বসন্ত এসে গেছে ● ফিলিপ কে ডিক ● অনুবাদ: বিশ্বদীপ দে


 

 

সুন্দরী জিল হেরিকের নীল চোখ দু’টো ভরে আছে জলে। স্বামীর দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে তীক্ষ্ণ স্বরে চি়ৎকার করে উঠল, ‘‘তুমি... তুমি একটা জঘন্য মানুষ।’’

লেস্টার হেরিক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কাজ করে যাচ্ছিল। নিজের মনে সমস্ত নোট, গ্রাফ ইত্যাদি সে ঠিক ভাবে সাজিয়ে রাখছে।

‘‘জঘন্য!’’ জিলের কথাটারই পুনরাবৃত্তি করে সে নির্লিপ্ত স্বরে বলল, ‘‘নিজের বোধবুদ্ধি অনুযায়ী একটা মন্তব্য করে দিলে, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।’’ এক বিশেষ শ্রেণির পরজীবীদের জীবন সম্পর্কে গবেষণার টেপ ডেস্ক স্ক্যানারের সাহায্যে পাঠিয়ে দিয়ে সে জানাল, ‘‘স্রেফ আবেগে ঠাসা মন্তব্য। আর কিস্যু না।’’

রান্নাঘরে ফিরে আনমনে স্টোভ জ্বালাল জিল। ক্রমে কনভেয়ার বেল্টগুলি নড়েচড়ে উঠল। খাবারগুলি বের করে সান্ধ্যভোজের আয়োজন শুরু করল সে।

রান্না করতে করতেই আবার ঘুরে তাকাল জিল, ‘‘সামান্য কয়েক সপ্তাহের জন্যও নয়?’’ তার কণ্ঠস্বরে ঝরে পড়ল প্রবল অনুনয়, ‘‘কী গো?’’

‘‘এক মাসের জন্যও নয়। ও এলে তুমি কথাটা পরিষ্কার করে বলে দিও। আর তোমার যদি ক্ষমতায় না কুলোয়, আমিই বলে দেব। একটা বাচ্চা ঘরময় দৌরাত্ম্য করে বেড়াবে, এটা আমি মানতে পারব না। আমার অনেক কাজ আছে। বেটাগেজ ১১-র এই রিপোর্টটা দশ দিন ধরে পড়ে আছে।’’

স্ক্যানারে ফরম্যালহাটনের নমুনা ফেলতে ফেলতে লেস্টার বলল, ‘‘তোমার ভাইয়ের ব্যাপারটা কী বলো তো? নিজের বাচ্চার দেখভাল করতে পারে না?’’

জিল কান্নাভেজা চোখে তাকাল, ‘‘তুমি বুঝতে পারছ না, না? আমিই চেয়েছিলাম গাসকে এখানে নিয়ে আসতে। ফ্র্যাঙ্কের কাছে অনেক করে অনুরোধ করেছিলাম যেন ও গাসকে নিয়ে এখানে আসে। আর তুমি এখন বলছ...’’

‘‘আমি অত্যন্ত আনন্দ পাব যথেষ্ট বড় হওয়ার পরে বাচ্চাটাকে যখন সরকারের জিম্মায় পাঠানো হবে।’’ চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলার পরেই লেস্টারের পাতলা মুখে বিরক্তি ফুটে উঠল, ‘‘ধুত্তোর! ডিনার কখন দেবে জিল? দশ মিনিট হয়ে গেল? স্টোভটা নিয়ে কোনো সমস্যা হল?’’

‘‘প্রায় তৈরি।’’ স্টোভে লাল সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে। রোবট পরিচারকটি দেওয়ালের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষা করছে খাবারটা তুলে নেওয়ার জন্য।

জিল বসে ছিল। অকথ্য রাগে তার নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। লেস্টার কিন্তু নির্বিকার। কাজে মগ্ন। কাজ আর গবেষণা। এই নিয়েই তার দিনরাত। এভাবে কাজে বুঁদ থেকেই নিঃসন্দেহে লেস্টারের এমন উন্নতি।

লেস্টারের রোগা পাতলা শরীরটা টেপ স্ক্যানারের উপরে যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে। ঠান্ডা মেজাজে সবটা খুঁটিয়ে দেখে স্ক্যানার থেকে তথ্যগুলি তুলে নিচ্ছে সে। তার পর নিরীক্ষণ করে তার মান বুঝে নেওয়া।

বিষণ্ণ জিলের পাতলা ঠোঁটটা থরথর করে কাঁপছে। মনে পড়ছে ছোট্ট গাসের কথা। কী করে ওইটুকু বাচ্চাকে বলবে সে? ভাবতে ভাবতে তার চোখ আবার ভরে এল জলে। কী মিষ্টি একটা বাচ্চা! তাকে আর দেখতে পাবে না সে। কক্ষনও আর তাদের বাড়িতে আসবে না গাস। কারণ ছোট্ট শিশুটির হাসি ও হইহই করে বাড়ি মাতিয়ে রাখার ব্যাপারটা লেস্টারের ঘোর নাপসন্দ। এতে নাকি তার গবেষণার কাজ ব্যাহত হবে!

স্টোভের আলো সবুজ হয়ে উঠল। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল নৈশভোজ। রোবটটা হাতে তুলে নিচ্ছে খাবারগুলি।

খাবারের ডাক পড়তেই লেস্টার কর্কশ স্বরে সাড়া দিল, ‘‘শুনেছি।’’ স্ক্যানার বন্ধ করে এগিয়ে আসতে আসতে সে বলল, ‘‘আমার মনে হয় আমরা খেতে খেতেই ও এসে যাবে।’’

‘‘তুমি যদি বলো, আমি ফ্র্যাঙ্ককে বলে দিতে পারি...’’

‘‘দরকার নেই। ও এলেই তখন না হয়...’’ পরিচারকের উদ্দেশে ঝাঁঝিয়ে উঠল লেস্টার, ‘‘আরে ঠিক আছে। এখানে রাখো খাবারটা।’’ বলতে বলতে তার রাগ আরও বেড়ে গেল, ‘‘ধুত্তোর। তাড়াতাড়ি করতে পারো না? আমাকে কাজে ফিরতে হবে।’’

জিল নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছিল।

 

খাওয়া শেষ হতে না হতেই এসে পড়ল গাস। ছোট্ট গাসকে দেখে বেজায় খুশি হল জিল। ছুটে গিয়ে কোলে তুলে নিল আদরের খুদে ভাইপোকে, ‘‘গাস, আমার সোনা! কী যে আনন্দ হচ্ছে তোমাকে দেখে!’’

গাস বলল, ‘‘আমার বাঘটাকে দেখেছ?’’ বলেই একটা ছোট্ট ধূসর রঙের বিড়ালছানাকে নীচে নামাতেই সেটা ছুটে গিয়ে সোফার তলায় ঢুকে পড়ল। গাস চেঁচাল, ‘‘ওই দ্যাখো, ও লুকোচুরি খেলছে!’’

লেস্টার তাকিয়ে ছিল ছোট্ট গাসের দিকে। সোফার তলা থেকে বেরিয়ে থাকা বিড়ালের ধূসর লেজটাও তার নজর এড়াল না।

‘‘আরে, এটাকে বাঘ বলছ কেন? একটা পুঁচকে বিড়াল...’’

গাস ঠোঁট ফোলাল রাগে, ‘‘না, এটা একটা বাঘ। ওর গায়ে ছোপ আছে।’’

‘‘বাঘেদের গায়ের রং হলুদ। আর তারা অনেক বড় হয়। তোমার শেখা উচিত কোনটাকে কী বলা উচিত।’’

জিল কাতর স্বরে থামাতে গেল লেস্টারকে, ‘‘লেস্টার, প্লিজ...’’

‘‘চুপ করো তো!’’ খিঁচিয়ে উঠল লেস্টার, ‘‘গাস যথেষ্ট বড় হয়েছে। ছেলেমানুষি ভুলে এবার ওর উচিত সঠিক শিক্ষাটা পাওয়া। আমি তো বুঝতে পারছি না শিক্ষকরা কী করে? এই সব আজগুবি ধ্যানধারণা বাচ্চাদের মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না?’’

অভিমানী গাস ছুট্টে গিয়ে তার বাঘকে কোলে তুলে নিয়ে লেস্টারের উদ্দেশে বলল, ‘‘ওকে একলা থাকতে দাও।’’

লেস্টার খুঁটিয়ে দেখছিল বিড়ালছানাটাকে। একটা অদ্ভুত ঠান্ডা হাসি খেলে গেল ওর ঠোঁটে, ‘‘তুমি আমার ল্যাবে এলে আমি তোমাকে অনেক বিড়াল দেখাব। আমরা তাদের নিয়ে গবেষণা করি। কেবল বিড়ালই কেন, গিনিপিগ, খরগোশ... কত কী!’’

জিল চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘লেস্টার! কী হচ্ছে কী? ’’

লেস্টার আলতো হাসল। নিজের ডেস্কে ফিরতে ফিরতে বলল, ‘‘এবার কেটে পড়ো তো তোমরা। আমার কাজগুলো শেষ করতে দাও। আর হ্যাঁ, গাসকে বলতে ভুলো না ওই কথাটা।’’

একথা শুনেই গাস উত্তেজিত হয়ে উঠল। চোখ গোল গোল করে সে জানতে চাইল, ‘‘কী কথা? কোনো সিক্রেট?’’

জিলের বুক ধড়ফড় করে উঠল। সে তড়িঘড়ি ছোট্ট গাসকে ধরে টানল, ‘‘এসো গাস। আমরা বাগানে গিয়ে বসি। তারপর বলছি। তোমার বাঘটাকেও নিয়ে এসো।’’

ঠিক সেই সময় একটা ক্লিক করে শব্দ হল। এমারজেন্সি ভিডসেন্ডার যন্ত্রটিতে আলো জ্বলে উঠেছে। দেখেই সেদিকে ছুটে গেল লেস্টার। ছুটতে ছুটতে বলল, ‘‘সবাই চুপ। কেউ কোনো কথা বলবে না।’’

দরজার কাছে থমকে দাঁড়িয়ে গাস আর জিল। একটি গোপন মেসেজের প্রিন্ট যন্ত্রটা থেকে বেরিয়ে এল। লেস্টার তৎক্ষণাৎ সেটাকে তুলে নিয়ে সিলটা খুলে ফেলল। তারপর মন দিয়ে পড়তে লাগল।

‘‘কী হল?’’ জিল জিজ্ঞেস করল, ‘‘কোনো খারাপ কিছু?’’

‘‘খারাপ?’’ লেস্টারের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে খুশিতে। ‘‘একেবারেই না।’’ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘‘একদম সময় নেই। আমাকে... আমাকে...’’

‘‘কী হল কী?’’

‘‘একটা ট্রিপে যেতে হবে। ধরো দু’ তিন সপ্তাহের জন্য। রেক্সর ৪-এ যাচ্ছি।’’

‘‘রেক্সর ৪? তুমি ওখানে যাচ্ছ!’’ উত্তেজনায় হাত ঘষতে ঘষতে জিল বলল, ‘‘আমার কবেকার ইচ্ছে একটা ধ্বংস হতে বসা প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষী হই। লেস্টার আমি... আমি কি তোমার সঙ্গে যেতে পারি? আমরা কখনও কোথায় ছুটি কাটাতে যাইনি। তুমি খালি বলেছ নিয়ে যাবে, যাওনি... চলো না...’’

জিলের কথা শুনে লেস্টার যেভাবে তাকাল, তাতে পরিষ্কার বোঝা যায়, সে তাজ্জব হয়ে গেছে বউয়ের এমন আবদারে। ‘‘কী! তুমি! তুমি আমার সঙ্গে যাবে?’’ ব্যাঙ্গের সুরে কথাটা বলেই সে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। ‘‘যাও যাও, জলদি আমার জিনিসপত্তরগুলো প্যাক করে ফেলো দেখি। এই দিনটার জন্য আমি যে কবে থেকে অপেক্ষায় রয়েছি! আর শোনো, তুমি ওই বাচ্চাটাকে আপাতত ক’দিন রাখতে পারো। মানে, যদ্দিন না আমি ফিরি। তবে তার বেশি কিন্তু কোনো ভাবেই নয়।’’ তারপর তার স্বর আরও ঘন হয়ে এল, ‘‘রেক্সর ৪! ওহ, আমার আর তর সইছে না।’’

 

‘‘তোকে কিন্তু খোরপোশ দিতে হবে।’’ জিলের দাদা ফ্র্যাঙ্ক বলল, ‘‘আর যাই হোক, ও একজন বিজ্ঞানী।’’

‘‘আমি পরোয়া করি না।’’ জিল সপাটে জবাব দিল, ‘‘আমি ওর থেকে আলাদা হবই। এবং সেটা ও রেক্সর ৪ থেকে ফেরার পরেই। মনে মনে আমি একেবারে তৈরি।’’

ফ্র্যাঙ্ক চুপ করে গেল। বাগানের লনে পা দু’টো ছড়িয়ে বসে আছে সে। চিন্তায় মগ্ন।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে সে বলল, ‘‘বেশ। যা ভালো বুঝিস। ডিভোর্স হয়ে গেলে তুই আবার বিয়ে করতে পারবি। বিয়ের বাজারে পাত্রী হিসেবে তোর গ্রহণযোগ্যতা এখনও যথেষ্টই রয়েছে, কী বলিস?’’

‘‘তা তো রয়েছেই।’’ জিল কাঁধ ঝাঁকাল, ‘‘হলপ করে বলতে পারি আমার কোনো সমস্যাই হবে না দাদা। আমি শিওর, এমন কাউকে পেয়ে যাব, যার বাচ্চা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’’

‘‘তুই যে বাচ্চাদের কত ভালোবাসিস জানি।’’ ফ্র্যাঙ্ক বলল, ‘‘গাস তোর কাছে আসার জন্য পাগল! কিন্তু ও মোটেই লেস্টারকে পছন্দ করে না। লেস্টারও ওকে করে না।’’

‘‘জানি। সত্যি বলতে কি লেস্টার চলে যাওয়ার পরে গত সপ্তাহটা আমাদের দারুণ কেটেছে। খুব মজা পেয়েছি। মনে হচ্ছে, যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছি।’’

‘‘ও ফিরছে কবে?’’

‘‘যে কোনো দিন।’’ আক্ষেপের সঙ্গে হাতটা ঝাঁকাল জিল, ‘‘পাঁচ বছর হল আমাদের বিয়ের। যত দিন যাচ্ছে, আমাদের সম্পর্কটা তত দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ও একটা— একটা অমানুষ। অদ্ভুত আবেগহীন আর নিষ্ঠুর! কেবল ও আর ওর কাজ। ব্যাস, এই নিয়েই ওর দিনরাত।’’

অলস ভঙ্গিতে একটা সিগারেট ধরাল ফ্র্যাঙ্ক, ‘‘লেস্টার আসলে খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী। উপরে উঠতে চায়। হয়তো, উঠে পড়বেও। ও যেন কী নিয়ে কাজ করছে?’’

‘‘টক্সিকোলজি। সেনার কাজের জন্য নতুন নতুন বিষ নিয়ে ওর কারবার। স্কিন লাইম কপার সালফেট ওরই আবিষ্কার, যা সেনারা ব্যবহারও করেছে ক্যালিস্টোতে (বৃহস্পতির উপগ্রহ)।’’

‘‘ও উঁচুতে উঠবে। আর ক্ষেত্রটাও খুবই ছোট। তবে, তুই যদি আমার কথাই ধরিস,’’ ফ্র্যাঙ্কের গলায় সন্তুষ্টির সুর, ‘‘হাজার হাজার ক্লিয়ারেন্স ল’ইয়ার আছে। আমি জানি আমি কোনো দিনই বিরাট কোনো আলোড়ন তুলতে পারব না এই কাজে। কিন্তু আমি খুশি। নিজের কাজটা করি মন দিয়ে। আর সেটা উপভোগও করি।’’

‘‘লেস্টার যদি এভাবে ভাবত।’’

‘‘ও তো বদলাতেও পারে।’’

‘‘ও কোনোদিন বদলাবে না।’’ তিক্ত স্বরে বলল জিল, ‘‘এটা আমি বুঝে গেছি। আর তাই ওকে ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছি। ও চিরকাল একই রকম থেকে যাবে।’’

 

রেক্সর ৪ থেকে ফিরে লেস্টার সত্যিই বদলে গেল। যেন একটা নতুন মানুষ।

বাড়ি ফিরেই খুশিতে উজ্জ্বল মুখে নিজের মাধ্যাকর্ষণ-বিরোধী সুটকেসটা সে তুলে দিল অপেক্ষমাণ রোবট পরিচারকের হাতে। পরিচারকটি সৌজন্যমূলক ধন্যবাদ জানাতে লেস্টারও গদগদ হয়ে ধন্যবাদ জানাল।

ব্যাপার স্যাপার দেখে অবাক জিল অস্ফুটে বলল, ‘‘লেস্টার, তুমি... মানে তোমার...’’

টুপি খুলে আলতো ঝুঁকে বউকে অভিবাদন জানিয়ে লেস্টার বলল, ‘‘সুপ্রভাত সোনা। দারুণ দেখাচ্ছ তো তোমাকে! কী নীল চোখ দু’টো! যেন কোনো স্বচ্ছ সরোবরের জলে পর্বতশ্রেণির প্রতিবিম্ব।’’ তারপর গন্ধ শোঁকার ভঙ্গি করে বলল, ‘‘কী দারুণ গন্ধ! মনে হচ্ছে কোনো সুস্বাদু খাবার গরম করা হচ্ছে?’’

‘‘লেস্টার!’’ জিল চোখ পিটপিট করল। কী এক অসম্ভবের আশায় তার বুক ধড়ফড় করছে, ‘‘লেস্টার তোমার কী হয়েছে? তুমি এত— এত বদলে গেছ!’’

‘‘তাই নাকি, সোনা?’’ লেস্টার ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। জিনিসপত্র নেড়েঘেঁটে দেখছে। ‘‘কী সুন্দর ছোট্ট একটা বাড়ি। তুমি ভাবতেও পারবে না, এখানে এসে কী ভালো লাগছে। বিশ্বাস করো...’’

‘‘বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে।’’ জিল বলল।

‘‘কী বিশ্বাস করতে?’’

‘‘যা যা তুমি বলছ, সব। বিশ্বাসই হচ্ছে না এতকাল তোমায় যেমনটা দেখেছি, তুমি আর তেমন নেই!’’

‘‘কীরকম ছিলাম?’’

‘‘নীচমনা আর নিষ্ঠুর।’’

‘‘আমি!’’ ভুরু কুঁচকে গেল লেস্টারের। ঠোঁটটা সামান্য বেঁকাল সে, ‘‘হুমম, অদ্ভুত তো।’’ তার মুখটা ক্রমে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ‘‘যাক গে, ওসব এখন অতীত। রাতে কী খাওয়াচ্ছ বলো তো? খিদের চোটে এবার অজ্ঞান হয়ে যাব।’’

অবিশ্বাসীর দৃষ্টি জিলের চোখে। রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে সে বলল, ‘‘যা চাইবে, তাই পাবে লেস্টার। তুমি তো জানো, সব থেকে বেশি পদ রান্না করার ক্ষমতাসম্পন্ন আমাদের এই স্টোভ।’’

‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই তো।’’ অপ্রস্তুতি ঢাকতে সামান্য কেশে লেস্টার বলল, ‘‘স্টিরলয়েন স্টিক, মিডিয়াম আঁচে পেঁয়াজ সহযোগে। সঙ্গে মাশরুম সস। এছাড়া হোয়াইট রোল আর গরম কফি। শেষে আইসক্রিম আর অ্যাপল পাই। বলো, কেমন হবে?’’

জিলের বিস্ময়ের যেন শেষ নেই। সে বলল, ‘‘কিন্তু খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তো তোমার কোনো কৌতূহল কখনও দেখিনি!’’

‘‘অ্যাঁ?’’ লেস্টারের মুখে অস্বস্তি।

‘‘তুমি বরাবরই বলে এসেছে, তোমার ইচ্ছে শিরায় ইনজেক্ট করে খাবারের জোগান দেওয়ার ব্যাপারটা সবার ক্ষেত্রেই নিয়ম করে দেওয়া হোক। আর সেই তুমিই এখন...’’ জিল স্বামীর দিকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বলল, ‘‘লেস্টার, তোমার কী হয়েছে বলো তো?’’

‘‘কী আবার হবে? কিস্যু না।’’ লেস্টার তড়িঘড়ি পকেট থেকে পাইপ বের করে ধরাতে গেল। তাড়াহুড়োয় খানিকটা তামাক বিছানায় পড়ল। সে সব ঝাড়তে ঝাড়তে লেস্টার বলল, ‘‘যাক গে, তুমি আর দাঁড়িয়ে থেকো না। রান্নাঘরে যাও। বলো তো রান্নার কাজে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। বা অন্য কোনো ভাবেও যদি সাহায্য...’’

‘‘না না, দরকার হবে না। আমি করে নিচ্ছি।’’ জিল বলল, ‘‘তুমি বরং কাজে বসে যাও।’’

‘‘কাজ?’’

‘‘আরে তোমার গবেষণা... টক্সিন নিয়ে...’’

‘‘টক্সিন!’’ লেস্টার যেন আঁতকে উঠল। ‘‘ওরে বাবা! ওসব দিয়ে কী হবে?’’

‘‘কী বলছ কী!’’

‘‘না মানে বলছিলাম, এই মুহূর্তে আমি অসম্ভব ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কাজ পরে হবে। এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে চুপ করে বসে বাড়ি ফেরাটা উপভোগ করি। ওহ! রেক্সর ৪ যে কী ভয়ঙ্কর জায়গা!’’

‘‘খুবই ভয়াবহ?’’

‘‘ভয়ঙ্কর।’’ লেস্টারের মুখে যেন বিতৃষ্ণার ছাপ ফুটে উঠল। ‘‘শুকনো, মৃত, প্রাচীন। সূর্য আর বাতাস যেন গ্রহটার সব রস শুষে নিয়েছে! বড়ই বিপজ্জনক জায়গা!’’

‘‘শুনে খারাপ লাগছে। ওই গ্রহে যাওয়ার শখ আমার বহু দিনের।’’

‘‘খবরদার!’’ যেন আঁতকে উঠল লেস্টার, ‘‘তুমি এখানেই থাকবে প্রিয়তমা, আমার সঙ্গে। আমরা দু’জনে... শুধু দু’জনে।’’ চারপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে লেস্টার বলল, ‘‘টেরা সত্যিই সুন্দর একটা গ্রহ। কেমন প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা!’’

 

‘‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ জিল বলল।

‘‘ভাল করে ভেবে ভেবে সবটা বল তো। কী কী পরিবর্তন দেখেছিস ওর মধ্যে। জানতে খুব কৌতূহল হচ্ছে।’’ ফ্র্যাঙ্ক বল‌ল। তার রোবট পেন্সিল নিজেই নিজেই সবটা লিখে চলেছে কাগজে।

‘‘কেন?’’

‘‘তেমন কোনো কারণ নেই। তুই বল না। ঠিক কী কী দেখে কেন তোর মনে হচ্ছে ও বদলে গেছে?’’

‘‘আমি প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেরেছিলাম ওর মুখের ভঙ্গিটা পাল্টে গেছে। সেই কঠোর, বাস্তববাদী ভাবটাই উধাও। তার বদলে শান্ত, নরম, সহনশীলতার স্পষ্ট ছাপ।’’

‘‘বেশ, আর কী?’’

জিল ভয়ে ভয়ে পিছনের দরজাটার দিকে তাকাল। জানতে চাইল, ‘‘ও আবার শুনতে পেয়ে যাবে না তো?’’

‘‘নাহ। ও এখন লিভিং রুমে। গাসের সঙ্গে খেলছে। তুই বলে যা।’’

‘‘ওর কথা বলাটাও পাল্টে গেছে।’’

‘‘কী পাল্টেছে বললি?’’

‘‘কথা বলা। মানে যেভাবে ও কথা বলত। ওর শব্দ চয়ন। লেস্টার এমন সব শব্দ ব্যবহার করছে যা ও কখনও করত না। নতুন নতুন সব উপমা, রূপক! পাঁচ বছরে কখনও শুনিনি ও কথা বলার সময় এসব ব্যবহার করছে। বরং বরাবরই বলে এসেছে, রূপক-টুপক সব অনর্থক। তাছাড়া...’’

‘‘তাছাড়া কী?’’ ফ্র্যাঙ্ক জানতে চাইল। তার রোবট পেনসিল খসখস করে লিখে চলেছে কাগজে।

‘‘তাছাড়া ওর কথায় অনেক সেকেলে শব্দ মিশে আছে। ওই সব শব্দ এখন আর কেউ ব্যবহার করে না।’’

‘‘পুরোনো দিনের ভাষা?’’ ফ্র্যাঙ্ক জিজ্ঞেস করল।

‘‘হ্যাঁ।’’ লনে দ্রুত পায়চারি করতে করতে জিল বলল, ‘‘কাগুজে শব্দ। যেমন...’’

‘‘যেমনটা বইতে ব্যবহৃত হয়?’’

‘‘একেবারেই তাই! তুমিও লক্ষ করেছ?’’

‘‘হুম। করেছি।’’ ফ্র্যাঙ্কের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ‘‘তুই বলে যা।’’

জিল পায়চারি থামিয়ে ঘুরে তাকাল, ‘‘তুমি কী ভাবছ বলো তো দাদা?’’

‘‘আমি আরও তথ্য জানতে চাইছি ওর সম্পর্কে।’’

‘‘ও খেলছে। গাসের সঙ্গে খেলছে। জোকস শোনাচ্ছে। আর ও— ও খাচ্ছে!’’ জিল বলল।

‘‘মানেটা কী? আগে খেত না নাকি?’’

‘‘খেত তো বটেই। কিন্তু এখনকার মতো নয়। ও এখন খেতে রীতিমতো ভালোবাসে। রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে পাগলের মতো নানা রকমের উপকরণ ট্রাই করে। আজব সব জিনিস রান্না করে।’’

‘‘ওর তো ওজনও বেড়েছে মনে হচ্ছে।’’

‘‘দশ পাউন্ড বেড়েছে।’’ জিল বিস্ময়াবিষ্ট গলায় বলল, ‘‘ও খাচ্ছে! হাসছে হো হো করে! আর কত ভদ্রও হয়ে গেছে!’’ বলতে বলতে আরও নরম হয়ে এল জিলের গলা, ‘‘এমনকী... এমনকী ও এমন রোম্যান্টিকও আগে কখনও ছিল না। বরং এসব ব্যাপার স্যাপার পছন্দই করত না। বলত অযৌক্তিক। তবে সব থেকে আশ্চর্যের হল, ও কাজকর্মের প্রতি আর আগ্রহী নয়। টক্সিন নিয়ে গবেষণার কাজটায় ওর কোনো মাথাব্যথাই যেন নেই!’’

‘‘বুঝেছি। আর কিছু?’’ জানতে চাইল ফ্র্যাঙ্ক।

‘‘আর একটা ব্যাপার। যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি।’’

‘‘কী সেটা?’’

‘‘ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও যেন... ও যেন...’’

ঠিক সেই সময় প্রবল হাসির বন্যায় জিলের কথা আটকে গেল। ছোট্ট গাসকে সঙ্গে নিয়ে লেস্টার হেরিক ছুটতে ছুটতে লনে ঢুকে পড়েছে। লেস্টারের চোখ দু’টো উজ্জ্বল খুশিতে ভরা।

‘‘আমাদের একটা ঘোষণা আছে।’’ লেস্টার চেঁচাল।

‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ঘোষ-সণা আছে।’’ কচি কণ্ঠে গাস বলল।

ফ্র্যাঙ্ক চটজলদি কাগজ-পেনসিল পকেটে ঢুকিয়ে জানতে চাইল, ‘‘কী সেটা?’’

‘‘তুমি বলো।’’ গাসকে হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে লেস্টার বলল।

গাস স্পষ্ট স্বরে জানাল, ‘‘আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব।’’ বলেই গাস জিলের মুখের দিকে তাকাল, ‘‘লেস্টার বলেছে আমাকে। আমি থাকব তো? থাকব তো পিসি?’’

জিল উত্তর দিতে পারল না। তার মনের মধ্যে অকস্মাৎ জেগে ওঠা খুশির ঢেউয়ে সে তখন বেসামাল। কোনো মতে নিজেকে সামলে জিল লেস্টারের কাছে জানতে চাইল, ‘‘তুমি সত্যি সত্যিই এটা বলেছ?’’ তার কণ্ঠস্বর ক্রমে আর্দ্র হয়ে এল।

লেস্টার হাত বাড়িয়ে জিলকে কাছে টেনে নিল, ‘‘অবশ্যই। তুমি কি ভাবলে তোমার সঙ্গে মজা করছি?’’

‘‘মোটেও না, মোটেও না।’’ গাসও চিৎকার করল।

দূরে দাঁড়িয়ে ফ্র্যাঙ্ক। তার চোখমুখ কঠিন। সেদিকে নজর পড়তেই চমকে উঠল জিল। ‘‘ক্কী কী হয়েছে দাদা? কোনো সমস্যা?’’

ফ্র্যাঙ্ক তার কথার উত্তর না দিয়ে লেস্টারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘লেস্টার, তুমি আমার সঙ্গে একটু আসবে?’’

জিলের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। ‘‘কেন? আমিও কি আসতে পারি?’’

ফ্র্যাঙ্ক ঘাড় নেড়ে অসম্মতি প্রকাশ করল। তারপর লেস্টারের কাছে এসে বলল, ‘‘এসো লেস্টার। খুব দূরে যাব না। কাছেই।’’

 

তিনজন ফেডেরাল ক্লিয়ারেন্স এজেন্ট পাশাপাশি বসে আছেন। তাঁদের থেকে সামান্য দূরে বসেছে লেস্টার হেরিক।

লেস্টারের দিকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে ক্লিয়ারেন্স ডিরেক্টর ডগলাস ফ্র্যাঙ্ককে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনি নিশ্চিত?’’

‘‘একশো শতাংশ।’’ ফ্র্যাঙ্ক বলল।

‘‘রেক্সর ৪ থেকে উনি কবে ফিরেছেন?’’

‘‘এক সপ্তাহ হল।’’

‘‘আর ফেরার পর থেকেই পরিবর্তনগুলি লক্ষ করা গেছে?’’

‘‘ওর স্ত্রী প্রথম দেখার পর থেকেই বুঝতে পেরেছে। কোনো সন্দেহই নেই রেক্সরেই ব্যাপারটা ঘটেছে।’’ সামান্য থেমে ইঙ্গিতপূর্ণ ভঙ্গিতে ফ্র্যাঙ্ক বলল, ‘‘আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আমি ঠিক কী বলতে চাইছি।’’

‘‘বুঝতে পারছি।’’ ডগলাস চেয়ারে বসা লেস্টার হেরিককে প্রদক্ষিণ করতে করতে খুঁটিয়ে দেখে চললেন।

লেস্টার চুপ করে বসে রয়েছে। তার পরনে ধূসর একটা স্যুট। গলাবন্ধ চাপা টাই, ফরাসি কাফলিং ও চকচকে কালো জুতো। অভিব্যক্তিহীন ও শীতল তার মুখ। হাত দু’টো সাদা ছড়িটার উপরে রাখা। সে কোনো কথা বলছে না।

‘‘ওদের পদ্ধতিটা খুব সরল আর নিখুঁত।’’ ডগলাস বললেন, ‘‘আসল সত্তাটাকে সরিয়ে নিয়ে কোনো গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখা। তারপর শরীরটায় তৎক্ষণাৎ ইঞ্জেকশন দিয়ে অনুপ্রবেশকারীকে ঢুকিয়ে দেওয়া। লেস্টার হেরিক নিশ্চয়ই রেক্সর-এর ধ্বংসাবশেষের দিকটায় চলে গিয়েছিলেন, নিরাপত্তাজনিত সতর্কতাকে পাত্তা না দিয়ে। আর তখনই ওরা তাঁকে ধরে ফেলে।’’

এতক্ষণের নীরবতা ভেঙে লেস্টার বলে উঠল, ‘‘আমি জিলের সঙ্গে কথা ব‌লতে চাই। ও নিশ্চয়ই আমাদের দেরি দেখে চিন্তা করছে।’’

ফ্র্যাঙ্ক অবাক হয়ে লেস্টারের দিকে দেখতে দেখতে বলল, ‘‘হে ভগবান। এ যে এখনও ভান করে যাচ্ছে!’’

ফ্র্যাঙ্কের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর সত্ত্বেও ডগলাস সংযত রইলেন। বললেন, ‘‘ব্যাপারটা কী অদ্ভুত! যতই দেখুন, চেহারায় কোনো পরিবর্তন আবিষ্কার করতে পারবেন না।’’ তারপর লেস্টারের দিকে ঘুরে স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন, ‘‘শোনো হে, জানি না কী তোমার নাম, তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ?’’

‘‘অবশ্যই।’’ লেস্টার উত্তর দিল।

‘‘তোমার কি সত্যিই মনে হয়, তুমি রেহাই পাবে? আমরা অন্য সবাইকে ধরে ফেলেছি। ভাইব্রো রশ্মি চালিয়ে দশ জনের প্রত্যেককেই একে একে সনাক্ত করেছি।’’

‘‘অ্যাঁ!’’লেস্টার হেরিকের মুখটা বর্ণহীন হয়ে গেল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বুকপকেট থেকে রুমাল বের করে মুখটা মুছতে চেষ্টা করল সে।

‘‘তোমরা আমাদের বোকা বানাতে পারোনি। টেরা গ্রহের সকলেই রেক্সরের বাসিন্দাদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি তুমি রেক্সর থেকে কী করে বেরোতে পারলে? হেরিক অত্যন্ত অসচেতন ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য সকলকে মহাকাশযানে থাকা অবস্থাতেই ধরে ফেলেছি। তারপর মহাশূন্যেই ভাজা ভাজা করে ফেলেছি।’’

‘‘হেরিকের যানটা ছিল ব্যক্তিগত।’’ চেয়ারে বসা ফ্যাকাশে চেহারার মানুষটা ফিসফিসিয়ে বলল, ‘‘চেক স্টেশনটাকে বাই পাস করে ও বেরিয়ে গেছিল। ওর আসার কোনো খবরই তাই রেকর্ডেড ছিল না। ওর যানটা চেক করাই হয়নি।’’

একথা শুনে ডগলাসের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। তিনি দাঁত কড়মড় করে বলে উঠলেন, ‘‘ভাজা ভাজা করে ফেলো একে!’’ তাঁর নির্দেশ পেতেই ঘরে উপস্থিত তিন জন ক্লিয়ারেন্স এজেন্ট তাদের টিউবগুলি তাক করল।

‘‘না, এটা আমরা করতে পারি না।’’ ফ্র্যাঙ্ক মাথা নেড়ে বলল।

‘‘কেন পারব না? কী বলতে চাইছেন আপনি? বাকিদের যখন করতে পেরেছি...’’

‘‘তারা ধরা পড়েছিল মহাকাশে। এটা টেরা। এখানে টেরার নিয়মই চলবে।’’ বসে থাকা মানুষটার দিকে আঙুল তুলে দেখাল ফ্র্যাঙ্ক, ‘‘এবং এই শরীরটা একটা মানব শরীর। সুতরাং মানুষদের জন্য যা আইন, সেভাবেই বিচার চলবে। আমাদের প্রমাণ করতে হবে এটা লেস্টার হেরিক নয়। রেক্সরের অনুপ্রবেশকারী। কাজটা কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়।’’

‘‘কীভাবে প্রমাণ করবেন?’’

‘‘ওর স্ত্রী। মানে হেরিকের স্ত্রী। ওর সাক্ষ্য থেকে সেটা প্রমাণ করা সম্ভব। হেরিক ও অনুপ্রবেশকারী জীবটার মধ্যে কী তফাত সেটা জিল হেরিক আমাদের জানাবে। ও সবই বুঝতে পেরেছে। আমার ধারণা আদালতে আমরা সহজেই প্রমাণ করে দিতে পারব পুরো ব্যাপারটা।’’

 

বিকেল ফুরিয়ে এসেছে। ফ্র্যাঙ্ক গাড়ি চালাচ্ছে। তার পাশে জিল। দু’জনেই চুপ।

অনেকক্ষণ পরে জিল মুখ খুলল, ‘‘তাহলে এই ব্যাপার! এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে খুবই ভালো ব্যাপার হবে সেটা।’’ তার মুখের রং ধূসর। চোখ দু’টোয় কোনো আবেগ নেই। সে কেবল সামান্য হাসতে চেষ্টা করল।

‘‘আমি জানি।’’ ফ্র্যাঙ্ক বলল, ‘‘একটা ঘৃণ্য জীব ওটা।’’

‘‘কিন্তু কেন ওই জীবটা লেস্টারের শরীরটা দখল করল? ওর উদ্দেশ্যটা কী?’’

‘‘রেক্স ৪ একটা পুরোনো, মৃতপ্রায় গ্রহ। ধীরে ধীরে জীবন সেখানে ফুরিয়ে আসছে।’’

‘‘এবারে মনে পড়ছে। ফিরে আসার পরে ও এরকমই কিছু বলেছিল। বলেছিল, রেক্সর থেকে ফিরে এসে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।’’

‘‘আসলে রেক্সরিয়ানরা অনেক পুরোনো প্রজাতি। অবশিষ্ট যারা রয়েছে তারা ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। গত কয়েক দশক ধরে ওরা নিজেদের বাঁচাতে চাইছে। কিন্তু পেরে উঠছে না। দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ শুক্রগ্রহে গিয়েছিল। বাঁচেনি। ওরা নাগাড়ে চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু দিনে দিনে আরও বিপন্ন হয়ে পড়ছে।’’

‘‘কিন্তু ওই জীবটা এত কিছু কী করে জানল টেরা সম্পর্কে? আমাদের ভাষাও দিব্যি বলতে পারে।’’

‘‘না, দিব্যি বলতে পারে না। তুই-ই আমাকে বলেছিলিস। ওর কথায় সেকেলে শব্দের ছড়াছড়ি। আসলে রেক্সরিয়ানদের আমাদের সম্পর্কে আবছা জ্ঞান রয়েছে। আর এই জ্ঞানের উৎস হল প্রধানত টেরার বইপত্তর। এখানকার প্রাচীন সাহিত্য, বিশেষ করে পুরোনো প্রেমের উপন্যাস পড়েই ওরা এখানকার আদবকায়দা, কথাবার্তা সব রপ্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে চেষ্টা করলেও পদ্ধতিটা ভুল ছিল। আসলে আমাদের থেকে অন্তত ২০০ বছরের পুরোনো ওদের সভ্যতা। তাই আমাদের মতো চাইলও হয়ে উঠতে পারে না। ফাঁক থেকে যায়। আর তাই সহজেই ধরে ফেলা যায়।’’

‘‘অবিশ্বাস্য। পুরো ব্যাপারটাই কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে। বিশ্বাস করাই শক্ত। ভাবতে পারছি না।’’

‘‘আমাদের ছায়াপথের বিভিন্ন গ্রহে কত রকমের জীব যে রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে এই ধরনের ক্ষতিকর পরজীবীও। টেরার বাসিন্দাদের এদের এড়িয়ে চলতে হয়। লেস্টার সেটা করেনি। সেই সুযোগে এই জীবটা ওর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর শরীরটা দখল করে ফেলে।’’

কথা বলতে বলতেই ফ্র্যাঙ্কের নজর গেল তার বোনের দিকে। জিল নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। কোলের উপরে রাখা হাত দু’টো। কঠিন মুখে আবেগের ছিটেফোঁটা নেই। সে গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে।

‘‘শোন, আমরা যা প্ল্যান করেছি, তাতে তোকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে না।’’ ফ্র্যাঙ্ক বলল, ‘‘তোর বক্তব্যটা ভিডিও রেকর্ড করে রাখা হবে। সেটাই সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে বিচারের সময় উপস্থিত করা হবে। আমি নিশ্চিত, ওতেই কাজ হবে। ফেডেরাল আদালত আমাদের সব রকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু অকাট্য প্রমাণ ছাড়া তাদের পক্ষে এগোনো কঠিন।’’

জিল চুপ করে আছে দেখে ফ্র্যাঙ্ক জানতে চাইল, ‘‘কী হল, চুপ করে গেলি কেন? তোর মতটা বল।’’

‘‘আদালতে ব্যাপারটা প্রমাণ হয়ে গেলে তারপর কী হবে?’’

‘‘তারপর ভাইব্রো রশ্মি দিয়ে লেস্টারের শরীরে থাকা জীবটাকে খতম করে ফেলা হবে। ল‌েস্টারের শরীর থেকে মুছে যাবে আদ্যিকালের রেক্সরিয়ান সত্তাটা। ওদিকে রেক্সর ৪-এৱ উদ্দেশে একটা মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে। ওরা খুঁজে দেখবে... ইয়ে মানে... লেস্টারের আসল সত্তাটা।’’

কথাটা শুনে জিল যেন চমকে উঠল। সে ফ্র্যাঙ্কের দিকে ফিরল, ‘‘মানে তুমি বলছ...’’

‘‘হ্যাঁ, যা ভাবছিস তাই। লেস্টার বেঁচে আছে। রেক্সরেরই কোথাও। ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের কোনো নির্জন কোণে। আমরা ওকে ঠিক ছাড়িয়ে আনতে পারব। রেক্সর-এর বাসিন্দার ওকে হয়তো ছাড়তে চাইবে না। কিন্তু ওরা বাধ্য হবে। এর আগেও এমন কাজে ওদের বাধ্য করা হয়েছে। ব্যাস, তারপর আর কী! লেস্টার ফিরে আসবে তোর কাছে। একেবারে সুস্থ সবল অবস্থায়। এক্কেবারে আগের মতো। আর এই ক’টা দিনের অভিজ্ঞতাটা কেবল একটা বিশ্রী দুঃস্বপ্ন মাত্র হয়ে থেকে যাবে।’’

জিল মাথা নাড়ল, ‘‘বুঝেছি।’’

‘‘আমরা এসে গেছি।’’ ফেডেরাল ক্লিয়ারেন্স বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি দাঁড় করাল ফ্র্যাঙ্ক। তারপর চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে এসে জিলের দিকের দরজাটা খুলে বোনকে ডাকল, ‘‘সব ঠিক আছে?’’

‘‘হুম। ঠিক আছে।’’

 

বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতেই চেক স্ক্রিনের সামনে রুটিন পরীক্ষা করা হল ওদের। তারপর তারা দু’জনে হেঁটে চলল লম্বা করিডর দিয়ে। তাদের সঙ্গে ছিল ক্লিয়ারেন্স এজেন্টরাও। জিলের হাই হিলের শব্দে নিস্তব্ধ করিডর মুখর হয়ে উঠল।

‘‘কী নিস্তব্ধ দেখেছিস!’’ ফ্র্যাঙ্ক বলল।

‘‘কেমন যেন নিষ্ঠুরও।’’ জিল যোগ করল।

‘‘ধরে নে একটা ঝাঁ চকচকে থানা।’’ বলতে বলতে একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল ফ্র্যাঙ্ক। ‘‘আমরা এসে গেছি।’’

‘‘দাঁড়াও।’’ জিল খানিক পিছিয়ে এল। তার মুখে চোখে কেমন একটা আতঙ্কের ছাপ। ‘‘আমি...’’

‘‘তুই প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই দাঁড়াচ্ছি।’’ ক্লিয়ারেন্স এজেন্টদের ইশারায় চলে যেতে বলে সস্নেহে বোনকে বলল ফ্র্যাঙ্ক, ‘‘আমি বুঝতে পারছি। ব্যাপারটা মোটেই সহজ নয়।’’

জিল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তার মাথাটা নিচু। হাত দু’টো শক্ত করে মুঠি পাকানো। সে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিল। তার মুখটা ক্রমে শক্ত হয়ে উঠল। সে বলল, ‘‘ঠিক আছে।’’

‘‘তুই প্রস্তুত?’’

‘‘হ্যাঁ।’’

ফ্র্যাঙ্ক দরজাটা খুলল, ‘‘আয়, আমরা যাই।’’

ভিতরে ডগলাস ও তিন জন ক্লিয়ারেন্স এজেন্ট যেন এতক্ষণ ওদের অপেক্ষাতেই ছিল।

ডগলাস আলতো স্বরে বললেন। ‘‘যাক! আমাদের চিন্তা হচ্ছিল।’’

দূরে চেয়ারে বসে থাকা লোকটা নিজের কোটের প্রান্ত চেপে ধরল উৎকণ্ঠায়। তারপর ছড়িটা শক্ত করে ধরে জিল‌ের দিকে তাকিয়ে রইল। কোনো কথা বলল না। ফ্র্যাঙ্ক জিলের পিছনেই ছিল। সে পরিচয় করিয়ে দিল, ‘‘এই যে ইনিই মিসেস হেরিক। আর জিল, ইনি ক্লিয়ারেন্স অধিকর্তা ডগলাস।’’

‘‘আমি আপনার কথা শুনেছি।’’ মৃদু স্বরে জিল বলল।

‘‘তাহলে তো আপনি আমাদের কাজের কথাও শুনেছেন।’’

‘‘হ্যাঁ, আমি জানি আপনাদের কাজের কথা।’’

‘‘খুবই বিতিকিচ্ছিরি কাজ। আগেও এমন কাজ করতে হয়েছে। ইয়ে, ফ্র্যাঙ্ক বলেছে তো ব্যাপারটা?’’

‘‘ও পুরো বিষয়টাই ব্যাখ্যা করেছে আমার কাছে।’’

‘‘যাক।’’ ডগলাসকে খানিক আশ্বস্ত দেখাল। ‘‘এটা জেনে আমার ভালো লাগল। এটা বুঝিয়ে বলা সহজ নয়। আপনি যখন সবটাই জেনেছেন, তখন বুঝতেই পেরেছেন আমরা ঠিক কী চাই। এর আগের কেসগুলো সব মহাশূন্যে ধরা পড়েছে। আমরা ভাইব্রো রশ্মি দিয়ে তাদের খতম করে আসল সত্তাগুলো ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু এবার আমাদের আইনি পদ্ধতিতে কাজটা করতে হবে।’’

ভিডিও টেপ রেকর্ডারটা সামনে রেখে ডগলাস বললেন, ‘‘আপনার বিবৃতি আমাদের দরকার মিসেস হেরিক। যেহেতু লেস্টারের শরীরে প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ পাইনি, তাই কেসটা দাঁড় করাতে কোনো সরাসরি প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। আপনার চোখে ধরা পড়া লেস্টারের আচরণের সমস্ত পরিবর্তনগুলোই আপনারা প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চাই।’’

ভিডিও টেপ রেকর্ডারটা জিলের দিকে এগিয়ে দিলেন। জিল সেটা নিজের কাছে ধরলেন।

‘‘আমার বক্তব্য নিঃসন্দেহে আদালতে গ্রাহ্য হবে। আদালত আমাদের অনুমতি দেবে। ব্যাস, তাহলেই আমরা পরের পদক্ষেপটা করতে পারব। আর তা করলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।’’

জিল ঘাড় ঘুরিয়ে কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা নীরব মানুষটির দিকে তাকাল। তার পরনের কোট আর হাতে ধরা শুভ্র ছড়িটির দিকে দেখতে দেখতে জানতে চাইল, ‘‘আগের মতো? কী বলতে চাইছেন বলুন তো?’’

‘‘মানে পরিবর্তনের আগের মতো আর কী।’’

জিল ডগলাসের দিকে ফিরল। ধীরে ধীরে ভিডিও টেপ রেকর্ডারটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে প্রশ্ন করল, ‘‘কোন পরিবর্তনের কথা বলছেন?’’

ডগলাসের মুখটা মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কথা খুঁজতে ঠোঁটে জিভ বোলালেন তিনি। গোটা ঘরের সকলের চোখ এই মুহূর্তে জিলের দিকে নিবদ্ধ।

‘‘ওই মানুষটির মধ্যে যে পরিবর্তন।’’

‘‘জিল!’’ ফ্র্যাঙ্কের ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে গেল। ‘‘কী হল তোর?’’ সে দ্রুতবেগে এগিয়ে এল জিলের দিকে, ‘‘কী করছিস বল তো! তুই ভালো করেই জানিস কোন পরিবর্তনের কথা আমরা বলতে চাইছি।’’

‘‘সত্যিই বুঝতে পারছি না।’’ জিল খানিক চিন্তান্বিত স্বরে বলল, ‘‘আমি তো কোনো পরিবর্তন দেখিনি।’’

ডগলাস ও ফ্র্যাঙ্ক পরস্পরের মুখের দিকে দেখল। ফ্র্যাঙ্ক বলে উঠল, ‘‘আমি কিস্যু বুঝতে পারছি না।’’ ডগলাস শেষ চেষ্টা করতে জিলের উদ্দেশে কিছু বলতে গেলেন, ‘‘মিসেস হেরিক...’’

জিল ততক্ষণে এগিয়ে গিয়েছে কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে, ‘‘আমরা কি এবার যাব?’’

তার হাত স্পর্শ করল জিল। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে ডগলাসদের উদ্দেশে প্রশ্ন করল, ‘‘আমার স্বামীকে এখানে আটকে রাখার কি আর কোনো কারণ আছে?’’

 

অন্ধকার রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে এক নারী ও পুরুষ।

‘‘চলো,’’ জিল বলল, ‘‘বাড়ি যাই।’’

জিলের দিকে তাকাল লোকটি, ‘‘কী সুন্দর এই বিকেলটা!’’ তারপর প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে বলল, ‘‘বসন্ত এসে গেছে! কী বলো?’’

জিল মাথা দু’পাশে নাড়িয়ে বলল, ‘‘কী জানি। তবে খুব সুন্দর একটা গন্ধ পাচ্ছি। মাটি থেকে, বাতাস থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ বেরিয়ে আসছে।’’

‘‘হ্যাঁ।’’

‘‘আমরা কি হেঁটেই যাব? এখান থেকে কতটা দূর?’’

‘‘খুব দূরে নয়।’’

লোকটি জিলের দিকে দেখল। আবেগরুদ্ধ স্বরে বলল, ‘‘তোমার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই প্রিয়তমা। আমি তোমাকে কী ভাবে যে ধন্যবাদ দেব! আমি ভাবতেই পারিনি, তুমি... তুমি আমাকে...’’

জিল লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, ‘‘তোমার নাম কী? মানে, তোমার আসল নামটা।’’

লোকটির চোখে ফুটে উঠল দীপ্তি। কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে সে বলল, ‘‘আমি ভয় পাচ্ছি, তুমি ওটা উচ্চারণই করতে পারবে না বোধহয়। আসলে শব্দটা... তোমাদের জিভে...’’

জিল কোনো কথা বলল না।

দু’জনে পাশাপাশি হেঁটে চলল। সন্ধে নামছে। শহরের রাস্তায় একে একে জ্বলে উঠেছে উজ্জ্বল হলুদ আলোগুলি।

‘‘কী ভাবছ?’’ জানতে চাইল লোকটি।

‘‘আমি ভাবছিলাম তোমাকে যদি লেস্টার বলেই ডাকি? তুমি কি রাগ করবে?’’ জিল জানতে চাইল।

‘‘আমি কিচ্ছু মনে করব না।’’ লোকটি বলল। তার হাত জড়িয়ে রেখেছে জিলের বাহু। সে জিলকে কাছে টানল। উজ্জ্বল হলুদ আলোর বাতিস্তম্ভ ও তার মাঝের অন্ধকারময় রাস্তা পেরিয়ে যেতে যেতে নরম স্বরে সে বলল, ‘‘তোমার যা ইচ্ছে হয় ডেকো। যা করলে তুমি খুশি হবে, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’’

(মূল গল্প: হিউম্যান ইজ)