খুঁতখুঁতে - অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

হাসির গল্প

মিনুদি বড় খুঁতখুঁতে ছিল, বা বলতে পারি পিটপিটে। সব ব্যাপারে পারফেকশনিস্ট ছিল মিনুদি, একদম ছোটবেলা থেকেই। হাতের লেখা মুক্তোর মতো। রেজাল্ট --- প্রতি ক্লাসে ফার্স্ট। কিন্তু ওই যে, পারফেকশনিজমের ভূত মাথায় একবার ঢুকলে বেরোতে চায় না --- তাই আরও দশ নম্বর বেশি কেন এলো না, সে নিয়ে নাকি কান্না জুড়ে বাড়িসুদ্ধ লোককে জেরবার করে দিতো মিনুদি। সেই জন্যই বাড়ির বড়রা বলতো, “তোর বাপু বড্ড পিটপিটে বাই।”

খুঁতখুঁত বা পিটপিট করতে করতেই, একদিন মিনুদি স্কুল ছেড়ে কলেজের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করল। বাড়ির দিদিমা ঠাকুমারা তখন মেয়ে স্কুল ছাড়লেই তার বিয়ের জন্য পরিবারে হিড়িক তুলে অতিষ্ঠ করে তুলতো বাড়ির বাকি সদস্যদের। তাই মিনুদি যখন জানতে পারল, তার বাবা বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে, কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় করে তুলল। বাপের আদুরে মেয়েটির মন রাখার জন্য তার মা বলল, “ঠিক যেমন তোর পছন্দ, ঠিক তেমন পাত্র এনে দেব দেখিস। বাধা দিস না। বুঝতেই তো পারছিস, মা... মানে তোর ঠাকুমা, আজ আছে তো কাল নেই, নাতজামাইয়ের মুখ দেখে যাবার শখ...। পড়াশুনো তো চলবেই। এমন ঘর দেখবো, যেখানে পড়াশুনোর কদর হবে।”

মিনুদি নিমরাজি হয়ে, বেশি বাধা টাধা না দিয়ে, পড়াশুনোর পাশে পাশে, নিজের কুমারী মনে ভবিষ্যৎ বরটিকে কল্পনা করে শিহরিত হতে হতে, দিন কাটাতে লাগলো। বছর ঘুরতে না ঘুরতে চিরুনি তল্লাস করে মিনুদির বাবা সৎপাত্রের হদিস আনলেন। প্রথম যিনি এলেন, তিনি পাত্রের বাবা। তিনি মেয়ে দেখতে এসে তিনটি শিঙ্গারা, ছটি মিষ্টি এবং দুকাপ চায়ের পর মিনুদিকে চোখে দেখা করলেন। মিনুদির কী রাগ! পেটুক শ্বশুর হলে সে বাড়িতে মিনুদিকে হাড়িই ঠেলতে হবে, এই অনুযোগে পাত্রের বাবা সমেত পাত্রও ছাঁটাই হয়ে গেলেন। অগত্যা মিনুদির রিটায়ারমেন্ট ধাবিত বাবা, ছাতা মাথায়, রোদে ঘুরে, পাত্রের তত্ত্বতল্লাশ করতে করতে, আরও বুড়িয়ে যেতে লাগলেন।

ইতিমধ্যে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় মিনুদির জন্য এক প্রতিষ্ঠিত পাত্রের খবর এনে দিল। ছেলে সরকারি চাকুরে। নির্ঝঞ্ঝাট, কারণ একমাত্র ছেলেটির বাপ-মা বহুদিন স্বর্গবাসী। নির্দিষ্ট দিনে পাত্র এলেন পাত্রী দেখতে, হাতে এক বিশাল রসগোল্লার হাঁড়ী। মিনুদির বাবা স্বয়ং পাত্রকে স্টেশন থেকে নিয়ে এলেন। গলির মুখে যখন পাত্রের আগমন বার্তা ঘোষিত হল, জানলার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে মিনুদির চক্ষু প্রায় চড়কগাছে ওঠার জোগাড়। পাত্রের পরনে ফিকে হলদে রঙের বুশ শার্ট আর কচি কলাপাতা রঙের ট্রাউজার। হলদেটে শার্ট সহ্য হলেও, ট্রাউজারের কচি কলাপাতা রং মিনুদির মনে রঙ ধরাতে পারলো না। পাত্রটি ফুটো প্রমাণিত হওয়ায় অগত্যা মিনুদির জীবনের জল ধরানো গেলো না তাতে।

অবশেষে অনেকবার চুল খুলে, রঙ পরীক্ষা হেতু গায়ে চিমটি খেয়ে, মিনুদি একদিন সত্যি সত্যি পাত্রস্থ হল এবং পাত্র বেশ সুদর্শন। পাড়া ভেঙে প্রতিবেশীরা এসে ধন্য ধন্য করে বরের রূপের প্রশংসা করে গেলো। বাড়িতে ঘুশির জোয়ার। অষ্টমঙ্গলাতে মিনুদি বাপের বাড়ি। সঙ্গে সুদর্শন সদা হাস্যময় যুবকটি। ভিড়ের মাঝ থেকে অন্য ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে মিনুদির মা জিজ্ঞেস করল, “খুশি হয়েছিস তো মা?”

মিনুদি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, “ওই একরকম।” তারপর চুপ।

মায়ের চোখ ফেটে জল আসছে দেখে মিনুদি বলে, “দাঁড়াও দাঁড়াও অত সেন্টু খেয়ো না। ঠিকই আছে। তবে একটু কেমন যেন! সবসময় ভাবুক হয়ে থাকে। কী যেন নেই।”

মিনুদির মা বলে, “ও বিয়ের পর তোর বাবারও অমন ছিল। সংসারের জল গড়াতে দে, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

তারপর সংসার দিয়ে অনেক জল গড়ালো। মিনুদির পিটপিটে স্বভাব কমার লক্ষণ নেই, বরং ক্রমশ বাড়তেই লাগলো। কিন্তু তার বর যেন আরও ভাবুক ভাবুক হয়ে গেলো।

বিয়ের পর প্রথম পুজো। মিনুদি দোকানে গেছে শাড়ি কিনতে, সাথে তার বর। দোকানী একটার পর একটা শাড়ি তাক থেকে পাড়ছে আর মিনুদির সামনে মেলে ধরছে। পছন্দ আর হয় না। সামনের কাউন্টারে খুলে রাখা শাড়ি ভালো করে পরখ না করেই, “ওই শাড়িটা দেখান না, আরে ওই যে হলুদের পাশেরটা... আরে না না আপনার আঙুলের ডান দিক থেকে থার্ড শাড়িটা... হ্যাঁ ওটাই, ... আরে ধুর এটাতো জ্যালজ্যালে একেবারে... নতুন স্টক নেই কিছু?”

কর্মচারীটি শারদ সন্ধ্যায় ঘেমে নেয়ে একসা হয়েছে দেখে দোকানের মালিক বলে উঠল, “অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দিদি, আমাদের আরও কাস্টমার আছে। প্লিজ, নিচে থেকে পছন্দ করুন, এত শাড়ি নামিয়ে গুটিয়ে তোলা... বুঝতেই তো পারছেন...”

মিনুদি রাগে ফেটে পড়ে, বরের কনুই ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে দোকানের বাইরে বেরিয়ে এলো। জামাইবাবু বলে উঠলেন, “শ খানেক শাড়ি নামিয়ে একটাও না কিনলে দোকানদার আর কী বলবে শুনি?”

মিনুদির কড়া চোখ জামাইবাবুকে বিদ্ধ করায় তিনি নিরস্ত হলেন। এরপর থেকে মিনুদিকে দেখে সেই দোকানের ঝাঁপ নাকি অর্ধেক বন্ধ হয়ে যেত। অবশ্য এসব কথা দুষ্ট লোকেরা রটাচ্ছিল।

আমাদের এক বন্ধুর জুতোর দোকান ছিলো। তার কাছে শুনেছিলাম ওর দোকান থেকে জুতো কেনার পর মিনুদি গুনে গুনে তিনবার বদলাতে এসেছিল। পরে ফেলা জুতো চতুর্থবার বদলাতে আসেনি ঠিকই, কিন্তু মোড়ের মাথায় ওকে পাকড়াও করে শোনাতেও ছাড়েনি, “তোদের দোকানে যত রাজ্যের জালি মাল রাখিস! দুদিনে রঙ উঠে গেছে।”

জুতোতে দু দিন পর কীভাবে রঙ উঠে গেছে তার হদিস আমার বন্ধুটি কোনোদিন পায়নি।

 

বছর ঘুরল। মিনুদির ছেলে হল। নামকরণ নিয়ে ঝড় বয়ে গেলো। ছেলে জন্মাবার আগেই ছেলের বাপ নামকরণ করে রেখেছিল, হিমাদ্রি কিশোর। মিনুদির ছেলেই যে হবে সেকথা জামাইবাবু জানল কী করে? মিনুদি যে গাইনকোলজিস্টকে দেখাত, সে আবার ছিল জামাইবাবুর ছেলেবেলার বন্ধু। আলট্রাসাউন্ড করে আগেই দেখে নিয়েছিল, বউয়ের পেটে ছেলে। ব্যাপারটা যে বেআইনি, সেকথা কেউ আমলই দিল না। ছেলে হবে শুনেই নাকি মিনুদির শাশুড়ি তিনপাক নেচেছিলেন। মেয়ে হলে কী হত বলা যায় না।

বরের রাখা ছেলের নাম শুনে মিনুদি চোখ কপালে তুলে, নাক কুঁচকে বলল, “এরকম নাম আবার আজকালকার দিনে কেউ রাখে নাকি? শুনেই মনে হচ্ছে কেমন যেন পিসো কি মেসোর নাম আওড়াচ্ছি। ছ্যাঃ, তোমাদের বাড়িতে কালচার নেই। সবাই এখনো সেই কোন মান্ধাতার আমলে পড়ে আছ।”

বাড়িতে জরুরি মিটিং বসে গেলো। মিনুদির শ্বশুর অনেক মাথা চুলকে, চলন্তিকা উল্টে বলল, “হ্যাঁ বউমা, ঠিক করলাম বিনোদবিহারী রাখব আমার নাতির নাম। পদবীর সাথে বেশ মিলে যাবে’খন।”

মিনুদির শাশুড়ি রান্নাঘর থেকে নাতির নামকরণ হচ্ছে জানতে পেরে, হলুদ মাখা হাত ময়লা শাড়িতে মুছতে মুছতে, লাফাতে লাফাতে, ঘরে এসে বলল, “আহা হা হা, বিনোদবিহারী... বিনোদবিহারী, বড় ভাল নাম গো! খোকাকে ডাকলে ভগবানের নামও করা হবে...”

মিনুদি ছেলে কোলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে গেল, “ওসব বিহারী টিহারি আমার পোষাবে না। যত্তসব অশিক্ষিতের দল।”

মিনুদি সাহিত্যের ছাত্রী ছিল। অনেক ভেবে চিন্তে ছেলের নাম রাখল পারিজাত। বার্থ সার্টিফিকেট এল। ছেলের নাম দেখে মিনুদির মুখ কালো হয়ে গেলো। উঁহু, নামটা যান কেমন সেকেলে সেকেলে। পালটাও নাম। দৌড়াও রেজিস্ট্রেশন অফিসে।

“বড় ভুল হয়ে গেছে স্যার। নাম বদলাতে হবে।” মিনুদির বর কাতরক্তি করে রেজিস্ট্রেশন অফিসের কাউন্টারে।

অফিসের গোমড়ামুখো, হোঁতকা ক্লার্ক, তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “উঁহু, এখন কিসসু করা যাবে না মশাই। খাতায় উঠে গেছে। স্বয়ং ভগবানও কিছু করতে পারবে না। বাচ্চা জন্মানোর আগেই আজকাল লোকে নাম ধাম সব ঠিক করে রাখে, আর আপনারা মশাই নাম নিয়ে লাট খাচ্ছেন? এদিকে ছেলের দাড়ি গোঁফ গেলো গজিয়ে।”

জামাইবাবু বুক পকেটে হাত দিয়ে বলল, “আপনাদের হাতেই সব দাদা। একটু দেখুন না যদি...”

হোঁতকা মুখো জামাইবাবুর বুক পকেটের দিকে তৃষিত নয়নে চেয়ে বলে “এফিডেফিট করিয়ে নিন দাদা। আর কোনও রাস্তা নেই। তারপর আমাদের কাছে আসবেন, দেখে নেব।”

বছর ঘুরতে না ঘুরতে এফিডেফিড করে মিনুদি ছেলের নাম রাখল রুদ্রাংশ। জামাইবাবু জানায়, “নাম লিখতে সারাজীবন কলম ভাঙতে হবে সে কথা জানা আছে? আর যদি বিদেশ যায়, ভেবে দেখেছ, নামের কী দশা হবে?”

মিনুদি আবার বেজার মুখে চলন্তিকার উপর হুমড়ি খায়। তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে। মিনুদির শ্বশুর শাশুড়ি, ‘যাদের ছেলে তারা বুঝুক গে’, বলে রণে ভঙ্গ দেন। জামাইবাবুটি বেঁকে বসে। মিনুদিকে বোঝাতে লাগে, “এভাবে নাম বদলায় কারা জানো? যাদের পুলিশের খাতায় দুচারটে নাম লেখা থাকে। কাগজে দ্যাখো না--- গৃহবধূ খুন করে পলাতক জগাই, ওরফে সিদ্ধার্থ, ওরফে পটলা...”

“থামো থামো, আমার ছেলে কেন যাবে জেলে? ওই নামটাই থাকগে যাক।”

এভাবে রায় দিলেও মিনুদির খুঁতখুঁতে মন রুদ্রাংশ নামটা মেনে নিতে পারল না ঠিক। অবুঝ মনকে সে প্রবোধ দিল এই ভেবে - রুদ্রের অংশ যখন, শাশুড়িও খুশি থাকবেন, আর রান্নাঘরের সার্ভিসও অব্যহত থাকবে। মিনুদি থাকবে এখন থেকে শুধু তার ছেলে নিয়ে।

 

ছেলেকে ইশকুলে ভর্তি করার সময় এসে গেল একদিন। মিনুদির ইচ্ছে মিশনের স্কুলে ছেলে পড়ুক। ওদিকে জামাইবাবুর মত — ইংলিশ মিডিয়াম।

“কম্পিটিটিভে বাংলা কাজে আসবে না। বাংলা মিডিয়ামে ওর ইংরেজি দুর্বল হয়ে পড়বে। শেষে স্কুলের মাস্টার কিম্বা ক্লার্ক হয়ে জীবন কাটাবে।” চিবিয়ে চিবিয়ে বললে জামাইবাবু।

“তুমি কোন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছ? দিব্বি বাংলা মিডিয়ামে পড়ে, চাকরির পরীক্ষা দিয়ে, বুক ফুলিয়ে সরকারি চাকরি করছ। আমার ছেলেকে আমি ইঞ্জিনিয়ার বানাবো।”

“ছেলে কী খেলনা, যে বানাবে বলছ? এখন ইঞ্জিনিয়ারগুলোও ফ্যা ফ্যা করে ঘুরছে, জান না?”

বরের জারিজুরি খাটল না। মিনুদির ধারণা, মিশন স্কুলে পড়লে ছেলে তার ডিসিপ্লিন্ড হবেই হবে। তাই হাই প্রোফাইল, এক্সপার্ট কোচের কোচিঙে ভর্তি করা হল ছেলেকে। মিনুদি কোচিঙের মাস্টারকে উদ্বেগ উজাড় করে জিজ্ঞেস করে, “হবে তো মাস্টারমশাই? কী বুঝছেন? পার হবে আমাদের ছেলে?”

“পার বলে পার? আমার স্পেশাল কোচিঙে আজ পর্যন্ত ফেল হয়নি কেউ। তবে মিশনের ভর্তির পরীক্ষা তো! একটু খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দেবেন। ওই আর কী, প্রোটিন যুক্ত খাবার দাবার দিতে হবে। দুর্বল হয়ে পড়লে মাথা কাজ করবে না। স্পিড কমে যাবে। তাহলেই চিত্তির।”

ব্যাস, মিনুদি টিভির এ্যড মিলিয়ে, বাজার থেকে বিশেষ প্রোটিন শেক এনে, ছেলেকে খাওয়াতে লাগল। এক হাতে বই আর এক হাতে প্রোটিন মেশানো দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে রুদ্রাংশ, ওরফে পারিজাত,‌ ওরফে বাবাই, ওরফে ঠাকুমার গোপাল, তৈরি হতে লাগল মিশনের কঠোর পরীক্ষার জন্য। ছেলেকে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে রাত জাগিয়ে রেখে পড়া তৈরি করায় মিনুদি। জামাইবাবু ছয় বাই ছয় খাটে একা শুয়ে নাক ডাকায়।

মাস্টারের তদারকিতে, মিনুদির প্রযত্নে, বাবাই, ওরফে রুদ্রাংশ, মিশনের স্কুলে ভর্তি হল। মিনুদি রোজ সকালে টিফিন আর জলের বোতল নিয়ে স্কুলের সামনে মাঠে বসে দিন কাটায়। টিফিন পিরিয়ডে যত্ন করে টিফিন আর দুধের বোতল তুলে ধরে ছেলের মুখে। কিন্তু আচমকা একদিন আবিষ্কৃত হয় ছেলে অন্য বন্ধুদের সাথে মিশে একটি বাঁদরে পরিণত হয়েছে।

ভাল রেজাল্টের আশা বড় ছলনাময়ী। ‘আরও ভালোর’ মরীচিকা গ্রাস করল মিনুদিকে। এদিকে ছেলে যত বড় হতে লাগল, তত তার খেলার দিকে ঝোঁক বাড়ে। মিনুদির বর, মানে আমাদের জামাইবাবুটির মনে হতে থাকে, পড়াশুনোর চাইতে খেলাধুলো অনেক ভাল জিনিষ। খেলে কত জন কত কী করে ফেলেছে জীবনে, তার হদিস দিতে থাকে ছেলেকে।

কিশোর রুদ্রাংশ একদিন হঠাৎ নিজের দাঁতভাঙা নাম, নিজে থেকেই ছোট করে রুডি করে দেয়। তার মনে হয় জীবনে বড় ক্রিকেটার হয়ে গেলে তখন নামের বীভৎসতা তাকে বেশ পীড়া দেবে।

বাড়ির ল্যান্ড লাইন ফোনে রুদ্রাংশের বন্ধু জিজ্ঞেস করে, “কাকিমা, রুডি আছে?”

মিনুদি অমন বিদেশী নাম শুনে ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “না, এই নামে কেউ এ বাড়িতে থাকে না। তুমি কে?”

অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে, “কাকিমা আমি নীল। রুদ্রাংশ বাড়ি নেই?”

মিনুদি আর্তনাদ করে বলে ওঠে, “ও, তুই? রুডি, না কী, জিজ্ঞেস করছিলি যে!”

“আমরা তো রুডি বলেই ডাকি। অত কঠিন নামে ডাকা যায় নাকি? আজকাল সব শর্ট হয়ে যাচ্ছে জানই তো!”

ছেলের নাম বদলে গেছে জেনে মিনুদি তিন রাত ঘুমল না। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে সে মিনুদিকে পাত্তাই দেয় না। এটি পৃথিবীর অন্যতম তুচ্ছ ঘটনা বলে সে ফুতকারে উড়িয়ে দেয়। জামাইবাবু শুনে বলে, “ঠিক নামই রেখেছে। শুধু নামেই রুডি নয়, কাজেও। ওর রুডনেস বেড়েই চলেছে দিনদিন। সেদিন জিজ্ঞেস করলাম, অত রাত জেগে কম্পিউটারে কী করিস? শুনে বলল, তোমার সে দিয়ে কী দরকার? হরির চায়ের দোকানে তুমি কী কর, আমি কোনোদিন জিজ্ঞেস করেছি?”

“এই জন্যেই বলেছিলাম, আর একটা ছেলেপুলে না হলে...”

“বাজার দেখেছ, বাজার? এই বাজারে আর দু তিনটে ছেলে পুলে কেউ জম্ম দেয়? একটাকেই ভালোভাবে মানুষ কর। জীবনটা দিব্যি কেটে যাবে।”

মিনুদি খুঁতখুঁত করতেই থাকে, “কেন? তোমার কলিগদের মধ্যে আর কেউ ছেলেপুলে মানুষ করছে না? তখনই বলেছিলাম...”

“কী বলেছিলে? সায় তো তোমারও ছিল। এখন ভেবে লাভ?”

এ বয়সে, এ নিয়ে ভেবে লাভ নেই বুঝতে পেরে, মিনুদি নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

 

ইলেভেনের পরীক্ষায় ভরাডুবি হতে হতে বেঁচে গেল রুদ্রাংশ। একেবারে কান ঘেঁষে পাশ, টায়েটুয়ে। মিনুদির চোখ কপালে উঠে পড়ল, নামতেই চায় না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঊর্ধ্বনেত্রে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে চলে, “সব জলাঞ্জলি। ভস্মে ঘি ঢালা। এইজন্য মিশনের ইশকুলে ভর্তি করেছিলাম?”

জামাইবাবু মিনুদির বিছানার পাশে বসে বলে, “ও রুদ্রের অংশ, একদিন ঠিক দপ করে জ্বলে উঠবে, দেখে নিও। কোচিং এ ভর্তি করে দিচ্ছি, একেবারে টেলর মেড হয়ে বেরোবে। ‘শিওর শট’ এ ঢুকিয়ে দেব, আই আই টি একেবারে শিওর।”

“ওই শিওরের আশায় থাকো তুমি। কী কুক্ষণেই যে ছেলে হয়েছিল! এর চাইতে মেয়ে হলে অন্তত মা’কে খানিক বুঝত। আর ‘শিওর শটে’ ভর্তির টাকার অঙ্কটা জানা আছে? দুচার মাসের মাইনে উড়ে যাবে তোমার!”

“জানি, ভরসা রাখ। পি এফ আছে কী করতে? ছেলে যদি একবার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায়, তাহলে দশগুণ হয়ে ফিরে আসবে। হিসেবটা তোমার থেকে আমি কিছু কম বুঝি না, জেনে রেখ।”

রুদ্রাংশ ভর্তি হল শিওর শটে। দুচারদিন কোচিং অটোয় যাতায়াত করার পর ছেলে একদিন মিনুদির কাছে বায়না ধরে, “মা, কোচিং যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে। স্কুল করে কোচিং ক্লাসে সময়মত যেতে হলে বাইক লাগবে।”

“এই তো গাদাগুচ্ছের টাকা খরচা করে ভর্তি করলাম তোকে। আবার বাইকের টাকা আসবে কোত্থেকে শুনি?”

“দাদুর সাথে কথা হয়ে গেছে। ফান্ডিং নিয়ে চিন্তা নেই। তোমাদের বললেই হ্যানো ত্যানো শুনতে হবে জানা আছে”, বিজ্ঞের মত জবাব দেয় মিনুদির একমাত্র ছেলে।

কিছুদিন যেতে না যেতেই, দাদুর ফান্ডিং এ কেনা বাইকের ব্যাক সিটে তন্বী তরুণীদের দেখা যাওয়ার ভয়ঙ্কর সংবাদ মিনুদির কানে আসতে লাগল। মিনুদি জামাইবাবুর কানের কাছে ক্রমাগত ছেলের উচ্ছন্নে যাওয়ার কথা নিয়ে গাঁইগুঁই, ঘ্যানঘ্যান করাতে, জামাইবাবু ট্রান্সফার নিয়ে মুম্বাই চলে গেল। রুদ্রাংশের রেজাল্টে কোনও হেরফের দেখা গেল না। জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোতে দেখা গেল, নিকৃষ্ট কোনও কলেজেও ছেলের চান্স পাওয়ার কোনও চান্স নেই।

স্বপ্ন চুরমার করে দেওয়ার শাস্তি হিসাবে মিনুদি ছেলের বাইক বেচে দিল একদিন। বাইক বেচেই শান্তি পেল না, শ্বশুরকে ধরে একচোট শুনিয়েও দিল, “লাই দিয়ে মাথায় তুলেছিলেন। আপনার জন্যই আজ বাবাই এর এই অবস্থা। কিচ্ছু হবে না এখন ওর জীবনে। এর চাইতে ভালো ছিল কোনও বোর্ডিং স্কুলে রেখে পড়ানো। ক্লার্ক হবে ক্লার্ক! আমার কপালটাই খারাপ, নইলে এমন আন কালচার্ড বাড়িতে বিয়ে হয়!”

 

টেনেটুনে গ্রাজুয়েট হল মিনুদির একমাত্র ছেলে। একদিন চাকরী পেল, ব্যাঙ্কের ক্লার্ক। ছেলের চাকরী মিনুদিকে খুশি করতে পারল না। কোথায় ছেলেকে একদিন ইঞ্জিনিয়ার করার স্বপ্নে সে বিভোর হয়ে থাকত! এখন রুঢ় বাস্তবের আঘাতে চুরমার হতে লাগল মিনুদির মন প্রাণ। এদিকে জামাইবাবু সেই যে মুম্বাই বদলী নিয়েছিল, ফিরে আসবার নামটি নেয় না। এমন কথাও বলা যাবে না যে তার চরিত্রের দোষ ঘটেছে। মিনুদি এও জানে, মুম্বাই বেঙ্গল এসোসিয়েশনে কালচারাল প্রোগ্রাম টোগ্রাম নিয়ে উনি দিব্বি আছেন। বছরে দুবার বাড়ি আসে। ছেলের চাকরীর খবরে খুব বেশি উৎসাহ দেখায়নি ঠিকই, তবে তার দ্বায়িত্ব লাঘবের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি পেয়ে, নিশ্চিন্ত মনে মুম্বাই ফিরে গেছে।

দুবছর চাকরী করার পর ছেলে যে বাজারের উপযুক্ত যোগ্য পাত্র, সে বিষয়ে পাড়া পড়শি মিনুদির কানে ফুসমন্তর দিতে শুরু করল। মিনুদির মেয়েবেলার বন্ধু ছিল কাকলিদি। তার মেয়েটি দেখতে শুনতে বেশ মিষ্টি। কলেজের থার্ড ইয়ার, ইংরাজি অনার্স। মিনুদির কাছে বন্ধু তার নিজের মেয়ের বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিতেই মিনুদি একপায়ে রাজী হয়ে গেল। জামাইবাবুকে ফোনে সেই কথা মিনুদি জানাতেই সে বলে, “যেটুকু বন্ধুত্বের অবশিষ্ট ছিল, সেটাও হারাবে এবার। ছেলেবেলার বন্ধুকে কেউ বেয়ান করে?”

মিনুদি বলে, “ছাড়ো তো! বেয়ান টেয়ান আবার কী কথা। তোমরা গায়ের থেকে অশিক্ষিতের পোশাকটা এখনো ঝেড়ে ফেলতে পারলে না! মেয়ে নিয়ে আসছি আমি বুঝলে... আমার তো মেয়ে নেই, ওকেই আমি মেয়ে করে নেব!”

“শাশুড়ি কোনোদিন মা হয় না, আর ছেলের বউ কারো মেয়ে হয় না। এসব ইলিউশন আবার তোমাদের মতো শিক্ষিত বাড়ির মেয়েরা জানেও না।”

জামাইবাবুর শ্লেষটা গায়ে না মেখে, মিনুদি ঝাঁপিয়ে পড়ল ছেলের বিয়ের জোগাড়ে। বেনারসির দোকান, স্যাক্রার দোকান, ক্যাটারার, মিনুদির খুঁতখুঁতামির জ্বালায় কদিন অতিষ্ট হলেও তাদের রোজগার বিশেষ মন্দ হল না।

 

দুই বেয়ান, মিনুদি আর কাকলিদি দুজনেই বাগবাগ খুশি তাদের ছেলেমেয়ারা পরস্পর পরিণয় সুত্রে আবদ্ধ হওয়ায়। অষ্টমঙ্গলা থেকে ফিরে এসেও ছেলের বউ মন্দিরা মিনুদিকে আন্টি বলে সম্বোধন করায় মিনুদি আঁতকে উঠে বলে, “আন্টি কীরে? মা বলে ডাকবি। শাশুড়িকে কেউ আন্টি বলে?”

“না আন্টি, আমি নিজের মা ছাড়া কাউকে মা বলে ডাকতে পারব না গো! এটুকু তোমাকে মেনে নিতেই হবে। মা ফা বলতো সেই তোমাদের মা মাসিদের যুগে। এই দেখো না, তোমার ছেলেকে আমি কিন্তু রুডি বলেই ডাকছি। ওসব “ওগো, হ্যাঁগো” বলা আমার পোষাবে না। থিঙ্কস আর চেঞ্জিং ডে বাই ডে!”

মিনুদি ছেলের বউ মন্দিরার মিষ্টি কথা ছুরিকাঘাত বুঝেও চুপ করে যায়। এদিকে রুডিই হোক বা তার বাবা, মন্দিরার সম্বোধন নিয়ে কারো কোনও মাথা ব্যথা নেই দেখে মিনুদি বিড়বিড়, গাঁইগুঁই করে, নিজেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে একদিন। সংসার যেমন চলার, চলতেই থাকে।

মন্দিরা বিয়ের আগে কোনও চাকরি করত না। কী করে যেন বিয়ের পর চাকরি জুটিয়ে নিল। আর চাকরিটা মোটামুটি ভাল, ইন্সিওরেন্স কোম্পানির। কোলকাতায় অফিস। বুড়ো বয়সে কোথায় ছেলের বউয়ের সেবাযত্নে শরীরে বাতাস খেলবে, না বউ চল্লেন টিফিন বগলে চাকরি করতে! মিনুদি ছেলেকে ডেকে একদিন বলে, “এটা তোরা ঠিক করলি? মন্দিরার চাকরি না করলেই চলছিল না? সব আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়ে তোর বউ চলল অফিস!”

“এখনকার দিনে দুজনে চাকরি না করলে সংসার চালানো মুশকিল। লেখাপড়া করেছে, চাকরি না করার কী আছে? তুমিই তো বলতে, মন্দিরা তোমার মেয়ে। ধরে নাও তোমার দুটো ছেলেমেয়ে, তারা চাকরি করে। এতে অসুবিধার কী আছে?”

হতাশা চেপে, মিনুদি মন্দিরা আর বাবাই এর লাঞ্চ তৈরি করে বাক্সে ভরে। মন্দিরা ডাইনিং টেবিলে মাখন টোস্টে কামড় বসিয়ে বলে, “আন্টি, তুমি কাল লাঞ্চে আলু কুমড়োর তরকারিতে বড্ড মিষ্টি দিয়েছিলে। আজ আবার দাওনি তো? আমাদের বাড়িতে আবার রান্নায় মিষ্টি দেওয়ার চল নেই। আমার অফিসে ক্যান্টিনটা অবশ্য খুব ভালো। কাল থেকে ভাবছি ওখানেই লাঞ্চ করব।”

মিনুদি বলে, “না মা, তোমার আর বাইরে খেয়ে শরীর খারাপ করে কাজ নেই। আমি আলাদা করে তো কিছু করছি না। সবার টিফিন একসাথে বানিয়ে দিচ্ছি।”

“আচ্ছা আন্টি তুমিও তো পড়াশুনোয় ভালো ছিলে। মাধ্যমিকে অঙ্কে নাকি একশোয় নব্বই পেয়েছিলে, মা বলেছে। চাকরি করলে না কেন? আমার মা তোমার চাইতে পড়াশুনোয় নাকি অনেক খারাপ ছিল? সেও তো ব্যাঙ্কে ভালো চাকরি করে। পড়াশুনোয় ভালো হয়েও, হাড়ি কড়াই নিয়ে পড়ে থেকে কী পেলে বলতো জীবনে?”

“শুধু কী পড়া? আমি একবার আবৃত্তি কম্পিটিশনে ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট হয়েছিলাম। আজকাল দেখি ভাঙা গলা নিয়ে কত আবৃত্তিকার গজিয়ে উঠেছে। বিয়ে হয়ে আর হল না। সব শেষ হয়ে গেল!” হতাশ হয়ে বলে ফেলে মিনুদি।

“বিয়েতে সব শেষ হয়ে গেল কেন? অন্য কিছু করার চেষ্টা করলেই পারতে!” লিপস্টিক বাঁচিয়ে দুধের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে মন্দিরা বলে ওঠে।

মিনুদি অনেক ভেবে চিন্তে বুঝতে পারে, সংসারে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বিবাগী হওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তাই তার কাছে খোলা নেই। জীবনের অর্ধেক কেটে গেল শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী আর সন্তান পালনে। কিন্তু বিবাগী হয়ে কোথায় যাবে সেটি আর সে ভেবে পেল না। বৃদ্ধাশ্রমে গেলে কেমন হয়? কিন্তু অতটা বৃদ্ধা কি নিজেকে বলা যায়? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মিনুদি আবিষ্কার করে, না ততটা বুড়ি নিজেকে মনে না হলেও বটের ঝুরি নামব নামব করছে। ধুর, বেকার জীবন কেটে গেল। এ জীবন কি চেয়েছিল মিনুদি? তাহলে কি আর একটা জীবন চাই সব কিছু ঠিকঠাক করে নিতে? পরজন্ম কি সত্যি আছে? মন্দিরা আজ ভিতরটা নাড়া দিয়ে দিয়েছে। মিনুদির চাহিদারা ঝুরঝুর করে ঝরে পড়েছে। আবৃত্তি কেন, গানের গলাটাই বা কিছু খারাপ ছিল কি? কেউ কি সুযোগ করে দিয়েছে? জিজ্ঞেস করেছে, তুই কী হতে চাস জীবনে।

না না এভাবে ভাবা ঠিক হচ্ছে না। কেউ কি কাউকে সুযোগ করে দিতে পারে? এই যে মন্দিরা জীবনটাকে তার মতো ঢেলে সাজানোর জন্য চাকরি খুঁজে বেরিয়ে পড়ল, তাকে তো অপেক্ষা করতে হয়নি সুযোগের! হঠাৎ বিশ্ব সংসারের প্রতি বিতৃষ্ণায় মন ভরে উঠল মিনুদির। কথায় আছে না, ‘দারা পুত্র পরিবার, তুমি কার, কে তোমার?’ আর নয়, এবার শুধু নিজের দিকে মন দেওয়া, সময় দেওয়া। মিনুদি গান গেয়ে ওঠে, “এমন মানব জমিন রইল পড়ে, আবাদ করলে ফলত সোনা, মন রে কৃষি কাজ জানো না...”

“বাঃ তোমার গলা যে এত সুন্দর জানা ছিল না তো! এবার গানটা চর্চা কর।”

মিনুদি অবাক হয়ে দেখে, জামাইবাবু মুম্বাই থেকে ফিরে এসেছেন, পিছন পিছন তার ঢাউস ট্রলি ব্যাগটা টেনে টেনে নিয়ে আসছে বাবাই।

“সত্যি মা, বাবা ঠিক বলেছে, এবার গানটা সিরিয়াসলি শুরু কর। আরও আনন্দের খবর হল, বাবার কোলকাতায় ট্রান্সফার হয়ে গেছে। এখন থেকে আমাদের কমপ্লিট ফ্যামিলি। আজ আমি আর মন্দিরা হাফ ডে নিয়ে বাবাকে আনতে গিয়েছিলাম তোমাকে সারপ্রাইস দেব বলে।”

“তোমার ট্রান্সফার... আমাকে জানলেও না একবার?” মিনুদি অস্ফুটে বলে ওঠে।

মন্দিরা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকে বলে, “মা, তুমি যে কী বল না! একবার ট্রান্সফারের কথা বললে তুমি যদি বল দরকার নেই ট্রান্সফারের...”

“এই মেয়ে এই যে তুই আমাকে ‘মা’ বলে ডাকলি, এবার যদি তোর কান দুটো মলে দিই...”

সবাই হেসে ওঠে। মিনুদি দেখে এক সুন্দর জীবন তার জন্য প্রতীক্ষায় ছিল, জানা ছিল না। কত কিছুই জানা যায় না একটা জীবনে।