হাই মাইলেজ ● জেজি ফ্যাহার্টি ● অনুবাদ: মো. ফুয়াদ আল ফিদাহ


 

 

‘কেমন? চলে?’ বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে বলল বব হ্যারিসন, মুখে দুষ্টুমির হাসি।

ঈর্ষা বোধ করল সিড চেম্বারস, কিন্তু সেটা দেখাল না। উল্টে শিস বাজিয়ে বলল, ‘দারুণ।’

‘হ্যাঁ, গতকালই পেয়েছি। দ্য ডব্লিউ-৯, বিক্রেতা আমাকে ভালো ছাড় দিয়েছে। পুরো ছয় হাজার কম নিয়েছে সে!’

‘বলো কী! এত?’

ডব্লিউ-৫-এর বিনিময়ে বব এই জিনিস পেয়েছে, সেটা বিশ্বাসই হচ্ছে না সিডের; কমপক্ষে দশ বছর পুরোনো ছিল ওটা। সামনে ঝুঁকে একটা বিয়ার তুলে নিল নিজের জন্য। বাইরে তাপমাত্রা প্রায় নব্বই ডিগ্রিতে পৌঁছে গেছে।

‘তোমার পুরোনোটা বদলে ফেলো, সিড,’ বব সিডের বাড়ির দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করল। শেলি দাঁড়িয়ে আছে গাড়িপথে, ধুচ্ছে ওদের গাড়ি। ‘আমার বাবা কী বলত জানো? ‘হাই মাইলেজ মানে হাই মেইনটেইন্যান্স।’ ’

দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিড। ‘টাকা নেই, সিড জুনিয়র এক বছর পরেই কলেজ শুরু করতে চলেছে।’ ববের ডব্লিউ-৯-এর দিকে তাকাল সে। ‘তবে স্বীকার করতেই হয়, তোমারটা আমারটার তুলনায় অনেক গুণে ভালো।’

বিয়ারটুকু শেষ করে জঞ্জালে ফেলে দিল সিড। ‘আজ চলি। বব, শুভকামনা রইল তোমার জন্য। তবে যা বললাম, ভেবে দেখো। ওই পুরোনো মালটা না বদলালে, শেষ পর্যন্ত তোমার মোট খরচ কিন্তু অনেক বেশি পড়বে।’

পেছনে একবারও না তাকিয়ে হাত নাড়ল সিড, পেরোল রাস্তাটা। তবে সে রাতে, বিছানায় শুয়ে থেকে, ভাবল ববের বলা বাক্যটা।

হাই মাইলেজ মানে হাই মেইনটেইন্যান্স।

বাক্যটা কোনোভাবেই মন থেকে সরাতে পারছে না।

 

‘উ-উ-উ-হু-হু-হু, দারুণ জিনিস কিনেছ।’

ঘুরে তাকাল সিড, বব হ্যারিসন রাস্তার উল্টো পাশে দাঁড়িয়ে আছে; চিঠিপত্র বের করছে মেইলবাক্স থেকে।

‘শুভ বিকেল, বব।’ কণ্ঠ থেকে গর্ব সরাতে পারল না সিড, মুখের হাসিও সরাল না। আসলে সকাল থেকেই হাসছে, কাগজপত্রে সই করার পর থেকে।

‘আমার পরামর্শ কানে তুলেছ দেখি!’ সিডের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল বব।

‘ঠিক বলেছিলে তুমি; রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেখলাম, সত্যিই অনেক খরচ।’

‘ডব্লিউ-১০?’

ববের কণ্ঠের ঈর্ষা পরিষ্কার ধরা পড়ল সিডের কানে।

‘হ্যাঁ, এখনো চেখে দেখিনি। সরাসরি বাসায় এনেছি বলতে পারো।’

‘দারুণ তো!’

‘দশ বছরের ওয়ারেন্টিও আছে। উল্টো-পাল্টা কিছু হলে বিনামূল্যে সারিয়ে দেবে।’

‘তাহলে তো উদযাপন করা দরকার। তুমি আর তোমার বউ শুক্রবার রাতে এসো, বিয়ার আর বার্বিকিউ হবে।’

নকল স্যালুট ঠুকল সিড। ‘বার্গার তুমি খাওয়াও, আমরা পানীয় আনব।’

‘সে কথাই রইল তাহলে।’

দরজার দিকে এগিয়ে গেল সিড। শেলি বেরিয়ে এসে বাজারের ব্যাগগুলো নিল হাতে। হাসি লেগে আছে মেয়েটির মুখে। ‘হাই, সোনা।’

‘হাই, জান। ডিনারে কী?’

 

‘শন, আলুর তরকারীটা এগিয়ে দাও তো।’ শেলি চেম্বারস হাত বাড়িয়ে দিল পাত্রটির দিকে। ওর পাশে বসে থাকা লম্বা চুলের ছেলেটা পাত্তাই দিল না, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিজের পাত্রের দিকে।

যখন বুঝতে পারল যে শেলির অনুরোধে কান দেবে না ছেলে, তখন গলা খাঁকরানি দিল সিড। ‘শন, মাকে পাত্রটা এগিয়ে দাও।’

চোখ তুলে চাইল ছেলেটা। বাদামি চোখ ছোট ছোট হয়ে গেছে, ফুলে গেছে নাকের পাটা। ‘ও আমার মা নয়।’

‘শন!’ পানির গ্লাসটা টেবিলের ওপর দুম করে বসাল সিড। ‘মুখ সামলে কথা বলো।’

‘ও আমার মা নয়। আমি ওর কথা শুনতে বাধ্য নই!’ চামচ থালায় রেখে, চেয়ার পেছনে ঠেলে সরাল ছেলেটা। ‘আর আমাকে তুমি বাধ্য করতে পারো না!’ হল ধরে পা ফেলে বেরিয়ে গেল সে, এক মুহূর্ত পর শব্দ করে শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করার আওয়াজ ভেসে এল।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিড। নতুন শেলিকে ঘরে আনার পর থেকে অদ্ভুত আচরণ করে চলছে শন। কিছুই বুঝতে পারছে না সে। অন্য পুরুষরা স্টাইল পাল্টায়, ও সেটাও করেনি। আসল শেলির মতোই যেন হয় নতুন মডেলটা, সেটা নিশ্চিত করেছে। যদিও বয়েস বিশ বছর কম হবে। এমনকী শনের আসল মায়ের স্মৃতিও ঢুকিয়ে দিয়েছে সে।

তাহলে সমস্যা কোথায়?

‘সব ঠিক আছে, সোনা,’ শেলি আলতো করে চাপড় বসাল ওর হাতে। ‘ওর বয়েস ষোলো, অনুভূতি প্রকাশ করছে। ওই বয়সে সবাই তা করে।’

মেয়েটির দিকে তাকাল সিড। আরও একবার মুগ্ধ হয়ে গেল বহু বছর আগে বিয়ে করা মেয়েটিকে দেখে। ধূসর চুলগুলো আর নেই, নেই ঝুলে পড়া স্তন। ক্লান্ত চোখগুলো এখন প্রাণবন্ত। ত্বক একেবারে তরুণ, ভাঁজ পড়েনি। সবচেয়ে বড় কথা, এতগুলো বছর ধরে গড়ে তোলা বদভ্যাসগুলো উধাও হয়েছে—ঘ্যানঘ্যানানি, অভিযোগ, চাহিদা।

যৌনচাহিদা বৃদ্ধির জন্য বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে বটে, তবে সেই খরচটা করেও সে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি।

‘আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি, শেল,’ মাথা নেড়ে বসল সিড। ‘ওর কথাবার্তা, আচরণ ইত্যাদি। এমনকী স্কুলেও খারাপ ফল করতে শুরু করেছে।’

ন্যাপকিনটা ঠোঁটে ছোঁয়াল শেলি। ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিল। ‘হয়তো আপগ্রেড করার সময় হয়েছে। তুমি চাইলে আমি দোকানে গিয়ে ক্যাটালগ নিয়ে আসতে পারি।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিড। ‘জানি না কাজটা ঠিক হবে কিনা। ছেলেকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারছি না—এই কথাটাই কি মেনে নেওয়া হবে না?’

উঠে দাঁড়িয়ে স্বামীর পেছনে এল শেলি, জড়িয়ে ধরল ও। তরুণী দেহের নরম বুকের স্পর্শ, সদ্য ধোঁয়া চুলের ঘ্রাণ যেন পাগল করে তুলল সিডকে।

‘এমন ভাবছ কেন, সিড। বাচ্চাকে প্রাইভেট স্কুলে পাঠানো কিংবা রিহ্যাবে ভর্তি করার মতো ব্যাপারটা। এখন কাজটা করলে, ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। ওকে উল্টে সাহায্যই করছ তুমি।’

চোখ বন্ধ করে ভাবল সিড। কাজটা করলে মন্দ হবে না। বব হ্যারিসন বছর দুয়েক আগে নিজের মেয়েকে প্রতিস্থাপন করেছে। এরপর থেকে বাবার সব কথা শুনে চলে মেয়ে, কখনও অভিযোগ করে না।

আচমকা কান ফাটানো কর্কশ শব্দ ভেসে এল শনের কামরা থেকে। পুরো বাড়ি কেঁপে উঠল বন্দুকের তীব্র আওয়াজে।

সিড জানে, কখন হার মানা উচিত।

‘নিয়ে এসো ক্যাটালগ। কাল কাজ থেকে ফিরে আমরা চোখ বুলোব ওতে।’