সম্পাদকের কথা

প্রিয় পাঠকবন্ধুরা,

সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে কেমন করে যেন আস্ত একটা বছর পেরিয়ে আবার পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। কিন্তু এই বছরটা তো আর যেমন-তেমন বছর নয়— এ হল ২০২০! গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রতিটা মানুষ ঘরে-বাইরে লড়ে চলেছে এক অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে— কেউ বলে করোনা ভাইরাস, কেউ বলে খিদে। কিন্তু লড়াইটা সবার জীবনেই চলছে। তবে আশার আলোও ফুটতে শুরু করেছে একটু একটু করে, সংক্রমণের উর্দ্ধমুখী রেখা নুয়ে আসছে মানবপ্রাচীরের বুকে ধাক্কা খেয়ে— হয়তো খুব শিগগিরই ভ্যাকসিনও আবিষ্কার হয়ে যাবে এই অজানা শত্রুর মোক্ষম জবাব হিসেবে। কিন্তু আপাতত আমাদের হাতে একটাই সমাধান— নিউ নর্মাল। আর সেখানেই বেঁধেছে যত গোল! সামনেই যে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। কেউ কি কোনওদিন ভেবেছিল পুজোর মুখে দাঁড়িয়ে বাঙালিকে এমন দোটানায় পড়তে হবে? একদিকে বিশেষজ্ঞদের সাবধানবাণী, কেরলের ওনাম-পরবর্তী পরিসংখ্যান, আরেকদিকে বাঙালির রক্তমজ্জায় মিশে থাকা আজন্মলালিত আবেগ— কোন পথে এগোব আমরা? ভিড় এড়িয়ে বাড়িতে বসেই এবারের পুজো কাটাব নাকি যথাসম্ভব বিধিনিষেধ মেনে বেরিয়ে পড়ব হাতেগোনা এই ক’টা দিনের আমোদ লুটতে। জানি না, সত্যিই জানি না!

তবে এতসব না-জানা আর দোনোমোনোর মাঝেও বাঙালির জীবনে একটা জিনিস কিন্তু একফোঁটাও টাল খায়নি, আর সেটা হল বাঙালিয়ানার আরেক চিরন্তন আবেগ— পুজোসংখ্যা। ছাপা হোক কিংবা ডিজিট্যাল, পুজোসংখ্যা ছাড়া কি কখনও পুজোর আমেজ আসে? আর তাই আমরাও সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠকের দরবারে নিয়ে এসেছি আমাদের পরবাসিয়া পাঁচালী উৎসব সংখ্যা— কিছুটা সাবেকিয়ানা, কিছুটা নতুনত্ব।

যাঁরা পরবাসিয়ার সঙ্গে পরিচিত, অবশ্যই জানেন যে আমরা মূলত বিভিন্ন জনরা ফিকশন নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি— কখনও কল্পবিজ্ঞান তো কখনও রহস্য, আবার কখনও বা হাসির রসে ভেজানো ফ্যান্টাসি। উৎসব সংখ্যাও তার ব্যতিক্রম নয়, কিন্তু এই সংখ্যা আবার কোনও বিশেষ জনরা-ভিত্তিকও নয়— এককথায় বলতে গেলে পুজোর প্রাকলগ্নে নানান রঙের ফুলে মেলানো-মেশানো একটা ছোট্ট ফুলের তোড়া। কী কী থাকছে এবারের উৎসব সংখ্যায়? না, বোধহয় প্রশ্নটা একটু ভুল হল, বরং জিজ্ঞেস করুন কী নেই এখানে? হরর ফ্যান্টাসি থেকে শুরু করে সামাজিক, লাভক্রাফটিয়ান হরর থেকে হাস্যকৌতুক, কল্পবিজ্ঞান, হরর মাংগা, অনুবাদ সাহিত্য, আরও কত কী! তবে এবারের এই বিশেষ সংখ্যায় একটা বিশেষ সংযোজনও রয়েছে বটে— ঐতিহাসিক কাহিনি। পরবাসিয়া পাঁচালীর পাতায় এই জনরা নিয়ে এটাই আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তাই সামগ্রিকভাবে তো বটেই, তার সঙ্গে এই বিশেষ জনরাটি নিয়েও পাঠকবন্ধুদের মতামত জানাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে বলি, যাঁরা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই উৎসব সংখ্যায় লেখার জন্যে এগিয়ে এসেছেন, আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিজের যত্নে-গড়া লেখাটি, তাঁদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ সেই সমস্ত উপদেষ্টা, অভিভাবক এবং পাঠকবন্ধুদের যাঁরা সব সময় নানান পরামর্শ এবং গঠনমূলক সমালোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। আর অবশ্যই সেই বিশেষ মানুষটির প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যাঁর তুলির ছোঁয়ায় এই উৎসব সংখ্যার সূচনা— শিল্পী পার্থ মুখার্জি।

তাহলে চলুন বন্ধুরা, আর দেরি না করে ঢুকে পড়ি পরবাসিয়ার উৎসবমুখর অন্দরে। পড়ুন, পড়ান এবং অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাদের জানান যাতে আপনাদের এই পত্রিকাটিকে ভবিষ্যতে আরও সুন্দর, আরও নতুন নতুন ভাবনায় উজ্জ্বল করে তুলতে পারি।

প্রার্থনা করি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন— সাহিত্যে, আনন্দে আর সাবধানতায় কাটুক এবারের পুজো।

ধন্যবাদান্তে,