আমার বন্ধু জেনি - বনশ্রী মিত্র

অলংকরণ - কৃষ্ণেন্দু মন্ডল
এক

আমার বন্ধু জেনি আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে থাকে। বয়সে আমার থেকে বেশ খানিকটা ছোট হলেও আর অত দূরে থাকলেও, জেনি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আমার যখন কোন কিছু নিয়ে খুব আনন্দ হয়, আমি জেনিকেই সবার আগে জানাই। আবার মন-খারাপের দিনেও জেনিই পারে আমার মন ভালো করে দিত। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা, এমনকি রোজকার সমস্ত খুঁটিনাটি সবকিছুই জেনির সাথে ভাগ না করে নিলে দিন যেন আমার কাটে না।

আমার খুব বেশি বন্ধু নেই। পিসি বলে আমাকে দেখতেও যেমন মায়ের মত, আমার স্বভাবও নাকি ঠিক মায়ের মত। আমি মায়ের মতই চুপচাপ, ঠাণ্ডা স্বভাবের। এত চাপা স্বভাবের বলেই নাকি আমি কারোর সাথে বেশি মিশতে পারি না। পিসি হয়ত ঠিকই বলে, কিন্তু জেনি অত দূরে থাকে, তাও জেনির সাথে আমি তো বেশ মন খুলেই কথা বলতে পারি। জেনি বলে, “ইউ আর এ সুইট-হার্ট”। আর চুপিচুপি আমি ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছি, “জেনি ইজ মাই হার্ট”। এই কথাটা অবশ্য কাউকে বলিনি আমি, জেনিকেও না।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই জেনির মেসেজ পেলাম, নিউইয়র্কে ফল শুরু হয়ে গেছে। গাছের পাতা ঝরছে, শীত প্রায় এসে গেল। কয়েকটা ছবিও পাঠিয়েছে জেনি ফল-এর। পাতায়-পাতায় নানান রঙের ছোঁয়া। কলকাতায় অবশ্য এখন এই অক্টোবরে অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। আর দুদিন বাদে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। সতেরো বছর হয়ে গেল মা মারা গেছেন। পিসির কাছে যতটুকু গল্প শুনেছি আর পুরনো অ্যালবামে মায়ের ছবি দেখেছি, তাতে তার একটা চেহারা নিজের মনে-মনে তৈরি করে নিয়েছি। ছোটবেলায় পিসি যখন দুপুরবেলায় ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, আমি প্রায় আমাদের পুরনো অ্যালবামের পাতা ওলটাতাম। মায়ের কোলে আমার একটা ছবি খুব প্রিয় আমার। ছোটবেলায় সে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে মনে হত, এখুনি হয়ত মা এসে কাছে টেনে নেবেন। এতদিন যা জেনেছি, সব মিথ্যে হয়ে যাবে। বাবা আর মায়ের সাথে আমার ছোটবেলা আবার নতুন করে শুরু হবে।

ফলের ছবিগুলো দেখতে-দেখতে সেই পুরনো অ্যালবামটার কথা ভাবছিলাম, অনেক দিন দেখা হয় না, হঠাৎ পিসি ঘরে ঢুকে বললেন, “বৌদির বার্ষিকীর জন্য একটা লিস্ট বানিয়েছি, কলেজ থেকে ফেরার পথে নিতাইয়ের দোকান থেকে নিয়ে আসবি?”

“হ্যাঁ, আনবো, তুমি রেখে যাও।” প্রতিবছর লিস্টের জিনিষগুলো একই থাকে, তবু পিসি যত্ন করে নতুন পাতায় লিস্ট বানান। আমার প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে।

কলেজে ইকনমিক্সের শেষ ক্লাসটা আজ হল না। ক্লাসের অনেকেই গ্রুপ করে সিনেমা দেখতে চলে গেল। আমারও ইচ্ছে করছিল যেতে, হয়ত পিসিকে ফোনে জানিয়ে দিলেও চলত, কিন্তু আমাকে কেউ সেভাবে জিজ্ঞেসও করল না আর আমারও নিজে থেকে বলতে যেন কেমন লাগল।

কলেজ থেকে বেরিয়ে হাতিবাগানের একটা বাসে চেপে বসলাম। বাইরে আকাশ বেশ মেঘলা করে রয়েছে। ফলের রঙিন ছবিগুলো আবার দেখতে-দেখতে জেনিকে মেসেজ করে জানালাম, অনেকদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না, জেনি কলকাতা এলে আমরা একসাথে যাব। কলেজস্ট্রীটের ওপর দিয়ে যখন বাস ছুটছে, হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। জেনির সাথে আমার যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিনও খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। জুলাই মাস ছিল সেটা, হাতিবাগানের বাড়ির সামনে প্রায় এক-হাঁটু জল সেদিন। জেনির তখন পাঁচ বছর বয়স, আমার আট। এমন দৃশ্য ও আগে দেখেনি, খুব অবাক হয়ে আমাকে বলেছিল, “ইউ স্টে ইন রিভার।” আমার খুব হাসি পেয়েছিল। তবুও হাসি চেপে বেশ বিজ্ঞের মত বলেছিলাম “ওয়াটারলগিং।” বাসে আমার পাশের সিটের মহিলা বলে উঠলেন, “আকাশ যা কালো করেছে, বৃষ্টি বেশি হয়ে আবার রাস্তায় জল জমলেই মুশকিল।”

জেনি যে কদিন কলকাতায় ছিল, সারাক্ষণ আমার পেছন-পেছন ঘুরত আর নানারকম প্রশ্ন করত। আমি বেশ বিরক্তই হতাম। কিন্তু তাও ও আমার পিছু ছাড়ত না। আমার আঁকার খাতাটা বারবার উলটে-পালটে দেখত আর বলত, “ভেরি নাইস!” একদিন দুপুরে জেনি ওর আঁকার খাতাটা আমাকে দেখাতে নিয়ে এল। খাতার পাতায় ওর আঁকা একটা ছবির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “মি, মম এণ্ড ড্যাড”। আমি চোখের জল চেপে রেখে মুখ শক্ত করে জেনিকে বলেছিলাম, “ভেরি পুওর কালারিং”। জেনি খানিকক্ষণ আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বলেছিল, “হোয়াই?হোয়াট কালার ইউ সাজেস্ট?” টেবিল থেকে বেশ কয়েকটা রং-পেনসিল তুলে আমি ওর আঁকার ওপর হিজিবিজি কেটে দিয়েছিলাম। জেনি কাঁদতে-কাঁদতে চলে গিয়েছিল। সেদিন বিকেলে আঁকার ক্লাসে যাইনি আমি। পিসি আমাকে খুব বকাবকি করেছিলেন।

মালতি দিদা, পিসিদের অনেক পুরনো কাজের লোক জেনির এক-মাথা সোনালী চুলে জবাকুসুম তেল লাগিয়ে দুদিকে দুটো বিনুনি করে দিল যেদিন বিকেলে, আমি সেদিন সারা বিকেল ছাদে বসে কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিল আমাকে ভালবাসার লোক এই পৃথিবীতে এমনিতেই এত কম, জেনি আসায় তা যেন আরো কমে যাচ্ছে। “কেন এল ও এখানে?কেন এল?” -নিজের মনেই নিজে বারবার বলে চলেছিলাম। রাতে খেতে বসে, জেনি ওর চুল দেখিয়ে আমাকে বলে উঠল, “ইউ লাইকড্ মাই হেয়ার-স্টাইল অর নট?” আমি খেতে-খেতে একথালা ভাত ফেলে উঠে চলে গেছিলাম কাঁদতে-কাঁদতে। সেদিন রাত্রে পিসি আমাকে পিঠে-মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, “তুমি আমার সোনা মেয়ে। অমন করে খাবার ফেলে উঠে আসতে আছে?”

আমি বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছিলাম আর বলছিলাম, “ওকে চলে যেতে বল। ও কেন এসেছে এখানে?”

সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখলাম, “আমার পুতুলের আলমারি খালি। সব পুতুলগুলো নিয়ে জেনি ছাদে খেলা করছে। আমি পুতুলগুলো কিছুতেই ওর থেকে ফেরত নিতে পারছি না। বাবা, পিসি, পিসেমশাই সবাই আমাকে বকছে আর জেনির মাথায় হাত বুলোচ্ছে”। পরেরদিন সকালে যখন ঘুম ভাঙল, তখন আমার খুব জ্বর। বাবা ডাক্তার ডেকে আনলেন। দুদিন খুব ভুগেছিলাম। জ্বরের ঘোরে খালি মনে হত, বাবা এসে মাথায় হাত বোলাচ্ছেন, আমি আর বাবা দূর-পাহাড়ে বেড়াতে গেছি। সেখানে কতরকম পাখী!বাবা আমাকে চিনিয়ে দিচ্ছেন কোনটা কোন্ পাখী। পিসি এসে ওষুধ দিতেন, জ্বর মাপতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন আর বলতেন, “তোর বাবা ভাগ্যিস ডাক্তার ডেকে ওষুধ কিনে আনলো। দেখ্ তো! কীবিপদটা বাধালি”। বাবা কখনো আসতেন না। সেই সবুজ পাহাড়টা চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যেত। পাখীগুলোর নাম আর জানা হত না।

জেনি প্রায় আমাকে দেখতে আসত। আমি বেশি কথা বলতাম না। ও “গেট ওয়েল সুন” বলে চলে যেত।

হাতিবাগানে খানিকক্ষণ ঘুরে-ঘুরে একটা লাল-পাড় তাঁতের শাড়ি আর আমার পেন্টিংয়ের কিছু জিনিষ কিনলাম। জেনি ফিরে যাওয়ার পর ওর জন্মদিনে ওকে একটা ছবি এঁকে পাঠিয়েছিলাম -দুটো মেয়ে হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে সবুজ মাঠের ওপর দিয়ে, পূবের আকাশে তখন ভোরের সূর্য্য। জেনি ছবিটা দেখে বলেছিল, “ইউ এন্ড মি!”

দুপুরের এই সময়টায় দুর্গা পূজোর পর রাস্তায় কেনাকাটার ব্যস্ততা একটু কম। দোকানদাররা নিজেদের মধ্যে গল্প-গুজব করছে। বৃষ্টি আর তেমন হয়নি। পরের সপ্তাহে কালি পূজো। কয়েকটা বাজির দোকানে বাজি বিক্রি হচ্ছে। সেবার পিসির সাথে জেনি আর আমি নিউ-মার্কেট গিয়েছিলাম কেনা-কাটা করতে। মেট্রো সিনেমাহলের সামনে দিয়ে আমরা হাঁটছি, হঠাৎ একটা বাঁশিওয়ালা জেনির কানের কাছে খুব জোরে বাঁশি বাজাতেই জেনি খুব ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল। পিসি বাঁশিওয়ালাকে খুব বকাবকি করলেন। জেনি আমাকে জাপটে ধরেছিল ভয়ে। সেই প্রথম আমার জেনির জন্য খুব মন খারাপ হয়েছিল। মনে হয়েছিল জেনিকে কলকাতায় আটকে রাখি। ওকে ফিরে যেতে দেব না।

নিতাইদার দোকান থেকে কেনাকাটা সেরে ফেরার পথে একটা কালীপূজোর প্যান্ডেলের ছবি তুলে জেনিকে পাঠিয়ে দিলাম। কলেজ-ফিরতি কিছু ছেলে-মেয়ে খুব হৈ-হৈ করছে নিজেদের মধ্যে। ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে নিজের মনেই বলে ফেললাম “আই মিস ইউ জেনি, প্লিজ কাম সুন।”

দুই

মায়ের একটা বাঁধানো ছবি পিসি পরিষ্কার করছিলেন, বার্ষিকীর দিন ঐ ছবিটায় প্রত্যেক বছর মালা দেওয়া হয়। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে পিসিকে বললাম, “আচ্ছা পিসি, আমাকে যদি মায়ের মত দেখতে না হত তা হলে হয়ত বাবা আমাকে আট মাস বয়সে ফেলে চলে যেতেন না বল!”

“তোর বাবাকে আমি অনেক বুঝিয়েছিলাম রাই, তোকে সাথে নিয়ে যেতে নয়ত এখানেই নতুন করে সংসার পাততে, কিন্তু বাবানের মানসিক অবস্থা সেই সময় কারুর কথা শোনার মত ছিল না। ও আর কলকাতায় থাকতে চায়নি। পরেও অনেকবার বলেছি তোকে সাথে রাখার জন্য। কিন্তু সবকিছু তো অন্যরকম হয়ে গেল”। পিসি আমার পাশে বসে পিঠে হাত রাখলেন, “আমাদের কাছে তোর খুব কষ্ট হয়, না রে?যতই হোক বাবা-মায়ের জায়গা কি আর কেউ নিতে পারে?তবে তুই আছিস বলে আমাদের জীবনটা কেটে যাচ্ছে। আমাদের তো আর নিজেদের ছেলে-মেয়ে হল না। তবে তোর দুঃখ আমি বুঝি রাই।” পিসি আঁচলে চোখ মুছছিলেন।

“ওরকম বল না পিসি। তোমরা আমাকে এত যত্ন করে মানুষ করছো, তোমরাই আমার সব। তোমরা না থাকলে আমার যে কী হত!”

নিউইয়র্ক ফিরে যাওয়ার আগে জেনি আমাকে ওদের ওখানে চলে যেতে বলেছিল। সবাই মিলে একসাথে থাকলে খুব মজা হবে। কিন্তু তখন অত কম বয়সেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে তা হওয়ার নয়। ওখানে আমার কেউ নেই।

তিন

বিকেলের পর থেকেই গুমোট করেছিল সেদিন। ছাদে জেনি আমার গা ঘেঁষে বসেছিল। ওর মন ভালো ছিল না। পরেরদিন ওদের ফ্লাইট। জেনি বলেছিল ওর মা আর বাবা খুব নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে। ওকেও খুব বকাবকি করে ওরা রেগে গিয়ে। কলকাতায় তাই ওর খুব ভালো লেগেছে। ও বলেছিল, "ইউ আর সো লাকি, ইওর আন্ট এন্ড আঙ্কেল লাভ ইউ সো মাচ।”

জেনির কথায় সেদিন থেকে পিসি-পিসেমশাইকে আরো যেন বেশি করে ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমি। আমার মনে আমার না পাওয়া শৈশবের গ্লানি যেন অনেকখানি কমে গিয়েছিল। মায়ের মারা যাওয়ার পর বাবা যে আমাকে আপন করে নেননি, সে দুঃখ মন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু অত ছোট একটা মেয়ে আমাকে জীবনের আলো দেখিয়েছিল সেদিন। আমি সেদিন বন্ধু পেয়েছিলাম যার সাথে সব কথা বলা যায়, যার সাথে সব সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়।

জেনি ফিরে যাওয়ার পর খুব মন খারাপ হত আমার। স্কুল থেকে ফিরে সব ফাঁকা-ফাঁকা লাগত। বিকেলবেলা ছাদে যেতে আর মন চাইত না। ছবি আঁকতেও ভালো লাগত না। আস্তে-আস্তে জেনির সাথে চ্যাট করতে শুরু করলাম। রোজকার সমস্ত কথা ভাগ করে নিতে শুরু করলাম আমি আর আমার বন্ধু জেনি।

চার

মায়ের বার্ষিকীর কাজ হয়ে গিয়েছিল দুপুরের আগেই। খাওয়া-দাওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম যখন ভাঙল, বাইরে তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে। মোবাইলে জেনির অনেকগুলো মিসড্ কল। মেসেজ করেছে জেনি, "ভেরি হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হোয়াই আর ইউ নট টেকিং মাই কলস?মাস্ট বি স্লিপিং!" বাইরে আকাশ লাল হয়ে আছে। পিসি ঘরের বাতি জ্বেলে দিয়ে বলে গেলেন, "পিসেমশাই বাজারে গেছে। কাল তোর জন্য মাটন বানাব। " প্রতিবারই এই দিনে নিরামিষ হয়। পরেরদিন পিসি আমার জন্য ভালো-ভালো রান্না করেন, পিসেমশাই উপহার নিয়ে আসেন। কিন্তু মনে-মনে আমি দুটো দিনকে আলাদা করতে পারি না। কিছুতেই নিজের জন্মদিনের উৎসবের মেজাজ গায়ে মাখতে পারি না। বারবারই মনে হয় মা তো এই দিনেই চলে গিয়েছিলেন আর বাবাও…

জেনি আমাকে উইশ করতে ভুল করে না। উপহারও পাঠায় মনে করে। আমি শুধু অপেক্ষা করে আছি কবে পাবো আমার জন্মদিনের অমূল্য উপহার। জেনি বলেছে, সে আসবে ঠিক আমার কোন এক জন্মদিনে। আমি জানি, হয়ত সেই জন্মদিনে আমি উৎসবে মেতে উঠব।

আমাকে পিসি-পিসেমশাইয়ের কাছে রেখে বাবা যখন আমেরিকা চলে গেলেন, তখন আমি শিশু। জানি না আমার কী দোষ ছিল। কেন উনি আর সেভাবে আমার সাথে সম্পর্ক রাখলেন না। হয়ত মায়ের মৃত্যুর জন্য আমাকেই দায়ি করেন উনি। আমেরিকায় লিজাকে বিয়ে করলেন। জেনি হল। ছোট্ট জেনিকে যেবার কলকাতায় নিয়ে এলেন সাথে করে , সেবারই শেষ আমার বাবার সাথে দেখা। কয়েকবছর পর লিজা আর জেনির থেকেও আলাদা হয়ে গেলেন বাবা। আমাদের সাথেও সেভাবে আর যোগাযোগ রাখেন না। পিসি মাঝে-মাঝে ফোন করেন। আমাকে এসে খবর দেন। আমি শুনে যাই, কোন প্রশ্ন করি না।

আমি হয়ত বাবাকে কোনদিনও ভালবাসতে পারব না, তবু আমার মন জানে বাবাকে আমি ক্ষমা করে দিতে পেরেছি শুধু একটা কারণে, ওনার জন্য আমি বন্ধু পেয়েছি। আমার বন্ধু জেনি, যে আমার সারাজীবনের সঙ্গী।