শেষ থেকে শুরু ● সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী


 

 

বিশ্বের একেবারে অন্তিম প্রান্তে একটি রেস্তোরাঁ আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আমাদের বিশ্বের কথাই বলছি। তার বাইরে কী আছে? আদৌ কিছু আছে? আছে বইকি। আরও অজস্র সমান্তরাল বিশ্ব। প্রমাণ দিতে পারব না বাপু। চাইলে নিজে গিয়ে দেখে আসলেই হয়। এই থাকা না থাকার ব্যপারটা বড়ই গোলমেলে। আপাতত রেস্তোরাঁটার কথা বলি। অদ্ভুত দেখতে সেটা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোনো সমুদ্রশঙ্খ হঠাৎ প্রবল প্যাঁচ কষতে কষতে মহাশূন্যের কোনো অজানা গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে। শুরু আছে তো শেষ নেই। ওটার নাম মধ্যান্তর। মহাশূন্যে ভ্রমণের ফাঁকে বিভিন্ন প্রাণী সেখানে মধ্যাহ্নভোজন সারতে আসে। মধ্যাহ্ন কথাটা মজা করে বললাম মশাই। ওখানে আর সূর্য কোথায় যে দিন রাত থাকবে? আছে তো রেস্তোরাঁর স্বচ্ছ দেওয়ালের ওপারে ঝিকিমিকি আলো দেওয়া অগুনতি মৃত তারা। তারা হয়ত মারা গেছে সহস্র লক্ষ বছর আগে। তবু নিভে যাওয়ার আগে পাঠানো আলোর রেশটুকু দিয়ে গেছে কোটি আলোকবর্ষ দূরের এই সীমান্তবর্তী পান্থশালার জন্য। ওতেই দিব্যি কাজ চলে যায় এখানে। আলোকশক্তি ধরে রাখার যন্ত্র আছে যে এখানে। প্রকৃতির নিয়ম মেনেই সে শক্তি অক্ষয়, শুধু মাঝেমাঝে পুনর্নবীকরণ করে নিলেই হল। কে করে সেসব? সবেধন নীলমণি একটিই হিউম্যানয়েড রোবট আছে এখানে, তার নাম ব্রহ্মকুমার। নামটা সেকেলে একটু? তা আর কী করা যাবে। যিনি নাম দিয়েছেন, দায় তাঁর। কে রেখে গেছেন তাকে, সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে, কেই বা এমন জায়গায় একটা পান্থশালা খুলেছিলেন, সেসব আমার জানা নেই। যাই হোক, ব্রহ্মকুমার একাই একশো। হাজার বললেও ক্ষতি নেই। রান্নাবান্না থেকে অতিথি আপ্যায়ন, শক্তির সঠিক ব্যবহার, এমনকি সেসব করতে গিয়ে রেস্তোরাঁর আকার আকৃতিরও হেরফের ঘটাতে হয় প্রায়শই। কখনও সে ছোট হয়, কখনও বড়। সংরক্ষণ বড় বালাই। পৃথিবীর মানুষের সেটা বুঝতে যথেষ্ট দেরি হলেও, পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল তারা। আর আছে একটি কালনিয়ন্ত্রক যন্ত্র। ঐ আমাদের সিলিং ফ্যানের রেগুলেটরের মতই। মাঝেমধ্যে বাড়িয়ে কমিয়ে নিতে হয় সুবিধামত। বিভিন্ন স্থান কালের দেশ থেকে আগত অতিথিদের একসঙ্গে আপ্যায়ন করতে যাতে সমস্যা না হয় তাই এই ব্যবস্থা। অর্থাৎ আমাদের জানাশোনা চারটি মাত্রাই কমবেশি করা যায় এখানে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রাণীরা মহাকাশ ভ্রমণের ফাঁকে এখানে আসে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে, মানে যার যার সময়ের হিসেবে দু’দণ্ড আর কি, কখনও বা ভিন্ন দুনিয়ার জীবটির সঙ্গে আলাপ জমাতেও আসে। মহাজাগতিক আদানপ্রদানের এক মিলনক্ষেত্র বলা যেতে পারে একে। ভাষা কোনো সমস্যা নয় এখানে। আন্তর্নক্ষত্রীয় সমস্ত ভাষা এখানে আপনা থেকেই অনূদিত হয়ে পৌঁছায় শ্রোতার কানে। বায়ুশূন্য এই স্থানে বেতার তরঙ্গই তো ভরসা। চটজলদি অনুবাদের কাজটা তার মাধ্যমেই হয়। সৃষ্টির আদি থেকে পারস্পরিক ভাবনাচিন্তার আদানপ্রদানেই তো উন্নত জীবেরা ক্রমশ অগ্রসর হয়েছে সভ্যতার পথে। কিন্তু যোগাযোগের মাধ্যম যত বেড়েছে, ততই সেই পারস্পরিক আলাপচারিতা, মুখোমুখি বসে কথা বলাও কেমন কমে এসেছিল। কিন্তু এখানে যারা আসে, তারা আজও প্রাণের সন্ধান করে। নিজের কথা বলার, অপরের কথা শোনার জন্য খুঁজে বেড়ায় কাউকে। আজ তেমনই দুটি প্রাণী এল। পৃথিবীর মানুষের মতই দেখতে তারা। প্রথমজন পুরুষ। পরেরজন নারী। পুরুষটি টেবিলে বসার কিছু পরেই মেয়েটি এসে দাঁড়াল সামনে। মিষ্টি হেসে বলল, ‘খুব দেরি করে ফেলিনি তো?’

‘আরে না, না। বোস।’

ছেলেটি স্মিতমুখে স্বাগত জানায়। দেরি হয়েছে না সময়ের আগে এসেছে তার হিসেব সে নিজেও দিতে পারবে না হয়ত। এখানে সময়ের হিসেব রাখা দায়। তাই ও নিয়ে আর কথা বাড়ায় না কেউই। দু’জনে মুখোমুখি বসে। দেখে মনে হয় তারা বহুকালের পরিচিত। এভাবেই এখানে দেখা হয়ে থাকে তাদের। বারবার। দূরের টেবিলে দুটি অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জের অধিবাসী বসেছিল। তাদের চেহারা গড়ন সবই আলাদা। আর একটি টেবিলে ভিন্ন মাত্রার অন্য একটি জীব ক্রমাগত কসরত করে নিজের শরীরটাকে আসনে বসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তার ক্রমাগত দৃশ্যমান আর অদৃশ্য হতে থাকা শুঁড়ের মত প্রত্যঙ্গগুলো ঠিক বাগে আসছিল না। অনেকসময় হয় এরকম। যারা এখানে প্রথমবার আসে। তবে এখানে কেউ কাউকে নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমরাও বরং ঐ মানব মানবী যুগলের দিকে দৃষ্টি ফেরাই। ছেলেটির নাম জ্যোতিষ্ক, মেয়েটির নাম কণা। এটা সেটা গল্প করতে থাকে তারা। ভাগ্যের সন্ধানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে যারা, সেই যাত্রীদের কি গল্পের অভাব হয়? আশ্চর্য সেসব কথা। যেমন কথা চলতে চলতে হঠাৎ জ্যোতিষ্ক বলে ওঠে,

‘গল্পের কথা বললেই আমার এক গল্পকারের কথা মনে পড়ে যায়, লোকটা চিরদিনই লেখক ছিল এমন নয়। সে এক বৈজ্ঞানিকের গবেষণাগারে কাজ করত। একদিন হঠাৎ লিখতে শুরু করে। শখেই। ছেপে বেরয়। আস্তে আস্তে লেখা বাড়তে থাকে, লোকে তার লেখা পড়তে থাকে। আরও লেখার ডাক আসতে থাকে। সে আগের কাজ ছেড়ে দেয়। পুরোদমে লিখতে থাকে। লিখতে লিখতে কল্পনার ঝুলি খালি হয়ে আসে। এদিকে খ্যাতির মোহ। বাধ্য হয়ে সে অনৈতিক পথ বেছে নেয়।’

‘সেকী! কী করে সে?’

‘আপনারা কী নেবেন মহাশয়, মহাশয়া?’

কণার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই ব্রহ্মকুমার এসে দাঁড়িয়েছে সামনে।

‘ওহ। অর্ডার দিতে হবে। কণা, তুমি কী নেবে বল?’

‘আমার কোনো ব্যপার না। আমার খিদে খুব কম এখন। তুমি যা নেবে তার থেকেই একটুখানি দিও আমায়। আলাদা কিছু নেব না।’

‘আচ্ছা, তাহলে... একটা পিৎজা নিই? মাঝারি মাপের?’

‘যা খুশি তোমার। গল্পটা বল।’

‘বেশ। তবে তাই আনো, ব্রহ্মকুমার। …হ্যাঁ, তো যা বলছিলাম, লোকটা কী করেছিল শোন। জানোই তো সমান্তরাল বিশ্বসমূহে আমাদের সবারই একাধিক প্রতিরূপ আছে। ভিন্ন ভিন্ন সময় আর স্থানাঙ্কে তাদের অবস্থান। এই সমস্তটা মিলেই আসলে এক একটি পূর্ণ অস্তিত্ব। যেমন পদার্থ থাকলে বিপরীত পদার্থ বা অ্যান্টি ম্যাটারও থাকে, তেমনই। লোকটা ভাবল, তার যেসব অবিকল প্রতিরূপগুলি আছে, তাদের ভাবনা চুরি করলে কেমন হয়?’

‘এই নিন আপনাদের পিৎজা।’ ব্রহ্মকুমার মুহূর্তের মধ্যে খাবার নিয়ে হাজির।

‘বাহ, এত জলদি তৈরি হয়ে গেল। আচ্ছা। তাহলে খেতে খেতে বাকি গল্পটা বলি।’

জ্যোতিষ্ক প্লেটের ছুরি দিয়ে পিৎজাটা আধাআধি ভাগ করে। প্লেটটা কণার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘নাও, এই টুকরোটা তোমার।’

কণা প্রায় আঁতকে উঠে বলে, ‘ওরে বাবা! এতটা পারব না। আমি একদম একটুখানি খাব বললাম না? কমিয়ে দাও প্লিজ।’

জ্যোতিষ্ক বিনা বাক্যব্যয়ে নিজের টুকরোয় এক কামড় দিয়ে বাকি অংশটা ফের অর্ধেক করে কাটতে কাটতে বলে, ‘সেই লেখক তো এক বৈজ্ঞানিকের ল্যাবে কাজ করত আগে, সেখানে কাজ করতে করতেই সমান্তরাল বিশ্বের কোনো নির্দিষ্ট স্থানকালে গিয়ে নিজের প্রতিরূপদের মস্তিষ্ক থেকে ভাবনাচিন্তা চুরির কৌশল তার শেখা হয়ে গেছিল। যেমন ভাবা তেমন কাজ। একে একে পাঁচটি ভিন্ন বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা নিজের পাঁচ প্রতিরূপের মস্তিষ্কে সঞ্চিত তথ্য চুপিচুপি হাতিয়ে নিল সে, তারপর সেইসব লিখে ফেলতে লাগল হুড়মুড়িয়ে। …একী কণা, তুমি এইটুকুও খাবে না? আমারটা তো কখন খেয়ে ফেললাম। তুমি খাও!’

‘না হে বন্ধু। এতটা পারব না। আরেকটু কমিয়ে দাও। আমি একদম একটুখানি খাব।’

অগত্যা জ্যোতিষ্ক আবার ছুরি ধরল। একবার করে কেটে আগের অংশের অর্ধেক করে, আর ইশারায় কণাকে জিজ্ঞেস করে, আর সেই একই উত্তর পায়। আরেকটু কমাতে হবে। পরপর প্রায় বার কুড়ি এভাবে কেটে চলার পর পিৎজাটা প্রায় এক দানা বালির মত হয়ে এল, আর ছুরি দিয়ে কাটা যাচ্ছে না, এবার পকেট থেকে একটা ধারালো ব্লেড বের করল জ্যোতিষ্ক। টিস্যু পেপারে দানাটাকে রেখে ব্লেড দিয়ে সেটা দু’ আধখানা করতে করতে সে গল্পটা চালিয়ে যায়,

‘কিন্তু এসব চুরি করে লেখালিখি করতে গিয়ে একটা বিভ্রাট হল। প্রজাপতি এফেক্টের নাম শুনেছ তো?’

‘হ্যাঁ শুনেছি, যার ফলে কোনো এক জায়গায় সামান্য পরিবর্তন ঘটালে বিশ্বের অন্যত্র বড়সড় হেরফের ঘটে যেতে পারে!’

‘ঠিক তাই, লোকটার এসব বেয়াক্কেলে কাণ্ডের ফলেও সেটাই হয়। সমান্তরাল বিশ্বের পাঁচটি পৃথক স্থানকালে প্রচণ্ড আলোড়ন ওঠে। লেখকের প্রতিরূপদের এবং সেইসঙ্গে তার কাছের মানুষদের ভবিতব্যও ওলট পালট হয়ে যায়। লেখকটির নিজেরও মাথায় কিছু গোলমাল দেখা দেয়। তার নিজেকে আদি অনন্তব্যাপী জীবিত এক প্রাণী বলে মনে হয়। লক্ষ বছর আগে নাকি লক্ষ বছর পরে নাকি বর্তমানে কোন সময়ে তার নিজের অস্তিত্ব বিদ্যমান সেটা বুঝে উঠতে পারে না আর। নিজের স্মৃতি অন্যদের স্মৃতি সব ঘেঁটে ঘ হয়ে যায়। তার পরিবার তাকে পাগল ঠাউরে অ্যাসাইলামে ভর্তি করে। তারপর সেখান থেকেই একদিন সে নিখোঁজ হয়ে যায়। আর কোত্থাও তাকে পাওয়া যায়নি।’

জ্যোতিষ্কর গল্প শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু কণার জন্য খাদ্যকণাটি তখনও প্রস্তুত নয়। অন্তত তার মতে। জ্যোতিষ্কের ধৈর্যও কম নয়। সে ধীরস্থিরভাবে একটার পর একটা যন্ত্র পকেট থেকে বের করে যাচ্ছে আর খাদ্যবস্তুটিকে অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। যেমন এইমাত্র একখানা জহুরিদের আতস কাচ নিজের এক চোখে লাগিয়ে একটা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সূচ দিয়ে পিৎজার দানাটাকে কাটল। বাকি অর্ধেকটা আগের মতই নিজের মুখে পুরে আবার তাকাল কণার দিকে। এবারেও হল না। জামা প্যান্টের এদিক ওদিক হাতড়ে একটা ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ বার করল জ্যোতিষ্ক। (কোথা থেকে সে এসব পাচ্ছে কে জানে!) যাই হোক, সেটা দিয়ে দেখে একখানা এক অ্যাংস্ট্রম মাপের (মানে এক সেন্টিমিটারের দশ কোটি ভাগের এক ভাগ) ধারযুক্ত সূচ দিয়ে নিপুণভাবে টুকরোটা ফের অর্ধেক করা গেল। একবার তাকাল কণার দিকে।

‘কী বলি, এতবার বলতে লজ্জাই করছে, আসলে আমার না এত খিদে নেই।’

এইবার জ্যোতিষ্কের একটু যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। মেয়েরা শরীর সচেতন হয়ে যথেচ্ছ ডায়েটিং করে বটে, তাই বলে এরকম?

নিজের সামনে রাখা টিস্যু কাগজের উপরে প্রায় শূন্যস্থানটির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বলে, ‘কণা, অনুরোধ করছি এটুকু অন্তত খেয়ে নাও! এতে স্রেফ কয়েকটা অণুই আছে হয়ত।’

কণা সেই আঙ্গুল বরাবর নিচের দিকে তাকায়, ‘আচ্ছা তুমি বলছ যখন, দেখছি। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না ওটা কোথায় আছে?’

বুঝবে কী করে! সেই ছোট্ট টুকরোকে ঘিরে থাকা আলোর কণারা, ফোটনের দলের সঙ্গে তো তার লুকোচুরি শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়েও সেটা ক্ষুদ্রতর। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার মেঘ আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার প্রকৃত অবস্থান। কণিকা আর তরঙ্গের দ্বৈত সত্তার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে সেটা। দ্য ব্রয়ের কণিকাতরঙ্গের দৈর্ঘ্য না মেপে ওটাকে বাগে আনা মুশকিল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় জ্যোতিষ্ককে দেখে কণা নিজেই মুশকিল আসান করতে এগিয়ে আসে। নিজের ছোট্ট হাতব্যাগ থেকে ফস করে একটা অতি পাতলা গ্রাফিন শিট বের করে, আসলে সেটা একটা মিনি কম্পিউটার। সেখানে চটজলদি হাত চালিয়ে কিছু হিসেব কষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপনা থেকেই – ‘হুম, একেবারে নির্ভুলভাবে বের করা এখনও সম্ভব না, তবে মোটামুটিভাবে ৯৯% চান্স আছে, টুকরোটা এইখানটায় আছে…’

কাগজের উপর একটা অংশের দিকে দেখায় সে, ‘তবে বাকি ১% শতাংশ নিয়েই যত চিন্তা।’ একটু থেমে সে আবার যোগ করে, ‘ওটা আকাশগঙ্গার কোনো অংশেও থাকতে পারে, আবার অ্যান্ড্রোমিডাতেও…’

‘সত্যিই ভারি মুশকিল।’

এ কথা বলেই মরিয়া জ্যোতিষ্ক তার পকেট থেকে কি না জানি কোন অজানা মাত্রা থেকে ফস করে একটা আস্ত কণিকা-ত্বরণ যন্ত্র মানে পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর বের করে ঐ প্রায়-তাত্ত্বিকভাবে উপস্থিত পিৎজার দানাটির দিকে তাক করে এক নিমেষে সেটাকে দু’টুকরো করে দিল।

‘এবার তো প্ল্যাঙ্কের দৈর্ঘ্যে পৌঁছে গেছে মনে হয়।’ কণা বলে ওঠে।

‘হুম। আর ভাঙ্গা যাবে না।’

বলতে বলতেই তাদের চারপাশটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে। জ্যোতিষ্ক, কণা, ব্রহ্মকুমার, বাকি অতিথি সমেত গোটা রেস্তোরাঁটাই একটা ওয়ার্ম হোলের মধ্যে ঢুকে যায়। পরিচিত ব্রহ্মাণ্ড কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। তখনও অনেক দূরে কোথাও থেকে কণার অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর ভেসে বেড়ায় অদৃশ্য বেতারতরঙ্গে – ‘ব্যাপারটা বেশ মজার হল কিন্তু, আমরা আরেকবার ট্রাই করে দেখব নাকি?’

অন্য কোনো প্রান্ত থেকে জ্যোতিষ্কর সংক্ষিপ্ত জবাব ভেসে আসে – ‘করেছি তো, আগেও…।’