দ্য সিক্রেট নাম্বার - মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ

ড. সাইমন টমলিনের পূর্ণ মনোযোগ সামনে বসা লোকটার দিকে। ক্রমাগত সামনে-পেছনে দুলে চলছেন তিনি, কাঁধ দুটো ঝুঁকে আছে। চোখের দৃষ্টি স্থির নেই, এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করছে কেবল। কয়েক সেকেন্ড পরপর কেঁপে উঠছে উপরের ঠোঁট। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়ে যে এই লোকই কিছুদিন আগে বিশ্বসেরা গণিতজ্ঞদের একজন ছিলেন।

‘আজ কেমন আছে, প্রফেসর আর্শাইম?’ জানতে চাইলেন ড. টমলিন।

‘ভালো, ভালো। আপনাকে ধন্যবাদ জিজ্ঞাসা করার জন্য। বেশ ভালো আছি।’ ওর দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন প্রফেসর।

‘ঘুম ভালো হয়েছে?’

‘হ্যাঁ। আজকাল ভালোই হয়, দুধের বাচ্চার মতো ঘুমাই।’ জবাব দিলেন আর্শাইম, এখনও দুলে চলছেন; এখনও তাকাননি ডাক্তারের দিকে।

‘শুনে খুশি হলাম।’

আর্শাইম আচমকা দুলুনি বন্ধ করে, সরাসরি টমলিনের চোখের দিকে তাকালেন। ‘এই ভালোমানুষির নাটক বন্ধ করুন তো, ডাক্তার।’ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন তিনি। ‘আপনি যে আমাকে পাগল ভাবেন, তা আমি জানি না মনে করেছেন? সবাই কিন্তু লাযলো ব্লিমকেও তাই মনে করত। ওরা সেটাই চায়!’ সরাসরি টমলিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি, অপলক চোখে।

‘এসব কী বলছেন, প্রফেসর? কে আপনাকে পাগল প্রমাণ করতে চায়?’

‘সংখ্যাগুলো, ডাক্তার, সংখ্যাগুলো। মানুষ বলে, অঙ্ক নাকি কখনও মিথ্যা বলে না। ভুল কথা। মিথ্যা বলে, হরহামেশাই বলে... বলে অহরহ। কিন্তু আমার সাথে মিথ্যা বলে পার পায় না। আমি ওদের প্রতারণা পরিষ্কার ধরতে পারি। ওরা কী লুকোচ্ছে, সেটাও টের পাই।’ বললেন আর্শাইম, আবার দুলতে শুরু করেছেন।

‘কী লুকোচ্ছে, প্রফেসর?’

‘ব্লিম, আর কী? ব্লিমকে লুকোচ্ছে!’ চিৎকার করে উঠলেন আর্শাইম। ডেস্কের উপর দুম করে ঘুষি মেরে বসলেন তিনি। তারপর টমলিনের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন, ‘তিন আর চারের ভেতরে লুকিয়ে আছে ওই পূর্ণ সংখ্যা।’

‘এ নিয়ে আমরা আগেও কথা বলেছি, প্রফেসর। তিন এবং চারের মাঝে কোন পূর্ণসংখ্যা নেই।’

‘সেটা লাযলো ব্লিমকে বলুন, ডাক্তার।’ বললেন আর্শাইম। ‘কিন্তু পারবেন না,’ যোগ করলেন তিনি। ‘কেননা তিনি মারা গিয়েছেন।’ কণ্ঠ খাটো হয়ে এল তার, ‘ব্লিমকে যেন সবার সামনে আনতে না পারেন, সেইজন্য খুন করা হয়েছে তাকে।’

‘লাযলো ব্লিমের মৃত্যু হয়েছে গাড়ি দুর্ঘটনায়, প্রফেসর।’

‘মাথা খাটান তো! এক থেকে বিশের মাঝে কোন অজানা পূর্ণসংখ্যা আছে—এই বিষয়ে একটা প্রতিবেদন লিখলেন তিনি; জানালেন যে অচিরেই সেটাকে আমাদের সামনে প্রমাণসহ তুলে ধরবেন! আর তার মাত্র এক সপ্তাহের মাথা... পুফ! দুর্ঘটনায় মারা গেলেন তিনি! শুধু তাই না, তার বাড়ি আগুনে পুড়ে গেল; ফলে হাতে লেখা কোন নোট আর অবশিষ্ট রইল না। পরের দিনই, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সিস্টেম ক্রাশ করে ইলেকট্রনিক নোটগুলোও ধ্বংস হয়ে গেল! ব্লিম আসলে একটু বেশিই কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তাই সরে যেতে হলো তাকে। আমার কথা যদি আপনি শোনেন, তাহলে আমাকেও সরে যেতে হবে!’

মন দিয়েই কথা শুনছিলেন টমলিন, এবার ঠিক করলেন—তুরুপের তাসটা খেলবেন।

‘ঠিক আছে, প্রফেসর। ধরে নিই, আপনার কথা সত্যি। আসলেই তিন এবং চারের মাঝে একটা পূর্ণসংখ্যা আছে। ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে তো আমরা গুণতে পারি। তাই না?’

‘ঠিক বলেছেন, ডাক্তার সাহেব।’ মাথা ঝাঁকালেন আর্শাইম। তারপর যেন সেটা প্রমাণের জন্যই গুণতে শুরু করলেন, ‘এক, দুই, তিন, ব্লিম, চার...’

‘আর দরকার নেই, প্রফেসর।’ বাধা দিলেন টমলিন। ‘যদি ব্লিম আসলেই গণন যোগ্য সংখ্যা হয়, তারমানে ব্লিম সংখ্যক কিছু একটা গুণে আলাদা করা যাবে, তাই না?’

‘অবশ্যই,’ বললেন আর্শাইম। ‘আমার জানা ছিল না যে আপনিও একজন গণিতজ্ঞ, ডাক্তার সাহেব।’

‘আমার কথা শুনুন, প্রফেসর।’ বলে পকেট থেকে একটা ছোট প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করে আনলেন তিনি।

‘ওটা কী?’

‘জেলি বিন,’ হাসতে হাসতে জবাব দিলেন টমলিন। তারপর ব্যাগ ছিঁড়ে ভেতরের সবগুলো বিন ফেলে দিলেন ডেস্কের ওপর। প্রায় দুই ডজন নানা রঙের বিনে ভর্তি হয়ে গেল টেবিল।

‘এবার, প্রফেসর আর্শাইম, ব্লিম সংখ্যক জেলি বিন গুণে আলাদা করুন তো।’ আত্মতৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল ডাক্তারের চেহারায়।

‘ঠিক আছে,’ বললেন আর্শাইম। হাত বাড়িয়ে নিজের দিকে টেনে নিলেন তিনটা বিন। ওগুলোর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি, তারপর আবার তাকালেন জড়ো হয়ে থাকা বিনগুলোর দিকে। নিজের তিনটার দিকে আরেকবার তাকিয়ে, আরেকটা বিন টেনে এনে রাখলেন ওগুলোর পাশে। এক মুহূর্ত চারটা বিনের উপর স্থির হলো তার দৃষ্টি। তারপর চতুর্থটা ঠেলে দিলেন টমলিনের দিকে। কিন্তু অর্ধেকটা পথ যাবার আগেই, আবার সেটাকে নিজের তিনটার সাথে লাগালেন।

অস্থির হয়ে উঠছেন প্রফেসর। চারটাকেই তুলে চোখের সামনে ধরলেন একবার, এদিক-ওদিকে করলেন কিছুক্ষণ। অবিশ্বাসের দৃষ্টি তার চোখে। সবগুলো পরখ করা শেষে হেলান দিলেন নিজের চেয়ারে, চোখে-মুখে তার তীব্র হতাশা।

‘পারব না, ডাক্তার।’ বললেন তিনি।

‘ব্লিম তাহলে পূর্ণসংখ্যা না।’ বিজয়ের সুর টমলিনের কণ্ঠে।

‘না!’ ক্ষেপে উঠে হাতের ধাক্কায় ভেঙে ফেললেন বিনের স্তূপ। ‘ব্লিম আছে! কিন্তু কিছু একটা আমাকে গুণতে দিচ্ছে না। আমি তিনটা বা চারটা বিন নিতে পারছি। কিন্তু ব্লিম সংখ্যক না!’

‘শান্ত হন, প্রফেসর। আমি এখানেই ছিলাম, আপনার প্রতিটা কাজ দেখেছি। কিছুই আপনাকে বাধা দিচ্ছিল না। আপনি ব্লিম সংখ্যক বিন গুণতে পারেননি, কারণ ব্লিমের কোন অস্তিত্ব নেই!’

‘আছে! নিশ্চয়ই আছে।’ স্তিমিত কণ্ঠে বললেন আর্শাইম। পরক্ষণেই জোরাল স্বরে যোগ করলেন। ‘আমি প্রমাণও করতে পারব।’

‘কীভাবে করবেন, প্রফেসর? আপনিই না বললেন, কোন এক সর্বময় ক্ষমতা আপনাকে প্রতি পদে বাধা দিচ্ছে? ব্লিমকে লুকিয়ে রাখতে চাচ্ছে?’

‘মনে রাখবেন, ডাক্তার।’ বললেন আর্শাইম, কণ্ঠে ষড়যন্ত্রের সুর। ‘আমি এখন গণিতজ্ঞ, এবং বেশ ভালো মানের একজন। সব ধরনের গণিতকে এমনভাবে বানানো হয়েছে যেন তা ব্লিমের অস্তিত্বকে লুকিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু একেবারে নিখুঁতভাবে সেই কাজটা সারা হয়নি। বছর বিশেক আগে, গণিতের এক শাখা আমি আবিষ্কার করেছিলাম—অদ্ভুত এক সংখ্যা-তত্ত্ব আমার ধারণা, ওটার কিছু নীতি ব্যবহার করে আমি প্রমাণ করতে পারব যে তিন এবং চারের মাঝে কোন একটা পূর্ণসংখ্যা আছে। নইলে গণিতের কোন ভিত্তিই থাকে না! আমার লেকচারের বিষয়ও ছিল সেটাই। কিন্তু আমার কিছু সহকর্মী বেয়াদবের মতো বাগড়া দেয়ায়, আমি মেজাজ খুইয়ে বসি।’

তা খুইয়েছেন বটে, ভাবলেন টমলিন। যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছেন তা ঠিক করতে দুই সপ্তাহ লেগেছে।

‘আপনার ওই সহকর্মীরা কিন্তু এই তত্ত্ব মেনে নেননি, প্রফেসর।’ বললেন টমলিন।

‘কারণ, আমি এখনও সেই প্রমাণটা একেবারে খুঁত-হীন করতে পারিনি।’ জবাব দিলেন আর্শাইম। ‘অবশ্য করলেও লাভ হতো না। ওই অজ্ঞ, অসভ্যরা আমার গবেষণার কিছু বুঝলে তো!’ রাগতস্বরে যোগ করলেন। ‘তবে আমি কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি, ডাক্তার সাহেব। অনুভব করতে পারছি সেটা। আমাকে আমার গবেষণায় ফিরে যেতে দিন, কয়েক মাসের বেশি লাগবে না। নইলে আমাকে অন্তত কিছু কাগজ আর কলম দিন, তাহলেই হবে! এখানেই কাজ করব।’

আর্শাইম যে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে, তা টের পেলেন টমলিন। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন যে আজকের মতো যথেষ্ট হয়েছে।

‘ঠিক আছে, প্রফেসর।’ বললেন তিনি। ‘আপনার কথাগুলো ভেবে দেখব। তবে আরেকটা প্রশ্নের জবাব দিন।’

‘কী?’

‘একটা পূর্ণসংখ্যাকে গোপন করে কার কী লাভ?’

‘আমি ঠিক জানি না।’ মাথা নেড়ে জবাব দিলেন আর্শাইম। ‘হয়তো ব্লিমের জাদুময় কিছু বৈশিষ্ট্য আছে—আমার দিকে ওভাবে তাকাবেন না, ডাক্তার। অন্তত যারা লুকিয়ে রাখছে, তারা হয়তো সেটাই বিশ্বাস করে।’ এক মুহূর্ত নীরবতার পর উজ্জ্বল হয়ে উঠল আর্শাইমের চেহারা। ‘অথবা... অথবা... ব্লিমের জ্ঞান হয়তো আমাদেরকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। হয়তো সময়-পরিভ্রমণ, আলোর চাইতে দ্রুত গতিতে চলা—এসবের জ্ঞান লাভ করতে পারব আমরা!’

‘বুঝলাম।’ বললেন টমলিন। ‘আপনার বিশ্বাস, ব্লিম আবিষ্কার করলে, এসব বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হবে?’

‘তা জানি না, কিন্তু হতেও তো পারে।’ যোগ করলেন আর্শাইম।

‘বুঝতে পেরেছি আপনার কথা,’ বললেন টমলিন। ‘যাক, প্রফেসর। আপনার সাথে এসব আলোচনা করে ভালো লাগল। ভাবনার অনেক খোরাক পেয়েছি। কয়েকদিন পর আবার আলোচনা হবে।’

করমর্দন করে, ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আর্শাইম। টমলিন চুপচাপ বসে রইলেন কিছুক্ষণ, মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা বিনের দিকে তার নজর।

কী দুঃখের কথা, ভাবলেন তিনি। যে লোকটা নিজের সারা জীবন সংখ্যার জ্ঞানার্জনে কাটিয়ে দিল, সেই সংখ্যাকেই আজ সে শত্রু ভাবছে! অবশ্য তেমনটাই হবার কথা। যেটা নিয়ে পাগল গণিতজ্ঞ, প্যারানয়াটা তো সেটাকে ঘিরেই তৈরি হবে।

টমলিন কিন্তু বিকালের এই সেশন নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। ভেবেছিলেন, জেলি বিন ব্যবহার করে প্রফেসরকে তার চিন্তার অবাস্তবতা ধরিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু ফল হলো উল্টো, আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়লেন আর্শাইম। তবে একটা প্রতিক্রিয়া তো পাওয়া গেল। আর্শাইমের ভ্রমের কোন স্পর্শকাতর জায়গায় খোঁচা লেগেছে বলে মনে হচ্ছে।

অগ্রগতি কিছু হয়েছে ভেবে, বাড়ি ফিরলেন টমলিন। তবে হাসপাতাল ছাড়ার আগে আর্দালিদের জানালেন, আর্শাইমকে যেন কোন ভাবেই লেখালেখি করার কোন উপকরণ দেয়া না হয়।

 

সেরাতে ঘুমাতে কষ্ট হলো ডাক্তার সাহেবের। চোখ বন্ধ করা মাত্র দেখতে পেলেন, দানবাকার একদল সংখ্যা তাকে ঘিরে ধরেছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা অবয়ব—ব্লিম। বিরক্ত হয়ে বিছানার পাশে রাখা একটা নোটপ্যাড তুলে নিলেন তিনি। এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো লিখতে শুরু করলেন। দেখে তো নিরাপদ বলেই মনে হয়, ভাবলেন তিনি। কাগজের উপর কয়েকটা দাগ মাত্র। অথচ বিজ্ঞানে এবং সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে এই সংখ্যাগুলোর উপরেই। প্যাডের দিকে তাকালেন তিনি। মনে মনে গুণতে শুরু করলেন: এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ। সবগুলোই আছে জায়গামতো। ব্লিমের না কোন দরকার আছে, আর না আছে ওকে বসাবার মতো কোন স্থান। মন শান্ত হয়ে এলো, ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।

ঘুম ভাঙল পরদিন সকালে, টেলিফোনের আওয়াজ। জিনি ফোন করেছে, হাসপাতালের একজন আর্দালি। জানাচ্ছে—আর্শাইম উধাও হয়ে গিয়েছেন!

ছুট লাগালেন টমলিন। পৌঁছেই দেখতে পেলেন জিনিকে। কী হয়েছে সব খুলে বলল সে; যতবার সুযোগ পেল, প্রত্যেকবারই দায় অস্বীকার করল। আগের রাতে, দশটার সময় বহাল তবিয়তেই ছিলেন আর্শাইম। জিনি শেষবার তখনই দেখেছিল তাকে। কিন্তু সকাল ছয়টায় যখন আবার রাউণ্ডে যায়, তখন ঘরে ছিলেন না গণিতজ্ঞ। বাইরে থেকে বন্ধ ছিল আর্শাইমের ঘরের দরজা। রাতের দারোয়ান জানাল—উল্টো পাল্টা কিছু ঘটেনি সারা রাতে। মনে হচ্ছে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছেন আর্শাইম।

‘ওর ঘরটা আপনার দেখা দরকার।’ পরামর্শ দিল জিনি।

আর্শাইমের ঘরের দিকে গেলেন টমলিন; এক নজরে দেখেই বুঝতে পারলেন—যা ভয় পাচ্ছিলেন, সেটাই হয়েছে।

ঘরের সবগুলো দেয়াল নানা ধরনের গাণিতিক চিহ্ন আর অঙ্কে ভর্তি। ওসবের অধিকাংশ জীবনে চোখেও দেখেননি টমলিন। কেমন যেন কাঁপা কাঁপা হাতে, লালচে-বেগুনি রঙে লেখা হয়েছে ওগুলো। চাঁদের আলোয় নিশ্চয়ই সারা রাত কাজ করেছেন প্রফেসর।

কালি হিসেবে কী ব্যবহার করেছেন, তা খুঁজতে বেগ পেতে হলো না। একপাশে পড়ে আছে একটা প্লাস্টিকের কাপ; মেঝেতে পড়ে আছে তরল। আঙুল চুবিয়ে স্বাদটা পরখ করে দেখলেন তিনি—আঙ্গুরের রস। স্ট্র কেটে বানানো কলমটাও আছে ওখানেই। আরেক পাশে স্তূপাকারে পড়ে আছে আর্শাইমের সব কাপড়। কিন্তু প্রফেসরের কোন হদিস নেই।

‘আমাদের জন্য কিছু নাস্তা রেখে গিয়েছেন দেখি।’ টমলিনের পেছন থেকে বলল জিনি।

ঘুরে দাঁড়ালেন ডাক্তার, দেখলেন যে জিনি দাঁড়িয়ে আছে নাইট টেবিলের পাশে। ওটার উপরে থাকা তিনটা ছোট ছোট বস্তুর দিকে বাড়াচ্ছে ওর হাত।

‘ওগুলো ধরো না।’ চিৎকার করে উঠলেন টমলিন।

‘জেলি বিন, ডাক্তার।’ উত্তর দিল জিনি, তারপর একটা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে দিল উপরে।

ভয়ের সাথে টমলিন দেখলেন, বিনটা উপবৃত্তাকারে কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে, জিনির মুখের ভেতর গিয়ে পড়ল।

‘খাবেন নাকি?’ অবশিষ্ট বিনগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চাইল জিনি।

টমলিন তাকালেন নাইট টেবিলের দিকে, তিনটা জেলি বিন শান্ত হয়ে শুয়ে আছে ওখানে।