমবন্ধ হয়ে আসছিল ওর।

“দাঁড়িয়ে থেকে কী হবে, এগোই আমরা? হয়তো ভিতরদিকে আছে আমরা যা খুঁজছি।”

উত্তেজনাটা ফিরে এল আবার। সত্যি কি ওরা এক অভূতপূর্ব প্রাণী আবিষ্কার করতে চলেছে? বড় দড়ি আছে পিটারের ব্যাকপ্যাকে। পেলেই…

বেশি ভেবে ফেলছে তিয়া। আগে তো খুঁজে পাওয়া যাক!

ঘন্টাখানেক পরে দ্বীপের মাঝামাঝি ঐরকমই আরেকটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েছিল ওরা। কথা বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না কেউ, শেষে তিয়াই হতাশ গলায় মুখ খুলল,

“এইবার?”

জবাব না দিয়ে পিটার বন্দুকটা হাত থেকে ফেলে ধপ করে পা ছড়িয়ে বসেই পড়ল মাটিতে।

এতক্ষণ ধরে ছোট্ট দ্বীপটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছে ওরা। সমস্ত পাথরের আড়াল, গুহা, গাছপালা। নতুন প্রাণী চুলোয় যাক, কোনো প্রাণীই নেই এই দ্বীপে। স্রেফ কিচ্ছু না। একটা পিঁপড়েও না।

এরকম অদ্ভুত নিষ্প্রাণ অঞ্চল কী করে হতে পারে তাই মাথায় ঢুকছে না ওদের কারো। সমুদ্রের মধ্যে, এত মাছ, কিছু না হোক সীগালরা বাসা বাঁধতই তো!

কিন্তু নেই, কিচ্ছু নেই। কিচ্ছুটি নেই।

মনে মনে একটা যুক্তি খাড়া করে এর তিয়া। বাসা যে বাঁধবে, সেরকম গাছই বা কই!

হ্যাঁ, এও আরেক অদ্ভুত এ দ্বীপের। কোনো চেনা গাছ অবধি চোখে পড়ল না। দ্বীপের মাঝ বরাবর খুব অল্প যা আছে তা সমস্ত একটা অজানা অচেনা ধরনের কম উচ্চতার গাছ, খানিকটা পেয়ারার মত, নরম নরম ডাল আর বিশাল বিশাল বড় পাতা। তিয়ার এক হাতের চেয়েও বড়। রবারগাছের পাতার মত মোটা, অশ্বত্থের পাতার মত টিকিওলা। ডালাপালাগুলো এত গা-ছাড়া গোছের, যে ওতে হয়তো বাসা বাঁধা যায় না বলেই সীগালরা আসেনি।

এইটা মুখ ফুটে বলে ফেলে খুবই বোকা বনল অবশ্য। এক ধমক দিয়ে উঠল আসাহি,

“সীগালরা মাটিতে, পাথরের খাঁজে খোঁজে বাসা করে। গাছে নয়!”

এবার তিয়াও বসে পড়ল মাটিতে।

লুইজি গভীর ভ্রূকুটি করে নিজের হাতের পাতা দেখছিল। মাথাটা এবার একটা ঝটকা দিয়ে তুলে বলল,

“আচ্ছা...এমন নয় তো...”

কথাটা বলতে ওর আটকাচ্ছিল মনে হয়। পিটার তাড়া দিল,

“এমন কী নয়?”

“এমন নয় তো, যে... যাকে আমরা খুঁজছি, সে... ডাইনোসর গোত্রের কিছু, ভয়ানক মাংসাশী? সমস্ত পাখি, ছোট জানোয়ার, পোকা মাকড় সব খেয়ে ফেলেছে, কিছু এলেই খেয়ে ফেলে, তাই আর কিছু নেই?”

সবার চোখ আসাহির দিকে ঘুরে গেল। প্রশ্নটা করার আর দরকার হল না।

“আচ্ছা, আচ্ছা, বলছি কীভাবে পেয়েছি। মানে, আমার কিছু ছোটবেলার দোস্ত আছে এখানে, তারা... ঠিক সৎপথে ব্যবসা করে না। তাই যা শুনছ তা গোপন রাখতে হবে। তো, তাদের মধ্যে একজনের লুকোনোর দরকার ছিল, পুলিশ খুব পিছনে পড়ে গেছিল, শেষ অবধি ঠিক হয়েছিল এই দ্বীপে এসে লুকোবে। এই আমরা যেমন এলাম, রাত্রে, লুকিয়ে।”

“তারপর?”

“তারপর, পরদিন কাকভোরে সে নৌকো ফেরত এল। অন্যরা চোখ রাখছিল পালা করে, মানে যতই কুসংস্কার হোক, এত বছর ধরে আমরা দ্বীপের নামে অমন সব কথা শুনেছি তো, তা মানে, ওক্কে, এটা কিন্তু পরে আমি আর স্বীকার করব না, তবে আমারও এদের ব্যবসার ভাগ আছে। সেদিন ভোরে আমিই আউটহাউস থেকে চোখ রাখছিলাম আর কী। পুরো আসার আগেই দেখি রাঊল দাঁড় বাইতে বাইতে ঢলে পড়ল। সবাইকে ডেকে, আরেকটা নৌকো নিয়ে গিয়ে তাকে কোনোরকমে টেনেটুনে পাড়ে আনার পনেরো মিনিটের মধ্যেই সে মারা যায়। হার্টফেল করেছিল সম্ভবত।”

তিয়া আঁতকে ওঠে, “অ্যাঁ!”

“কেন চলে এল, কী ব্যাপার, সেসব কিছু বলেনি?” পিটার জিজ্ঞাসা করে।

“বলেছিল। প্রলাপ বকছিল। যতক্ষণ বেঁচেছিল জড়িয়ে জড়িয়ে খালি বলেছিল, ‘পালাও, নইলে দ্বীপের প্রেতাত্মারা খেয়ে ফেলবে।' পুলিশের ভয়ে আমরা আর এ নিয়ে কথা বাড়াইনি। চুপচাপ সৎকারের ব্যবস্থা করতে বলে এসেছিলুম তার ভাইকে।”

তিয়ার বুক ধড়ফড় করছিল। আসাহিটা কী সাংঘাতিক লোক। এগুলো আগে জানলে...

“কিন্তু ঐ জিনিসটা পাওয়ার সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?”

লুইজি আসল কথা থেকে মন সরায় না।

“ওটা রাঊলের, মানে ঐ মৃত লোকটার হাতের চামড়ার টুকরো। টানাটানি ধরাধরি করার সময়ে কোন ফাঁকে আমার জামায় লেগে গেছিল, পরে বাড়ি এসে দেখলাম। কী মনে হতে নিয়ে এসেছিলাম ল্যাবে টেস্ট করব বলে।”

একটু থেমে, আসাহি আবার বলে, আরো নিচু গলায়,

“রাঊলের ঐ হাতটা ক্ষতবিক্ষত ছিল, যেন কোনো হিংস্র কুকুর ধারালো দাঁতে চিবিয়ে দিয়েছে।”

“কী সর্বনাশ! কী বলছ তুমি? জেনেশুনে, এরকম বিপজ্জনক জায়গায় আমাদের কিচ্ছু না জানিয়ে এইভাবে নিয়ে এলে?”

পিটার উঠে দাঁড়িয়েছে। লুইজিও।

“আরে প্লিজ। একটু রিস্ক তো নিতেই হবে এত বড় একটা আবিষ্কারের জন্য! আর নিরস্ত্র তো নই আমরা। তোমার বন্দুক আছে তো! তাছাড়াও আমার কাছে একটা মারাত্মক স্টান-গান আছে। যত বড় জন্তুই হোক না কেন, এক পা-ও এগোতে পারবে না আর এর গুলি খেলে।”

“নিকুচি করেছে তোমার অস্ত্রের। চুলোয় যাও তুমি, আমি চললাম। আর কে কে আসছে আমার সঙ্গে?”

রাগে ফেটে পড়েছে লুইজি। সঙ্গত, তিয়ার নিজেরও ভয়ানক রাগ হয়েছিল শুনে। নিজের ব্যাকপ্যাক কাঁধে তুলে ও-ও উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, মাঝপথে থমকে গেল।

চোখের কোণ দিয়ে দেখেছে, একটা ছায়া সাঁৎ করে নড়ে উঠল যেন গাছেদের পিছনে।

ঘুরে সেদিকে তাকাল সে।

“লুইজি...”

জোরে ডাকতেও ভয় করছিল তিয়ার। কিন্তু লুইজিও হয়তো দেখেছিল, বাইনোকুলার বার করে চোখে লাগাচ্ছিল সে।

জঙ্গলটা এতক্ষণ কেমন ছাড়া ছাড়া ফাঁকা ফাঁকা, গা এলানো গোছের ছিল না? হঠাৎ এমন অন্যরকম দেখাচ্ছে কেন গাছগুলোকে?

পিটার ততক্ষণে হাঁটা দিয়ে দিয়েছে, খেয়াল করেনি ওরা।

“হেই তিয়া, লুইজি – চলে এসো। পাগলের পাল্লায় পড়ে বেঘোরে প্রাণ খোয়াবে নাকি!”

“কেউ যাবে না!”

হুঙ্কার দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে আসাহি। ম্যাজিকের মত ওর হাতে একটা ছোট্ট বন্দুক এসে গেছে এখন। মুখ লাল, চোখ কুঁচকোনো।

“মর গে’ তবে!”

পিটারের হাতেও ওর বন্দুক উঠে এসেছে। সোজা আসাহির দিকে তাক করা।

দুজনে দুজনের দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে, যুযুধান বাঘের মত। তিয়া অসহায়ভাবে দেখছে, কিছু করার আছে কি ওর?

“প্লিজ! তোমরা পাগলামি বন্ধ করবে?”

লুইজির কথায় স্টিলের মত ধার। তিয়া ওর হাতের ছোট্ট বন্দুকটাকে দেখতে পাচ্ছে। আসাহির দিকে তাক করা।

পিটার এতেই হয়তো উৎসাহ পেল। আচমকা বন্দুক ফেলে এক লাফে এগিয়ে এসে আসাহির হাতের স্টানগানটা চেপে ধরল সে। আসাহি সঙ্গে সঙ্গেই এক হাত তুলে প্রবল জোরে ক্যারাটের ভঙ্গিমায় মারল ওর ঘাড়ের কাছে।

তিয়া পর পর তিনটে জিনিস, প্রায় একসঙ্গে দেখতে পেল।

আসাহির হাতের বন্দুকটায় একটা সাদা আলোর ঝলক, ক্র্যাক্‌ করে একটা আওয়াজ হল।

ওর পাশে দাঁড়ানো লুইজির হাত একটা ঝটকা দিল।

জড়াজড়ি অবস্থায় মারপিট করতে করতে আসাহি আর পিটার দুজনেই দাম্‌ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

এক সেকেন্ড। দু সেকেন্ড। তিন...

জড়াজড়ি হাত ছাড়িয়ে একজন আস্তে আস্তে গড়িয়ে সরে গেল পাশে, হাতের ভর দিয়ে উঠে বসল, তারপর উঠে দাঁড়াতে গিয়ে উহ্‌ করে বসে পড়ল আবার।

পিটার। ওর বাঁ পাটা কেমন অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে আছে।

আসাহি কিন্তু যেমন পড়েছিল, তেমনি পড়ে আছে। চোখ খোলা স্থির, নিস্পন্দ, কাঠের গুঁড়ির মত।

“সরি, পিট! তাক তো ওকেই করেছিলাম...”

লুইজি গিয়ে দাঁড়িয়েছে পিটারের পাশে। হাত ধরে দাঁড় করাচ্ছে ওকে।

“পায়েই লাগল হতভাগা গুলিটা!”

“অ্যাম সো সরি!”

“আরে তুমি কী করবে! অ্যাক্সিডেন্ট এটা। পাগলটার দোষ সব!”

লুইজি আসাহির কাছে গিয়ে ঝুঁকে দেখছিল। তিয়া আর থাকতে পারল না জিজ্ঞাসা না করে,

“ওর...কী হল?”

পিটার আর লুইজি দুজনেই আওয়াজ করে হাসল ওর কথায়। লুইজি বুঝিয়ে দিল,

“কাড়াকাড়িতে স্টানগানটা ফায়ার হল, দ্যাখোনি? ব্যাটা নিজের অস্ত্রে নিজেই ঘায়েল হয়েছে।”

পিটার এর মধ্যে পা ঘষটে ঘষটে সরে গেছে ওর বন্দুকটার দিকে। হাতে তুলে নিল ওটা।

“কাম হিয়ার তিয়া। হেল্প মী। হতচ্ছাড়াকে এখন বয়ে নিয়ে যেতে হবে আবার, জ্বালাতন!”

লুইজির কাছে দৌড়ে গেল তিয়া। আসাহি বেশ ভারি, হাঁপ ধরে যাচ্ছিল ওর একটা হাত নিজের কাঁধে নিয়ে টেনে তুলতে। এইভাবে হেঁচড়ে নিয়ে কী করে অতটা যাবে, গেলে লোকটার পায়ের যে কী দশা হবে ভাবছিল ওরা। তখনই পিটারের আর্তনাদ ভেসে এল, “ওহহহ!”

পরক্ষণেই বন্দুকের আওয়াজ।

অন্ধকারে, মরা চাঁদের আলোয়, কীসের সঙ্গে লড়াই করছে পিটার? একটা হাত যেন টেনে ধরে রেখেছে ওর কিছুতে – অন্যহাতে মরিয়ার মত আবার গুলি চালালো সে...সেই করালগ্রাস আলগা হল, হাতটা ছিটকে বেরিয়ে এল ওর। লেংচে লেংচে পালিয়ে আসছে সে এবার ওদের দিকে...

“হেল্প!”

এপাশের গাছের সারির নিচে আসাহিকে কোনোমতে নামিয়ে দিয়েই তিয়া আর লুইজি ছুটল পিটারের দিকে। কোন আতঙ্কের তাড়া খেয়ে ছুটে আসছে ও? সেই নতুন, অজানা জন্তু ছাড়া আর কীই বা হবে?

কিন্তু কই, কিছু তো ওকে ধাওয়া করে আসছে না!

নিশ্চয়, ওদের দেখে অপেক্ষা করছে ওটা তার মানে। ধূর্ত, হিংস্র পশুটা গাছের আড়াল থেকে মাপছে নির্ঘাৎ।

“গো গো গো...পালাও তিয়া...আমাদের এক্ষুণি পালাতে হবে এখান থেকে, লুইজি...রান... নৌকোয় চলো...”

ভাবার সুযোগ দিল না পিটার। একহাতে লুইজির কাঁধ বেড় দিয়ে, অন্যহাতে তিয়াকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল নৌকোর দিকে।

তিয়ার জামা ভিজে যাচ্ছে পিটারের হাত থেকে ঝুঁঝিয়ে পড়া রক্তে। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বার বার দেখছে ও, সেটা তেড়ে আসছে না তো?

কিছু নেই। কিন্তু গাছগুলো নড়ছে। প্রবল নড়ছে, যেন হাত পা তুলে নাচছে, যেন বড় কোনো জন্তু চলে ফিরে বেড়াচ্ছে ওদের মাঝে।

“আসাহি!”

তিয়ার চিৎকারে তিনজনেই দাঁড়িয়ে পড়েছে।

এইখানেই তো নামিয়ে দিয়েছিল ওরা ওকে। কই? কোথায় গেল? গাছতলা তো পুরো খালি!

বড় বড় পাতাগুলো উদ্ধতভাবে উপর দিকে উঠে আছে – আগে কি এমনটা দেখেছিল? পাতাগুলো যে এমন ডোরাকাটা তাও তো আগে খেয়াল করেনি তিয়া – চোখে ধাঁধা লাগছে পুরো।

এবার নড়াচড়াটা খালি চোখেই দেখতে পেল ওরা।

তিয়া টের পায় ওর গায়ের লোম ভয়ে দাঁড়িয়ে উঠেছে। লুইজি একবার ক্রস আঁকল।

শব্দটা তখনই শুরু হল। খুব মিহি। কিচ্ছু বোঝা যায় না, অথচ কী যেন আওয়াজ হচ্ছে। প্রায় শোনাই যায় না এমন গলায়, কে যেন কাকে ডাকছ, কী যেন কথা বলছে। উল্লাস করছে। কান পাতলে কিছুই স্পষ্ট নয়, অথচ কান যেন শব্দে ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।

তিয়ার কষ্ট হচ্ছিল, দু'হাতে কান চেপে ধরতে যাচ্ছিল ও, তার আগেই পিটার আহত হাত দিয়েই ওর হাত ধরে একটা ঝটকা টান দিল।

“রান, তিয়া, রান! পালাও! শুনো না দাঁড়িয়ে, শুনো না! পালাও!”

আওয়াজটা বাড়ছে, আরো দ্রুত, আরো সুন্দর...আহা...কী সুন্দর...তিয়া মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনতে শুনতে...পিটারের হাত সরে গেল, ওরা এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে ওদিকে...

গাছের ডালগুলো নুইয়ে এসে আদর করার মত করে ওকে ছুঁতে চাইছে বলেই হয়তো ওরা উপরে তাকাল, গাছের উপরে ডেলাপাকানো ডালপালাগুলোও যেন ওদের দেখাতেই এদিক ওদিক সরে যাচ্ছিল ভিতরের নিস্পন্দ, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন জিনিসটার উপর থেকে...

হাতে সুড়সুড়ি লাগায় চোখ নামাল তিয়া। একটা সুন্দর, সোনালী উজ্জ্বল ডোরা কাটা পাতার ডগার শুঁড়টা ওকে ছুঁয়েছে, ভিজে ভিজে খড়খড়ে ছোঁয়া...

হাতে জ্বালা হবার মুহূর্তেই চুলেও হ্যাঁচকা টান পড়ল। পিটার ওর পনিটেল ধরে টান মেরেছে। তিয়ার হাতে রক্ত ফুটে উঠেছে ততক্ষণে...

আর কিছু বোঝার চেষ্টা না করে অন্ধের মত পিটার আর লুইজির পিছন পিছন সমুদ্রতীরের দিকে দৌড়ল তিয়া। পরস্পর হাত ধরে পড়ি কি মরি ছুটছিল ওরা তিনজনে।

কয়েকটা ঊর্ধ্বশ্বাস মিনিটের পর, জলের মধ্যে নৌকোয় বসে ওরা তিনজন চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল পাথুরে দ্বীপটা। পুরো ফাঁকা, খালি মাঝটায় আবছা জঙ্গলের ছায়া। ন্যাড়া, বৃক্ষশূন্য তটভূমির দিকে চেয়ে ওরা ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। ওদের কানে তখনো তালা ধরিয়ে দিচ্ছিল দূর থেকে ভেসে আসা শব্দটা।

ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ...

এদ্দিন নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে আর সালোকসংশ্লেষে পাওয়া স্বাভাবিক খাদ্যের জোরে টিঁকে থাকা রাক্ষুসে গাছগুলো তখন আকাশ বাতাস ভরিয়ে সোচ্চারে হাসছিল, বহু বছর বাদে মহাভোজের উল্লাসে। কোনো হাওয়া ছাড়াই হেলেদুলে উঠছিল তারা, শাখা থেকে শাখায় ভাগ হয়ে চালান হয়ে যাচ্ছিল আসাহির মৃতদেহের টুকরোগুলো।