নেভারল্যান্ডের খোঁজে - সহেলী চট্টোপাধ্যায়

অলংকরণ - রুমেলা দাস

সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা আর বিস্কুট খেয়ে বাজার যাবার জন্য সবে তৈরি হচ্ছি এমন সময় আমার মোবাইল বেজে উঠল বিচিত্র সুরে। প্রথমটায় চমকে গেছিলাম এমন একটা বিদঘুটে গানের রিংটোন শুনে। তারপর মনে পড়ল কাল রাতে ঘুমোবার সময় আমার ছেলে মোবাইলটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল বটে। আর তখনই রিংটোন বদলে দিয়েছে নির্ঘাত। ফোন রিসিভ করলাম। অপর প্রান্তে দিতি আমার বন্ধু ঋজু’র ওয়াইফ।

‘কী ব্যাপার? এত সকালে?’

‘সকাল আর কোথায় বেলা ন'টা বাজতে চলল যে। এর আগেও দু’বার ফোন করেছি বলিহারি মশাই আপনার ঘুম!’

দিতি প্রচুর কথা বলে। এই কিছুক্ষণ হল উঠেছি সে কথা আর প্রকাশ না করে বললাম, ‘তারপর সবাই কেমন আছ?’

‘ভাল আর কী করে থাকি বলুন যা গরম পড়েছে তাতে ভাল থাকাই দায়। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। আপনার বন্ধু তো আর এসি ইনভার্টার কিছুই কিনবে না। বলবে শরীরকে বেশি আরাম দিতে নেই...’

দিতির কথা শেষ হবার আগেই বললাম, ‘বুঝেছি। আমি ঋজুকে বেশ করে বুঝিয়ে বলব এখন যাতে এগুলোর ব্যাবস্থা করে। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি করো না।’

‘দূর মশাই আমাদের মধ্যে অশান্তি হয়েছে আপনাকে কে বলল? আমাদের মধ্যে ছোটখাট ঝগড়া হলেও অশান্তি কখনও হয় না। আপনার বন্ধু তো ঠিক করে ঝগড়াই করতে পারে না। সারাক্ষণ লেখালেখি নয়তো বই মুখে নিয়ে বসে আছে। এমন লোক আর কী ঝগড়া অশান্তি করবে? কিন্তু তবু এ কী হল ভগবান!’ দিতি কেঁদে ফেলে হঠাৎ।

‘কী হয়েছে কাঁদছ কেন?’ আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই।

‘আপনার বন্ধুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে! অ্যাসাইলামে ভর্তি! হে ঈশ্বর!’

‘সেকি! আর ইউ সিরিয়াস? আর এতক্ষণ ধরে তুমি এসব কী বকছিলে এসি ইনভার্টার!’ চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ি।

‘১০০ পারসেণ্ট। আপনাকে আস্তে আস্তে বলছিলাম। প্রথমেই শুনলে আপনি শক পেতেন।’

‘আচ্ছা গোটা ব্যাপারটা খুলে বল দেখি কী করে হল?’

‘কাল সন্ধে থেকে। অফিস থেকে ফিরেই ল্যাপটপ খুলে বসে গেল! আমার সাথে শাশুড়ি মায়ের একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেটা রোজই হয়। আমি বলতে গেলাম। রোজই বলি কখনও শোনে কখনও শোনে না। কখনো মন্তব্য করে কখনও কিছু বলে না। তা কাল আমি সবে কথা শুরু করেছি। তোমার মায়ের বাপু সবেতেই বাড়াবাড়ি। আমার শ্বশুর বাড়ির দোষ ধরে খুব অপদস্থ করব ভেবেছিলাম কিন্ত প্রথম লাইন বলতে না বলতেই দেখি ওর চোখ মুখের অস্বাভাবিক অবস্থা। আআআ করে অজ্ঞান হয়ে গেল! শ্ব্বশুর শাশুড়ি এলেন। ওর জ্ঞান ফেরে একটু পরেই। কিন্তু তারপর থেকেই কেমন একটা অদ্ভুত আচরণ করছে। চোখ পাকাচ্ছে বড় বড় করে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুঁড়ে ফেলছে।’

‘কী কী ছুঁড়েছে?’

‘আমার শাড়ি, জামা কাপড়, প্লাস্টিকের চেয়ার, টেবিল, চিরুনি, আমার মেক আপের জিনিস পত্র, কাপ, গ্লাস, ফুলদানি, রেডিও।’

আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায় উত্তেজনায়। ‘আর ল্যাপি, বই খাতা পেন এইগুলো? এইগুলো ছোঁড়েনি?’

‘না। এই জিনিসগুলো তো ছোঁড়েনি।’

‘তারপর কী হল?’ মনে মনে একটু নিশ্চিন্ত হই।

‘সেই রাতেই ডাক্তার বাবু এসে দেখে গেলেন। আমাদের পারিবারিক ডাক্তার রায়। বললেন এ আমার কেস নয়। উনি আমাদের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে আপনার বন্ধুকে পরীক্ষা করলেন। তারপর রায় দিলেন এ আমার কেস নয়। একটা ভাল আস্যাইলামে ভর্তি করে দিন কাল সকালেই। আমার চেনা জানা ডাক্তার আছেন সব। কোন অসুবিধা হবে না। আজ সকালে পাঁচটার সময় ওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গাড়িতে যখন ওঠানো হয় নিজে নিজেই গেল। আশ্চর্য রকম শান্ত। খালি মাঝে মাঝে ফিক ফিক করে হাসছে। ল্যাপি বগলে করে নিয়ে গেছে।’

‘তুমি যাওনি ওর সাথে?’

‘না বাবা! আমাকে দেখলেই দাঁত খিচুচ্ছে। ডাক্তার রায় আর আমার শ্বশুর মশাই গেছেন।’

‘তুমি তাড়াতাড়ি আমাকে মেসেজ করো অ্যাসাইলামের নাম ঠিকানা। আমি এক্ষুনি রওনা দেব।’

ফোন অফ করতেই দেখি মধুশ্রী দাঁড়িয়ে আছে গালে হাত দিয়ে। বুঝতে পারলাম সব কথাই ও শুনেছে। তবু সংক্ষেপে ওকে সবটা বললাম। ও বলল, ‘এত জানাই ছিল তোমার ওই বন্ধু জন্ম থেকেই পাগল। যাই হোক, বাজারটা করে দিও যেও।’

প্রতিবাদ করে সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে পড়লাম নিজের বাইকে। যেহেতু ঋজু গল্প লেখে সেহেতু সে পাগল। একই কথা মধু আমার সম্পর্কেও বলে। আমিও মাঝে মাঝে গল্প উপন্যাস লিখি সেই জন্য। শাশুড়ি মা এসে আছেন এখন। ল্যাপি খুলতে দেখলেই এঁরা চিল চিৎকার জোড়েন। আমি এক এক সময় চিলে কোঠার ঘরে বসে গল্প লিখি। মাথায় প্লট আসলে লিখতে ইচ্ছে করে। না হলে মাথায় উকুনের মত প্লট কামড়াতে থাকে। ভুলে গেলেও বিপদ। মধুশ্রী এক এক সময় ভাবে আমি বোধ হয় চিলেকোঠায় বসে ব্লু ফিল্ম দেখছি। মুখেও বলে তার সন্দেহের কথা।

তাড়াতাড়ি বাজার সেরে বাড়িতে দিয়ে এলাম। এই সব বাজার দেখে মধুশ্রীর মুখ হাঁড়ি। খুঁত একটা ধরা চাই-ই। কাজের লোকটি মাঝে মাঝেই কাজ ছেড়ে দিতে চায় মধুশ্রীর মধু ওগরানোর জ্বালায়। আবার তাকে খোসামোদ করে নিয়ে আসি। আজ অফিস ছুটি। মুসলিমদের একটি পরব আছে। ছেলেরও ছুটি। বায়না ধরেছিল সঙ্গে আসার জন্য। অনেক করে বোঝালাম যেখানে যাচ্ছি খুব ভয়ানক জায়গা। ডাক্তারবাবুরা ধরে ধরে ইঞ্জেকশান দেবে। আমাকেও দেবে। এইসব বলাতে কাজ হল। শুধু একটা ক্যাডবেরির বদলে আমাকে অব্যাহতি দিল।

দিতি আমাকে অ্যাসাইলামের ঠিকানা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

খুব সুন্দর নাম অ্যাসাইলামের। নেভারল্যাণ্ড। ছেলেবেলায় পিটার প্যানের বইতে পড়েছি। হায় রে পিটার প্যান! কোথায় গেলে তুমি! বাস্তববাদীদের জ্বালায় পৃথিবীটা ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে আজ। থাকুক না ওরাই। পৃথিবীর ভাল ওরাই করতে পারবে।

নেভারল্যান্ড এর পরিবেশ খুব সুন্দর। শহর থেকে অনেক দূরে। বিশাল পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। লোহার ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। ফটকের সামনে একজন সিকিউরিটির লোক বসে। তাকে সব কৈফেত দিয়ে তবে ভেতরে ঢোকা। ভেতরে অনেকটা জায়গা। প্রচুর গাছ গাছালি। পাখি ডাকছে। ছোট একটা কৃত্রিম নদী আছে। তার ওপরে আবার ছোট্ট একটা সাঁকো। চারদিকে ছোট ছোট কটেজের মত ঘর। ওইখানেই মনে হয় পেশেন্টরা থাকে। প্রচুর ফুল ফুটেছে। একজন মালি গাছের পরিচর্যায় ব্যাস্ত। এগিয়ে গেলাম সেইদিকে। আমি দেখছিলাম। ভাল করে তাকিয়ে দেখি মালিকে খুব চেনা লাগছে। আরে এযে আমার কলেজের বোটানির প্রোফেসর।

‘স্যার আপনি এখানে?’ কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি।

স্যারের এখন বয়স হয়েছে আশির কাছাকাছি। তবে সৌম্য দর্শন স্যার এখনও একই রকম আছেন। চোখের চশমাটা ঠিক করে বললেন, ‘আরে অয়ন যে! কেমন আছ? তোমায় দেখে খুব ভাল লাগল।’ স্যার আমার সম্বন্ধে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জেনে নিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি এখানে কেন?’

‘হা হা! অ্যাসাইলামে লোকে কী জন্য আসে! আমি পাগল! হা হা।’

‘কিন্তু আমি তো আপনার ব্যাবহারে কোন রকম অস্বাভাবিকতা দেখতে পাচ্ছি না স্যার।’

‘তবু আমি পাগল। কারণ আমি মানুষের চেয়ে গাছপালাকেই বেশি ভালবাসি। মানুষের কাছে আমার আর কিছু পাওয়ার নেই। আমারও কিছু দেওয়ার নেই। এরচেয়ে অনেক আনন্দ আমি এই গাছপালাদের কাছ থেকে পাই। গাছপালারা আর যাই হোক গাল মন্দ তো কখনও করে না আমায়। আমার গিন্নি ছেলের কাছে বিদেশে। আমাকে তারা পাগলই মনে করে। দেখো এই সব গাছ আমার নিজের হাতে করা।’

স্যার আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। কৃত্রিম নদীর কাছে। সেখানে একজন অল্প বয়সী ভদ্রলোক ঘাসের ওপর মাদুর পেতে বসে ছবি আঁকছে। কাছে গিয়ে দেখি খুব সুন্দর সুন্দর পরিবেশের কিছু দৃশ্য এঁকেছেন উনি। ছয়টা ঋতু কে ধরার চেষ্টা করেছেন ছটা আলাদা পেজে। আমাদের দেখে একবার মুখ তুলে তাকালেন একটু হাসলেন তারপর আবার নিজের আঁকায় মন দিলেন। স্যার বললেন, ‘এই ছেলেটিও সদস্য এখানের। এও একজন পাগল।’

‘সেকি স্যার! এত ভাল ছবি আঁকে যে সেও পাগল!’

‘হ্যাঁ । এও মানুষদের সাথে থাকতে পছন্দ করে না। নিজের আঁকা নিয়ে প্রকৃতিকে নিয়ে মশগুল থাকে। ওর আঁকায় শুধু প্রকৃতিই থাকে।’

এখানে আরেকজন ভদ্রলোক আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। ইনি এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। ডাক্তার স্যানাল। অনেকক্ষণ আগে থেকেই এনাকে দেখছিলাম। বেশ হাসি খুশি মানুষ। আমি এবার স্যারকে আমার বন্ধু ঋজুর কথা বলি। ঋজু আর আমাকে স্যার খুব ভাল করেই চিনতেন। ঋজুর কটেজটা দেখিয়ে দিলেন স্যার দূর থেকে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমায় কিছু লিখতে হবে না? পেশেন্টের সাথে দেখা করতে এসেছি।’

ডাক্তার স্যান্যাল বললেন, ‘চলুন আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি। যাবার আগে খাতায় একটা সই করে দেবেন। আমরা কাউকে এলাও করিনা ভেতরে তবে পেশেন্ট বলেছেন অয়ন বলে কেউ দেখা করতে আসলে তাকে যেন এলাও করি তাই নিয়ে যাচ্ছি। আপনাকে অনেকক্ষণ লক্ষ করছি।’

কটেজের দিকে এগিয়ে গেলাম। একটা ছোট্ট মন্দির আছে। সেখানে আছে ভগবান বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি। বড় ঠাণ্ডা মানুষ ছিলেন। এখানে মেডিটেশান করানো হয়। স্যান্যাল জানালেন।

ঋজুর কটেজে টোকা মারতেই দরজা খুলে দিল স্বয়ং ঋজু। মুখে হাসি। ঘর একদম পরিপাটি করা। বিছানায় কিছু গল্পের বই। আর খোলা ল্যাপটপ।

বললাম, ‘কী কাণ্ড! সবাই কত চিন্তা করছে আর তুমি এখানে দিব্যি আছো দেখছি।’

ঋজু লজ্জিত মুখে বলে, ‘কী করব রে! একটা ভৌতিক উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিয়েছিলাম যে। কিন্তু বাড়িতে দিতি আর মায়ের প্রতিদিনের ঝগড়া কাজে খুব অসুবিধা করত। কন্সেট্রেট করতে পারতাম না একদম। তাই এই আইডিয়া দিল আমাদের পারিবারিক ডাক্তারবাবু। ওনাকে সব বলেছিলাম। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের মত পাগলদের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। যারা মানুষদের সাথে থাকতে বিশেষ পছন্দ করে না। ঝগড়া অশান্তি করতে পারে না। বাড়িতে ঝগড়া অশান্তি দেখলে চোখে জল চলে আসে। এরা মানুষ জাতির কলঙ্ক। তাই ডাক্তার স্যান্যাল এই প্রতিষ্ঠান করেছেন। কিছুদিন লেখক, শিল্পীরা এসে কাটিয়ে যাবে। বিনিময়ে কিছু টাকা দিতে হবে। তবে রেট খুব বেশি নয়। একদিন আধবেলার জন্য হলে খুবই কম। অনেক ছাড়ও আছে। এখানে স্যারও আছেন আমাদের।’

‘আচ্ছা ঋজু এইভাবে সংসার থেকে বেরিয়ে আসা পাগলের অভিনয় করে এটা কি একপ্রকার পলায়নী মনোবৃত্তি নয়?’

‘তাহলে তো লেখক শিব্রাম চক্রবর্তীও পাগল ছিলেন। রাস্তায় শুয়ে পড়েছিলেন একবার। কত কাণ্ডই তো করেছেন।’

‘কিন্তু শিব্রাম আর তুই তো এক নোস।’

‘তা ঠিক। কিন্তু আমার সঙ্গে তাঁর চরিত্রের মিল আছে এটা আমি বেশ বুঝতে পারি।’

‘তোর বাবা মা বউ চিন্তা করছে।’

‘এটা আপেক্ষিক। কেউ চিন্তা করছে না। সবার মনে হচ্ছে যে চিন্তা করছে। আসল কথা হল সবাই সবার স্বার্থের চিন্তা করছে। জানিস আমি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছি। বাবা মা সবাই অফিস চলে যেত। আমি ঠাম্মির কাছে মানুষ। প্রতিদিন বাবা মায়ের অশান্তি হত। যেদিনগুলো ওঁরা বাড়ি থাকত আমার হাড়ে দুব্বো ঘাস গজিয়ে দিত। ঠাম্মার যে বয়স হয়েছে তাঁর যে একটু আরামের দরকার সেটা ওরা বুঝত না। ঠাম্মি নিজের ঘরে বসে চোখের জল ফেলত। আমার অন্য বন্ধুদের বাবা মায়েরা কত ঘুরতে যেত, পুজোয় মজা করত । আমি বুঝে গেছিলাম বাড়িতে ঝগড়া হওয়া খুব স্বাভাবিক কিন্তু রোজ ঝগড়া হওয়া মোটেও স্বাভাবিক নয়। নানা রকম বই পড়তাম আর ঠাকুরের কথামৃত। সেই বয়সেই বুঝেছিলাম যে আমাদের বাবা মা ও আমাদের তত ভালবাসেন না যতটা ঠাকুর মা তাঁদের সন্তানদের ভালবাসতেন। আর সংসার থেকে দূরে গিয়ে নির্জনে গিয়ে মাঝে মাঝে জপ ধ্যান করতে বলতেন। আমি এখানে জপ না করলেও ধ্যান করতে পারব। এটা খুব জরুরি ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য। আর গল্প লিখব। সাতদিন পর আবার ফিরে যাব বাড়ি।

আমি বিয়ে করতে চাইনি। কিন্তু মা বাবার চাপে পড়ে বাধ্য হই। সংসার ত্যাগ করতে পারিনি কারণ আমি তো আর ঠাকুরকে পাইনি। অত কষ্ট সহ্য করব কীভাবে?’

ঋজু ঠাকুরকে মাকে খুব মানে এটা আমি জানতাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এইসব পরিকল্পনা কার?’

ডাক্তার স্যানাল, আমি, আমাদের বোটানির স্যার, একজন পেইন্টার , কয়েকজন মনঃচিকিৎসক আমরা সবাই এই নেভারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তবে এখনই কাউকে কিছু বলিস না। এটা শুধু কিছু পাগলদের সংগঠন হয়েই থাক। সবাই বুঝবে না আমাদের।’

‘কিন্তু কেউ যদি ভর্তি হতে আসে?’

‘ডাক্তার বাবুরা রেফার করবেন না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া।’

আমি চুপ করে গেলাম। ঋজু ইলেকট্রিক কেটলিতে চা বসিয়ে দিয়েছে। একটু পরে স্যার আর পেইন্টার আমাদের চায়ের আসরে যোগ দিলেন। আমি ভাবছিলাম নেভারল্যাণ্ডে আমিও একটা কটেজ বুক করব। সাত দিনের জন্য। এই পাগলদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিতে দিতে বেশ ফ্রেশ লাগছে।